আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ধর্মানুভূতি, মিডিয়া ও অবাঞ্ছিত নাস্তিক্য চিন্তা - ১

শামান সাত্ত্বিক  

গত ১৪ আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় ’৭১ টিভিতে ব্লগার এবং তাদের নিরাপত্তা বিষয়ে যে সংলাপটা হয়েছে, তাতে সুস্পষ্টভাবে নাস্তিক্য চিন্তার প্রতি এক ধরণের বৈমা্ত্রিয় আচরণ দুই বিশেষ বক্তার বক্তব্য এবং আলাপে উঠে এসেছে। যদিও র‍্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ মুক্ত চিন্তার একটা ব্যাখ্যা তুলে ধরতে চেয়েছেন, কিন্তু তার চেয়ে বেশি মুক্ত চিন্তার নামে হাতে গোনা গুটিকয় ব্লগারের ধর্মকে নিয়ে ক্যারিকেচারটাকে রঙ মাখিয়ে শ্রোতা-দর্শকের সামনে যেভাবে তুলে আনা হয়েছে, মুক্তচিন্তার ব্লগার হিসেবে তা আমাকে দারুণভাবে আহত করেছে।

আমি এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি, ব্লগিং সমাজ এবং ব্লগার শুধু এতে হেয় হয়নি, সে সাথে দেশে ধর্মীয় অশান্তি সৃষ্টি এবং উগ্র মৌলবাদীদের হাতে ব্লগারদের মারা যাওয়াটাতে প্রকারান্তরে ব্লগারদেরই দোষী করা হয়েছে। অথচ সমস্যার ভেতরটা যে কত গভীর তারা তা জেনেও জানেন না। অথবা দোষটা এমন একটা শ্রেণীর প্রতি চাপিয়ে দিলে নিজেদেরকে দায়ভাগ থেকে নিরাপদ রাখা যাবে বলে মুক্তিবুদ্ধি চর্চার ব্লগাররাই সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। মুক্তিবুদ্ধি চর্চার ব্লগারদের এখন যে উভয় সংকট সেটা তারা স্পষ্ট করে তাদের জোরালো বক্তব্য এবং আলোচনায়।  হিংস্র ধর্মীয় উগ্রবাদীদের টার্গেট যেমন মুক্তমনা ব্লগাররা, আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্লগার এবং সরকারের টার্গেটও যখন মুক্তবুদ্ধির ব্লগাররা, তখন মুক্তমনাদের উভয় সংকট না বলে উপায় কি?  ধর্ম নিয়ে রাজনীতির লেবাসটা এত উগ্রভাবে চোখে পড়ছে যে, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে সবাই উদগ্রীব।অথচ মুক্তবুদ্ধির চর্চা থমকে গেলে, সভ্যতার এগোনো তো দূরে থাক, কোন দেশই প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে না।

ইউরোপ বা পশ্চিমা বিশ্ব অনেক আগেই ধর্মকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে অগ্রগতি এবং মুক্তচিন্তার বিকাশের স্বার্থে।  কিন্তু বাংলাদেশ, তার সরকার এবং রাজনীতি যেভাবে দিনকে দিন ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রাজনীতির খেলায় মেতে উঠছে, তাতে খুব করে আফগানিস্থানে তালিবানি পশ্চাৎপদ সময়ের কথাটাই মনে পড়ছে। সভ্যতার চাকাকে বেঁধে দিতে হলে, আপনাকে একটা আবদ্ধতার লেবাস লাগাতেই হবে, আর সে লেবাসে মুক্তবুদ্ধির চর্চাটা অবশ্যই নির্বাসিত।

মুক্তবুদ্ধির হতে হলে কোন পূর্ব বিশ্বাস বা মতবাদ মাথায় রেখে সম্ভব নয়। আর সে কারণেই মুক্তবুদ্ধির মানুষরা যুগে যুগে প্রচলিত বিশ্বাস বা মতবাদের লোকদের কাছে নিরন্তর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে। মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষদের সমস্যার জায়গাটা হলো, তাদেরকে কোন রাখ-ঢাক না রেখে, কারো সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির দিকে না চেয়ে, কোন রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষের চাপে না থেকে সত্যটাকে অকপটে উচ্চারণ করতে হয়। কেননা ঐ বিষয়গুলো তাদের মাথায় একদম থাকে না।  তাতে ঝামেলাটা বেধে যায় গতানুগতিকতা (status quo)-র সাথে।

