আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

পীর হবিবুর রহমানের প্রতি আমাদের দায়

ফকির ইলিয়াস  

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য পীর হবিবুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী।

তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল দুবার। প্রথমবার খুব সম্ভবত ১৯৭৬ সালে। দেশে তখন সামরিক বুটের দাগ। আমি তখন স্কুল ছাত্র। এই দেশের ভবিষ্যৎ কী? কোথায় যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ? কিছুই জানি না। শুধুই শুনি। তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনি পীর হবিবুর রহমান। ন্যাপের নেতা। এটুকুই জানি- তিনি আমার এলাকার এক উজ্জ্বল মানুষ। কুঁড়েঘর- তাদের দলের প্রতীক ছিল। এই প্রতীকের অর্থ ছিল দিনমজুরের ঠিকানা। তারা এই দেশে সমাজতন্ত্র চেয়েছিলেন। মানুষের সমান অধিকার চেয়েছিলেন।
১৯২৭ সালের ৯ অক্টোবর সিলেট শহর থেকে মাইল ছয়েক দূরে বাগরখলা নামক গ্রামে এক পীর বংশে পীর হবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।

রাজনীতিতে প্রথম জীবনে মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিমের প্রভাবে মুসলিম লীগের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক ঘটনা প্রবাহ এবং পরবর্তী সময়ে বাঙালিদের প্রতি মুসলিম লীগের বিদ্বেষমূলক আচরণ তাকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তখনই তিনি বিরোধী ভূমিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সাতচল্লিশ-পূর্ব আসাম প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাসাদ্দুক আহমদের হাত ধরে প্রগতিশীল রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। আত্মগোপনকারী কমিউনিস্টদের অনুপ্রেরণায় গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ইয়ুথ লীগে যোগ দেন। খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে সমাজের আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য বিবেচনা করে ব্রতী হন সাম্যবাদের।

১৯৫০ সালে সমগ্র দেশব্যাপী মুসলিম লীগের গুণ্ডাবাহিনী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তাণ্ডব লীলায় মেতে ওঠে তখন সিলেটেও তার চরম উস্কানির সৃষ্টি হয়। পীর হবিবুর অত্যন্ত দুঃসাহসিকভাবে ৪/৫ জন সহকর্মী বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সেদিন সিলেটে মুসলিম লীগের গুণ্ডাবাহিনীর দাঙ্গা প্রতিহত করেছিলেন। সমগ্র দেশব্যাপী দাঙ্গা হলেও সিলেটে সেদিন দাঙ্গা হয়নি। প্রথম জীবনের এরূপ দুঃসাহসিক ঘটনায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫১ সালে যুবলীগ গঠনে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ১৯৫১ সালে প্রশাসনের তীব্র দমননীতির মুখেও দেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে সিলেটে ভাষা-আন্দোলনের সূচনা ও পরিচালনায় দায়িত্বশীল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ সিলেটে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সংগঠক। ১৯৫২ সালে সিলেটের ভাষা-আন্দোলনের সর্বদলীয় কর্ম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন তিনি। উল্লেখ করা দরকার, পীর হবিবুর রহমানের নেতৃত্বেই সিলেটে ভাষা আন্দোলনের সূচনা ও আন্দোলন গড়ে ওঠে।

পীর হবিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের কথা তার একটি লেখায় বর্ণনা করেছেন এভাবে-

