আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

পুলিশের ভূমিকা এবং…

নাজমুল হাসান  

আমার বন্ধুদের মধ্যে একটা বড় অংশ পুলিশে চাকুরী করে। খুব কাছ থেকে তাদেরকে দেখি। দেখে দেখে আমার মনে শুধু একটা প্রশ্নই জাগে, এটা কী কোন জীবন! এমন যান্ত্রিক জীবন কী আসলেই কোন জীবন হওয়া উচিৎ?

জীবনে যেদিন তারা চাকুরীতে ঢুকেছে সেই মুহূর্ত থেকে তাদের ডিউটি শুরু, চলবে যেদিন চাকুরী শেষ হবে বা মৃত্যু হবে সেদিন পর্যন্ত। তাদের ছুটি আছে,  সরকারী নিয়ম অনুযায়ীই আছে কিন্তু তা পাওয়া যে কী বিড়ম্বনার এবং পেলেও ভোগ করা যে কতোটা অনুপভোগ্য তা কাছ থেকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কোনভাবেই তাদের এ ছুটিগুলো অন্যান্য চাকুরীর মত উপভোগ্য নয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অনেক কিছুকে ত্যাগ করে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে।

ডিউটি চলাকালীন তাদের প্রতিটি মুহূর্তই সতর্কতার সাথে কাজ করতে হয়। যে পরিমাণ ফোন রিসিভ করতে হয়, ওয়াকিটকিতে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়,  তা অন্য কোন চাকুরীতে কল্পনাও করা  যায় না। সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সকল মানুষের সাথে যার যার লেভেল অনুযায়ী কথা বলতে হয়, মিশতে হয় এবং সন্তুষ্ট রাখতে হয়।

পুলিশের সীমাহীন সীমাবদ্ধতা। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্পশক্তি-সামর্থ্য ও সরঞ্জাম নিয়ে মূলত তারা গায়ে-মাথায় খেটে খেটে দায়িত্ব পালন করে। তারপরেও তাদের কপালে কোন ধন্যবাদ প্রাপ্তি খুব সহজে জোটে না। পুরোপুরিই একটা থ্যাঙ্কলেস জব। একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও মানুষ শুরু করে সমালোচনা। আর সাংবাদিক সমাজ তো আছেনই, তারা পুলিশের কোন ভাল কিছুই চোখে দেখেন না। আর একারণে পুলিশের বদনামটা যতোটা না, তারচেয়ে বেশি প্রকাশিত। মানুষজন সামনের উপরে অনেক সময়ে  ‘স্যার স্যার’ করে কিন্তু দৃষ্টির বাইরে গেলেই গালাগাল করে, বদনাম করে,  যে উপকারটুকু পেয়েছে সেটাকে অস্বীকার করে। এরমধ্যেই পুলিশ কাজ করে চলেছে। তবে ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশের অনেক ভাল ভাল কাজ,  দৃষ্টান্ত অনেকে প্রচার করছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

সরাসরি জনগণের সাথে সম্পৃক্ত কাজ করে বিধায় পুলিশের সামান্য ক্রুটি- বিচ্যুতিটুকুও সবার চোখে পড়ে। একই কথা চিকিৎসক সমাজের জন্যও প্রযোজ্য। আর মানুষ স্বভাবগতভাবে বড় উপকারটুকুকেও মনে রাখে না, মনে রাখে শুধু ক্রুটি-বিচ্যুতিটুকু এবং সেটুকুই প্রচার করে। অথচ ধরাছোঁয়ার বাইরে অন্যান্য অনেক পেশা আছে যারা পুলিশের থেকে অনেক অনেক বেশি দায়িত্বহীন কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু সেটা প্রচার হচ্ছে না-  কারণ তাদের কাজটি সরাসরি জনসংশ্লিষ্ট নয়। এভাবে দায়িত্বহীন হয়ে তারা যেভাবে জনগণকে বঞ্চিত করছে তার খোঁজও কেউ রাখে না।

