প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ২০ এপ্রিল, ২০১৬
বেশ কদিন অসীম তাপদাহর পর গত দুই তিন দিন তাপ কিছুটা কম। গ্রীষ্মকাল এবার ভালই জানান দিচ্ছে। কিন্তু ঝড় হলো না, কালবৈশাখী ঝড়। জারুল ভালো ফুটলেও কৃষ্ণচূড়া তেমন আসে নি। ভুল করে মনে হয় হিজল গ্রীষ্মেই বাকবাকুম। ভুল! গত ২/৩ বছর ধরে কোনটা ভুল আর কোনটা শুদ্ধ ভালো করে খেয়াল করতে হয়েছে। এখন সুবাতাস হওয়ার কথা, সাধারণ সাবধানতা নিয়ে বেঁচে থাকার কথা। অপেক্ষা না, ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি দেখার কথা, কিন্তু এ দেশে নিত্য নতুন শকুনের জন্ম হচ্ছে; কনভার্টেড শকুন!
বৃটিশ নাগরিক শফিক রেহমান এ দেশে সাংবাদিকতা করেন। এক সময়কার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পরামর্শক ও বটে। শফিক রেহমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ পরিচিত। আমেরিকার তদন্তে জয় হত্যা চেষ্টায় শফিক রেহমানের নাম উঠে এসেছে। তাকে সেই তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তাপ যতটুকু কমে ছিল আবার বেড়ে গেল। মুক্তমতের বিরুদ্ধে আঘাত, বাকশাল ইত্যাদি শুরু হয়েছে।ইতিহাস এখন মোবাইলে মোবাইলে। বাঙালি এখন পক্ষে হোক আর বিপক্ষে হোক আবার নিজেদের ইতিহাস চর্চা শুরু করেছে। শফিক রহমান, মাহমুদুর রহমান, কাদের মোল্লার মত সাংবাদিকদের অন্য সব সাংবাদিকদের সাথে তুলনা করলে বেশির ভাগকেই ছোট করা হবে। এখন হয়তো ইমরান এইচ সরকারের মতো অনেকে ছ্যাৎ করে উঠবেন এ কথা বলার জন্য। এমন গরম। আর ছ্যাৎ করবেন না। হিট স্ট্রোক, হাই প্রেশার, মাইন্ড স্ট্রোক করে ভেটকি মারতে পারেন, ছ্যাৎ করলে। তারচেয়ে আসেন, কালো অক্ষরগুলা পড়েন, অক্ষরগুলোর সাথে কথা বলেন।
ইমরান সরকারের কাছে ‘গণতন্ত্রের দিঘী’ শফিক রেহমান সাহেব, বিএনপির দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে যে নির্যাতন, নারী নিগ্রহ, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বিদেশী গণমাধ্যমে ওঠে এলেও এ সবকে প্রপগন্ডা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
২০১৩ সালে প্রকাশিত তার “মৃত্যুদণ্ড দেশে দেশ ” বইতে লিখেছেন – বর্তমান সরকার ফাঁসির দণ্ড দিয়ে দিয়ে দেশটাকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলেছে। কেউ কেউ বলবেন রেহমান সাহেব ফাঁসির বিরোধী। ভালো। কিন্তু তখন আমার প্রশ্ন ফাঁসি বিরোধী রেহমান সাহেব তখন চুপ ছিল কেন যখন সারা দেশ পেট্রোল বোমায় পুড়ছিল, শিশু, কিশোর, ছাত্র পুড়ছিল তখন এ মৃত্যুগুলো, নৃশংসতাগুলো তাকে স্পর্শ করেনি কেন? উপরন্তু তিনি বেগম জিয়ার পরামর্শক। তার সিল্কের শার্টে অদ্ভুত সেন্সর! এই তিনি রাজাকারদের বাঁচাতে তার বই নিয়ে লন্ডনে প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
রেহমান সাহেব খুব স্মার্ট ঝাকঝমক পূর্ণ থাকেন। তার স্মার্টনেসের সাথে তুলনা চলে মুসার। ড্যাসিং। তার পত্রিকা কখনও প্রথম শ্রেণীতে আসতে পারে নাই। জাঁকজমক, রেড রোজ দেওয়া রেহমান সাহেব তার পত্রিকার কর্মচারীদের ৬/৭ মাসের বেতন না দিয়ে লন্ডন পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বিএনপির শেষ দিকে। আহ বিবেক।
তিনি প্রত্যক্ষ কাজ করেন বিএনপির জন্য। তারপরও কোন সমস্যা হয় নাই। তিনি এমন কোন সাংবাদিক বা ব্যক্তিত্ব না যার দ্বারা তিনি সরকার বিরোধী শক্তিশালী জনমত তৈরি করতে পারবেন। শফিক রেহমান সজীব ওয়াজেদ জয় হত্যা চেষ্টাটার সাথে জড়িত থাকার নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করার পর ডা. ইমরানের বক্তব্য আসলে অতি গরমের কারণে কিনা বুঝতে পারছি না। দেশে গণতন্ত্র নাই, সরকার স্টিম রোলার চালাচ্ছে বিরোধী মতের উপর – শুদ্ধ বইয়ের ভাষায় বক্তব্য। ইমরান দু-বছরের বেশি সময় ধরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই চলছে। কিন্তু তাকে সরকারতো গ্রেফতার করেনি একবারও। বরং নিরাপত্তা দিয়েছে, দিচ্ছে। নাকি ইমরান ভাবছে শফিক রেহমান তার থেকে বড় সংগঠক, বেশি পরিচিত?
