আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

রাতারগুল জলারবন : বন বিধ্বংসী অপকীর্তি, নাগরিক আন্দোলনের দিনলিপি

আব্দুল করিম কিম  

বাংলাদেশের হাতে গোনা কিছু প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের অন্যতম সিলেট জেলার রাতারগুল জলারবন (Swamp Forest) । ২০১২ সাল থেকে সারাদেশের পর্যটকদের কাছে রাতারগুল এক বিস্ময় মাখা গন্তব্য হয়ে যায় । সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন হলেও, রাতারগুল জলারবন সিলেট মহানগরের বেশ কাছাকাছি । মাত্র ৪০ মিনিট সময়েই সিলেট নগরীর আম্বরখানা সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে এই বনে পৌঁছানো যায় ।

এ সহজ ও নিকট গন্তব্যটুকুও প্রায় অচেনা ছিল খোদ সিলেটেবাসীর কাছেই । বিভিন্ন গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ২০১২ সাল থেকে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক'রা দল বেঁধে রাতারগুল জলারবন পরিদর্শনে আসতে থাকে । অরণ্য ও জলের আশ্চর্য সুন্দর মিতালী প্রকৃতি প্রেমিকদের অভিভূত করে । কিন্তু এই অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ক্ষুদ্র বনের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেলে দেয় । এই অবস্থায় বন বিভাগের যেখানে পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার কথা সেখানে বন বিভাগ পর্যটনকে মাথায় রেখে প্রকল্প প্রস্তুত করতে থাকে । একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বিপন্ন ক্ষুদ্রবন গুরুত্বের সাথে সংরক্ষণ করার বদলে বন বিভাগের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও বন বিধ্বংসী অপকীর্তি বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্টের এক জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে যায় । একই সাথে সেই বন রক্ষায় নাগরিক আন্দোলনের এক ধারাবাহিক সংগ্রামেরও সূচনা হয় ।

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহ্‌পুর ইউনিয়নের 'রাতারগুল বন বিট' মূলত রাতারগুল, পূর্ব মহেশপুর ও বগাবাড়ী মৌজার মাত্র ৫০৪ একর এলাকা নিয়ে গঠিত । বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ বনে রয়েছে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী । হিজল, করচ, বরুণ এ বনের প্রধান বৃক্ষ । এ ছাড়া বেত, নল-খাগড়া, মুর্তা, ছন ইত্যাদি এই বনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ । বন বিভাগের এই তথ্য আদতে কাজীর গরু । যা কিতাবে আছে বাস্তবে নেই । যাও থাকার ছিল, সাম্প্রতিক সময়ের অবাধ পর্যটনে তাও হুমকির সম্মুখীন । বহু বছর ধরে লোকচক্ষুর প্রায় আড়ালে থাকা এই ছোট্ট বনটির বেঁচে থাকা অবশিষ্টাংশ গত তিন বছরে সর্বাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । দায়িত্বজ্ঞানহীন পর্যটকেরা শহর থেকে বিরিয়ানি ও চিপসের প্যাকেট সঙ্গে করে নিয়ে বনের অভ্যন্তরে অবাধে ফেলে এসেছেন । বনের ভিতরে উচ্চস্বরে হৈ হুল্লোড় ও মাইকে গান বাজানো হয়। এসব কর্মকাণ্ডে বনের স্থায়ী বাসিন্দা পশুপাখিদের কী ক্ষতি হচ্ছে সেটা বেশিরভাগ পর্যটক যেমন বিবেচনায় আনেননি, তেমনি তাদেরকে এই কাজে বাঁধা দেয়ার মত কোন বনরক্ষীকে কেউ কখনো দেখেনি। অথচ বহু বছর থেকেই এটি সরকার-ঘোষিত ‘Wild Life Sanctuary’। এ 'বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য' রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন বিভাগের একটি বিট অফিসও এখানে আছে !

IUCN - The World Conservation Union, Bangladesh Country Office Biodiversity of Ratargul Swamp Forest, Sylhet নামে ২০০৪ সালে একটি গবেষণা পত্র তৈরি করে । যেখানে এই বনের বিশেষত্ব তুলে ধরা হয় । এই গবেষণাই রাতারগুল জলার বন নিয়ে করা পরিপূর্ণ গবেষণাপত্র । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়-The Assam Forest Regulation 1891(VII of 1891) এর Section 17 এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ৯ জুন, ১৯৩২ এর Notification no-1774 Rমূলে ঘোষিত রাতারগুল রিজার্ভ ফরেস্ট এবং The Forest Act 1927 (XVI of 1927) এর Section 4 এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯ জানুয়ারি, ১৯৮৫ সনের Notification No-X11/For-13-19/84(P-I/45(2) মূলে ঘোষিত মহিষখেড় মৌজা ও বগাবাড়ি মৌজার প্রজ্ঞাপিত বনভূমিকে The Bangladesh Wild Life ( Preservation) Order 1973 (President’s Order 23 of 1973) এর Article 23 এর Clause(7) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার Wild Life Sanctuary ঘোষণা করেন ।

এ প্রজ্ঞাপনে রাতারগুল মৌজার ৩৩৫.৮২, বগাবাড়ি মৌজার ৩৭.৫০ ও পূর্ব মহিষখেড় মৌজার ১৩১.১৮ একর সর্বমোট ৫০৪.৫০ একর অভয়ারণ্য হিসেবে অধিভুক্ত করা হয় । কিন্তু বন বিভাগের কর্তৃত্বাধীন থাকা অবস্থায় বনের প্রকৃত অবস্থা কী সেটা দেখা যেতে পারে বন বিভাগেরই দলিল Statement of Land (Database) 2009-এ । এখানে দেখানো হয়েছে, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার উত্তর সিলেট রেঞ্জ-২ এর রাতারগুল বিটের অধীনে দশটি মৌজা– মেওয়াবিল, ঘোড়ামারা কান্দি, ছদিভদি হাওর, শিয়ালা হাওড়, লক্ষির হাওড়, শিমুলবিল হাওড়, চলিতাবাড়ি, রাতারগুল, বগাবাড়ি ও পূর্ব মহেশখেড়ে বন বিভাগের আওতাধীন মোট ভূমির পরিমাণ ৩৩২৫.৬১ একর । এর মধ্যে মাত্র ৮১৯.৬১ একর বন বিভাগের দখলে আছে, বাকি তিন চতুর্থাংশ বেদখল ! এই বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধার করার পরিবর্তে; দখলদারদের নিকট থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বন কর্মকর্তাদের নামে । রাতারগুল জলার বন নিয়ে বর্তমানে কেউ গবেষণা করলে খুব সহজে বাংলাদেশে বন সংরক্ষণের নামে 'বন বিভাগ' কি করছে তার সহজ চিত্র দেখতে পারবে । প্রকৃতিবিদ ফিলিপ গাইন অনেক পূর্বেই বলেছেন, 'যেখানে বন বিভাগ আছে, সেখানে বন নাই !'

