প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ২৮ নভেম্বর, ২০১৫
বাংলাদেশে যখন মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত ইসলাম ও বিএনপি সহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে। ঠিক সেই সময় মাতম উঠেছে পাকিস্তানে। পাকিস্তান জামায়াত ইসলামের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজ দেখলেই সেই হাহাকার বুঝা যায়। পাকিস্তানের পার্লামেন্ট, রাজনৈতিক নেতা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল পত্রিকায়ও সেই হাহাকার লক্ষণীয় । পাকিস্তান খুব স্পষ্ট করেই বলেছে যাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে এরা সবাই পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের কারণেই নাকি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার তাঁদের পরীক্ষিত বন্ধুদের শুধুমাত্র ১৯৭১ সালে তাঁদের পক্ষ নেয়ার দাবীতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে। এরপরে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে আদালতে আর কোন সাক্ষী প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা আছে কি ? আমার মনে হয় ট্রাইব্যুনাল এই সমস্ত তথ্য প্রমাণ চলমান মামলা সমূহে আমলে নিয়ে আসতে পারেন।
৭০ বছর ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি বাহিনীর সদস্যদের খুঁজে এনে বিচারের মুখোমুখি করে সাজা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ৪৪ বছর পর এই কাজটা সম্পন্ন করছে। তবুও অনেককেই বলতে দেখি দীর্ঘদিন পরে এসবের আর কি দরকার আছে। এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময়। তখন দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় ‘’ শেখ মুজিব এক অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন’’ সেই একই কাজ শেখ হাসিনা করছেন, অনিচ্ছুক এক জাতির কলঙ্ক তিলক মুছতে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করছেন’’
সাধারণ মানুষ বলুন, মুক্তিযোদ্ধা বলুন, সুশীল সমাজ বলুন, কবি সাহিত্যিক শিল্পী বলুন সবাই কেমন যেন নিষ্প্রভ। সিনেমার জোকারের মতো গণজাগরণ মঞ্চ ঠিকে আছে কোনভাবে। ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। আর সেই নিষ্প্রভতার সুযোগ নিচ্ছে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে পাকিস্তান পন্থী অপরাধী চক্র। সরকার, আদালত, রাষ্ট্র, বিচার ব্যবস্থা সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দিচ্ছি আমরা নিজেরাই। সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলে হুকা কে মনে হচ্ছে আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো জোর করে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল বর্তমান অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সকল দায় শেখ হাসিনার । আর কারও কোন দায় নেই, কোন অভিযোগ নেই। কোন মাথা ব্যথা নেই। প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ছোট মুখে বড় কথা বলার জন্য। সাংবাদিক হিসাবে উনার নখের সমান যোগ্যতা আমার নেই হয়তো ।
বাংলা ট্রিবিউনে এক সিনিয়র সাংবাদিকের কলামে দেখলাম উনি ফাঁসির নেপথ্যে যত কিছু শিরোনামে বিশ্লেষণ ধর্মী লেখায় খুব সুন্দর করে দেখিয়ে দিয়েছেন মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার এর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন শেখ হাসিনা। এবং ইনিয়ে বিনিয়ে ভারত কে খুশী করার বিষয়টি নিয়ে এসেছেন। এই বিশ্লেষণ পড়ে মোটা দাগে মনে হয়েছে , যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সাথে অন্যকিছুর কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। মানবতার দোহাই ঠিক যেমনটা কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। একটু চোখ কান খোলা রেখে যদি দেখি সৌদিআরবে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার দায়ে ৫৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। ওকাজ পত্রিকা লিখেছে, যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা হয়েছে, তাদের মধ্যে আল কায়েদার কয়েকজন সন্ত্রাসী এবং আওয়ামিয়া এলাকার কয়েকজন রয়েছেন। আল কায়েদার ওই সদস্যরা সৌদি সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল।
