প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
আসাম শুনলেই কানে ভাসে বিহুর গানের সুর। গানের কথা খানিকটা বুঝি খানিকটা বুঝিনা- সুর আর তাল কিন্তু রক্তে ঠিকই নাচন ধরায়। বাংলা একটা গান শুনেছি- "বিহুরে লগন মধুরে লগন, অকাশে বাতাসে লাগিল রে; চম্পা ফুটিছে চামলী ফুটিছে, তার সুবাসে ময়না আমার ভাসিল রে" এটা কি বিহুর গান? মনে হয় না। তাল তো ভিন্ন মনে হয়। কি জানি, আমার নিজের সুর,তাল জ্ঞান তো মোটামুটি তৃতীয় সপ্তক আর ষষ্ঠ সপ্তকের সমান।
কিন্তু আসামকে বড় আপন মনে হয়। আগরতলা যে একদম বাড়ীর পাশে তবুও ত্রিপুরার চেয়ে আসামের দিকেই টানটা বেশী লাগে। সত্যি। দেখেন ত্রিপুরা তো একরকম আমাদের কুমিল্লারই অংশ, নাকি? আগরতলা শহরে গেলে লোকের কথা শুনলে মনে হবে কুমিল্লার কান্দিরপারেই আছেন। এছাড়া ত্রিপুরার সাথে আমাদের যুদ্ধের সময়ের এত স্মৃতি। তবু আসামেই যেতে ইচ্ছে করে। আর আসামেও তো বাঙালিরা আছে, অনেকেই আছে, কয়েক পুরুষ ধরে আছে। আমাদের সিলেট সুনামগঞ্জে মৌলভীবাজারের লোকজনের সাথে আসামের লোকেদের তো একরকম পারিবারিক সংযোগ থাকেই।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক খবর পড়লাম পাওলি দামের নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে, পাত্র আসামের বাঙালি। পাত্রের পূর্বপুরুষ ছিল সিলেটী। খবরের সাথে পাওলি দামের যে ছবি দিয়েছে সেটাতে পাওলি দাম একটা জামদানি শাড়ী পরে আছে সাদা জমিনের উপর লাল রং, চুলে বেলি ফুলের মালা কপালে লাল টিপ। বেশ লাগছে দেখতে মেয়েটাকে- একদম ঢাকার মেয়ের মত লাগছে। বেশ ইয়ে লাগলো, আর যাই হোক আমাদের সিলেটী পুয়ার সাথে বিয়ে হচ্ছে।
খট করে একটা প্রশ্নও জাগল মনে। আচ্ছা এই যে সিলেট থেকে মাইগ্রেটেড বাঙালি ছেলেটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে পাওলি দাম, সেই ছেলে কি লিগ্যাসি ডকুমেন্ট জোগাড় করতে পেরেছে? আহারে, আসামে বসবাসকারী বাঙালিদের সাথে এটা কি অন্যায় বলেন দেখি। বহুযুগ ধরে যারা প্রজন্ম থেক প্রজন্মান্তরে আসামে বসবাস করছে ওদেরকেও এই লিগ্যাসি ডকুমেন্ট জোগাড় করতে হবে। নাইলে জাতীয় রেজিস্টারে নাম উঠবে না। ওদেরকে তখন বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
২
ইন্ডিয়ার এক টেলিভিশন চ্যানেলে রিয়ালিটি শো হচ্ছিল- ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র। অসাধারণ গান করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। সেখানে আমার ফেভারিট ছিল দুইজন। আগরতলার একটা মেয়ে নীহারিকা আর অহমর জিয়রি নাহিদ। (অহমর জিয়রি কথাটা কি ঠিক আছে?)। আমার দুই ফেভারিটের একজনও প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতে পারেনি। নীহারিকা একটু আগেই বের হয়ে গেছে প্রতিযোগিতা থেকে, আর নাহিদ শীর্ষ তিনজনের মধ্যে ছিল।
আমরা তো ইন্ডিয়ার টেলিভিশন শো দেখি। ওদের গান শুনি। ধারাবাহিক নাটকগুলি আমার হজম হয়না, কিন্তু গান বেশ লাগে, গান শুনি। সিনেমাও দেখি মাঝে মাঝে। কয়েকদিন আগে কোলকাতার এক সিনেমা দেখছিলাম, মধুর বিস্ময়ে দেখি সেই সিনেমাতে নায়িকা আমাদের জয়া আহসান। কি যে গ্রেসফুল লাগছিল জয়া আহসানকে সেই সিনেমাতে!