রাতারগুলে একটি বন ছিল এবং এখনো আছে । সেই বন বাংলাদেশের আর দশটি বনের মত নয় । এই বনকে বলা হয় সোয়াম্প ফরেস্ট যার বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে জলার বন বা জলমগ্ন বন । জলাভূমিতে এমনিতেই শাপলা, শালুকসহ নানা প্রজাতির ছোট গাছপালা জন্মে থাকে । কিন্তু এসব গাছের সঙ্গে পানি সহিষ্ণু বড় গাছপালা জন্মে বিশাল জলরাশির মাঝে বনের রূপ তৈরি হলে, সেই বনকেই বলা হয় সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন ।

বাংলাদেশের বৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনও সোয়াম্প ফরেস্ট কিন্তু তা লোনা পানির সোয়াম্প (Seewater Swamp) । আর রাতারগুল হল মিঠা পানির সোয়াম্প (Fresh Water Swamp) । লোনা পানির সোয়াম্প ফরেস্ট সমুদ্র তীরবর্তী হয় । এখানে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটায় পানি সহিষ্ণু গাছপালা প্রতিদিনই জলমগ্ন হয় আবার জলশূন্যও হয় । কিন্তু মিঠা পানির সোয়াম্প বর্ষায় ও প্রাকৃতিক প্লাবনে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জলমগ্ন থাকে । মিঠা পানির সোয়াম্প মূলত নদী, হাওর ও প্রাকৃতিক জলাধারের নিকটবর্তী হয় । এখানকার প্রতিবেশ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের । এখানকার জীব-বৈচিত্র্য অত্যন্ত সংবেদনশীল । সমগ্র পৃথিবীতে মিঠা পানির সোয়াম্প (Fresh Water Swamp) ফরেস্ট হাতেগোনা । সেই সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বনকে বিশেষ মর্যাদায় যেখানে সংরক্ষণ করার কথা সেখানে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বন বিভাগ এই বনের গুরুত্বই উপলব্ধি করতে পারেনি । এই গুরুত্ব না দেয়ার কারন- বনে বিক্রয়যোগ্য মূল্যবান কোন বৃক্ষ না থাকা । যেহেতু এই বন থেকে বন কর্মকর্তাদের তেমন কোন উপরি রোজগার ছিল না সেহেতু বনের ভূমি নানা ভাবে বেহাত হতে থাকে । বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধারে বন বিভাগের তেমন কোন প্রচেষ্টা দৃষ্টিগোচর হয় না ।

এ অবস্থায় ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম কর্মীকে সাথে নিয়ে রাতারগুল জলারবন পরিদর্শনে যায় । এই পরিদর্শক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল । পরিদর্শন দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাপা, সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, বাপা-হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল,যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ই আর কোলগেট, দৈনিক সবুজ সিলেট-এর বার্তা সম্পাদক সামির মাহমুদ, দেশ টিভি'র ক্যামেরাম্যান আশরাফুল কবির, দৈনিক প্রথম আলো'র ফটো সাংবাদিক আনিস মাহমুদ, সংস্কৃতিকর্মী রুবেল আহমেদ কুয়াশা ও বাপাকর্মী ওয়াজি আহমেদ । এই পরিদর্শন কালে বাপা প্রতিনিধি দল জানতে পারেন যে, বনের পরিমাণ প্রতি বছর সংকুচিত হচ্ছে । বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় স্থানীয়রা বন থেকে অবাধে জ্বালানী কাঠ, মাছ, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করে । এই প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন কালে ফটো সাংবাদিক আনিস মাহমুদ-এর উত্তোলিত একটি ছবি ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১২ বিশ্ব পর্যটন দিবসে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো'র প্রথম পাতায় লিড ছবি হিসাবে প্রকাশিত হয় । যা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে । সেই থেকে রাতারগুল জলারবন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে । ফলে ২০১২ সাল থেকে রাতারগুল অভিমুখে দেশী-বিদেশী পর্যটকের ঢল নামে । যা এই বনের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক । এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা রাতারগুল জলারবন সংরক্ষণে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সম্পৃক্ততায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে একাধিকবার বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষার পরিবর্তে বন বিভাগ রাতারগুলের অভ্যন্তরের জলাভূমি ইজারা দেয় । ২০১২ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পর্যটক প্রবেশে বাঁধা দেয়া শুরু হলে জলাভূমি ইজারা দেয়ার আত্মঘাতী তৎপরতার কথা জনসম্মুখে উন্মোচিত হয় ।