ব্রুনো, গ্যালিলিও তারাও কেমন তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন অবলীলায় তাদের লব্ধ সত্যকে প্রকাশ করতে যেয়ে। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি আপনার জানাকে অবরুদ্ধ রাখবেন কি না কোন ধরণের চাপ, রাজনীতি বা হুমকির বশবর্তী হয়ে? অথবা আপনার মাঝে ভিন্ন চিন্তার উদয় হলে প্রচলিত ধ্যাণ, ধারণা বা বিশ্বাসকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবেন কি না? তাদের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে সন্দেহবাদিতা প্রকাশ করবেন কি না?  যদি প্রচলিত ধ্যাণ-ধারণা বা বিশ্বাস যথেষ্ট উদারতা পোষণ করে, তবে তারা আপনার এই প্রশ্নবাণ বা সন্দেহবাদীতাকে উষ্কানি না বলে সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে এবং আপনার প্রশ্নের প্রত্যুত্তর দেবার চেষ্টা করবে। তারা একটা সমাধানে বা নিদেনপক্ষে শান্তিপূর্ণ বোঝা-পড়ায় আসার চেষ্টা করবে বক্তব্য এবং আলোচনার মাধ্যমে।

পক্ষান্তরে, যারা গতানুগতিকতাকে জিইয়ে রাখতে চায়, তারা তাতে যৎসামান্য সংস্কার দিয়েই শুরু করবে, যতটুকুই তাদের প্রয়োজন।তাদের হারাবার ভয়টা খুব বেশি। সৃজনশীলতা্র স্পর্শ টানতে তাদের বাধবে। গতানুগতিকতায় চালিত এই লোকগুলোরও প্রয়োজন আছে, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং কৌশলগত জগতে তাদের কিছু সমর্থক শ্রেণী তৈরি করা। এই সমর্থকরা আবার মুক্তবুদ্ধি চর্চার জগতের মানুষের মত সাত-পাঁচ না ভেবে কাজ করে না। তারা যথেষ্ট কৌশলী স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এবং সে অনুযায়ী বন্ধু-বিভেদ এবং গ্রহণ-বর্জনের সংজ্ঞা তৈরি করে দেন।

’৭১ টিভি-কেও দেখা গেছে ঠিক সেভাবেই তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দিয়ে তাদের সংলাপ সাজাতে। মান্যবর আইনমন্ত্রী, র‍্যাব প্রধান এবং বাংলা ব্লগ জগতের প্রতিনিধি হিসেবে ব্লগার অমি রহমান পিয়াল। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিলো, যেখানে তারা ব্লগার এবং ব্লগারদের নিরাপত্তা বিষয়ক কথা বলছেন, সেখানে যে ব্লগের তিনজন ব্লগার এই পর্যন্ত চরমপন্থী ধর্মীয় জঙ্গীদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, সে ব্লগ থেকে কাউকে তাদের আলোচনায় অন্তর্ভূক্ত করা হলো না।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে যদি বলি, তবে দেখা যাচ্ছে অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, এবং নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় (নিলয় নীল) ‘মুক্তমনা’ ব্লগের সাথে জড়িত ছিলেন, যদিও নীল ‘ইস্টিশন’ ব্লগেরও ব্লগার। আমরা আরো জানি, এই ‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিই রয়েছে চরমপন্থী মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রচন্ড আক্রোশ এবং’৭১ টিভির সেই অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় যারা প্রকৃতই মুক্তমনা বলে দাবীদার এবং সে কারণে প্রাণ-বিসর্জনও দিয়েছেন, তাদের প্রতিনিধিত্ব স্থানীয় কাউকে পেলাম না কেন? অভিজিৎ রায় তার স্টেটাসে সুস্পষ্ট ঘোষণাই দিয়েছেন:

“যারা ভাবে বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি। জামাত শিবির, রাজাকারেরা নির্বিষ ঢোরা সাপ না, তা একাত্তরেই আমরা জনেছিলাম। আশি নব্বইয়ের দশকে শিবিরের রগ কাটার বিবরণ আমি কম পড়িনি। আমার কাছের বন্ধুবান্ধবেরাই কম আহত হয় নাই।

