প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ৩১ মার্চ, ২০১৬
সেইসব দাবিখা'র রাজাকার
২০১৩ সালে যখন গণজাগরণ হয়; তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের রাজাকার কতিপয় ঠিক সেই ১৯৭১ সালের রাজাকারদের মতো এই জাগরণের সমালোচনা করেছিলো। পরে আবার হাওয়া বুঝে মাথায় পতাকা বেঁধে শাহবাগে হাজির হয়ে গিয়েছিলো দেশপ্রেমের আলকাপ নৃত্য দেখাতে।
সাম্প্রতিক সময়ের তনু হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সামগ্রিকভাবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরেকটি গণজাগরণ যখন দৃশ্যমান; তখন আবার ক্ষমতার দুধের মাছিরা ইনিয়ে বিনিয়ে বলছে, আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। তনুর মৃতদেহ যথাযথ পোস্টমর্টেম না করেই দাফন, অতঃপর মৃতদেহ তুলে পোস্টমর্টেম, তনুর পরিবারকে তুলে নিয়ে গিয়ে সুবিধাজনক বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা ইত্যাদি রুটিন লীলাখেলা দেখেও সমকালের রাজাকারদের কোন বিচলন নেই। তাদের কথা হচ্ছে, যার যাই হোক আন্দোলনকে এমন খাতে প্রবাহিত করতে হবে যাতে তাদের নিজেদের দালালির বিনিময়ে খাদ্য (দাবিখা) খাতে কোন সমস্যা না হয়।
সম্ভাবনা কী তবে সম্ভব না!
যারা সেনাবাহিনীতে রয়েছেন; এরা তো মঙ্গলগ্রহ থেকে আসেননি। আমাদেরই অগ্রজপ্রতিম, স্কুল-কলেজের বন্ধু, অনুজপ্রতিম এমনকি আত্মীয়-স্বজন। তাই প্রত্যাশিত ছিলো প্রজন্মের পালাবদলে সেনাবাহিনীর আচরণ চিন্তাভাবনায় সমসাময়িকতা আসবে। অন্তত: আইএসপি আর-এর বিবৃতির ভাষাটা আধুনিক ও বস্তুনিষ্ঠ হবে। কিন্তু প্লায়োস্টোসিন যুগের ভাষায় ২০১৬ সালের বিবৃতি লেখা হলে উত্তরণের কোন আশা চোখে পড়েনা।
সেনাবাহিনীর আইএসএসবি পরীক্ষায় আইকিউ টেস্ট করা হয়। তাই সেনা কর্মকর্তাদের মেধা ভালো হয়। তাদেরকে কী বলে দেয়ার প্রয়োজন আছে; সেনানিবাসের মধ্যে "তনু হত্যাকাণ্ড" সেনানিবাসের ভেতরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা প্রমাণ করে।
আবার ক্যাডেট কলেজের মত অত্যন্ত নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কিশোরী ক্যাডেট “ তুবা”-র মৃতদেহ পাওয়া যাওয়া দেশের অন্যান্য জায়গায় দৃশ্যমান হত্যা এবং/বা আত্মহত্যার চেয়ে অনেক বেশী মাত্রার ভীতিপ্রদ।
তাই তনু হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রজনতার বিক্ষোভকে গতানুগতিক আইএসপি আর-এর ভাষায় "কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনুমান নির্ভর বক্তব্য দিচ্ছেন ও প্রচার করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর চেষ্টা করেছেন" হিসেবে অভিহিত করা ডিনাইয়াল বা অস্বীকার প্রবণতা। এ তো পাকিস্তানের ঘাতক সেনাদের রাজরোগ। বাংলাদেশ নামে সার্বভৌম সবুজ বদ্বীপের দেশপ্রেমিক সাহসী সন্তান সেনা কর্মকর্তাদের বাস্তবতা স্বীকারের সৎসাহস প্রত্যাশিত।
তেমনটাই কথা ছিলো। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বন্ধুদের সঙ্গে যতবার কথা হয়েছে; তারা অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে, ঔপনিবেশিক অন্ধকার ফুঁড়ে জনবান্ধব সেনাবাহিনী তৈরি করবে তারা। সেই অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিলাম। আশা রাখি জনবিক্ষোভের যৌক্তিক কারণ অনুধাবন করে আইএসপি আর যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত নতুন ভাষায় সত্যনিষ্ঠ বিবৃতি লিখবে।
হোক এসপার ওসপার
