প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
খুরশীদ শাম্মী | ১১ এপ্রিল, ২০১৬
“কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক বলা যায়, কতটা পথ পেরুলে পাখি জিরুবে তাঁর ডানা, কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়। প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা।” কবির সুমনের এই গানের কয়েকটা লাইন আমার মনে সর্বদা খোঁচা দিয়ে রক্ত ঝরায়। আজও ঝরাচ্ছে, প্রচন্ডবেগে।
আমার, আমাদের, প্রতিটি বাংলাদেশীদের প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত? আর কতটা হত্যার পর জেগে উঠবে দেশের প্রশাসন? সরকার, বিচার বিভাগ? কবে সঠিক বেগে চলতে শুরু করবে প্রতিটি অপরাধের বিচার? প্রশ্নগুলো সহজ কিন্তু তারপরও দেশের সরকারেরই কর্তব্য জনগণকে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া।
প্রথাবিরোধী, বহুমাত্রিক মননশীল লেখক হুমায়ুন আজাদকে মৌলবাদীরা ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হত্যা করার উদ্দেশ নিয়ে আক্রমণ করে। জঙ্গিদের আঘাতে হুমায়ূন আজাদ গুরুত্বর আহত হলেও তিনি সে যাত্রা জীবনে বেঁচে গিয়েছিলেন।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অর্থাৎ রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল যুবক ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী-মার্কিন প্রকৌশলী, বিজ্ঞানভিত্তিক, মুক্তচিন্তার লেখক এবং ব্লগার অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা’র সাথে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কাছাকাছি স্থানে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়। ধারালো অস্ত্রে তাঁদের মাথায় কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে স্ত্রী বন্যার হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলে এবং অভিজিৎ রায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে সেই রাতেই মারা যান।
অভিজিৎ হত্যার এক মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সকালে প্রকাশ্যে তেজগাঁয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে সন্ধ্যায় আক্রমণ করে সত্ত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনের ওপর হামলা করে তাঁকে হত্যা করা হয়। কারণ তাঁর প্রকাশনী থেকে লেখক অভিজিৎ রায়ের বিশ্বাসের ভাইরাস বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। একদিনে অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে আক্রমণ করে আহমেদ রশীদ টুটুল সহ তিনজনকে গুরুত্বর আহত করা হয়।
গত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় সূত্রাপুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা “আল্লাহু আকবর” বলে প্রথমে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও পরে গুলি করে হত্যা করে নিজামুদ্দিন সামাদ নামের আর একজন অনলাইন আক্টিভিস্টকে।
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে একটি বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলের সদস্যরা।
এতো গেলো কেবল লেখক এবং মুক্তচিন্তার মানুষদের কথা। এর পাশাপাশি প্রতিদিন খবরের কাগজ খুল্লেই চোখে পরে ডজন খানের হত্যা এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের ঘটনা।
সাধারণ জনগণের পরিশ্রম, মেধা, দেশপ্রেমে একটু একটু করে শক্তিশালী করে একটি দেশকে। আর দেশ! তার জনগণদের জীবনে নিরাপত্তা এবং মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাবার নিশ্চয়তা দেয়। সে কারণে যে কোন দেশে যে কোন হত্যার বিচার সবথেকে কঠিন। তাই ঐসব দেশে মানুষ হত্যার মতো অন্যায় করতে ভয় পায়। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকেরা এতই দুর্ভাগা যে তাদের জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই।
বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী এবং বিচারবিভাগের অবহেলা এবং দুর্নীতির কারণে অপরাধীরা অপরাধ করেও সমাজে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ পায়। তাদের অন্যায়ের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হয় না। সে কারণেই দিনদিন বাংলাদেশে এমন অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
প্রতিটি অপরাধের বিচার চেয়ে চেয়ে মানুষ আজ বড় প্রতিবাদী হয়ে পড়ছে। দেশের সরকার এবং প্রশাসনকে একটাই প্রশ্ন: আর কত? আর কতটা হত্যা হলে, বিচারক তাঁর বিচারকার্য শুরু করবে?
আর কত জীবন দিলে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য