থাবা বাবার মর্মান্তিক খবরে আমি ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ, উন্মত্ত, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক ফোঁটা বিচলিত নই। জামাত শিবির আর সাইদী মাইদী কদু বদু যদু মোল্লাদের সময় যে শেষ এ থেকে খুব ভাল করেই আমি বুঝতে পারছি। এরা সব সময়ই মরার আগে শেষ কামড় দিতে চেষ্টা করে। ৭১ এ বিজয় দিবসের দুই দিন আগে কারা আর কেন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেছিল শকুনের দল, মনে আছে? মনে আছে স্বৈরাচারের পতনের ঠিক আগে কি ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ডাক্তার মিলনকে? এগুলো আলামত। তাদের অন্তিম সময় সমাগত। পিপিলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে!

বিজয় আমাদের অবশ্যাম্ভাবী।”

উপরের কথাগুলো যিনি বলে ফেলেন, তিনি নিশ্চয়ই গভীর এক সত্যকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলে এই রকম বলতে পারেন। আর এই গভীর সত্যকে অনুধাবন করাটা যে একেবারেই আমাদেরএবং বিশ্ব ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে উঠে এসেছে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু সেই সত্যকে অনুধাবন করার মত যথেষ্ট দূরদর্শিতা ’৭১ টিভির আলোচকদের কাছ থেকে আসেনি, এমনকি যার কাছ থেকে আসা উচিৎ ছিল নিদেনপক্ষে, সে অমি রহমান পিয়াল বিষয়টাকে সুস্পষ্টতা না দিয়ে বরং ‘মুক্তমনা’ শব্দটাকে সম্ভবত অচ্ছুৎ কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছেন।

একদিকে ওনারা বলছেন, ধর্মান্ধ মৌলবাদ, কিছু ব্লগারের ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর বা উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছে বলে সে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তারা এখন মুক্তিযুদ্ধ বা গণজাগরণ মঞ্চের স্বপক্ষের ব্লগারদের নাস্তিক বলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। চমৎকার। এখন তাদের এই বক্তব্যটা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে এগুলে কেমন হয়?

যে দু’জন আক্রান্ত ব্লগারের লেখাতে ধর্ম নিয়ে ক্যারিকেচার করা হয়েছে, তারা হলেন, আসিফ মহিউদ্দিন এবং রাজীব হায়দার। তাদের কারণে নাস্তিকের কার্ডটা ব্যবহার করে ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা আস্তিক-নাস্তিকের বিভেদ তুলে ধরে ইসলামকে ব্যবহার করে এক বিকৃত খেলায় মেতে উঠে। এই খেলা থেকে দু’টো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে।

এক. নাস্তিকের ট্যাগ ব্যবহার করে কোন ব্লগারকে হত্যা করলে এই ধর্মভীরু দেশে মৃত ব্লগারের প্রতি জনসমর্থন বা জনসহানুভূতির আক্রা দেখা দেবেই।

দুই. ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের মত সরকারও ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চায় নাস্তিক্যবাদের কোন স্থান বাংলাদেশে নেই। অর্থাৎ নাস্তিকরা এক পাপী শ্রেণীর, তাদের কোন স্বীকৃতি নেই।  তাদের কোনরকমের স্বাধীনতা দেয়া উচিৎ নয়, বাক স্বাধীনতা তো নয়ই। বরং নাস্তিকদের প্রতি রোষানল নেমে আসাটা অন্যায়ের কিছু নয়, তা অবধারিতই। এমন একটা মেসেজ সরকার খুব সহজে মিডিয়া ব্যবহার করে জনগণকে জানিয়ে দিচ্ছে। এটা যে সরকারের তরফ থেকে কত বড় অপমান, তা নাস্তিকরা ভালভাবে বুঝে। এটাও বুঝে বাংলাদেশে তাদের কোন স্থান নেই।