যতই মতভেদ থাকুক শফিক রেহমানের মুক্তি চাওয়াটা ন্যক্কারজনক লাগতো যদি না ইমরান মঞ্চের বর্তমান কর্মকর্তাদের দেখতাম। জী আমি কর্মকর্তাই বলছি। খুশি কবিরের সাথে কামারুজ্জামান, মাহফুজদের সম্পর্কের প্রমাণ খুঁজতে আর্কাইভে যেতে হবে না। অবশ্য দিন কানারা নিজেরা নিজেদের আর্কাইভেই থাকে। সেখানে বাইরের বাতাসও ঢুকে না। বিএনপি নেতার ভাগ্নি ইমরানের মঞ্চের নেতা, প্রাক্তন ছাত্রদল নেতা ইমরান মঞ্চের নেতা। বাহ।
অন্যান্য সবার সাথে সবার মোটামুটি সম্পর্ক থাকলেও বিএনপি ঘেঁষা কোন সংগঠন বা ব্যক্তির সাথে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু স্পষ্ট দৃশ্যমান বিএনপির সুবিধা প্রদানকারী সকলের সাথে ইমরানের সাম্য অবস্থা। উদাহরণ স্বরূপ বলা বাম, বাম ঘেঁষা কয়েকটি দলের সাথে।
জিয়ার সময় থেকে আমাদের রাজনীতিতে ভাইরাস ঢুকানো হয়েছে একাডেমিকভাবে। সেই থেকে “আই হ্যাট পলিটিক্স, এত বছর আগের ঘটনা ভুলে যাওয়া” ইত্যাদির শুরু। শাহবাগ গণআন্দোলন থেকে আগামী দিনের জন্য কিছু নেতা বের হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। বলা যায় ব্যক্তি চতুরতা, শঠতা, লোভ, হিংসার কারণে সেটা হলো না। সেই ব্যক্তি এখন বেছে নিয়েছে পুরানো অসফল, সস্তা, জিয়া সংস্কৃতির অপরাজনীতি প্রতিশ্রুতি স্টাইল।
যশোরের মালোপাড়ায় লং মার্চের সময় ডা. সরকার ঘোষণা করেন সেখানে সে একটা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে- সেই স্কুলের ঘর কেউ এখন পর্যন্ত দেখেছে বলে আমার জানা নাই। তারপর আসি বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। হত্যার পর মিডিয়ার সামনে গণজাগরণ মঞ্চের নিঃস্ব:ঙ্গ অংশের নেতা ডা. সরকার ঘোষণা দিল স্মৃতি সৌধ করার। যারা অভিজিৎ খুনের জায়গাটা চিনেন তারা দেখেছেন নিশ্চয়, সেই জায়গা এখন মিনি ডাস্টবিন।
ডা. সরকার বলল, তনুর বাবা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বলে বিচার পাচ্ছে না। বিশ্বাস করতাম যদি বিশ্বজিৎ হত্যা, শিশু রাজন হত্যার মতো হত্যাগুলোকে বিচারের ট্রেনে না দেখতাম। যে কোন খুনের বিচার চাওয়া অধিকার। ন্যায় পরায়ণ মানুষ তাই করে। কিন্তু মুখপাত্র মঞ্চ থেকে কৃষ্ণকলির কাজের মেয়ে ১৭ বছর বয়স্ক জান্নাতুল ফেরদৌসি নিয়ে কথা বললো না! অথচ তনুর তুলনায় জান্নাত শতভাগ সুবিধা বঞ্চিত। মৃত্যুর পরও কমিউনিস্ট এবং ইমরান মঞ্চের সমাজে উঠতে পারলো না, সমাজতন্ত্রের নিয়মে পড়লো না, সাম্যবাদে পড়লো না, সহ অবস্থানে পড়লো না কাজের মেয়ে জান্নাত। আহ বিপ্লব, আহ সামন্তবাদ, আহ মানবতা। হালকা রিভার্স গেইম খেলতে খেলতে আজ দুর্গন্ধ যুক্ত কবিতা আবৃত্তি।