বেতন বহির্ভূত অবৈধ আয়ের বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসা যে কোন লেখকের জন্য খুবই বিব্রতকর। বিশেষ করে এগুলি প্রমাণসাপেক্ষ নয় কিন্তু অনুভূত বাস্তবতা। আমিও আনতে ইচ্ছুক নই,  তারপরেও এটিকে আনতে হচ্ছে কারণ,  এটিই পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ এবং সরস আলোচনার বিষয়। যে কোন পেশার জন্যই বেতন বহির্ভূত অবৈধ আয়ের বিষয়টি অন্যায় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও সুযোগ থাকা সাপেক্ষে সে অপরাধে এ সমাজের প্রায় সবাই-ই অপরাধী। নিরপরাধ চাকুরীজীবী পেতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হবে কিন্তু শেষমেশ সুযোগ থাকা সাপেক্ষে নিরপরাধ চাকুরীজীবী পাওয়া যাবে না।

রানা প্লাজা ধ্বসের পরে এ সমাজের যে মানুষগুলি স্বেচ্ছায় নিজের জীবনকে বিপন্ন করে বিপদগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিল,  সতের কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র সেই কয়জন মানুষকেই আমার কাছে প্রকৃত মানুষ মনে হয়। আমি দিনের পর দিন সেখানে থেকে দেখেছি,  মানুষ কেমন করে মানুষের সেবায় নিজের জীবনকে বিপন্ন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের জীবনকেই বিলিয়ে দেয়। এছাড়া আমার দৃষ্টিতে প্রকৃত মানুষের খুব একটা বড় উদাহরণ নেই। আমার বিবেচনায় এ সমাজ সিংহভাগ মানুষের অসুস্থ মানসিকতাকে ধারণ করা একটা সমাজ। এখানে সুবিবেচনাপ্রসূত, প্রকৃত সৎ মানুষের খুবই অভাব।

পুলিশের জনসংশ্লিষ্টতা বেশি বলে তাদের অন্যায্য কাজগুলি বেশি নজরে আসে। আবার মানুষ অবিবেচক বলে তাদের দৃষ্টিতে অন্যায্য কাজগুলি আসলেই যে কতোটা অন্যায্য এবং অন্যায্য হলেও তার কতোটা দায় পুলিশের এবং কতোটা দায় তার নিজের বা অন্যদের সেটাও বিবেচনায় নেবার দরকার আছে। পুলিশের একটা অংশ তাদের প্লেসমেন্টের সুযোগ নিয়ে সমাজের খেঁটে খাওয়া মানুষদের কাছ থেকে জনে জনে একটু একটু করে বেতন বহির্ভূত আয় করে বলে এটা জনগণের চোখে পড়ে যায় এবং সেটাই স্বাভাবিক। এ কারণে প্রচারণাটাও বেশি হয়। তবে বিষয়টিকে যদি একটু অন্যভাবে দেখি তবে বলব, দশ টাকা,  বিশ টাকা ঘুষ দিয়ে কার্যসিদ্ধি করা যায় এমন অন্য কোনো সরকারী বিভাগ আছে কি?  টাকা তো সবখানেই দিতে হয়। অন্য কোন সরকারী চাকুরীজীবীকে এই পরিমাণ টাকা ঘুষ দিয়ে কার্যসিদ্ধি করা কি সম্ভব? দেশের প্রচলিত বিভিন্ন সিস্টেম থেকে যে আয়গুলি পুলিশের আসে তাও জনগণের অপরাধ প্রবণতা এবং তার চর্চার জন্যই,  জনগণ অপরাধপ্রবণ না হলে ঘুষের এমন প্রাদুর্ভাব এভাবে সারাদেশে ছেয়ে যেতো না।

আমি বেতন বহির্ভূত আয়কে সমর্থন করছি না,  যেহেতু এই রকম আয় সুযোগ থাকা সাপেক্ষে প্রায় সব সরকারী চাকুরীজীবীই করছেন সেহেতু আমার অভিজ্ঞতা থেকে তুলনামূলক আলোচনাটা করছি- মাত্র। তারপরেও বলব পুলিশের উপরের দিকটা ভাল হলে নিচের দিকটা ভাল হবে। নিচের দিকে কর্মরত পুলিশগণ যে টাকাটা আয় করেন,  তার যতোটা না নিজের জন্য করেন তারচেয়ে বেশি করেন উপরের দিকের মাসোয়ারা দেবার জন্য এবং সন্তুষ্টির জন্য। উপরের কর্মকর্তারা নিচের দিকে একটা টার্গেট দিয়ে বসে থাকেন,  কোথা থেকে কীভাবে তা আসছে সে দায় নেন না, ফলে চাপের মধ্যে থাকে নিচের দিকটা। আবারও বলি এগুলি প্রমাণ সাপেক্ষ নয়,  অনুভূতবাস্তবতা।