বন বিভাগ অতীতে স্থানীয় ইজারাদারদের মৌখিক ভাবে বনের অভ্যন্তরের জলাভূমি ইজারা প্রদান করতো । ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর দৈনিক সমকাল-এর প্রথম পাতায় 'হুমকিতে সিলেটের সুন্দরবন' ও দৈনিক প্রথম আলো-এর ৩য় পাতায় 'রাতারগুলে প্রবেশের নদীতে ছাত্রলীগের বাঁশের বাঁধ' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ বনবিভাগের বন বিধ্বংসী অপতৎপরতা সারা দেশের সামনে তুলে ধরে । এই সংবাদ থেকে জানা যায়, বনের অভ্যন্তরের জলাভূমি মাছ-ব্যাঙ ও অন্যান্য সরীসৃপ আহরণ করার জন্য স্থানীয় এক ইজারাদারকে বনবিভাগ মৌখিকভাবে ইজারা দিয়েছে। প্রতি বছরই বর্ষা শেষে জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই জলাভূমি ইজারা দেয়া হয়। আর ইজারাদার বনের সাথে সংযুক্ত সব খালের মুখে এমন ভাবে বাঁধ দেয়; যেন ভেতরের পানি বাইরে গেলেও কোন জলজ প্রাণী নদীতে না ফিরে। পানি সম্পূর্ণরূপে নেমে গেলে ইজারাদার মোটর ব্যাবহার করে জলাভূমি সম্পূর্ণরূপে সেঁচে নেয়। আহরণ করা হয় জলারবনে আশ্রয় নেয়া সমস্ত মাছ। এসময় ব্যাঙ, সাপ, কাঁকড়া সহ বিভিন্ন জলজপ্রাণ নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এমন একটি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সংবাদ সম্পর্কে অবগত হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা তাৎক্ষণিক ভাবে ২২শে অক্টোবর বাঁধের স্থানে স্থানীয় গ্রামবাসীকে নিয়ে গ্রামীণ নাগরিক সভার আয়োজন করে । সেই সভা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইজারা বাতিল ও বাঁধ তুলে দেয়ার দাবী জানানো হয় । ২৩ শে অক্টোবর সকালে একই দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করে বাপা। যার ফলশ্রুতিতে বনবিভাগ বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এই মৌখিক ইজারার দায় অস্বীকার করে এবং বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে ইজারা বাতিল করে। এই একটি ঘটনাই বুঝিয়ে দেয় রাতারগুল নিয়ে বনবিভাগের বনবিনাশী অপতৎপরতা । এই ঘটনা নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে বাপা'র নজরে আসে বনবিভাগের আরেকটি ভয়াবহ অপকীর্তি।

২০০৭ সালে রীডল্যান্ড সমন্বিত সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় রাতারগুল বিটে পাখির আবাসস্থল উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয় । এই পাখির আবাসস্থল উন্নয়ন প্রকল্পটি হচ্ছে রাতারগুল জলার বনের অভ্যন্তরে পানি সহিষ্ণু বড় গাছপালা বিনাশ করে ৬০০০ ঘনমিটার মাটি কাঁটা ও ৬০০০ ঘনমিটার মাটি ভরাট। মাটি কাঁটার ফলে যে জলাধার সৃষ্টি হবে বন বিভাগের প্রকল্পে তা 'পাখির অভয়াশ্রম' । আর মাটি কাঁটা হলে উত্তোলিত মাটি দিয়ে জলাধারের চারপাশ উঁচু করে দেখানো হয় মাটি ভরাটের কাজ। এই কাজ সমাপ্ত করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ কার্য দিবস সময় দেয়া হয়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সিলেট বন বিভাগ সাক্ষরিত পত্র নং ৬২৬/২৯-৫৬ তারিখ-০৪/০২/২০০৭ ইং-এ ৭,৯৯,৬০০/= টাকা মূল্যের প্রকল্প কার্যাদেশের প্রদত্ত শর্ত সমূহে সর্বোচ্চ কতজন শ্রমিককে বনের অভ্যন্তরে নেয়া যাবে সে সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা ছিল না। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে 'বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম' বলে ঘোষিত বনাঞ্চলে অবস্থানকালীন নিয়ম-নীতি সম্পর্কেও কোন শর্ত বা নির্দেশনা প্রদান করা হয় নাই। এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বনের অভ্যন্তরে এক্সকেভেটর (Excavator) নিয়ে যায় ও দ্রুত মাটি উত্তোলন ও ভরাটের কাজ সম্পন্ন করে। 'পাখির অভয়াশ্রম' নির্মাণের এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে গিয়ে ২০০৭ সালে বন বিভাগ বনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এমন কি ২০০৮ সালেও এই অভয়াশ্রম উন্নয়ন নামে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ৩,৯৮,০০০/-টাকা (পত্র নং-১৭৪৩/২৯-৫৬ তারিখ-১২/০৩/২০০৮ ইং) গৃহীত দরমূল্যে মেসার্স মুজিব এন্টারপ্রাইজ, প্রো. মো. মুজিবুর রহমান, চাঁদনীঘাট, মৌলভিবাজার-এর অনুকূলে ৪৫ দিন সময় নির্ধারণ করে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এই পাখির অভয়াশ্রম নামের প্রকল্পটিতে পাখিদের অভয়ে আশ্রয় নেয়ার কোন তথ্য এ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। যতদূর তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, এটা মূলত বর্ষাকালে বনে আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে সহজে শিকার বানানোর লক্ষ্যে নির্মিত জলাধার। বর্ষা শেষে পানি নামার সময়ে বনের অভ্যন্তরের সকল প্রাকৃতিক খালের মুখে 'জাল' পাতা হয় । ফলে পানি নেমে গেলেও মাছ'সহ জলজ প্রাণী বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কৃত্রিম ভাবে বানানো জলাধারে জমা হতে থাকে । আর বন বিভাগের নিয়োগ দেয়া মৌখিক ইজারাদার শেষ পর্যন্ত জলাধার সেঁচে সেই মাছ সংগ্রহ করে। এই সময় অন্যান্য জলজ প্রাণী অবাধে নিধন করা হয়।

২০১২ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবরে বাপা'র আন্দোলন বনের বহির্মুখ বন্ধ করে প্রভাবশালী ইজারাদারদের তৎপরতা বন্ধ করতে সমর্থ হলেও আশপাশের গ্রামবাসীর মাছ শিকার চলতে থাকে। একই সাথে চলতে থাকে হিজল-করচ নিধন। এই পরিস্থিতি অবলোকন করে বাপা সিলেট শাখা পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ও বন বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা বন্ধে বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, গ্রামীণ নাগরিকসভা, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে বনবিভাগকে বনের কোর জোন ও বাফার জোন নির্ধারণ, জলজসম্পদ আহরণ বন্ধে কঠোর নজরদারী, পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, সীমানা চিহ্নিতকরণ, দখলীকৃত জমি উদ্ধার, হিজল-করচ নিধন প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছে । কিন্তু বনবিভাগ-এর কিছুই আমলে নেয়নি। তাঁরা বনে পর্যটন বিকাশের উদ্যোগ নিয়ে 'স্টেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড প্রটেকশন প্রজেক্ট'-এর কাজ অত্যন্ত সংগোপনে শুরু করে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর ‘রাতারগুল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য স্থাপন ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, 'প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা হিজল, করচ, বরুণ গাছের পাশাপাশি বেত, বাঁশ, মুর্তার সংযোজন রাতারগুলকে জলার বন হিসেবে অনন্য করেছে। ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭০ এরও বেশি প্রজাতির পাখি ও প্রায় ১০ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে এই বনে। এই সম্পদ রক্ষায় জলারবনকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে রূপান্তর ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন।'