আঁতাত আঁতাত বলে হঠাৎ চিৎকার শুরু। ঘরে মানুষ যখন বলে খারাপ তখন ভালোটাও অনেকাংশে খারাপ দেখে সাধারণ মানুষ। সরকার আঁতাত করেছে এ চিৎকার করে করে প্রতিমুহূর্তে সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে ‘ছাগুদের’। তারা আরও বেশি প্রচার করেছে। রিভার্স গেইম। কই আজ রাজাকারেরা? কার সাথে কার আঁতাত? স্কুল বা স্মৃতি সৌধ বানানোর মতো শুধু চটকদার বিজ্ঞাপন।
মাঝখানে মঞ্চের কিছু ইনিয়ে – বিনিয়ে ইমরানের সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করেছে। ইমরানেরও এ বিষয়ে খুব একটা দ্বিমত ছিল বলে কখনো দেখিনি। সে হিসাবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের, ‘ছায়া নানা' ইমরান। নানা-নাতির বক্তব্য নিয়ে চারদিক সরব। জয় সাহেবকে অনেকে অনেক ধরনের গালিও দিচ্ছেন। দেখেন জয়ের হত্যা ষড়যন্ত্রের কারণে শফিক রেহমান গ্রেফতার হলো। জয় তার সত্যিকার নানা বঙ্গবন্ধুর মতো সরল বলে, বাঙালি বড় জনগোষ্ঠীর মতো সরল বলেই ইমরানকে নিয়ে তার বক্তব্য জানিয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় আমার, আপনার যে কারো সাথে কেউ বড় অন্যায় করলে আমরা চাইবো না আমাদের স্বজন, কাছের মানুষ তার বা তাদের সাথে মিশুক। জয় সেটাই করেছে।
কেউ কেউ বলছেন জয় রাজনীতি বুঝে না, রাজনৈতিক ব্যক্তি না। খেয়াল করে দেখেন সজীব ওয়াজেদ জয়ের আপন নানাও এমনই ছিলেন। আপনাদের এমন মানুষ নেতা হিসাবে পছন্দ না কিন্তু এমনের বিপরীত যারা আছে তাদেরও আপনাদের পছন্দ না । করবেন কি? চতুর রাজনীতিবিদ হলে জয় সাহেব এ বক্তব্য দিতই না, চেপে যেত। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে পাওয়ার প্রাকটিস করলো না জয় বরং সরলভাবে তার মনের ক্ষোভ জানালো সবার মতো, এটা বড় অন্যায়। যারা জয়কে গালি দিচ্ছেন তারা জেনে বুঝে দিচ্ছেনতো? জেনে বুঝে শফিক রেহমানের মুক্তি চাচ্ছেন তো? সাংবাদিক শফিক রেহমান বিএনপি। আর যাহা বিএনপি তাহাই জামাত এটা বুঝার জন্য পিএইচডি হতে হয় না।
মূলধারার রাজনীতি করা ‘ছায়া নানা’ যদি সরল পথে নেতা হতে চাইতো সেটা খুবই সম্ভব ছিল। সেই সাথে বের হতো আরও নেতা। কিন্তু ছায়া নানা এবার সরাসরি পক্ষ নিল রাজাকার প্রোমটকারীদের। ছায়া নানা আসলে এখন সেনা শাসক, ও মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের দর্শন বিলীনকারী ‘জেনারেল জিয়া’ হয়ে গেছেন!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য