যে অবস্থার মধ্যে পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন তার প্রতি পরতে পরতে টাকা ঢালতে হয়। মূলত টাকার বিনিময়েই তার চেয়ার ও চাকুরী রক্ষা। অন্য কোন চাকুরীতে এর ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা এই পরিমাণে নাই। নিজের ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে ছোট থেকে বড় রাজনীতিবিদ সবাইকে টাকার বিনিময়ে খুশী করেই কাটে তার সমস্ত চাকুরী জীবন। টাকাটাই আমরা দেখি তার কষ্টটা দেখি না, কেন টাকাটা নিচ্ছে,  তার কতোটা সে ভোগ করছে আর কতোটা অন্যের জন্য সংগ্রহ করে নিজে নীলকণ্ঠ হচ্ছে সে বিবেচনাও করি না। সে সুযোগও নেই,  সেটা করাও মানুষের দায় নয়। মানুষ সেবা পাবে সেটাই তার দেখার বিষয়। অবৈধভাবে টাকা দিতে গেলে সে তা দিতে চাইবে না বরং প্রতিবাদ ও প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক।

সুতরাং পুলিশকে ঠিক করতে হলে যারা পুলিশের কাছ থেকে টাকা খায় তাদেরকে আগে ঠিক হতে হবে। এটা একটা চেইন, এই চেইনের প্রান্তভাগে আছে পুলিশ তাই পুলিশকেই আমরা দেখি,  বিশেষ করে নিচের দিকে কর্মরত পুলিশদেরকে দেখি। অন্যরা অন্তরালে তাই তাদেরকে দেখি না। যদিও পুলিশের আয়ের সিংহভাগই চলে যায় সেখানে। আবার ধরা খেলে নিচের দিকে কর্মরত পুলিশই ধরা খায়,  অন্যরা বেঁচে যায় বা তারা আলোচনার মধ্যেই আসে না বরং তারা পুলিশকে শাস্তি দিয়েই তখন আবার হিরো সাজে। কতো পুলিশ সদস্য সাসপেন্ড হয়ে কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করছে তার খবর আমরা রাখি না। এমন অন্য কোন বিভাগ নেই যেখানে এতো সদস্য শাস্তি মাথায় নিয়ে কাজ করছেন। যদিও কাঙ্ক্ষিত সঠিক দায়িত্বটুকু প্রায় কেউ-উ পালন করছেন না। একজন পুলিশ সদস্য যে পরিমাণ মানসিক টেনশন ও ঝুঁকি নিয়ে সারাক্ষণ কাজ করেন তা অন্য কোন চাকুরেকেই করতে হয় না।

জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে,  সরকারি অপর্যাপ্ত যোগান থাকার কারণে জনকল্যাণেই সে টাকা খরচ করছেন,  এমন কোন সরকারী চাকুরীজীবী পাওয়া বিরল। পাবেনই না। অথচ পুলিশ করছে। আমরা একটা জেনারেল ডায়েরি বা মামলা লিখতে গিয়ে যে কাগজটা ব্যবহার করি সে কাগজ কেনার টাকাও থানায় ঠিকমত থাকে না,  একটা বেওয়ারিশ লাশকে স্থানান্তর করতে গিয়ে যে খরচ-খরচা হয়, গাড়ি ভাড়া যায়,  তাও পুলিশের কাছে ঠিকমত থাকে না। একজন ভিআইপিকে প্রটোকল দিতে গিয়ে যে তেল খরচ হয়,  তার টাকা থাকে না। টহল দেবার জন্য পুলিশের পর্যাপ্ত গাড়ি নাই,  জননিরাপত্তার জন্য ভাড়া করে যে গাড়িগুলি ব্যবহার করে তার ভাড়া পরিশোধের টাকা নাই। অথচ তার এলাকায় সংঘটিত যেকোনো অপরাধের সকল দায় তার। কি অদ্ভুত!  ঢাল নেই,  তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। এরকম শত শত উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। সুতরাং জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার একটা অংশ আবার জননিরাপত্তার স্বার্থেই ব্যবহার করছে পুলিশ- এটা অন্য কোন সরকারী চাকুরীজীবী করে না। অন্যরা শুধু কিল দেবার গোঁসাই, ভাত দেবার মুরোদ তাদের নেই।

