প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
খুরশীদ শাম্মী | ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
যাহাদের প্রাণ আছে, দেহ আছে; তাহাদেরই আছে জীবন রক্ষা করার নানান প্রকার চেষ্টা এবং পদ্ধতি। ডিসকভারি চ্যানেলে প্রদর্শিত বিভিন্ন জীবজন্তুদের জীবনযাপন প্রণালী তাহারই একটি বড় উদাহরণ।
বিশ্বের অন্য সকল জীবজন্তুর মতো মানুষও প্রকৃতির এক প্রকার প্রাণী। তবে মানুষ নিজেদের মেধা খাটিয়ে ধীরে ধীরে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবে পরিণত হয়েছে; এবং একমাত্র সামাজিক প্রাণী বলেই পরিচিত। তবে নিজ-নিজ জীবন রক্ষায় অন্যান্য জীব থেকে মানুষ কিন্তু একটুও ব্যতিক্রম নয়।
দু’টো পশুর মধ্যে একটি শিকার নিয়ে যেভাবে কামড়াকামড়ি করতে দেখা যায় ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যেও ধন সম্পদ, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি সামাজিক অবস্থান নিয়ে ঝগড়া -ফ্যাসাদ, মারামারি, কাটাকাটি, ধর্ষণ, লুট এমন কি খুন পর্যন্ত করতে দেখা যায়। যদিও মানুষ সুশৃঙ্খল দৈনন্দিন জীবনের আশায় ধর্মচর্চা শুরু করে। কিন্তু শুরু থেকেই এই ধর্ম বিষয়টি কখনো বিবাদ এবং বিভাজনের ঊর্ধ্বে ছিলো না। তবে বর্তমানে ধর্ম বিষয়টা নিয়ে পারস্পরিক হিংস্রতা মানব সমাজে এক প্রকার অভিশাপ হয়ে পড়ছে। এই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আমাদের মোটেও রক্ষা করছে না বরং শেষ করে দিচ্ছে শ্রেষ্ঠ জীবের শ্রেষ্ঠত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমি নিজেও এই মেধাবী এবং সামাজিক প্রাণীর বংশধর।
শৈশব এবং কৈশোরটা বহমান স্রোতে প্রবাহিত হলেও ইদানীং মনের মধ্যে সমাজের ন্যায় অন্যায় নিয়ে নানান রঙের ঢেউ খেলে। কখনো শান্তির লোভে স্বার্থপরের মতো চুপ করে থাকলেও নিজের মনে জমাটবাধা প্রশ্নের উপর বিবেক এসে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তোলে। তাইতো কষ্ট হয় মেনে নিতে পাঠ্যবইয়ে শেখা “মানুষ প্রাণীকুলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী এবং একমাত্র সামাজিক জীব।” সেটাই যদি হবে তবে কেন আমাদের মধ্যে এত হিংস্রতা? কেন সামাজিক মূল্যবোধ ভুলে; ধর্ম, বর্ণ, নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করছি? অসহ্য হয়ে পড়েছে মানুষের পারস্পরিক ধর্মচিন্তার বিরোধ। ইহা কেবল কোন একটি দেশ, জাতি কিংবা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইহা বিশ্বের একটি অন্যতম সংক্রামক মরণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
আমাদের জীবনটা কিন্তু খুব একটা বেশি বড় নয়। বড় জোড় একশত বছর আমাদের আয়ু। জন্ম থেকে প্রথম দশ-বারো বছর কেটে যায় শৈশব-কৈশোরের নিষ্পাপ জীবনযাপনে। তারপর শুরু হয় ঘুণেধরা সমাজের কশাঘাত। এক এক করে ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থানের মতো মানুষে মানুষে বিবাদের বিষয়গুলো। কেউ কেউ আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক এবং দর্শনভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষ করে পূর্ব পুরুষেরা কেন যেন মানতে চায় না বিজ্ঞান, কোন প্রকার যুক্তি-তর্ক তথা পরিবর্তন। তাদের সব থেকে স্পর্শকাতর অনুভূতি হচ্ছে ধর্মের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস।
বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার, চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশ্বাস করে চোখের ছানি কেটে বিশ্ব দেখার সুযোগ গ্রহণ করলেও তারা বিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কার এবং যুক্তি মেনে মনের অন্ধত্বটাকে কাটতে একদমই রাজি নয়। তাদের বিশ্বাস, ধর্মই তাদের শান্তির একমাত্র চাবিকাঠি। এই বিশ্বাসটা যদি অন্যের উপর জোরপূর্বক যুক্তিহীন চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করা হয়, তাও চলে।
ইদানীং সাধারণ মানুষ যারা যে কোন একটি ধর্মকে বিশ্বাস করে, বাকী ধর্মগুলোকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে সোজাসাপটা জীবনযাপন করতে আগ্রহী; প্রতিটি ধর্মের ধর্মান্ধরা ঐ সকল ধর্মভীরু মানুষদের সরল বিশ্বাসকে পূঁজি বানিয়ে ধর্মকে নিজেদের সুবিধা মতো ব্যাখ্যা করে একপ্রকার সন্দেহের মধ্যে ফেলে তাদের পিছনে মশাল নিয়ে তাড়িয়ে ক্লান্ত বানিয়ে নিজেদের মতো ধর্মান্ধতে রূপান্তরিত হতে বাধ্য করছে। অপরদিকে অনেকটা তাই। সাধারণ মানুষদের যে দলটি কোন বিশেষ একটি ধর্মকে বিশ্বাস না করেও কেবল মানব ধর্মে বিশ্বাস নিয়ে জীবনযাপন করতে আগ্রহী, মৌলবাদীরা তাদের একপ্রকার চাপের মধ্যে ফেলে তাদেরকে নাস্তিক দলের অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করছে। তারপর তাদের প্রতিটি কাজে বাঁধা দেয়া হচ্ছে কৌশলে। তাদের নিজেদের সুবিধার্থে তারা খুন করে হলেও মুক্তচিন্তাকে বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে।
কেমন যেন নিরপেক্ষ থাকার কোন প্রকার সুযোগই নেই এখন আর। এক কথায় ধর্ম নিয়ে মানুষ এখন আর শান্তিতে নেই। শান্তির ধর্মই এখন বিশ্বের অশান্তির মূল কারণ হয়ে পড়েছে।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ, সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরাই পারি এই অশান্তির মূল উৎসকে উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে। বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রে যখন একটা পেরেক মাথা বেড় করে খোঁচা দিয়ে রক্ত ঝরায়, সাথে সাথে হাতুড়ী দিয়ে সেটাকে মেরামত করে আবার ব্যবহারযোগ্য করে নেয়া হয়। আর যদি পেরেকটা অনেক বেশি ক্ষতিকারক হয় তবে সেটাকে তুলে ফেলে নতুন করে আর একটা উপযুক্ত আঁকারের পেরেক লাগানো হয়। ঠিক তেমনি সমাজের এই একরোখা অন্ধবিশ্বাসটি যদি মানুষের মূল্যবান জীবন ঝরায় এবং প্রতিটি মুহূর্তের অশান্তির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেটা মেরামত করতে হবে সময়ের সাথে পরিবর্তিত আধুনিক যুক্তিতে।
এভাবেই কালে কালে মানুষ বন্য থেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জীবে রূপান্তরিত হয়েছে।
আমরা মানব সমাজের বাস করি। তাই শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জন্য ধর্মযুদ্ধ নয়, চাই পারস্পরিক মানবতা বোধ।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য