তনু হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সারাদেশে ও বাংলাভাষী বিশ্বে যে প্রতিবাদ ও ন্যায়বিচার দাবীর ঢেউ; তা আক্ষরিক অর্থে শুধুই তনু হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংগ্রাম নয়। এই সংগ্রাম ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যার শিকার নারীর জন্য ন্যায়বিচারের দাবীতে জন-উত্থান।
আসছে পয়লা বৈশাখে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসবে আরবের বিকৃত তাহরুশ উন্মাদনায় নারী নির্যাতনের একবছর পূর্ণ হচ্ছে; কোন রকম বিচার হয়নি এই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার। উলটো নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনী সময় বেঁধে দিয়েছে, এবার বিকেল পাঁচটার পর বৈশাখী উৎসবের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে না। অর্থাৎ তাহরুশ বিকৃতির অপরাধীদের শাস্তি তো হলোই না; বরং তাদের চাওয়া অনুযায়ী প্রশাসন বৈশাখের উৎসবটিকে হত্যা করতে চলেছে।
তাহরুশ উপমানব গোষ্ঠী প্রশাসনের এই প্রচ্ছন্ন প্রণোদনায় দ্বিগুণ উৎসাহে নারী নির্যাতন করে চলেছে পাহাড়ে, সমতলে, জলপাই বাগানে, হিন্দু বসতিতে, মেট্রোপলিটনের শৈল্পিক এপার্টমেন্টে।
এই যে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি; নারী নির্যাতকদের প্রচ্ছন্ন ইন্ধন; এসবের অনুবাদ আসলে হেফাজতের ১৩ দফার বাস্তবায়ন। "নারী তুমি ঘরে ফিরে যাও"। কিন্তু ঘরেও তো সে নিরাপদ নয়; এমনকি মাতৃগর্ভেও নয়; এই শ্বাপদ সংকুল জনপদে।
এপ্রিল হোক তাই এই নারীর বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতার একটা এসপার-ওসপার করার মাস। আমরা ছোটখাটো মানুষেরা প্রত্যেকের ছোট ছোট সদিচ্ছাগুলো একসঙ্গে জড়ো করলে তার সামনে দাঁড়ানোর শক্তি কারো নেই।
ec·sta·sies
গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লাইটাস বলেছিলেন, মানুষ একটি নদীর একই স্রোতে দু'বার স্নান করতে পারেনা। প্রতিটি স্নানের পরেই স্রোত বদলে যায়। অথচ বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন সরকারের থিংক ট্যাংকরা সরকার পতনের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত পরিচিত স্রোত খুঁজতে থাকেন; বুঝতে চাননা যে স্রোত বদলে গেছে। একটি সরকার পরিবর্তন দৃশ্যপট থেকে আরেকটি সরকার পরিবর্তন দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা হয়।
যে কোন দেশের যে কোন সরকার পরিবর্তন জনসমর্থনে হয়। জনভিত্তি ছাড়া কোন সরকার পরিবর্তন বাস্তবিক অর্থে অসম্ভব। ব্যর্থ সরকারগুলো ষড়যন্ত্র যড়যন্ত্র বলে চেঁচানোর প্যারানয়া বা হ্যালুসিনেশানে ভোগে। আসলে ক্ষমতাসীন দলের থিংকট্যাংকরা জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় জনমানুষের ধমনীর শোণিত প্রবাহ; ভূমির তাপমাত্রা ইত্যাদি পরিমাপে ব্যর্থ হন।
ক্ষমতার সঙ্গে মাদকদ্রব্য এক্সট্যাসির অনেক মিল আছে। ক্ষমতা বা এক্সট্যাসি পিল খেলে; অকারণে ভালো লাগে; দোলনায় বসে ফুল খেলবার মতিভ্রম হয়; ইন্দ্রিয় প্রবণতা বাড়ে; মনের মধ্যে "মন কী যে চায় বলো; যারে দেখি লাগে ভালো" এই গান কলকলিয়ে ওঠে।
আধাঘুমে আধা জাগরণে স্বপ্নাতুর রাত্রি শেষে হঠাত থিংক ট্যাংকেরা দেখেন, মাথার কাছে আরামের বালিশ নেই; জেলখানার কম্বল।
ec·sta·sies
1. Intense joy or delight.
2. A state of emotion so intense that one is carried beyond rational thought and self-control: an ecstasy of rage.
3. The trance, frenzy, or rapture associated with mystic or prophetic exaltation.
4. often Ecstasy Slang MDMA.
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য