শুধু চাকুরীজীবী কেন? এ সমাজে কে ভাল! বরং সুযোগের অভাবেই সবাই এখানে সৎ। আমাদের সমাজটাই হচ্ছে একটা অপরাধপ্রবণ সমাজ। প্রায় সব মানুষই এখানে অন্যায়-প্রবণ, নীতিহীন-চর্চায় অভ্যস্ত। রাস্তায় মানুষের চলাচলের মতো সামান্য একটি বিষয়টিকে আমলে নিলেই এটির ভয়াবহতা সহজেই অনুমান করা যায়। একটা অপরাধপ্রবণ সমাজের কোনো পর্যায়ের মানুষই ভাল হয় না। নিজের অগ্রহণযোগ্য কৃতকর্মকে কখনোই স্বীকার বা সমালোচনা না করে শুধু অন্যকে দোষারোপ করা যে সমাজের মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য সে সমাজে শুদ্ধতা আনা এতোটা সহজ নয়।

লোকালয় থেকে শুরু করে ধর্মালয়-দেবালয় সবখানেই যেখানে অশুদ্ধতার ছাপ, তাকে শুদ্ধ করাটা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশও ভোক্তভুগিদেরই একজন। ঘুষ খাওয়া এমন কোন মহান কর্ম নয় যে,  এটা খাবার পরে ঘুষখোরদের মধ্যে কোনো প্রকার অনুশোচনা হয় না। নিশ্চয়ই হয়,  অনেকে হয়ত ছাড়তেও চায় বা মাত্রা কমাতে চায় কিন্তু তারপরেও ছাড়তে পারে না। তার কারণ আরও অনেক গভীরে যা শুধু পুলিশের উপরেই নির্ভরশীল নয়,  বরং তার অস্তিত্বের প্রয়োজনে তাকে এ চর্চা করে যেতে হয়। অন্য চাকুরীজীবীরা স্বভাব বদলালেই ঘুষ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে তারপরেও তারা তাদের সে স্বভাব বদলায় না। কিন্তু পুলিশ তার স্বভাব বদলালেই শুধু হবে না,  তার অন্যান্য লিঙ্কগুলির স্বভাব না বদলানো পর্যন্ত তার পক্ষে ঘুষ ছাড়া সম্ভব নয়। তাছাড়া পুলিশ কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে? পারে না, যদি পারতো তবে অপরাধ আরও অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে থাকতো, তাতে কোন সন্দেহই নাই।

পুলিশ চব্বিশটা ঘণ্টা ডিউটি করে। সে যে কী কষ্টকর ডিউটি তা মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে না দেখলে অনুভব করাও কঠিন। ডিউটির মধ্য থেকেই তাকে বিশ্রামের সময়টুকু বের করতে হয়। বিশ্রামের জন্য তার বরাদ্দকৃত কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। ভেবে দেখেছেন,  একজন পুলিশের সদস্য কখন ঘুমাতে যান আর কখন ঘুম থেকে ওঠেন!  যখন ঘুমান তখনও তার ওয়াকিটকিটা খোলা থাকে! কী কষ্টকর বিশ্রাম! ভাল-মন্দ সবকিছু মিলিয়ে পুলিশের মত এমন করে এইটুকু কষ্ট যদি সরকারের অন্যান্য সকল বিভাগের চাকুরীজীবীরা করত তবে এদেশ আসলেই হতো গর্ব করার মত দেশ।

