প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫
১২ ডিসেম্বর ছিল প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি গানের রচিয়তা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ৮১ তম জন্মদিন। লন্ডনের চ্যানেল আই টেলিভিশন তাঁর জন্মদিন অনুষ্ঠানটি ২ ঘণ্টা ব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার করে। দর্শক সারিতে বিলেতের নবীন প্রবীণ কয়েকজন সাংবাদিককে ও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চ্যানেল আই। আমি নিজেও সেই লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম।
বিলেতের তাঁর ৪২ বছরের অভিজ্ঞতা লব্ধ ইতিহাস আগামী প্রজন্মের জন্য লিখে রাখার আনুরোধ জানিয়েছিলেন বিলেতের আরেক প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ নাহাশ পাশা। তাঁর সেই প্রশ্নের উত্তরে বিলেতে বাঙালি কমিউনিটির সফলতা নিয়ে আলোচনা করতেই সিলেট প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি। কারণ ব্রিটেনে বাঙালির ইতিহাস লিখলে সিলেটীদের বাদ দিয়ে তো প্রশ্নই আসেনা।
ব্রিটেনে আমাদের পূর্ব পুরুষ যারা বসতি গড়ে ছিলেন তাঁরা সবাই প্রায় জাহাজের লস্কর হিসাবেই পা রেখেছিলেন বিলেতের মাটিতে। জজ ব্যারিস্টার হয়ে কেউ আসেন নাই। যারা সেই সময় স্থায়ী হয়েছিলেন তাঁরা প্রায় মাঠের কৃষক ছিলেন। নিজের বাসা খোঁজা, কিংবা বাস নাম্বার মনে রাখার বহু গল্প এখনো লন্ডনে প্রচলিত। শিক্ষিত যারা এসেছিলেন তাঁরা ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। এর জন্য হীনমন্যতার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। বরং সেটা আমাদের অহংকারের বিষয়। শ্রমিক থেকে আজ ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় আজ বাঙালিদের বিচরণ।
১৪ /১৫ টি বাংলা পত্রিকা হাফ ডজন বাংলা টিভি চ্যানেল, রেডিও, নীতি নির্ধারনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে, ব্যাংক বীমা ব্যবসা প্রতিটা পর্যায়ে বাঙালির পদচারণা। ‘লাঙল টু লন্ডন’ সিলেট অঞ্চলের প্রচলিত একটি বাক্য, সেটা লন্ডনেও অনেকে ব্যবহার করেন। গাফফার চৌধুরী ও সেই প্রচলিত বাক্যটা ব্যবহার করেছেন, তিনি বলেছেন সিলেটীদের যারা বলে যে ‘লাঙল টু লন্ডন’ এরাই প্রকৃত বাংলা সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। তিনি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এস এর মালিককে অর্ধশিক্ষিত বলেও মন্তব্য করেন। সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, লুতফুর রহমান দৃশ্যত সে টাওয়ার হ্যামলেটসকে একটা ইসলামিক রিপাবলিক তৈরি করে রেখেছে। আমার এক বন্ধুর জানাজা পড়েছিলাম যাকে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পুড়ে ফেলা হয়েছিল। আবু তাহের সিংকাপনি চৌধুরী কি না একটা আছে সে তখন আসলে জামাতের লোক কিন্তু তা এখন স্বীকার করে না সে। সে পোস্টার লিখে দিয়েছে, আমি বেদাতি কাজ করেছি, মুরতাদ হয়ে গেছি, আমার কল্লা নেয়া দরকার।
তাঁর বক্তব্যের এই খণ্ডিত অংশ হাইলাইটস করে বলা হয়েছে, গাফফার চৌধুরী সিলেটীদের অপমান করেছেন, আর এই বক্তব্যের কারণে তাঁকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাইবার দাবী তুলেছে বিলেতের দুই তিনটি বাংলা পত্রিকা। গ্রেটার সিলেট নামক একটি সংগঠন তো আরও এক কাঠি এগিয়ে রীতিমত গালিগালাজ শুরু করেছে। গ্রেটার সিলেটের দায়িত্ব তাঁদের সিলেটের সব মানুষ দিয়েছে কিনা জানিনা?
তবে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করার জন্য মানহানির দাবী যে কেউ তুলতেই পারে, সেটা সমস্যা ছিল না। এবং এই ব্যক্তিগত দুর্বলতা নিয়ে কথা বলার পক্ষে নই আমি। মানুষ শয়তান ও নয় ফেরেশতাও নয় ভুল করাই মানুষের ধর্ম। কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করে মুখোশের আড়ালে আঞ্চলিকতার ট্রাম কার্ড খেলার কারণ কি?
বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ পত্রিকায় ছেপে গাফফার চৌধুরীর ধারনাকেই সত্য করেছে এরা । তিনি বলেছিলেন সিলেটীদের সাহায্যেই আমার এখানে সামাজিক অবস্থান গড়ে উঠেছে। সেখানে যদি আমাকে তাঁদের শত্রু বা সিলেটীদের আমি ঘৃণা করি বলে প্রচার করা হয় তাহলে বিপদ হয়। বাংলাদেশে কিছু লিখলে ধর্মান্ধরা চাপাতি নিয়ে আসে। এখানে ও যদি গোলাম মোর্শেদের মতো পালাতে হয়। বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির জন্য এখানকার সিলেটীদের অবস্থান সবচেয়ে বেশী। এবং এই যে বিকৃত ভাবে প্রচার করা হয় তাঁর ভয়ে লেখিনা।
কিন্তু যে ঐতিহাসিক সত্যগুলো গাফফার চৌধুরী বলেছেন সেটি তাঁদের সংবাদপত্রে আর আসেনি। বিলেতে সিলেটীদের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, আগের লোকজন সাহেব দেখলে ভয় পেতেন, মূলত ১৯৮০ সাল থেকে একটি শিক্ষিত মিডিল ক্লাস তৈরি হয়। ব্যবসা বাণিজ্যে সাংবাদিকতায় সর্বত্র এই কমিউনিটি এখন দাঁড়িয়ে আছে। ৮০-র দশক টা খুবই উজ্জ্বল। এখন যারা মন্ত্রী এমপি হচ্ছে তাঁরা সকলে ৮০-র দশকের ফসল, এবং এই কমিউনিটি দাঁড়াবে।
একদিন সময় আসবে এসব লেখার তখন হয়তো আমি থাকব না । এখানে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হচ্ছে যাদের ৯০ ভাগ সিলেটী তাঁরাই কিন্তু বহির্বিশ্বে বাংলাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা যারা শিক্ষিত বা নন সিলেটী তাঁরা কালো সাহেব হওয়ার জন্য ব্যস্ত। সিলেটীরা এখানে মসজিদ করেছে, স্কুল করেছে টেলিভিশন করেছে, খবরের কাগজ করেছে সবই কিন্তু বাংলা ভাষার পক্ষে গেছে।
কিন্তু কিছু বাজে লোক যারা ইসলাম রক্ষার নাম করে মুক্তবুদ্ধির মানুষ কে হত্যা করে , তেমনি সিলেটীদের যারা প্রকৃত হিতৈষী নানা ভাবে তাঁদের জব্দ করে। এইটা একটা পলিটিকাল গেইম যার জন্য ভীত হয়ে লিখিনা এটা সত্য কথা।
গাফফার চৌধুরীর প্রতি এই নির্দিষ্ট শ্রেণীর ক্ষোভের মূল কারণ আসলে তাঁর অবস্থান। খুব পরিষ্কার ভাবে তিনি যখন বলেন , আমার সাংবাদিকতায় একটা কমিটমেন্ট ছিল আর সেটা হল বঙ্গবন্ধু। আমি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করি শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছি। বঙ্গবন্ধু জীবত থাকতে তাঁর সমালোচনা করেছি কিন্তু মৃত্যুর পর নয়।
দীর্ঘ বয়স পাওয়াতে আমি বঙ্গবন্ধুর কাল ও শেখ হাসিনার কাল দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কখনো বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হলে এই দুটি কাল গোল্ডেন এজ হিসাবে লেখা হবে।
আওয়ামী লীগের অনেক ভুল ত্রুটি আছে, কিন্তু শেখ হাসিনা যে কাজ গুলো করে যাচ্ছেন সেই কাজ করার মতো নেতা বাংলাদেশে নাই। ২১ শে আগস্ট তাঁর উপর যে হামলা হয়েছিল অন্য কোন নেতা হলে কবেই দেশ ছেড়ে চলে যেত। এই মহিলা পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং সমস্ত হুমকির মুখে কাজ গুলো করে যাচ্ছেন। হিলারি ক্লিনটন বান কি মুনের ফোন অগ্রাহ্য করা, পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হয়ে গেছে তখন বুক চিতিইয়ে বলা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব যা বাস্তবায়ন হচ্ছে । বাংলাদেশে কেউ বিশ্বাস করেনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হবে। কিন্তু হয়েছে। জামায়াতের গোলাম আজম যে বলেছিল আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করিনা, তাঁকে ও মাথা নীচু করে জেলে যেতে হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী এখন ক্ষমা ভিক্ষা করতেছে, মুজাহিদের ফাঁসি হয়ে