কিন্তু সমস্যার গভীরে গেলে বোঝা যায়, ধর্মকে নিয়ে ক্যারিকেচারের কারণ ধর্ম, এবং বিশেষ করে ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মান্ধ ধর্মগুরুদের কারণেই। আমি আগে এক লেখায় বলেছি, “মনে রাখতে হবে, একজন অন্য ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিক (নিরীশ্বরবাদী) বা সন্দেহবাদী মানুষের কাছে, নবী-রাসূলরা স্রেফ একজন মানুষই, তাদের মাধ্যমে আসা ধর্মগ্রন্থ স্রেফ একটা গ্রন্থ। যেমন, মুসলমানদের কাছে হিন্দু ধর্মের দেব-দেবী, রাম-শ্রীকৃষ্ণ যেমন, তেমনি হিন্দুদের কাছে মুসলমানদের নবী-রসূল আল্লাহ তেমন।” নাস্তিকদের নিয়েও তো কম ক্যারিকেচার করা হয় না। তখন কোন সমস্যা নেই। দুর্দান্ত বাজে মন্তব্যে জর্জরিত হয়ে নাস্তিকরা যদি তাদের সহনশীলতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারে, তবে ধর্মবাদীরা তা পারে না কেন?

এক ধরণের অবজ্ঞা এবং বিদ্রুপ এই হরে-কৃষ্ণ গোষ্ঠিদেরকেও ক্যানাডাতে করতে দেখেছি।  সুতরাং এখন একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিক ব্লগা্রের তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যদি মনে হয়, ধর্মের কোন বাণী বা ধর্মীয় গুরুদেবদের কোন আচরণ হাস্যরসের উদ্রেক করছে, তবে সেটাকে নিয়ে সে ক্যারিকেচার করতেই পারে। সে তার দৃষ্টিভঙ্গিগত স্বাধীনতা।

আবার কোন ব্লগার তার যুক্তি-বুদ্ধি দিয়েই যখন অনুধাবন করতে পারে যে, খুব গুরুত্ব এবং ভারিক্কি বজায় রেখে ধর্ম ব্যবসায়ীদের এর প্রচার এবং প্রসার, আমাদের শিক্ষার আলো থেকে দূরে অবস্থিত ধার্মিক জনগোষ্ঠীর সুস্থ চিন্তা-ভাবনাকে মন্দভাবে প্রভাবিত করছে,সেক্ষেত্রে সে ব্লগারের ক্যারিকেচারের আশ্রয় নেয়াটা জনগণকে বিষয়টির অন্তঃসারশূণ্যতার প্রতি দিকপাত করার একটা প্রয়াস বলে প্রতীয়মান হতে পারে। এটা যেন ছোট বাচ্চার রাজা ন্যাংটা বলার মতই।

তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা তা উল্লেখ না করলেই নয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগণের তথাকথিত ধর্মীয় গুরুদের যে আচরণ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে সাথে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আদৌ সুখকর নয়। চরম লজ্জার কষ্টের বেদনার নিষ্ঠুরতার। ’৭১-এ প্রায় সব ইসলাম ধর্মীয় রাজনীতিক, সামাজিক শক্তিগুলো কী অবলীলায় পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বাঙালির মুক্তিকে টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিলো, সেটা যে কোন সংবেদনশীল তরুণকে ধর্মেরপ্রতি অনীহা তৈরি করাতেই যথেষ্ট। ইসলামের এই ধর্মগুরুরা গণিমতের মাল বলে নিজ দেশের মা-বোনদের জীবনকে দুর্বিসহ করেছে, এখনও সে শক্তি সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিধর হয়ে আছে, এতে করে কি ধর্মকে নিয়ে তরুণ প্রজন্মের কোন অংশ যুক্তিসংগতভাবে নিন্দা ছুঁড়ে দিতে পারে না? ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে একের পর এক গণহত্যা রাগী তরুণ সমাজকে, ধর্মকে নিয়ে ক্যারিকেচারে ঠেলে দিলে তার দায়-দায়িত্ব মূলতঃ ধর্মগুরুদেরই নিতে হবে। আওয়ামী সোনার সন্তানেরা দোষ করলে সেটা আওয়ামীলীগের উপরেই পড়ে।