বন বিভাগের এই প্রকল্প প্রস্তাব শুনে যে কারো মনে খটকা লাগতে পারে। প্রথমত: ‘বাঁশ, বেত, মূর্তার সংযোজন’- বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর চতুর্থ অধ্যায় (রক্ষিত এলাকা) এর ১৪.১ ধারার (ড) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন এলিয়েন ও আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ প্রবেশ করাইতে পারিবেন না। এ ব্যাপারে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে ফজলুল হক একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাতারগুলে বন বিভাগ বাঁশ, বেত ও মূর্তার যে প্ল্যান্টেশন করেছে তা ঐ বনের মৌলিকত্ব ধ্বংস করে দেবে । বন রক্ষার্থে বাঁশ, বেত ও মূর্তা লাগানো হয়েছে বলা হলেও বাস্তবে এগুলোর কারণে অন্যান্য গাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে । এক সময় পুরো বন মৃতপ্রায় হয়ে পরতে পারে। অর্থাৎ বন বিভাগ নিজেই আইন ভেঙে বসে আছে! দ্বিতীয়ত: ‘জলার বনকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যে রূপান্তর ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন’ অংশটুকু নিয়ে। এই প্রস্তাবে বন বিভাগ কি নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছে না? যে বনকে ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে- সেটা রক্ষায় বন বিভাগ তাহলে কি ব্যর্থ নয়?

বন বিভাগের এই প্রকল্প প্রস্তাবের কথা অবগত হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র একটি প্রতিনিধি দল ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট রাতারগুল পরিদর্শনে যায় । সেই সফরের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাপা'র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট সুলতানা কামাল, বাপা’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ। পরিদর্শন শেষে রাতারগুল জলার বনের পশ্চিম প্রান্তের প্রবেশ মুখ মঠের ঘাটে আয়োজিত গ্রামীণ নাগরিক সভায় বন বিভাগের অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহনে বনের প্রকৃতি বদলে যাওয়ার আশংকা করে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়, ‘বাস্তবতার নিরিখে এই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়নি। রাতারগুল জলার বনে আমরা কোন রূপান্তর চাইনা, চাই সংরক্ষণ দৃঢ় হোক। রাতারগুলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা প্রাকৃতিক ভাবেই হবে এবং এ ক্ষেত্রে বনবিভাগকে শুধু নজরদারি বাড়াতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পর্যটক।' সভায় উপস্থিত বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক পরিমল চন্দ্র পাল বাপা'র পরিদর্শক দলের বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার কথা জানান।

এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটে বাপা ও ইউকে- বাংলাদেশ এডুকেশন ট্রাস্ট-এর যৌথ উদ্যোগে ‘রাতারগুল: জলাবনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা’ শিরোনামে আয়োজিত এক সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত-এর উপস্থিতিতে রাতারগুল রক্ষায় ১২ দফা দাবি জানানো হয় । এর মধ্যে ছিল- রাতারগুল সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সেমিনার আয়োজন, সীমানা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে বনের প্রকৃত আয়তন পরিমাপ, বনের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে ‘বাফার জোন’ তৈরি, বনের কোর জোন সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত রাখা, সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বনের অভ্যন্তরের জলাধার সংস্কার করে শুকনা মৌসুমেও পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা, বর্ষাকালে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক নৌযান রাখা ও বনে ইঞ্জিন নৌকা প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, বনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয়দেরকে বনরক্ষায় সম্পৃক্ত করা, পর্যটনের নামে স্থাপনা নির্মাণ না করা, সামাজিক বনায়নের নামে বনের বাফার জোনে ক্ষতিকর কোন উদ্ভিদ রোপণ না করা এবং প্রজনন কালে মাছ ধরা বন্ধে কঠোর নজরদারি বাড়ানো।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী মতবিনিময় সভায় আলোচকদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জলারবন রাতারগুল রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহনের কথা বলেন । অর্থমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে বনের মধ্যে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং শাবিপ্রবি’র পরিবেশ বিভাগ, সরকারের বনবিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদীদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। একই সাথে তিনি বনসংরক্ষণ ও নিরাপত্তায় কমিউনিটি পুলিশ ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত বলে মন্তব্য করেন । অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিশ্বের মধ্যে এরকম জলারবন মাত্র ২২টি রয়েছে এবং রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট তাই এটি রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন। এই অকৃত্রিম জলাধার, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে রাতারগুলকে টিকিয়ে রাখতে বন বিভাগকে একটি জাতীয় সেমিনার আয়োজন করার পরামর্শ দেন।

ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া ব্যাতিত অর্থমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশ ও পরামর্শ বনবিভাগ আমলে নেয়নি । কোন ধরনের আলোচনা বা গণশুনানী না করেই বন বিভাগ ‘বন বিভাগের সংরক্ষণ ব্যবস্থা মজবুত করতে’ সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) দপ্তর ‘রাতারগুল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য স্থাপন ও উন্নয়ন’ নামে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠায় । প্রকল্পে রাতারগুলকে বাংলাদেশের একমাত্র সমৃদ্ধ জলার বন উল্লেখ করে বলা হয়, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণগাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা, খাগড়া, মূর্তা ও শণজাতীয় গাছ রাতারগুলকে জলার বন হিসেবে অনন্য করেছে। প্রকল্পে প্রাণী ও বনসম্পদ রক্ষায় জলার বনকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যে রূপান্তরে অবকাঠামো নির্মাণ করতে সম্ভাব্য ব্যয় পাঁচ কোটি ৬১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ টাকা বন অধিদপ্তরের থোক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সরবরাহ ও সেবা খাতে ২৫ লাখ টাকা, মেরামত, সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন খাতে ৩৩ লাখ টাকা, সম্পদ সংগ্রহ ও ক্রয় বাবদ ৫৮ লাখ টাকা, বনায়ন ৩০ লাখ টাকা ব্যয় উল্লেখ করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয় নির্মাণ ও পূর্ত খাতে, চার কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রীর সাথে আয়োজিত এই সভার পর বনবিভাগ বন ধ্বংসকারী প্রকল্পের ব্যয় ৫ কোটি থেকে ৭ কোটি টাকায় উন্নীত করে এবং রাতারগুল বনের অভ্যন্তরে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অপরিকল্পিত একটি ওয়াচ টাওয়ার, গাছ কেটে রাস্তা নির্মাণ ও পার্ক অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করে।