‘সিলেট শহরের শেখঘাট মহল্লা। দেওয়ান আবদুর রহিম চৌধুরী পিপি সাহেবের বাসা। তার স্ত্রী বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরী আসাম প্রদেশ মুসলীম মহিলাদের মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনে ছিলেন অগ্রপথিক। রাজনৈতিক কর্মীর সুবাদে বেগম সাহেবা আমাকে জায়গির দেন। আমি তখন এমসি কলেজের ছাত্র। একদিন রাতের বেলা বেগম সাহেবার বড় ছেলে মোয়াজ্জম আহমদ চৌধুরী আমাকে ডেকে পাঠান। তার কামরায় গিয়ে দেখি আমাদের পুরনো বন্ধু শাহেদ আলী বসে আছেন। শাহেদ আলী ঢাকায় তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। মোয়াজ্জম সাহেব এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে আমাকে ফরমায়েস করলেন। আমি খুশি মনে রাজি হলাম। বাস শাহেদ আলী সাহেবও দায়িত্ব আনজাম করে খুশি মনে সেখান থেকে ঢাকার গাড়ি ধরতে বেরিয়ে পড়লেন। নদী ভাঙায় যেমন মানুষের ক্ষেত-খামার, রাস্তা-ঘা আর বাপ-দাদার ভিটাটুকুও যায়, তেমনি আমাদের ঘরে ধস নেমেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ছিলাম। সিলেট আমাদের পদভারে টালমাাল ছিল মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায়। আমরা ‘ভারতের দালাল’ কমিউনিস্ট তকমা পেয়েছি। সবই সুন-সান। কর্মী বলতে আমি আর মকসুদ মাত্র এই দু’জন। এখন তো ‘বাংলা রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে বসে আছি। পরদিনই মকসুদের বাসায় গেলাম। আমরা দু’জনে আবার বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরীর কাছে এলাম। ভাষা আন্দোলনের তিনি অগ্রণী সৈনিক ছিলেন। তার সঙ্গে আলোচনায় সিলেটে তমদ্দুন মজলিসের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলো। আর কমিটির নামেই গোবিন্দ পার্কে ৮ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবসের জনসভা আহ্বান করা হলো। আমরা দু’লক্ষীন্দরে মিলে সভার ইশতেহার লিখলাম। জালালাবাদ প্রেসে ছাপালাম। তারপর রিকশায় চড়ে স্লোগান দিয়ে সভার এলান দিলাম। আর ইশতেহার বিলি করলাম। গোবিন্দ পার্কে সভা। বর্মণ কোম্পানির সাইকেলে আমরা দু’জন ৩টায় পার্কে হাজির হলাম। বিশিষ্টরা সভায় হাজির হলেন, মাহমুদ আলী (সাবেক আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সেক্রেটারি), দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ (অধ্যাপক), এ জেড আবদুল্লাহ (মোতাওয়াল্লি দরগাহে শাহজালাল), মো. নুরুল হক দশঘরি (সেক্রেটারি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ), দেওয়ান ওহিদুর রাজা চৌধুরী, ছাত্রনেতা আবদুস সামাদ (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী), শাহ শামসুল কিবরিয়া (সাবেক অর্থমন্ত্রী), আফসার উদ্দিন (অধ্যাপক) প্রমুখ। সভার নির্বাচিত সভানেত্রী বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরী। তিনি না আসায় সভা শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। কিছু লোক বাঁশের ছাতা মাথায় এক পাগল নিয়ে সভাস্থলে হাজির হয়। সে নাচে আর গান গায়, ‘বাংলাভাষা হিন্দুর ভাষা, বাংলা ভাষা কাফেরের ভাষা, উর্দু ভাষা মুসলমানের-উর্দু ভাষা মুমিনের ভাষা।’ এই দৃশ্য দেখে আমি আতঙ্কিত হলাম। হঠাৎ আমাদের এক সময়ের সহকর্মী বাহাউদ্দিন এম এ বারীর (ধলাবারী) নাম সভাপতিত্ব করার জন্য প্রস্তাব করে বসল। আমি তাড়াতাড়ি সভাপতির আসন জুড়ে ফেলার জন্য মাহমুদ আলী সাহেবের নাম প্রস্তাব করলাম। কিন্তু মাহমুদ আলী চেয়ারে বসলেন না। অপরদিকে এম এ বারী সভাপতির চেয়ারে বসতে উদ্যত হলেন। আমি চেয়ার আগলে দাঁড়ানোর ফলে বারী সাহেব বসতে পারলেন না। ইত্যবসরে বাহাউদ্দিন নিজের নাম নিজেই প্রস্তাব করে চেয়ারে এসে বসে পড়ল। আমি তাকে ধাক্কা দিতেই সে উঠে সরে গেল। আমার বোঝা হয়ে গেল যে, মুসলিম লীগ আমাদের সভা করতে দেবে না। আর সে শক্তির মোকাবেলা করার সামর্থ্য তো নেই। একমাত্র ভরসা জেলা মুসলিম লীগ সেক্রেটারি মনির উদ্দিন সাহেব। তিনি যদিও উর্দুরই সমর্থক, আমাকে খুব স্নেহ করেন, কারণ আমি মুসলিম লীগের ভালো কর্মী ছিলাম। আমার বিশ্বাস তিনি আমার বিপদে আমাকে বিমুখ করবেন না। আমি মকসুদসহ বন্ধুদের বুঝিয়ে বললাম, আপনারা এখন সভা শুরু করবেন না। আমি নদীর দক্ষিণ পাড়ে লীগ সেক্রেটারির কাছে সাহায্যের জন্য যাচ্ছি। বলেই আমি দ্রুত চলে গেলাম। জনাব মনির উদ্দিন আমার কথা শুনে দ্বিরুক্তি না করে ঝটপট ময়না মিয়াকে ডেকে দু’গাড়ি লাঠিয়াল নিয়ে আমার সভা রক্ষায় যাওয়ার আদেশ দিলেন। আমি হাতে আসমান পেয়ে গেলাম। এ কথা শোনার পর আর দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে আবার সভাস্থলে রওনা দিলাম। কিনব্রিজে উঠতে যাচ্ছি এমন সময় একজন সাইকেলের ব্রেক টেনে আমাকে সম্বোধন করে বলেন, হবিব মিয়া সাহেব আপনার মিটিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর খুব সম্ভব মকসুদ মারা গেছে। ‘মকসুদ মারা গেছে’ তারপর আমার আর কোনো জ্ঞান হুঁশবুদ্ধি নেই। আমি গোবিন্দ পার্কে কেমনে এসে পড়েছি বলতে পারব না। দেখছি একটা বড় মিটিং চলছে। সিলেটের সর্বজনপ্রিয় নেতা আজমল আলী চৌধুরী বক্তৃতা করছেন। আমার কিন্তু আর কিছুতেই মন নেই, সভার চতুর্দিকে ঘুরছি আর চেনা মুখ খুঁজছি। উদ্দেশ্য মকসুদের খবর শোনা। হঠাৎ নয়া সড়কের আমার চেনা এক লোক খপ করে আমার হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে পার্কের বাইরে নিয়ে গেল। আমি বলি- মকসুদের খবর বলেন, সে শুধু টানে বাইরের দিকে। বাইরে আসার পর সে বলল, আপনি কোন সাহসে এখানে ঢুকেছেন। লেংড়া মৌলভী দলেবলে আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে আর বলছে, একটাকে খতম করেছি। আর একটা বাকি রয়েছে তাকেও খতম করতে হবে। সেই লোকের মুখে আদ্যোপান্ত সব বিবরণ শুনলাম। জানা গেল, আমি চলে যাওয়ার পর পার্কের পশ্চিম প্রান্তে আজমল আলী চৌধুরী সাহেব সভা শুরু করেন। তিনি বাংলার দাবিদারদের ভারতের দালাল, হিন্দুর গোলাম, কাফের, বেইমান ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করছিলেন। তখন আমাদের বন্ধুরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এখানেই সভা শুরু করে। এই সভার মাইকের আওয়াজ শুনে আজমল আলীর সভার বেশির ভাগ লোক এই সভায় চলে আসে। তখন সেখানে থেকে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে এই সভায় আক্রমণ চালানো হয়।’