অথচ আমাদের ধর্মগুরুরা তাদের সন্তান সমতূল্য, ক্ষেত্রবিশেষ নাতি সমতূল্যদের ধর্মকে অবমাননার নামে ফাঁসি চান। কাফের হত্যাকে যায়েজ বলে ফতোয়া দেন।  অথচ ব্লগারদের সাথে নিদেনপক্ষে আলাপ-আলোচনায় বসতে রাজী হন না। রাষ্ট্রও থাকে নীরব যেন তার এক প্রছন্ন সমর্থন, ধর্মগুরু এবং ধর্মবাদীদের আনুকূল্যে ও আশীর্বাদে ক্ষমতাকে শক্তকরণ এবং সে সাথে আগাম ভোট ব্যাংক তৈরিকরণ।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র “লালসালু”-তেও মোল্লাতন্ত্রের নিশ্ছিদ্র নিয়ন্ত্রণের ভেতরেও সূক্ষ্ম প্রতিবাদের প্রকাশ থাকে, তা যত ক্ষীণই হোক। অতএব মানবতার জাগরণের প্রয়াসেএ ধরণের শ্বাসরুদ্ধকর অসৃজনশীল, সৃষ্টিহীন বাস্তবতায় ধর্মকে আঘাত দিয়ে যদি কোন তরুণ তার ক্রোধের নালিশ জানিয়ে দেয়, তাকে নাস্তিকের ট্যাগে আক্রান্ত করা গেলে, ক্ষমতাসীন এবং ধর্মগুরুদের নিজেদের অন্যায় অসত্যকে ঢাকা দেবার নামান্তরই হয়ে উঠে।

কবি নজরুলও ধর্মকে আঘাত দিয়ে জাগাতে চেয়েছেন, বেগম রোকেয়া আরো একধাপ এগিয়ে কথা বলেছেন, [“যখনই কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপে অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। আমরা প্রথমত যাহা মানি নাই, তাহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষ-গণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষোচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।” – “আমাদের অবনতি” প্রবন্ধ হতে]। আর মাইকেল মধুসূদন দত্ত তো কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলেছেন, রামের বিপরীতে রাবণকে নায়ক করে রাবণায়ণ (মেঘনাধ বধ কাব্য) সৃষ্টি করেছেন।

সরকারের ভূমিকাই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, যা অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়কেও অবলীলায় বলে ফেলতে হয়েছে, “... ব্লগার হত্যায় সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে।” [৪ জুলাই ২০১৫, বিডিনিউজ২৪ডটকম]।  নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের হত্যাকান্ডের পর সরকারের উপর ভেতর-বাহিরের চাপ পড়েছে, সেখানে সরকারের প্রমাণের প্রয়োজন হয়ে উঠেছে যে তারা ধর্মান্ধ ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখার (appease)  কাজে ব্যাপৃত নয়। সরকার এমন এক পরিস্থিতি নিজের জন্য তৈরি করেছে, যেখানে তাকে ধর্মান্ধ উগ্র ইসলামী মৌলবাদকে মেনে নিতে হচ্ছে (যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আওয়ামী ওলামা লীগ), আর অন্যদিকে প্রগতিশীল মুক্তমনা বুদ্ধিবৃত্তিক যে একটা ক্ষীণধারার সৃষ্টি হয়েছে, তাদের লেখনীই যেন সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যেহেতু ধর্মান্ধ মৌলবাদ মুক্তবুদ্ধিবৃত্তিক এই ক্ষীণধারাকে যথেষ্ট জোরালো মনে করে এর বিরুদ্ধে চাপাতিহস্ত হওয়াটা তাদের রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের মোক্ষম সুযোগ বলে ধরে নিয়ে এগুচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রধানত তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে ভয়ংকর নাজুক অবস্থায় উপনীত করায়, এখন নাস্তিক-আস্তিক স্নায়ুযুদ্ধ-টা মোকাবিলায় কলমে পেরে না উঠে চাপাতিহস্ত হওয়া ছাড়া বিকৃত ঘৃণ্য মৌলবাদের আর কোন বিকল্পই খোলা নেই। বাংলাদেশে তাদের এই কোণঠাসা অবস্থা থেকে শৌর্য-বীর্যে উত্তরণ ঘটার আর কোন পন্থা এই মূহুর্তে আছে বলে আমার জানা নেই।