দেশের প্রকৃতিবিদরা মনে করেন, ইতোমধ্যেই অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকরা রাতারগুলের যথেষ্ট ক্ষতি করে ফেলেছে । যেখানে পর্যটক নিয়ন্ত্রন করে এই ক্ষুদ্র আকারের বিশেষ বনকে সংরক্ষণ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরী ছিল, সেখানে বন বিভাগের এই পদক্ষেপগুলো রাতারগুলকে প্রাকৃতিক বন থেকে বিনোদন স্পটে রুপান্তর করবে। বন বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পে ৬০ ফুট উচ্চতার টাওয়ারের জন্য স্থান নির্বাচনেই রয়েছে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব। প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বনে যে কেউ যে কোন পথে প্রবেশ করতে পারে । ফলে বনের ঠিক কেন্দ্রস্থলে থাকা টাওয়ার পর্যটকদের দূর থেকে আকর্ষণ করবে। ফলে বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে বনে প্রবেশ করা পর্যটকরা টাওয়ারের দিকে আসতে থাকলে বনের নির্জনতা বিগ্নিত হবে। বনের অভ্যন্তরে রেস্টহাউজ সহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে প্রকৃতি ও প্রানবৈচিত্র্যের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। রাতারগুলের জন্য যদি কোন উন্নয়ন উদ্যোগ নিতে হয়, তবে সেটা হতে হবে প্রকৃতি ও প্রানবৈচিত্র্যেকে রক্ষার জন্য । কিন্তু বর্তমান প্রকল্প কোনভাবেই রাতারগুল সুরক্ষায় অবদান রাখবে না। এটা পুরোটাই পর্যটক বৃদ্ধির প্রকল্প, পর্যটক নিয়ন্ত্রণের নয়।

২০১৩ সালের শীত মৌসুমে প্রকল্পের কাজ সংগোপনে শুরু করে তা প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসে। শীত মৌসুমে জলারবন শুকিয়ে যায় । প্রকৃতি বিবর্ন থাকে। তাই ঐ সময়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা একেবারেই কমে যায়। আত্মঘাতী এই প্রকল্পের সংবাদ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে যখন প্রকাশিত হয়, তখন পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের প্রায় ৩০ ফুট সিঁড়ির কাজ শেষ হয়ে গেছে । বন বিভাগের বিট অফিস সংলগ্ন স্থানে বিশ্রামাগার নির্মাণও প্রায় শেষ। অন্যান্য কাজের মধ্যে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ১৫ ফুট চওড়া একটি রাস্তা হওয়া বাকি। যা বনের ভেতরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক একটি মেঠোপথকে পাকা রাস্তায় রূপান্তর করার কথা। যা করা হলে অনেক গাছ কাটার পাশাপাশি বর্ষায় বনের ভেতরের পানি প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করেব। প্রকল্প অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মধ্যে টাওয়ার, ভবন ও রাস্তা নির্মাণকাজ সমাপ্ত করার কথা। সিলেট ডিএফওর কার্যালয়ের প্রস্তাবে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে সরাসরি বন বিভাগের ‘ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড নেচার কনজারভেশন সার্কেল’-এর মাধ্যমে।

বাপা, সিলেট শাখার পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ৫ই এপ্রিল,২০১৪ তারিখে রাতারগুল পরিদর্শনে গিয়ে বন বিভাগের অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণধীন দেখে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন এবং তা প্রতিরোধে কঠোর কর্মসূচি প্রণয়নের ঘোষণা দেন । বিভিন্ন গণমাধ্যমে টাওয়ারসহ অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে। দেশজুড়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি প্রেমিকরা এই সংবাদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন।

রাতারগুল সুরক্ষার পরিবর্তে বন বিভাগের এই প্রকল্পবাজীর সংবাদে সিলেটের বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বাপা, সিলেট শাখা ১০ই এপ্রিল ২০১৪ তারিখে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে বন বিভাগের এই প্রকল্পবাজীর বিরুদ্ধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করা হয়। অবিলম্বে প্রকল্পবাজী বন্ধ করতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ১০১ সদস্য বিশিষ্ট 'রাতারগুল জলারবন সংরক্ষণ কমিটি' গঠন করা হয়। রাজনীতিবিদ লোকমান আহমদ'কে আহ্বায়ক ও বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম'কে সদস্য সচিব করে গঠন করা কমিটি গত ১১ই এপ্রিল 'বনকে বনের মত থাকতে দাও' এ শ্লোগানে বন বিভাগের প্রকল্পবাজী বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ১৩ই এপ্রিল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করে কমিটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করে । ১২টি দাবি তুলে ধরে স্মারকলিপি পেশকালে কমিটির পক্ষ থেকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সম্পৃক্ততায় এক সপ্তাহের মধ্যে বন সংরক্ষণে নাগরিক সংলাপ আয়োজন করার দাবী জানানো হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন 'তরুপল্লব'-এর সভাপতি প্রকৃতিবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ও সাধারণ সম্পাদক নিসর্গী মোকারম হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত দেশের একমাত্র জলার বন রাতারগুলে বন বিভাগের অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ শুধুমাত্র স্থগিত করলেই চলবে না, স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। বন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বন সংরক্ষণে ব্যয় করতে হবে। সংবাদপত্রে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বন বিভাগের দায়িত্ব বন সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পর্যটনের বিকাশ নয় । তাই সবার আগে বন বিভাগকে রাতারগুল বিটের ২৫০৬ একর বনভূমি উদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে। মূল কাজ বাদ দিয়ে পর্যটন বিকাশের নামে স্থাপনা নির্মাণ থেকে স্থায়ীভাবে সরে আসতে হবে। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম এই দাবির স্বপক্ষ্যে একাধিক প্রতিবেদন (১, ২, ৩) প্রকাশ করে। এই প্রকল্পবাজী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক ভাবে আলোচিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলোচনার উদ্যোগ নেয়া দূরে থাক- তিনি দ্রুততার সাথে প্রকল্পের কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেন।