আজকে অনেকেই ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, সংবর্ধিতও হয়েছেন। অথচ যার হাত ধরে সিলেটে ভাষা আন্দোলনের সূচনা ও পরিপূর্ণতা পেল সেই নির্ভীক প্রচারবিমুখ মানুষটি সম্পর্কে সমাজ ও রাষ্ট্রের সংকীর্ণ ভূমিকা বড়ই লজ্জাকর।

সিলেটে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে পীর হবিব ছিলেন অন্যতম। ১৯৫৪-এর ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে সিলেটের নির্বাচন পরিচালনা সাবকমিটির আহ্বায়ক এবং নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল থেকে মুক্তিলাভের পর ১৯৫৬ সালে সিলেট সদর আসনের যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন বৃহত্তর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬০-এর দশকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ এবং বিভিন্ন পর্যায়ে আত্মগোপন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষক খেতমজুর ও জনগণের মধ্যে কাজ করেন। তারই এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন।

১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে বিরোধী দলের ডাক গঠিত হলে ডাক-এর আহ্বানে দেশব্যাপী নির্বাচনী কাজে পীর হবিব সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ওই বছরই সিলেট জেলা ন্যাপ সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর ন্যাপ কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং ১৯৭৭ সালে ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ন্যাপের মাধ্যমে আইয়ুব বিরোধী মোর্চা গঠনে ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে ধৈর্যশীল ও অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং সফলতা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে দিনরাত শ্রম নিবেদন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে আট দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (হারুন) ও একতা পার্টিকে ঐক্যবদ্ধকরণে প্রধান উদ্যোক্তা, এনএপি বা ঐক্য ন্যাপ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং অন্যতম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে এনএপির (ঐক্য-ন্যাপ) সঙ্গে ন্যাপ মোজাফফর ঐক্য সম্মেলনে ন্যাপকে পুনর্গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সৎ ও দেশপ্রেমিকদের একটি বিকল্প পার্টি গড়ার লক্ষ্যে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ঐক্য প্রচেষ্টায় যোগদান করেন। এ সময় অসুস্থ শরীর নিয়েও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন।
মনে পড়ছে পীর হবিবুর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে। এই প্রজন্ম ঘিরেই তার স্বপ্নের কথা তিনি বলেছিলেন। বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা। সে সময় তা আমাদের কাছে এক স্বপ্ন ছিল তো বটেই। এ দেশে আলবদর-রাজাকারদের বিচার হবে!

২০০৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার সিলেট শহরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজনীতিক পীর হবিবুর রহমান আজ এই প্রজন্মের কাছে বিস্মৃত প্রায়। তাকে- তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জীবনে তিনি কিছুই চাননি।

তাই এ লেখার শেষে এসে আমি একটি প্রস্তাব করতে চাই। সিলেটের কাজীর বাজারে সুরমা নদীর ওপর যে সেতু হয়েছে- এর নাম ‘পীর হবিবুর রহমান সেতু’ রাখা হোক। এ বিষয়ে মাননীয় সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলা দরকার। আমরা যদি আমাদের বরেণ্য রাজনীতিকদের মূল্যায়ন না করি- তবে বিবেকের কাছেই দায়ী থেকে যাব।

ফকির ইলিয়াস, কবি ও কলাম লেখক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