এটা ঠিকই অনুমেয়, মুক্তবুদ্ধির ব্লগারদের ধারালো যুক্তি-তর্কের কাছে পরাস্থ ধর্মীয় মৌলবাদ, তাদের জন্য অংশনি সংকেত বলে তারা বুঝে নিলেও সরকারের জন্য তা মোটেও অস্বস্থিকর ছিল না, যতক্ষণ না ধর্মান্ধ মৌলবাদ চাপাতিহস্ত হয়ে কতলে নেমে পড়ে। হেফাজতের জঙ্গী কর্মকান্ড এবং আচরণ থেকে সরকার ভালভাবে উপলব্ধি করেছে, এদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন হতে হলে বা ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে হলে ধর্মীয় মৌলবাদের (সে যেমন ধরণেরই হোক না কেন) প্রতি বিনম্র থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আর তাই, একদিকে ব্লগারদের সীমা অতিক্রম না করার ছবক দিচ্ছেন, অন্যদিকে ব্লগার হত্যা নিয়ে সরকার তাদের তদন্ত কার্যত খুব জোরালোভাবে চলছে বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারের এই নীতির পক্ষে জোরালো প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখতে তার বশংবদ শ্রেণীর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

’৭১ টিভির অনুষ্ঠানটা সেদিকটাকে লক্ষ্য করে পুরোপরি সাজানো বলে মনে হয়েছে। আর নির্ধারিত আলোচক তিনজনও যেন তাদের বক্তব্যকে ঠিক সেভাবে সাজিয়েছেন। মান্যবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তো সরাসরি সরকারী ভাষ্য তুলে ধরে বললেন, তাদেরকে জনগণের সাথে থাকতে হবে, জনগণের সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর র‍্যাব প্রধান তো তার চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে মুক্তবুদ্ধি চর্চার উপর একটা ছোটখাট বক্তব্য দিয়ে শেষমেশ ব্লগারদের বিদেশ যাবার জন্য ইসলাম ধর্মকে নিয়ে গালাগালি এবং ক্যারিকেচার করার কারণ উল্লেখ করেছেন। তার অতীত কর্মকান্ডে সরকারী দলের স্বার্থ রক্ষা নিলর্জ্জভাবে উঠে এসেছিল, বর্তমানও যে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়, সেটা বোধগম্য। যিনি এত বড় বড় কথা বলেন, তার তো বোঝার অগম্য নয় যে, তিনি যেভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, সেভাবে উন্নত বিশ্বের উর্ধ্বতন পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা করে না। ব্লগারদের কর্মকান্ডকে যিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন, তিনিই বা কতদূর সরকারী দলের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করছেন, সেটাই বিবেচ্য।

সবচেয়ে আপত্তিকর এবং বিব্রতকর ঠেকেছে, যখন ব্লগারদের প্রতিনিধি হয়ে আসা অমি রহমান পিয়ালও সরকারের সেই একই সুরকে গলায় তুলে রাগী প্রতিবাদী যুক্তিবাদী মুক্তমনা ব্লগারদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে পরিচয় করিয়ে দেন ৯ বছরের অধিককাল মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ নিয়ে লেখা একজন ব্লগার হিসেবে। যখন র‍্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, তার দৃষ্টিতে ব্লগাররা শুধু ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে লিখেন, তখন অমি পিয়ালের কাছে তথ্য এবং বক্তব্য থাকে না যে, চাপাতিতে নিশ্চিহ্ন হওয়া তিনটি প্রাণ, অভিজিৎ রায়, নিলয় নীল শুধু ইসলামকে নয়, হিন্দুধর্মসহ অন্যান্য ধর্মগুলোকেও সমালোচনার মুখে ফেলেছেন, চ্যালেজ্ঞ ছুঁড়ে দিয়েছেন। অনন্ত বিজয় দাশও যুক্তি-তর্ককে মূখ্য করে বিজ্ঞানমনস্ক লেখালেখি করেছেন।

র‍্যাব প্রধানকে মনে হয়েছে, তিনি একটা এজেন্ডা নিয়ে এসেছেন, আর তাহলো ব্লগারদের বাজে-ভাবে ইসলামবিরোধী হিসেবে দাঁড় করাতে পারলে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীদের তদন্তে অগ্রগতির ব্যর্থতাকেঢেকে দেয়া এবং সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে হাসিল করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করা। হেফাজতে ইসলামীর মতিঝিল জমায়েতের ঘটনার পর, সরকার ইসলামী মৌলবাদী শক্তির সাথে যে আপোষরফা এবং সন্তুষ্টি বিধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তাতে অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুকে একটা প্রচ্ছন্ন অনুত্তপ্ত আবরণে জড়িয়ে রাখলে সাপেও মরে, লাঠিও থাকে অভঙ্গুর।