বিভিন্ন পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র চলতি বছরে পাকিস্তানে ৩২০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাই এই ব্যাপারে কোন কথা বলছে না যতো মাথা ব্যথা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিয়ে। বাংলাদেশে রাজন হত্যা রাকিব হত্যা সহ গত কয়েক মাসে ২৪ জনের ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে , কিন্তু কেউ কোন কথা বলেন নাই।
বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ মিডিয়ার উচিৎ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দিনে জেলগেইট থেকে এইভাবে লাইভ সম্প্রচার না করে শহীদ পরিবারও যে সব স্থানে এই সব অপরাধীরা তাদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সেই সেব এলাকার সাধারণ মানুষ কিংবা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার প্রচার করা। কিন্তু সেটা না করে বারবার অপরাধীর পরিবার পরিজনদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এর ফল হিসাবে ছোট একটা ঘটনা শেয়ার করছি ‘’ আমার এক ভাবি যিনি গৃহিণী, ছেলেরা বড় হয়ে গেছে তাই সারাদিন ধর্ম কর্ম নিয়েই থাকেন। সুদূর স্পেনে বসে যখন বলেন ভাই, আল্লহার বিচার দুনিয়াতে , কিন্তু দাড়িওয়ালা হুজুর লোকটাকে দেখে আফসোস হয়েছে, ফাঁসির আগে নাকি খেতে পারেনি, শোনে আমার খব কষ্ট হয়েছে , আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। এই প্রশ্নের উত্তর কি হবে সেটা কি আমরা ভেবে দেখেছি। এই যে সাধারণ মানুষের মনে ভয়ংকর এসব খুনিদের ব্যাপারে সহানুভূতি তৈরি করা হচ্ছে সেটা কি আমাদের গণমাধ্যম ইচ্ছাকৃত ভাবে করছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত এরিখ প্রিবকে চলতি মাসের ১১ তারিখ ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। প্রিবকের অন্তিম ইচ্ছা ছিল আর্জেন্টিনায় তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে কিংবা তাঁর জন্মস্থান বার্লিনের কাছে হেনিংসডর্ফে শেষ শয্যায় শায়িত হওয়া। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেনি। গত মঙ্গলবার ইতালির রাজধানী রোমের কাছে আলবারো লাজিলা শহরে এরিখ প্রিবকে নামের ওই যুদ্ধাপরাধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। চরম জন বিক্ষোভের মুখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত এক যুদ্ধাপরাধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে। এর বিপরীতে আমরা খুনিদের নামের আগে শহীদ যোগ করে তাদের পরিবারের বক্তব্য প্রচার করছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তারানা হালিম কে খোলা চিঠি লিখতে হয়েছে।তবু ও পক্ষে বিপক্ষে নানারকম যুক্তি পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন অনেকে। এমনকি কদর্য ভাষায় তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে যতো মাথা ব্যথা তার সিকি পরিমাণ নেই দেশ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই যেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিহিত! নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাসে সৈয়দ শামসুল হক পাকিস্তানী মেজরের বয়ানে লিখেছিলেন । “আমি তোমায় সন্তান দিতে পারব। উত্তম বীজ উত্তম ফসল। তোমার সন্তান খাঁটি মুসলমান হবে, খোদার ওপর ঈমাণ রাখবে, আন্তরিক পাকিস্তানী হবে, চাওনা সেই সন্তান? আমরা সেই সন্তান তোমাদের দেব, তোমাকে দেব, তোমার বোনকে দেব, তোমার মাকে দেব, যারা হিন্দু নয়, বিশ্বাসঘাতক নয়, অবাধ্য নয়, আন্দোলন করে না, শ্লোগান দেয় না, কমিউনিস্ট হয় না। জাতির এই খেদমত আমরা করতে এসেছি। তোমাদের রক্ত শুদ্ধ করে দিয়ে যাব, তোমাদের গর্ভে খাঁটি পাকিস্তানী রেখে যাব, ইসলামের নিশানা উড়িয়ে যাব। তোমরা কৃতজ্ঞ থাকবে, তোমরা আমাদের পথের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তোমরা আমাদের সুললিত গান শোনাবে ” বাংলাদেশে সেই সম্ভাবনাই যেন সত্য হয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।
এক অস্থির সময় অতিবাহিত করছে সারা পৃথিবী, ইউরোপ থেকে আমেরিকা এশিয়া মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া কেউ বাদ নেই। হাওয়ার তলোয়ারের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ এক খেলা চলছে। আর প্রতিপক্ষ হিসাবে সামনে আছে ধর্ম। ব্লগার, কবি, লেখক প্রকাশক, মন্দির, গির্জা, বৌদ্ধ বিহার, তাজিয়া মিছিল সর্বশেষ মসজিদে সেজদারত মুসল্লি কেউ আর বাদ যায়নি। এই যুদ্ধটা শুধু শেখ হাসিনার না। আপনার আমার সকলের। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আপনার আমার দায়িত্ব কি আমরা পালন করছি?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য