এদিকে স্মারকলিপি প্রদানের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ায় ২২শে এপ্রিল ২০১৪ ইং কমিটির পক্ষ্য থেকে একটি প্রতিনিধি দল সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম-এর নেতৃত্বে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। প্রতিনিধি দলকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা সম্ভবপর নয় বলে জানান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষনিক ভাবে প্রকল্প বন্ধ এবং বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সম্পৃক্ততায় বন সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার দাবিতে প্রতিনিধি দলটি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রবেশমুখে আমরন অনশনে বসে যায় । বেলা সাড়ে ১১ ঘটিকা থেকে প্রখর রৌদ্রে এমন কর্মসূচি পালন শুরু হলে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অনশকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান নিতে থাকে। পরিবেশকর্মীদের আমরন অনশনের দৃঢ় প্রত্যয়ের কাছে বন বিভাগ পরাজয় স্বীকার করে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা দেয়।

সাময়িকভাবে এই প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলেও- একটি জাতীয় দৈনিকে এ প্রকল্প সংক্রান্ত সংবাদের প্রতিবাদে লিখিত পত্রে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রকৃতি প্রেমি পর্যটকদের বিনোদনের কোন সুযোগ না থাকায় 'স্টেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড প্রটেকশন প্রজেক্ট' হাতে নেয়া হয়েছে। ....বর্ণিত পার্ক অফিস ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট তথা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের কোন সৌন্দর্যহানী ঘটবে না। বরং উহা নির্মাণের ফলে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পরিভ্রমনে আরও আকৃষ্ট হবে (পত্র নং-২২.০১.০০০০.৬৭২.৩৭.০০১.১৪.১৬)।

অনশনের মুখে প্রকল্পের কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলেও যে কোন সময় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আশংকায় রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ২৪শে এপ্রিল ২০১৪ ইং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় ভাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। স্থাপনা নির্মাণ ও ধবংসের হাত থেকে দেশের একমাত্র জলারবন ‘রাতারগুল’ রক্ষার দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। বাপার যুগ্মসম্পাদক শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে মূল বক্তব্য পেশ করেন বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবি সৈয়দ আবুল মকসুদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব সি.এম শফি সামী, ঢাকাস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সি.এম তোফায়েল সামী, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন ও বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল প্রমুখ।

এরই মধ্যে সিলেটের কিছু সংবাদকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও রাতারগুল এলাকার স্থানীয় কিছু যুব সংগঠককে নিয়ে ৫ জুন ২০১৪ ইং বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’ নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন গঠন করা হয় । যারা শুরু থেকেই রাতারগুল বনে মানবসৃষ্ট জঞ্জাল যেমন, প্লাস্টিক ও পলিথিন উদ্ধার করে। এছাড়া স্থানীয় জনগণকে বন রক্ষায় সচেতন করতে লিফলেট বিলি করে । সাধারন মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে গণ-আবেদন কর্মসূচীর আয়োজন করে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালনের একমাসের মাথায় বন বিভাগ আবারো ওয়াচ টাওয়ারের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ শুরু করে দিলে 'ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ২২ জুন ২০১৪ ইং বিভাগীয় বন কার্যালয় ঘেরাও করে রাতারগুলে ওয়াচটাওয়ার নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতে বন বিভাগ পুনরায় অপরিকল্পিত ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের কাজ বন্ধ করে। রাতারগুল জলারবন রক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশবাদী ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে কর্মসূচী পালন করে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বগুড়া ও সুনামগঞ্জ-এ রাতারগুল রক্ষার দাবিতে কর্মসূচী পালন করা হয়। এমনকি রাতারগুল জলারবন সংলগ্ন গ্রামবাসীও নিজেদের উদ্যোগে বনরক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। পরিবেশকর্মীরা রাতারগুল জলারবন সংলগ্ন রাতারগুল গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে প্রতিষ্ঠা করা হয় 'রাতারগুল সবুজ বিপ্লব সমিতি'। সিলেটের রুচিশীল পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠান 'স্লোগান' রাতারগুল রক্ষায় নাগরিক আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে 'সেইভ রাতারগুল' ছাপচিত্রে পরিবেশবান্ধব কাগুজে ব্যাগ উন্মোচন করে। জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে নাগরিক আন্দোলনের স্বপক্ষ্যে প্রকাশিত হয় একাধিক নিবন্ধ । একাধিক জাতীয় দৈনিক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।

এদিকে ওয়াচ টাওয়ারের নির্মাণ বাতিল ঘোষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে বন সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে বনমন্ত্রী বরাবর ৮ জুলাই ২০১৪ ইং থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা, ভূমিসন্তান বাংলাদেশ, গ্রীণ এক্সপ্লোর সোসাইটি শাবিপ্রবি এবং প্রাধিকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এর যৌথ উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী গণইমেইল প্রদান কর্মসূচি শুরু করা হয়। এসব আন্দোলনের চাপে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অচিরেই একটি নাগরিক মতবিনিময় সভার আশ্বাস দেন। তাঁর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়। এদিকে টাওয়ারের নির্মাণ কাজও অসমাপ্ত থাকে। অবশেষে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে গত ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ইং সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে 'রাতারগুল জলারবনের উন্নয়ন ও সংরক্ষনে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে' মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত আমন্ত্রণপত্র সিলেটের সকল পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক-গবেষক, সংবাদকর্মী ও রাতারগুল এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের কাছে প্রেরণ করা হয় । কিন্তু এই মতবিনিময় সভার আয়োজক হিসাবে বন বিভাগের নাম আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হলেও কার্যত সভাটি ছিল সহ-বন ব্যাবস্থাপনায় ইউএস এইডের অর্থায়নে সৃষ্ট বিশেষ একটি এনজিও আয়োজিত কর্মশালা। বন বিভাগের এমন কূটকৌশলের প্রতিবাদ করে রাতারগুল জলারবন সংরক্ষণ কমিটি সভাটি বয়কট করে। অন্যান্যদের নিয়ে সভাটি শেষ করা হলেও আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞরা বন বিষয়ে বন বিভাগের বর্তমান কর্মকান্ডকে অপরিকল্পিত ও বনের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন। সেই সাথে বন বিভাগকে পুনরায় পর্যালোচনার মাধ্যমে সঠিক ও পরিকল্পিত কর্মপদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারেও পরামর্শ প্রদান করেন। এই বৈঠকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রাতারগুল বনে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণসহ সকল অপরিকল্পিত কর্মকান্ড বন্ধ রাখার ব্যাপারে উপস্থিত সবাইকে আশ্বস্ত করেন। যদিও সংরক্ষণ কমিটির নেতৃবৃন্দের বয়কটের কারণে সভাটি অকার্যকর হয়ে যায়। ঐ সভাসুত্রে জানা যায়, বন বিভাগ রাতারগুল জলারবনকে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ‘ক্রেল’ প্রকল্পের আওতায় এনে কো-ম্যানেজমেন্টে ছেড়ে দিবে। এই সভা আহ্বানের পাশাপাশি বনবিভাগ টাওয়ার নির্মাণের কাজ পুনরায় শুরু করে।

