প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আজম খান | ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
আমরা অনেকেই এই তথ্যটা জানি না যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপর খুনিরা পুনরায় পাকিস্তানে ফিরে যেতে চেয়েছিল। করতে চেয়েছিল কনফেডারেশন। ভুট্রো নিজে উদগ্রীব ছিলেন। ভারত যে ব্যাপারটা জানতো না তা তো না। সেক্ষেত্রে ভারতের বাংলাদেশ আক্রমণ ছিল অবশ্যম্ভাবী। হাজার হাজার ভারতীয় জওয়ান নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য শহীদ হয়নি। ভুট্রোকে বাস্তবতা সম্পর্কে ইন্টেলিজেন্স থেকে "নো গো" সিগন্যাল দেয়া হলে তিনি পিছিয়ে আসেন। ফারুক-রশীদ যার কারণে পরবর্তীতে ব্রিটিশ এক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে "কনফেডারেশন" না হবার পেছনে নাম না নিয়ে দুই দেশের কতিপয় রাজনীতিবিদকে দায়ী করেন।
পাকিস্তান ভূমি দখলের রাজনীতি থেকে সরে আসে। তারা বুঝতে পারে তা আর সম্ভব নয়। বরং পাকিস্তানের যে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ তা বাংলাদেশে পুনর্বাসনের মাধ্যমে আরেকটি "অবিকল পাকিস্তান" তৈরি করতে হবে। ফলাফলে যা হলো, জিয়াউর রহমান "বাঙালি জাতীয়তাবাদ" এর বদলে আনলেন "বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ"। তিনি খাল কাটলেন। সে খালে কুমির হয়ে রাজনীতিতে আসলো জামায়াতে ইসলামি।
৩০ লাখের অধিক শহীদের কথা, দুই লক্ষাধিক মা-বোন ধর্ষিতার গ্লানিকে উপেক্ষা করার সময় তখনো আসেনি। সংবিধানের খতনা করা হল। মাথায় টুপি পরিয়ে পাকিস্তানের আদলে যুক্ত করা হল "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"। ঢালাও ভাবে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে সাহায্য করে ধর্মান্ধতার প্রাথমিক ক্ষেত্র তৈরি করা হলো। জিয়াউর রহমান ছিলেন তার সময়ের টিপিক্যাল সামরিক শাসক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একেবারে বেসিক হচ্ছে একজন সামরিক শাসক সব সময়েই প্রাথমিকভাবে জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেন। তা সব সময়ে মানুষের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা সফল হয় না।
কিছুদিন আগে ডিক্লাসিফাইড হওয়া আমেরিকান দূতাবাস থেকে আমরা জানতে পারি, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে চায় নতুন করে কোন সামরিক অভ্যুত্থান সফল হতে পারে কি-না। রাষ্ট্রদূত যে রিপোর্ট পাঠান তার সারমর্ম হচ্ছে, জিয়াউর রহমান আপাতভাবে জনপ্রিয় আছেন। কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। তখনই পালটা ক্যু সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই হয়েছিল। জিয়াউর রহমান বেঁচে গিয়েছিলেন অজনপ্রিয় শাসকের কপালে কি ঘটে তা দেখা থেকে।
শরীরে টিউমার যেমন অযাচিত তেমনিভাবে এরশাদ সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে যুক্ত করলেন। টিউমার এক সময়ে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধর্মীয় রাজনীতি ছড়িয়ে পড়লো। তাতে মানুষ বদলে গেলো। সমাজ বদলে গেলো। সবাইকে সম্ভব না হলেও নাগরিকদের মধ্যকার বিরাট একটা অংশের মস্তিষ্কে পাকিস্তানের আদর্শ ঢুকিয়ে দেয়া গেলো।