গেছে, এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে। যে কাজটি বেনজীর ভুট্টোও করতে পারে নাই। বরং খুনিদের সাথে আপোষ করেছে। এমনকি আমাদের খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী তিনি বলেন জেনারেল এরশাদ তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছেন, আবার তাঁকে নিয়ে রাজনীতি করেন প্রলোভন দেখান আমার দলে চলে আসেন। এই দিক থেকে শেখ হাসিনা সাউথ এশিয়ায় অনন্য। কামাল হোসেন, তোফায়েল আহমেদ রাজ্জাকরা যারা মুক্তিযুদ্ধ্বের ট্রেনিং নিয়েছিলেন সেখানে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে গিয়ে ২১ বছরে ক্ষমতার বাইরে থাকা একটা দলকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন। আজ ৩০ বছর ধরে দল চালাচ্ছেন দেশ চালাচ্ছেন। সমসাময়িক ইতিহাসে এর থেকে বড় সাফল্য আমি দেখিনা এর জন্য তাঁকে আমি সমর্থন করি। যতদিন পর্যন্ত বিকল্প একটি বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা বাংলাদেশে তৈরি না হয় তাঁকে সমর্থন করা ছাড়া বিকল্প নাই। তাঁর বক্তব্যের এই অংশটুকু প্রচারিত করা হয়নি।
গাফফার চৌধুরী তাঁর দেয়া সেই বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমি শিক্ষিত লোকদের বিশ্বাস করিনা। যদি বাংলাদেশকে কেউ রক্ষা করে, অশিক্ষিত লোকেরা করবে। তাঁদের ভিতরে দেশপ্রেম আছে। আমার চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা হল আমি যখন বাংলার ডাক বের করি, ব্রিকলেইনে অনেক বাধা এসেছে বিএনপি কর্মীদের কাছ থেকে। তবে সাহায্য করেছে টাকা দিয়েছে সিলেটীরা। আমি সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখি তখন আমার মনে হয় প্রায় ৭০ জন ডাক্তার নন সিলেটী এবং এভাউট হান্ড্রেড ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য পেশার এদেরকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম, এরা কেউ জবাব দেয়নি ।এরা কিন্তু সবাই নন সিলেটী এবং শিক্ষিত এদেশে থাকে। সব গুলো বার্মিংহাম, লিডস, শেফিল্ড সব জায়গা থেকে যারা উত্তর দিয়েছে বেশিরভাগই গ্রোসারি শপের মালিক এবং সিলেটী লোক এবং তাদের পয়সায় এটা হয়েছে। এবং এই যে বঙ্গবন্ধুর উপর ছবি করেছি, বিশ হাজার পাউন্ড গেছে, এর মধ্যে আমার সামনে সুলতান ভাই আছেন উনাদের আওয়ামী লীগের কন্ট্রিবিউট হচ্ছে আড়াই হাজার পাউন্ড বাকিটা সব সিলেটীদের টাকা। আমি যেখানে গিয়েছি আলাস্কায় গিয়ে দেখি বাংলাদেশের দোকান খুলে বসে আছে। পান বিক্রি করে খবরের কাগজ বিক্রি করে এই যে এটাতো শিক্ষিত বাঙালিরা করে নাই। এরাতো এই আপনার সিলেটের যারা বলে যে লাঙল টু লন্ডন তারাই এই সংস্কৃতির ধারক বাহক অভিভাবক। এই কমিউনিটি সম্পর্কে লিখতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু সব সময় সাহস হয়না এই জন্য তারা ভুল অর্থ করে এমনভাবে লোক ক্ষেপাবে যে দেশ থেকে বিতাড়িত এখানে থাকতে পারবে না। আর সেই ক্ষেপানোর চেষ্টাই করে যাচ্ছে চক্রটি।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন এইখানে প্রমিত বাংলায় বললে লোকজন বুঝবে না সেই ক্ষেত্রে সিলেটী উপভাষা ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলেছেন সিলেটী ভাষাটা হচ্ছে একটা উপভাষা, ভাষা নয়। এভাবে বরিশালে যদি বলি এটা একটা উপভাষা, চাটগাঁইয়া ভাষা, এটাও একটা উপভাষা। এভাবে সাধু ভাষা মানে বর্তমানে যে প্রমিত বাংলা ভাষা আছে সব ভাষার পরিশীলিত রূপ হচ্ছে বইয়ের ভাষা। বার্নাড শ আইরিশ কবি ছিলেন, তিনি আইরিশ ভাষায় লিখে নোবেল পাননি, তাকে ইংরেজি ভাষায় লিখতে হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষা আমাদের শিকড়। এর চর্চা ও অব্যাহত রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। লুতফুর রহমান যখন এখানে মেয়র এবং দৃশ্যত সে টাওয়ার হ্যামলেটসকে একটা ইসলামিক রিপাবলিক তৈরি করে রেখেছে আমি বলেছি যে, লুতফুর রহমানের অবস্থান বাঙালি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সে তিনটি ট্রাম কার্ড ইউজ করেছে, একটা হলো সিলেটী, একটা বাঙালি, একটা ইসলাম। তিনটি ট্রাম কার্ড এক সাথে পলিটিক্সে অপব্যবহারের নজির খুবই কম। যাক, তার পতন হয়েছে।
গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য ও বিলেতের দুই-একটি সংবাদপত্রের অতি উৎসাহী ভূমিকা নেপথ্যের কারণ কেউ যদি খুব সাদা চোখে দেখে খূব অনুসন্ধানী হওয়ার দরকার নেই। ছোট একটা উদাহরণ দিতে চাই। মহান বিজয় দিবসে এক পত্রিকা সম্পাদকীয়তে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে লিখল ‘১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মেজর জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে।
আমি সম্মানিত সম্পাদক সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম জিয়াউর রহমানের ঘোষণার তারিখটা দেয়া থাকলে ভালো হতো। স্বাধীনতা দিবস নিয়ে ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটত। পাঠক ঘোষক পত্রিকার কম্পোজার আর সম্পাদক এক কি না জিজ্ঞাসা করেছিলাম। অনলাইনে বহু তর্ক বিতর্কের পর তিনি সেই পথে না গিয়ে আমাকে জিয়াউর রহমানের অবদানের তত্ত্ব দিচ্ছিলেন এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর একটা প্রমাণ দিতে বললেন। আমি বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা ঘোষণা পত্রের একটি কপি দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম পরবর্তী সংখ্যায় উনি ভুল স্বীকার করবেন কি না? আর উত্তর পাইনি।
মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার প্রশংসা আর পূর্ব লন্ডনের জামায়াতের উত্থান বিপক্ষে কথা বলাই তাঁর বিরোধিতার মূল কারণ।
গাফফার চৌধুরী যখন বলেন, যে ক দিন আছি এখন এখানকার পলিটিক্সের সঙ্গে বিশেষ করে আজকে ইস্ট লন্ডন যেভাবে জামাতিরা দখল করেছে ,ইট ইজ এ আমার জন্য ফরজে কেফায়া টু ফাইট দেম । যে কদিন বেঁচে আছি নিশ্চয় লিখবো ।
আর তাঁদের ভয়টা ঠিক এখানেই। ব্রিটেনে যারা আদর্শ নয় আপোষ করে স্রোতের সাথে চলছেন তাঁদের ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে গাফফার চৌধুরী সত্যটা লিখে যান। সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। গাফফার চৌধুরীই টেলিভিশনে সরাসরি বলতে পারেন পূর্ব লন্ডন জামায়াতিদের অভয়ারণ্য। সেই সাহসটুকু তাঁর আছে।
লাঙল টু লন্ডন আমাদের গর্বের বিষয়, আমাদের অহংকারের বিষয়। সেই শ্রমিক থেকে আজ ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় আজ বাঙালিদের বিচরণ। ‘লাঙল টু লন্ডন’ সিলেট অঞ্চলের প্রচলিত একটি বাক্য, সেটা এখনো লন্ডনে অনেকে ব্যবহার করেন। আর এর মধ্যে একবিন্দু কি মিথ্যা আছে? ইতিহাস সত্যকে ধারণ করেই প্রকাশিত হয়।
বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, একুশে পদক সহ নানা রকম পদকে ভূষিত হওয়া একজন লেখক গাফফার চৌধুরীকে যখন সম্মান দিতে জানিনা, প্রশংসাকে যারা অপমান মনে করে, আত্মপরিচয় দিতে যারা কুণ্ঠিত হয়, তখন মনে হয় প্রচলিত সেই প্রবাদ— মূর্খের সাথে তর্ক করে লাভ নাই, সে তোমাকে তার জায়গায় নামিয়ে নিয়ে আসবে। তাই তর্ক করতে চাইনা। গাফফার চৌধুরী তাঁর কাজটি ঠিকই করে যাবেন। এসব ভুজুং ভাজুং দিয়ে থাকে রোধ করা যাবেনা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য