প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
গোঁসাই পাহ্লভী | ২৬ এপ্রিল, ২০১৬
আমরা আপনাদের, এই বুঝদারওয়ালাদের বলছি, আপনারা প্রায় সময় অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন, কথায় কথায় বঙ্গে সূফীদের মাধ্যমে ইসলাম আসার কথা বলেন, বাউল ফকিরদের কথা বলেন, এইগুলো কেন বলেন? আপনারা এইসব বলে ইসলামী রাজনীতিকে (সে রাজনীতি যে অবস্থায় থাক কিনা) মোকাবেলা করতে চান, তাহলে ইসলামী রাজনীতি কি কেবল সূফীদের ভাবনা চিন্তার বিপক্ষে দাঁড়ানো কিছু?
আপনাদেরকে আরো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বঙ্গে সূফি ইসলাম এখন খুব নিভুনিভু অবস্থায় আছে, যার বিপরীতে আপনারা যাদের দেখছেন, এই যে পোলার অপজিট ভাবনা এইটা বেখাপ্পা। ইসলামি রাজনীতি সূফিধারার কাঠামো থেকে অনেক বেশি বিস্তৃত, অর্থময়তার পরিমণ্ডলে ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা খেয়াল করলে বাঙলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অর্থনীতির হাতে জিম্মি। জামায়াতের সাথে পলিটিক্যাল ইসলামকে যুক্ত করলে বাস্তবতা আরো বেশি ধারণাতীত অবস্থায় আছে। ফলে আপনারা সূফিদেরকে ঠিক যে জায়গা থেকে ইসলামী রাজনীতির বিপরীতে দাঁড় করাচ্ছেন, কাঠামোটি শুরুতেই প্রতিযোগিতার জন্যে বাতিল হয়ে যায়।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আপনারা অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশের রেফারেন্স নিচ্ছেন কোথা থেকে? হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের সব থেকে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ চর্যাপদ এবং শ্রী কৃষ্ণকীর্তন, এই দুটি গ্রন্থ কি অসাম্প্রদায়িক গ্রন্থ। আমরা সম্প্রদায় এবং সাম্প্রদায়িকতা কিংবা সম্প্রদান শব্দগুলিকে নিয়ে এখনও তেমন আওয়াজ তুলি নাই।
বঙ্গে সূফীদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচার এই কথা সত্য, তবে সর্বাংশে নয়। যদি সর্বাংশেও সত্য ধরে নেই তাহলে এর ব্যর্থতা হচ্ছে এই যে, বঙ্গে সুফিরা কোনও প্রকার রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে পারে নাই। বঙ্গে পলিটিক্যাল ইসলামের সাফল্য, এককভাবে যে কোনো পলিটিক্যাল থিওরির থেকে আগানো।
বিষয়টির বাস্তবতা কয়েকটা ক্ষেত্রে মোটাদাগে চোখে পড়ে। এবার আসেন, পহেলা বৈশাখ বা দোলে পার্বণে বাঙালি এবং বাউলকে সমার্থক করে তোলা হয়, অথচ বাউলরা বা ফকিরেরা ইসলাম বলতে কি বোঝে, রাষ্ট্র বলতে কি বোঝে, সমাজ এবং তন্ত্র সম্পর্কে এদের ধারণা কি এ বিষয়ে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ থিসিস কিংবা ব্লগিং বা তৎপরতা হয়েছে?
এসব তৎপরতা ইতিহাসকে ধরে নেবার খেসারত ব্যতিত অন্য কিছু নয়। আপনি ইতিহাসকে ‘ধরে নিতে’ পারেন না, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবধর্ম এগুলো তো আপনি ‘ধরে নিতে’ পারেন না! এভাবে এই ‘ধরে নেওয়া’র চর্চার মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষ তিন টুকরা হলো। বাংলাদেশেরও এই ‘ধরে নেওয়া’র মধ্যে দিয়ে জন্ম।
ভারত তার স্বাধীনতার মূল্য আজও দিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশও। আফগানিস্তান কিংবা ইরাকে বিদেশি সৈন্য দিয়ে হত্যা হচ্ছে এমন নয় বাংলাদেশে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, প্রশাসন নিজের দেশের মানুষই নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করছে। এই হত্যার মূল কারণ কি? কারণ দেখবেন ‘ধরে নেওয়া’। যে জাতি একটি সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন হতে হলো সেই দেশকেও ‘ধরে নিয়ে’ সারভাইভ করতে হবে এটাই হচ্ছে সামষ্টিক মানুষের বড় ব্যর্থতা।
‘ধরে নেওয়া’র সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে, সম্প্রদায় এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রবণতাগুলোকে মনোযোগ দিয়ে পাঠ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সন্ত্রাসবাদ কেবলমাত্র একটি আত্মঘাতি প্রবণতাই নয়, একটি জ্ঞানকাণ্ডও বটে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য