পাকিস্তানের এবার ফসল ঘরে তোলার পালা। কিন্তু মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিও শেখ হাসিনার পক্ষে। তাইওয়ানের বিজনেস কনস্যুলেট খুলতে দিয়ে বিএনপি চীনের চোখের কাঁটা। ভারত সেভেন সিস্টার্সে পাকি গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশের মাটি ব্যাবহার করে তৎপরতায় ক্ষিপ্ত। বঙ্গবন্ধু তার সময়ে এই জায়গায় যতটা দুর্ভাগা ছিলেন শেখ হাসিনা ঠিক ততটাই সৌভাগ্যবান। প্রকৃতি তার চিরাচরিত ধারা অনুযায়ী ব্যালেন্স করেছে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বিএনপি সহ যাবতীয় পাকিস্তানপন্থী দলগুলোর জন্য যে তাদের শুঁকিয়ে মরার অবস্থা। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দোর্দণ্ড প্রতাপে ফিরে এসেছে। কারণ তাদের একটা আদর্শ আছে। সেটা তারা কতটা মানে আর না মানে সে আলাপ এখানে অপ্রাসঙ্গিক বিধায় আনছি না। কিন্তু বিএনপি তো নয়। তার বলে "জিয়ার আদর্শ"। সেটা কি তারাও জানে না। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে ধর্মান্ধতার প্রচার, প্রসার ছাড়া তাদের ভিন্ন কোন চরিত্রের সন্ধান দলীয় আদর্শের মধ্যে নেই। দলটি মূলত অবসরপ্রাপ্ত আমলা, ধনকুবের ব্যবসায়ী আর অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত। ফলাফলে যা হয়েছে তাদের নিবেদিত কোন কর্মী বাহিনী নেই। যারা আছে তারা সুবিধাবাদী। যে কারণে বিগত দুই বছরে তারা পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করলেও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ছাড়া কোন কিছু করতে পারেনি।
এটা বোঝার জন্য খুব বেশি বুদ্ধিমান হবার প্রয়োজন নেই যে, এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি নামের দলটা ইতিহাস থেকে মুছে যাবে। নগণ্য যে কর্মী বাহিনী আছে তারাও ক্ষমতার স্বাদ পাবে না জেনে মুখ ফিরিয়ে নিবে। বিএনপি যে মুখ থুবড়ে পড়বে সেটার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অন্যকিছু। হ্যাঁ, অন্যকিছু।
পাকিস্তান ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিটা বাজেটে "ডিস্ট্যাবিলাইজিং বাংলাদেশ" নামে একটা খাত রেখে এসেছে। এই খাতে কত টাকা ব্যয় হয় তা কেউ জানে না। বিগত চার দশক ধরে ব্যয় করা বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবার মধ্য দিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে তা তো হতে পারে না। উপরে একবার বলেছি এবার তাদের ঘরে ফসল তোলার পালা। পাকিস্তান খুব ভাল করে জানে, ইটস নাউ অর নেভার সিচুয়েশন।
খালেদা জিয়া এবং উনার সাঙ্গপাঙ্গদের মুখ দিয়ে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে একাত্তরে তাদের গণহত্যাকে খাটো করে দেখানোর জন্য। এমনেস্টির মত মানবাধিকার সংগঠনকে দিয়ে বলানো হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচার করতে হবে। এসব কিছু বিচ্ছিন্ন নয়। পাকি আদর্শে ইতিমধ্যে মোটিভেটেড মানুষেরা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। ঠিক কতজন দাঁড়ায় তা হচ্ছে তাদের দেখার বিষয়। তার পরের ধাপে হেফাজতে ইসলামের মত প্রকাশ্যে উগ্রবাদ ছড়ানো মোল্লারা এই সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দিতে পারে। তার আকার, ব্যাপকতার উপরে নির্ভর করে এবোটাবাদ এবং ল্যাংলী থেকে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে "ইসলামি বিপ্লব" হবে কি হবে না।
বিএনপি যা জানে না তা হচ্ছে, তারা স্রেফ অন্তর্বর্তীকালীন গুটি মাত্র। এই ধাপে বিদেশী চক্রান্তকারীরা সফল হলেও তারা ক্ষমতায় আসবে না। আসবে হামিদ কারজাইর মত কেউ।
বিলুপ্তি বিএনপির নিয়তি। তারা মানুক আর নাই মানুক। কর্মফল জগতের অবশ্যম্ভাবী নিয়তি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য