এইটাই তো হবার কথা। আমাদের ছেলেমেয়েরা ওদের সিনেমায় কাজ করবে, ওদের ছেলেমেয়েরা আমাদের সিনেমায় কাজ করবে। ইংরেজ অভিনেতারা আমেরিকার সিনেমায় কিংবা আমেরিকার অভিনেতারা ব্রিটিশ সিনেমায় কিংবা অস্ট্রেলিয়ার অভিনেতা আমেরিকার সিনেমায় এরকম তো হরদমই হচ্ছে। আমাদের এখানে কেন হবেনা। আরও বেশী বেশী হওয়া দরকার। কিন্তু সে তো হবার নয়। ইন্ডিয়ার সিনেমা সারা দুনিয়ার সিনেমা হলে চলে, আমাদের এখানে চলে না। কয়েকদিন আগে আবার ঢাকার সিনেমার লোকেরা 'জীবন দিব, ইন্ডিয়ার সিনেমা ঢুকতে দিবনা' এরকম এক বালখ্যিল্য আন্দোলনও করেছে।
ইন্ডিয়ার নায়ক নায়িকা নিয়ে আন্দোলন তো আর থামেনা। কয়েকদিন আগে এক নায়িকার আগমন ঠেকানোর জন্য এয়ারপোর্ট পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল হেফাজত। আর এখন নাকি সরকারী দল নিজেই বলছে পাওলি দামের ঢাকায় আগমন ঠেকানোর জন্য এয়ারপোর্ট ঘেরাও করবে। সরকারী দলই তো হুমকি দিচ্ছে? নাকি আমি ভুল করছি? আওয়ামী মৌলানা (ওলামা) লীগ সরকারী দলই তো? নাকি?
৩
দেখেন, পাওলি দাম ঢাকায় আসলে আমার বিশেষ কোন লাভ নাই। পাওলি দামের একটা হিন্দি ছবি আমি দেখেছি, ন্যাংটা পোংটা দৃশ্য ছিল দুই একটা, কিন্তু সেরকম দৃশ্য টেলিভিশনে বসে ইংরেজি সিনেমায় আমরা অহরহ দেখি। এমনিই সিনেমার নায়িকাদের মঞ্চে দেখার আমি কোন আগ্রহ পাইনা। তার উপর পাওলি দাম দর্শনে বা গুণ বিচারে সেরকম কোন বিশিষ্ট কিছু না। তো সে আসলো কি গেল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আওয়ামী মৌলানা লীগ আগ্রহ জাগিয়ে দিল বলে একটু খোঁজ নিলাম, তখন এই খবরটা জানতে পারলাম যে সিলেটী পুয়ার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে। এর আগে সানি লিওনি আসবে বলে খবর রটেছিল, সানি লিওনিকে আমি এমটিভিতে একটা শো করতে দেখেছি, আমার পছন্দের সাথে মিলেনা।
এরা না আসলে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু হুজুররা যদি এদেরকে বাধা দিতে গিয়ে এইরকম তুলকালাম কাণ্ড করেন তাইলে আমি একটু কনসার্ন হয়ে পড়ি।
আমি কার অনুষ্ঠান দেখতে যাবো, কি ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে যাবো তাতে কার পিতার কি যায় আসে। নাবালক হলে আলাদা কথা। কিন্তু আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ, আমার পছন্দ অনুযায়ী আমি আমার জীবনযাপন করবো। আপনার ঘরে ধুয়া গেলে তখন আপনি বাধা দিবেন, নাহলে আমার ঘরে আমি বেনসন খাই নাকি গোল্ড লিফ খাই নাকি হাতে বানিয়ে মিশ্র সিগারেট খাই তাতে আপনার কি? আমি রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনব, নাইলে খেয়াল শুনব, ধ্রুপদ ধামার শুনব, নাইলে ইন্ডিপপ শুনব, নাইলে ইঞ্জিরি গান শুনব তাতে হুজুররা বলার কে?
পাওলি দাম বা সানি লিওনিকে নিয়ে ওরা এখন তোলপাড় করছে, এটা যদি আপনি আজকে সহ্য করেন, তাইলে আপনি ওদেরকে মরাল পুলিশিং করার একরকম ক্ষমতা দিয়ে দিলেন। আগামীকাল যখন একজন ভরতনাট্যম শিল্পী আসবে ঢাকায় বা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বা সেরকম কেউ, তখন ওরা আজকের অর্জিত ক্ষমতা নিয়ে আপনার উপর মাস্তানি করবে।
৪
নীতিগত অবস্থানটা ঠিক রাখেন। আমার লিবার্টিতে কাউকে আমি হাত দিতে দিবনা। এই অবস্থান ঠিক রাখেন। কন্টেন্ট দেখবেন না। কন্টেন্ট বিচার করতে গেলে লিবার্টিও যাবে।
এ কথাটা যদি না বুঝে থাকেন, বুঝার চেষ্টা করেন। নাইলে যেই গতিতে দেশ ভুল ডাইরেকশনে যাচ্ছে, খবর আছে!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য