বন বিভাগের এই কূটকৌশলে আন্দোলন আরও কঠোর করা এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে রাতারগুল অভিমুখে সিলেট শহর থেকে একটি 'গণপদযাত্রা' আয়োজনের চিন্তা করা হয়। এমন কর্মসূচী সফল করতে রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন । এমন পরিকল্পনা নিয়ে পরবর্তী করনীয় নির্ধারনে 'রাতারগুল জলারবন সংরক্ষণ কমিটি'র পক্ষ্য থেকে ১লা জানুয়ারী ২০১৫ ইং তারিখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সিলেটের সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে সেই সভায় আমন্ত্রন জানানো হয়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকেও সভায় উপস্থিত থাকতে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো হয় । কমিটির আহবায়ক 'লোকমান আহমদ'-এর সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সভার শুরুতে কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম ভূমিকা বক্তব্য রাখেন । সভায় স্বল্প সময়ের জন্য উপস্থিত থেকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, এই প্রকল্প বন্ধের এখতিয়ার তাঁর হাতে নেই । প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী চলা এ মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আরশ আলী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়-এর সাবেক রেজিস্ট্রার জামিল আহমদ চৌধুরী ও বনবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নারায়ন সাহা, রাজনীতিবিদ বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, কমরেড সিকান্দর আলী, আনোয়ার হোসেন সুমন, রনেন সরকার রনি, পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, মোখলেছুর রহমান (সবুজ বিপ্লব সমিতি) প্রমুখ। সভায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয় নাই।

এ সভার পরপরই ৫ই জানুয়ারি ২০১৫ ইং থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ সময় কোন ধরণের ঘোষনা ছাড়া দ্রুত গতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ওয়াচ টাওয়ার ও বিশ্রামাগার নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে নেয় বন বিভাগ। দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাতারগুলের টাওয়ার নির্মাণ সংক্রান্ত সংবাদের চেয়ে 'আগুন সন্ত্রাস' গণমাধ্যমে তখন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় পরিবেশকর্মীদের দুর্বল প্রতিরোধ উপেক্ষা করে বন বিভাগের প্রকল্পবাজী আপাতত সমাপ্ত হয়। যদিয় এই প্রকল্পবাজী আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করার সাহস বন বিভাগ এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। এক কিলোমিটার ব্যাসের বনের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে অত্যন্ত নিম্নমানে তৈরি ৬০ ফুট দীর্ঘ এই আলোচিত 'ওয়াচ টাওয়ার' এখন পর্যটকদের কাছে এক দর্শনীয় বস্তু । ওয়াচ টাওয়ারের সিঁড়ির রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। টাওয়ারটি নড়বড়ে; যা 'খাড়া বিপদ' হিসাবে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। স্থানিয়দের আশংকা দু'এক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ টাওয়ার দর্শনার্থী'সহ কাৎ হয়ে যাবে।

বন বিভাগের এই 'পর্যটক বান্ধব' প্রকল্পবাজীর ফলে রাতারগুল জলার বনে ২০১৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক পদার্পণ করে । মঠেরঘাট, রাতারগুল গ্রাম ও চিরিঙ্গি দিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক পর্যটক বন্যপ্রাণীর এই অভয় আশ্রমকে বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত করে । সিলেট জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন মঠেরঘাটের গুদারা ঘাটের ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক সনা ইজারা ফি ছিল ১৬ হাজার টাকা। এখন তা নয় লাখ টাকা'য় উন্নিত হয়েছে। যদিও জেলা পরিষদের দরপত্রে তা ছয় লাখ টাকা হিসাবে উল্লেখ আছে। এই ঘাট থেকে ভাড়া করা প্রতিটি নৌকার গন্তব্য রাতারগুল জলার বন। ছোট, বড় ও মাঝারি নৌকা অনুযায়ী ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় । এই টাকার ৬০ ভাগ পায় ঘাট মালিক ও ৪০ ভাগ পায় নৌকার মালিক ও মাঝি। ঘাট মালিক তাঁর অংশ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে মাসিক সালামী প্রদান করে। শুধুমাত্র মঠেরঘাট গুদারায় ৭০টি বিভিন্ন আকৃতির নৌকা আছে। এরমধ্যে ১০টি আছে ইঞ্জিন নৌকা। ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা বনে এইভাবেই নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটক প্রবেশ করছে। ফলে বনের স্থায়ী বাসিন্দা বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব এখন চরম সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় গত ১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৫ ইং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-র পক্ষ থেকে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রাতারগুল জলার বন পরিদর্শনে আসেন। সার্বিক অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাপা’র সহ-সভাপতি এডভোকেট সুলতানা কামাল-এর নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলে অংশ নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. কাজী খলিকুজ্জামান, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, মানবাধিকার নেত্রী খুশী কবির, বাপা'র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন, বেলা'র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাপা'র যুগ্ম-সম্পাদক শরীফ জামিল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নারায়ন সাহা, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন ড. এম এ মজিদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. নাজিয়া চৌধুরী, বাপা সিলেট শাখার সহসভাপতি এডভোকেট ই ইউ শহীদুল ইসলাম, গোয়াইন ঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, বাপা’র আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক সমন্বয়ক ফাদার জোসেফ গোমেজ, বাপা সিলেট শাখার সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, ভুমি সন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির প্রমুখ। বন পরিদর্শন শেষে স্থানীয় রাতারগুল শিয়ালীছড়া'র জলমগ্ন মাঠে ভাসমান নৌ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় গ্রামবাসী বিভিন্ন নৌযান নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে এডভোকেট সুলতানা কামাল-এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. কাজী খলিকুজ্জামান ও শরীফ জামিল।

এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, রাতারগুলে আমি এর আগেও এসেছি। আগে এখানে অনেক বন্যপ্রাণী দেখা গেলেও আজকে কোন বন্যপ্রানীর চিহ্ন দেখা যায়নি। এখানে সংরক্ষনের নামে বনবিভাগ নির্মিত ওয়াচ টাওয়ার এই বনের বৈশিষ্ট্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও দৃষ্টিকটু। এখানে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের নামে যা করা হচ্ছে, তা এই বনের ধ্বংসকে তরান্বিত করেছে। রাতারগুলকে শিক্ষা ও গবেষনার প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি বলেন।

ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, আমি বিস্মিত হয়েছি রাতারগুলের মাঝখানে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করায়। এতে সবাই চারপাশ থেকে ওই ওয়াচ টাওয়ারে যান। অথচ টাওয়ার যদি একান্তই নির্মাণ করতে হয়, উচিত ছিল রাতারগুলের মূল এলাকা ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে তৈরি করা, যাতে বনের প্রতিবেশ বিগ্নিত না হয়। টাওয়ারটি বনের এক পাশে নির্মাণ করলেও একটা কথা ছিল। বন বিনষ্টকারী এই বুদ্ধি সংশ্লিষ্টদের কে দিয়েছে?

বাপা প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন ও নৌ-সমাবেশের সংবাদ জাতীয় দৈনিক সমুহে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হয় । অধিকাংশ গণমাধ্যম বাপা'র পর্যবেক্ষণে রাতারগুলে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমছে উল্লেখ্য করা হয় কিন্তু অদ্যাবধি বনবিভাগ পরিদর্শক দলের পর্যবেক্ষণ নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেনি। এ অবস্থায় সর্বশেষ ঘটনা রাতারগুল জলার বনে বিষ ঢেলে মাছ'সহ লক্ষ লক্ষ জলজ প্রাণী ও অণুজীব হত্যা।

গত ১৭ই অক্টোবর, ২০১৫, শনিবার মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা রাতারগুল জলার বনের খইয়ার খালে বিষ দিয়ে জলজ প্রাণ বৈচিত্র্য ধ্বংসের এই জঘন্য ঘটনা ঘটায়। ঘটনার কথা জানতে পেরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম আরও দুজন পরিবেশকর্মীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি বন্যপ্রানীর এ অভয়াশ্রমে প্রায় তিনশতাধিক মানুষকে 'পোলো উৎসব'-এর আমেজে দল বেঁধে মাছ সংগ্রহ করতে দেখেন। স্থানে স্থানে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে গ্রামবাসীরা বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জাম দিয়ে দিনব্যাপী মাছ সংগ্রহের হরিলূটে অংশ নেয়। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সারাদিন মাছ সংগ্রহ করতে 'খইয়ার খাল'-এ মানুষের ঢল নামে । স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, খাল থেকে তুলনামুলক ভাবে বড় আধমরা মাছগুলো দুর্বৃত্তরা ভোররাতেই সংগ্রহ করে নিয়েছে । এখন আধমরা ছোট মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। সে সব মাছ সংগ্রহ করতেই বনের ভেতর সাধারণ গ্রামবাসীর এই ঢল । বাপা প্রতিনিধি দল এ সময় খইয়ার খালে প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ একটি কারেন্ট জাল দেখতে পান। স্থানীয়'রা এই জালের মালিকানা দাবি না করায় পরিবেশকর্মীরা জালটি খাল থেকে উত্তোলন করে নিকটবর্তী রাতারগুল গ্রামে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আগুনে ভস্মীভূত করেন।

প্রতি বছর অক্টোবরের এই সময়ে বনের পানি কমতে থাকে। খাল ও বনের অভ্যন্তরের দুএকটি কুঁড়িতেই শেষ সময়ের পানি থাকে । মাছসহ জলজ প্রাণীতে খাল ও কুঁড়িগুলো এ সময় পরিপূর্ণ থাকে। রাতে বিষ দিয়ে ভোরে বড় মাছ নিয়ে যাওয়ার ন্যাক্কারজনক অপকর্মের সংবাদ গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা তিন দিন পর্যন্ত বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে আসেন নি। বাপা প্রতিনিধি দলের বরাতে, স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয় । বাপা হবিগঞ্জ শাখার যুগ্ম সম্পাদক ডা. এস এস আল আমিন সুমন বিষের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করা বিভিন্ন প্রজাতির ২৭টি সাপের মৃতদেহ খালের পানিতে দেখার বিষয় নিশ্চিত করেন। পরিবেশকর্মী সৈয়দ সোহাগ, খালের পানিতে বিষ ঢালার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ভেসে থাকা মাছ বা সাপের ময়না তদন্ত করা জরুরী বলে মনে করেন। বিশ্বে বিরল প্রকৃতির এই বনে বিষ প্রয়োগে জলজ প্রাণী হত্যার সংবাদে নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটারকিপার এল্যানেন্স গত ২৬শে অক্টোবর 'Bangladesh’s Ratargul Swamp Forest Poisoned in Act of Environmental Sabotage' শিরোনামে এক বিবৃতিতে ঘটনায় কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বন ও প্রাণবৈচিত্র্য বিধ্বংসী এতো বড় অপকর্মের বিরুদ্ধে বনবিভাগের কোন তৎপরতার কথা জানা যায়নি।

বনবিধ্বংসী প্রকল্প সম্পাদনে বনবিভাগের যে তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে, বন সংরক্ষণে-এর সামান্যতম উদ্যোগ থাকলে রাতারগুল জলারবন সুরক্ষিত থাকতো। প্রায় তিন হাজার একরের বন ৫০৪ একরে পরিনত হতো না। বন সুরক্ষার দাবিতে বিগত তিন বছর থেকে পরিবেশবাদী'রা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। পরিবেশবাদীরা সরকার ও প্রশাসনের সহযোগী নাগরিকশক্তি। এরা জনবিচ্ছিন্ন নন, মানুষ ও জীবের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পরিবেশবাদী নাগরিকরা লড়াই করে । সিলেট মহানগরের অতি নিকটে দেশের একমাত্র মিঠাপানির এই বিশেষ বন সুরক্ষায় বনবিভাগ যতদিন ব্যর্থতা দেখাবে ততদিন পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ করে যাবে; নাগরিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আব্দুল করিম কিম, সমন্বয়ক, সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও প্রকৃতি রক্ষা পরিষদ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