কিছু কিছু বিষয় আমার খুব খারাপ লাগে। নিজের কষ্ট হয় কিন্তু কিছু করতে পারি না। আমি হলাম একবারেই ছাপোষা,  তলানিতে পড়ে থাকা একজন কলমপেশিয়ে। আমার দ্বারা একমাত্র লেখা ছাড়া আর কীই বা করা সম্ভব। এরদ্বারা যদি সমাজের কোন উপকার হয়, সেটুকুই পাওনা।
 
গভীররাত্রে অনেক সময় ঘুম ভেঙে গেলে আমি বারান্দায় পায়চারী করি-  দেখি বাসার সামনে পুলিশ তাদের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে। রাত্র দুইটা, তিনটা, চারটা- কখন নেই পুলিশ!  সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় যাই,  পুলিশ আছে। কোথাও সন্দেহজনক কিছু দেখলে ফোন করার পরে পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সেখানে পুলিশ চলে আসে। আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, কেমন করে এটা সম্ভব! বিবেকের কামড়ে অনেক সময়ে নিচে নামি-  পুলিশকে অনুরোধ করি, আসেন এক কাপ চা খাই। আমি নিজে খাচ্ছি,  আমার সাথে বসে খান। আজ পর্যন্ত আমি একজন পুলিশ সদস্যকেও এক কাপ চা খাওয়াতে পারি নি। বরং এতো কষ্টকর ডিউটির পরেও হাসিমাখা বিনীত উত্তর- আপনি কেন নিচে নেমে এলেন,  আমাদেরকে বললে আমরাই উপরে যেতাম।

পুলিশের এমন কষ্ট দেখে আমি থানায় যোগাযোগ করতে খুব দ্বিধাবোধ করি। খুব প্রয়োজন না হলে করিও না। কিন্তু একটু যোগাযোগের ঘাটতি হলেই থানা থেকে ওসি বা বিট অফিসার ঠিকই ফোন করে খোঁজ নেবেন- আমি ঠিক আছি কীনা। আমি গ্রামের বাড়ি যাবো,  পুলিশের কী এমন ঠেকা পড়ছে আমাকে সারাক্ষণ প্রটোকল দিয়ে বেড়ানোর, কে আমি? অথচ এমন একটা মুহূর্তও নাই যখন নির্ঘুম পুলিশ আমার পাশে নেই। আমার মত একজন অচ্ছুত মানুষের জীবন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তারপরেও তারা করছে। আমি নিষেধ করি তারপরেও তাদের বিনীত উত্তর, এটা আমাদের দায়িত্ব।

পুলিশ যে শুধু নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে তা-ই নয়,  এ এলাকার নাইটগার্ডদেরকে তারা সতর্ক করে দিয়েছে। তিন থেকে চারজন নাইটগার্ড আমার বাসার সামনে বসে থাকে। সমস্ত অস্থায়ী দোকান তুলে দিয়েছে, কোন প্রকার জটলা হতে দেয় না,  রাস্তাটা সব সময়ে একেবারে ক্লিন থাকে। আশেপাশের সমস্ত দোকানদারকে বলে দিয়েছে যেন তাদের দোকানের সামনে কোন প্রকার জটলা না হয়,  সন্দেহজনক কিছু দেখলে যেন সাথে সাথে পুলিশকে জানায়। স্বল্প সামর্থ্য নিয়ে এই যে কাজগুলি পুলিশ করছে,  এর মূল্যায়নটা আমার কাছে খুবই অমূল্য হিসেবে ধরা পড়ে।

শুনেছি, সারাজীবনে অনেক পাপ কাজ করার পরেও নাকি শুধুমাত্র একটা ভাল কাজের ফলে মহান সৃষ্টিকর্তা অনেককে জান্নাতবাসী করবেন – পুলিশের ভূমিকাকেও আমি অনেকটা সেভাবে দেখি। পুলিশ অনেক অন্যায্য কাজ করে কিন্তু যে ভাল কাজগুলি করে তার একটা মূল্যায়ন থাকা উচিৎ।

পুলিশের সীমাবদ্ধতাগুলি দুর করে তাদেরকে আরও বেশি গতিশীল করা হোক সেটিই প্রত্যাশা।

নাজমুল হাসান, লেখক, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