এই মৌলবাদী শক্তির বর্তমান প্রাণপুরুষ আল্লামা শফী হুজুর কাফের/নাস্তিক হত্যা যায়েজ বলে ফতোয়া দিয়ে আইনকে হাতে তুলে নেবার মত বর্বরতার প্রচারণা করলে সরকার চুপ থাকে, ততদূরই চুপ যতদূর ব্লগার হত্যা সরকারের কাছে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কিছু না।  তবে দেশি-বিদেশী চাপ এলে তা মোকাবিলা করতে জনগণ এবং বিদেশী শক্তির চোখ-পরিষ্কার (eye-wash)-এর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

সেটাই তো যথেষ্ট নয়, সাথে থাকা উচিৎ সরকারী সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্য সংস্থাগুলোর শহীদ মিনারে সমাবেশ, যে শহীদ মিনারকে আমরা জেনে এসেছি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তবৃদ্ধির স্বপক্ষে চারণভূমি।  সেখানে ব্লগারদের কাছে ঘোষণা আসে সরকারী মতামতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাক-স্বাধীনতা যেন ‘ধর্মানুভূতি’-কে আঘাত না করে। এখন ধর্মানুভূতিটা কি এবং এটার ব্যাখ্যাটা কিভাবে করি? লেখক হুমায়ুন আজাদ বা বাংলাদেশী ক্যানেইডিয়ান গণিতজ্ঞ লেখক মীজান রহমানও যথেষ্ট বলেছেন, সেখানে আমার নতুন কিছু বলার নেই।

আমি সাদা-মাটা যা বুঝি, সেটা হলো, একটা শিশু যখন মুক্তভাবে বেড়ে উঠে ব্যক্তি, সমাজ এবং পারিবারিক প্রভাবমুক্ত হয়ে, তখন তার মাঝে একটা স্বতঃস্ফূর্ত মানসিকতার সৃষ্টি হয়। আর তাহলো, সে তার পারিপার্শ্বিক সব কিছু সম্পর্কে নির্দোষ প্রশ্ন রাখে।  কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিবিধ কারণে বিবিধ চাপের মুখে পড়ে শিশুকে আর তার মত করে বাড়তে দেয়া হয় খুব কম। বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা-ব্যবস্থা সেক্ষেত্রে আরো অনেক দূর বিস্তৃত শিশুর স্বাতন্ত্র্য জিজ্ঞাসাগুলোর যুক্তিনির্ভর উত্তর দেবার ব্যাপারে। ধর্ম এমনভাবে আমাদের উপর চেপে বসেছে, এই নিয়ে আদৌ প্রশ্ন করা সম্ভব যদি না হয়, তবে সেটা সভ্যতার অগ্রগতিতে বড় এক বাধা এবং সমস্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ফেসবুকে কাজী রায়হান রাহীর সাথে বিখ্যাত/কুখ্যাত ফারাবী শফিউর রহমানের সাথে একখন্ড কথোকপথনের ঘটনার কথা আমরা জানি। নবীজির মৃত্যুর পর তার অল্পবয়সী স্ত্রী-রা পুনরায় বিবাহ করেছে কীনা এমন প্রশ্ন রাহী রেখেছিলো।  কিন্তু এই প্রশ্ন করায় নবীজির স্ত্রীদের সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য করা হয়েছে বলে রাহী-কে দায়ী করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ সরকারও এই ধর্মান্ধ মুসলিম মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট করতে রাহী-র মত অল্পবয়সী তরুণকে সেইসময় গ্রেফতার করে এবং জামিন না দিয়ে নিজেদের রাজনীতিকে উগ্র মৌলবাদ বান্ধব করে তোলার প্রয়াস পাচ্ছেন।  আর সেই সরকারের মাননীয় মন্ত্রী যখন জনগণের সাথে থেকে তাদের ধর্মানুভূতি রক্ষার কথা বলেন, তখন সেটা একধরণের অন্ধত্ববাদিতার পদলেহন করে তাকে জিইয়ে রাখার করুণ-অসভ্য অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুইমনে হয় না।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