প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এমদাদুল হক তুহিন | ৩১ আগস্ট, ২০১৫
নিঃসন্দেহে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সুবিধা অনেক। মাধ্যমগুলো ব্যবহারের ফলে পুরো বিশ্বের প্রতি মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকা যাচ্ছে অনায়াসে। পাওয়া যাচ্ছে নতুন তথ্য-উপাত্ত।উন্মুক্ত হয়েছে বিশাল এক জ্ঞানের ভাণ্ডার। তবে একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি অনেকটা ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কেবল যোগাযোগ রক্ষার্থেই নষ্ট হচ্ছে দীর্ঘ সময়। প্রতি দিনের নির্দিষ্ট কিছু কর্মঘন্টাও হারিয়ে যাচ্ছে নিজের অজান্তে। সমাজের সর্বস্তরের এ প্রবণতাকে বলা হচ্ছে ভার্চুয়াল নেশা, যা অনেকটা মাদকের মতই ভয়াল ও সর্বগ্রাসী।
একটি বয়সের পর প্রায় সকলেই বুঝতে পারে কোন কাজটি করা উচিৎ, কিংবা কোনটি নয়। তবে শৈশব কিংবা কৈশোরে পা রাখা ছেলেমেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল পথে কিংবা ভুল পন্থায় পরিচালিত হয়। আর অভিভাবক ও শিক্ষকদের মূল কাজটিই হল ওই সময়ে সঠিক গাইড লাইন প্রদান করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অভিভাবক ও শিক্ষকদের এই কাজটিই করা উচিৎ।
মুলত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের মূল অবকাঠামো গড়ে ওঠে এসএসসি লেভেল পর্যন্ত। সবে বড় হয়ে ওঠতে থাকা এ বয়সের শিশুদের মনে থাকে অন্য রকমের চাঞ্চল্য। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুপ্ত বাসনা হৃদয়ে অজান্তে রেখেই এগিয়ে চলে তাদের জীবন। পরিবারের সাথে এ বয়সের সব শিক্ষার্থীর বন্ধুও হয়ে ওঠা হয় না। মূলত পারিবারিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণেই তা হয়ে ওঠে না।
তবে ওই বয়সের ছেলেমেয়েরা বন্ধুর সাথে বন্ধুত্বের গভীরে তলিয়ে যেতে ভালোবাসে। দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমবয়সীর সাথেই ব্যয় হয় তাদের অধিক সময়। হোক সে স্কুল, কোচিং কিংবা বাসায়। মূলত তারা বন্ধুর সাথেই বিলিবণ্টন করে সব কিছু। কিছুটা ভালো লাগা, এমনকি সদ্য জেগে ওঠা প্রেম প্রেম ভাবও! আর তাদের বয়সের সাথে সম্পৃক্ত নানা সমস্যার কথাতো রয়েছেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে লেখার মূল কারণ হচ্ছে আশেপাশের স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের আসক্তির মাত্রা আমাকে ভাবতে বসিয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করে দেওয়া এই সময়ে এসে অনেকটা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ালেও যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পিছিয়ে আছে। ফেইসবুক ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে তারা যে পরিমাণ সময় ব্যয় করছে, সময় এসেছে ব্যবহারের মানদণ্ড নির্ণয় করে দেওয়ার। তবে কোনক্রমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে তাদের দূরে রাখা যাবে না। কেননা বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। আর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে রয়েছে শিক্ষামূলক নানা এপ্লিকেশন। তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া যেতে পারে কিছুটা সময়।
শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে সামাজিক যোগাযোগ বলতে আসলে কি বুঝায়? মানুষে মানুষে যোগাযোগ রক্ষার্থে কতটুকু সময় ব্যয় করা যেতে পারে? ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মূলত অভিভাবকদেরই নির্দেশনা দিতে হবে বন্ধু হয়ে। কোন ক্রমেই আদেশ নয়!
যোগাযোগ মাধ্যমে শুধুমাত্র যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে তাই নয়, শিক্ষামূলক বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তও ছড়িয়ে আছে। তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে সেদিকে। তবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও পরিতাপের বিষয় ফেইসবুকে একাধিক প্রশ্ন ফাঁসের পেইজসহ নানা বিতর্কিত পেইজ রয়েছে। সঠিক ইতিহাস জানার যেমন উৎস রয়েছে তেমনি রয়েছে ইতিহাস বিকৃত নানা তথ্য। শিশুদের সেসব থেকে দূরে থাকার পন্থাও বাতলে দিতে হবে আমাদের।
বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্যমতে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ। আর গুগল প্লে স্টোরেই রয়েছে দেশীয় ৫০০ এপস। যার অধিকাংশই কোন না কোন ভাবে শিক্ষামূলক। এমনকি রয়েছে সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোবাইল এপ্লিকেশন। এগুলোর মাধ্যমে নানা ধরণের সেবা পাওয়া যাবে। এমনকি রয়েছে সাহিত্য চর্চার অ্যাপ্লিকেশনও। ‘লোকসাহিত্য’ নামক একটি এপ্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের লোকসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিবরণ জানা যাবে। এসব শিক্ষামূলক এপ্লিকেশন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা সাইটে প্রাপ্ত সেবার দিকে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
অপকারী দিক বিবেচনায় কেউ কেউ মনে করেন, অন্তত এইসএসসি পাশ করার পর ছেলেমেয়েদের ফেইসবুকে প্রবেশ করা উচিৎ। তবে অধিকাংশই কোন রূপ গণ্ডি বেঁধে দিতে রাজি না হলেও শুধুমাত্র অবসর কিংবা বিনোদন নেওয়ার সীমাবদ্ধ সময়ের দিকে ইঙ্গিত করেন। বাংলাদেশে ফেইসবুক ব্যবহারের অপকারিতা নিয়ে এখনও তেমন কোন কাজ হয় নি। ফলে কি পরিমাণ সময় ফেইসবুকে ব্যবহার হবে তা নিরূপণ করা দুষ্কর। উপকার কিংবা অপকারিতা বিবেচনায় না আনলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মনোবৃত্তি পুরোটাই যার যার মানসিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে বলে বিজ্ঞদের মত। আর শিশু থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের উপযুক্ত মানসিক বিকাশ হওয়া প্রয়োজন। যদিও মানসিক বিকাশ পুরোটাই আপেক্ষিক। প্রতিটি মানুষই মনে করেন তার পুরো মানসিক বিকাশ হচ্ছে। ওই গোষ্ঠীর উঁচুতে বসে থাকা মানুষগুলো মনে করেন, ওরা ভুল পথে আছে!
উপরোক্ত আলোচনায় অনুমেয় এই যে, স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ প্রতিটি মানুষকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সময়ের বাধ্যবাধকতা মেনে চলা উচিৎ। আর বাবা-মা কিংবা পরিবারের সদস্যদেরই ঠিক করে দিতে হবে তার সন্তান এ সময়ে এসে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলবে কি, চলবে না। চললে সেই সময়টা কতটুকু? সব থেকে ভালো হয় শিক্ষার্থী যদি নিজেই নির্ধারণ করে নেয় ঠিক কতটুকু সময় ব্যয় করবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে। কেননা কোন অভিভাবকই চান না তাঁর সন্তান অন্ধকারে থাকুক, ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে থাকুক!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য