আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সৈয়দ আশরাফের স্বপ্নঘুড়ি

মাসকাওয়াথ আহসান  

 
ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীসভার একজন সদস্যের সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। তিনি সৈয়দ আশরাফ; এ-ও কী হয়; গলির ধারের ছেলেরা বস্তি থেকে রাজসভায় উঠে এসে চকমকি পাথরের মত বিচ্ছুরিত হচ্ছে; আর বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম (অস্থায়ী) রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলের ছেলে সৈয়দ আশরাফ কী এক মিসফিট মানুষ এই রাজনীতির জুয়া খেলার আসরে।

এই রাজসিক উন্নয়নের জাদুকরদের দেশে যার সম্পদ সংকুচিত হয়; তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও ক্রমে ক্রমে সংকুচিত হতে বাধ্য।

সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেখানে বসানো হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটির এক সদস্যের ছেলেকে। বিদ্যমান বাস্তবতায় হয়তো উনি স্যুটেবল বয়। সৈয়দ আশরাফকে দেয়া হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।

জনপ্রশাসনের লোকেরা যেহেতু জানে; তারা লালসালুর মাজারের গদিনওশীন ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করবে না; সৈয়দ আশরাফের সুনির্দিষ্ট লিখিত নির্দেশাবলী পালন করেনি তারা। অন্যদিকে সামরিক প্রশাসনের লোকেরাও যেন ঢাকাতেই খুঁজে পেয়েছে রাওয়ালপিন্ডির রোশনাই। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, পোশাক-অস্ত্রের দম্ভ, "নো ওয়ান কিল্ড তনু"-র ইনডেমনিটি দিতে গেলে সৈয়দ আশরাফের মতো এমন আলোকিত নিরাপোষ মানুষকে এই উর্দিওয়ালাদের ব্যাপারে নীতি নির্ধারণের লাসভেগাসে রাখা যাবে না। রাখতে হবে চোখ সাপের মত জুলজুল করে এমন চালাক লোকজন; যারা তাল সে তাল মেলাতে জানে।

সৈয়দ আশরাফ মানুষটা এমন কেন! উনি কী সেই অভিশপ্ত সিসিফাস; যিনি একটি পাথর পাহাড়ে তুলতে গেলে বার বার তা গড়িয়ে পড়ে যায়। উনি আবার চেষ্টা করেন ইকারুসের মত স্বপ্নের আকাশে উড়তে; অথচ তার মোমের ডানা গলে যায়; কারণ এ যুগে পাথর সরাতে নেই; তাকে জনগণের বুকের ওপরে তুলে দিতে হয়; এ যুগে স্বপ্ন দেখা পাপ। এ যুগ স্বপ্ন হত্যার অন্ধকার সময়। এসময়ে পরমতসহিষ্ণুতা-আদর্শ এসব অভিধান থেকে মুছে ফেলা শব্দ; চেতনা-টেতনা সব নাথিং বাট ফান।

সৈয়দ আশরাফ সেই নিঃসঙ্গ পথিক; কালো ফ্রেমের চশমা আর সাদা পাঞ্জাবী পরা স্বপ্নগ্রস্ত বাবার কড়ে আঙ্গুল ধরে আজো পথ হাঁটেন। প্রতিটি মানুষের সানকিতে জুঁইফুলের মত সাদা ভাত, মাথা গোঁজার আশ্রয়, পরিধেয়, বিদ্যাশিক্ষা আর একটু চিকিৎসা; শুধু এইটুকু চেয়েছিলেন পিতাপুত্র।

নিজেদের সমস্ত সম্পদ ক্রমে ক্রমে বিলিয়ে দিয়ে সৈয়দ আশরাফ নির্লিপ্তভাবে বই পড়েন। এই না পড়ার যুগে শুধু বলার মাছের বাজারের আঁশটে গন্ধ পাশ কাটিয়ে সৈয়দ আশরাফ হাঁটাহাঁটি করেন বই-পুস্তকের কালো হরফের আনন্দময় উদ্যানে।

সৈয়দ আশরাফের মত মানুষদের দেখলে স্থূল সমাজের তৈরি সাফল্যের সংজ্ঞাটা ওলট-পালট হয়ে যায়; জিতে যাওয়াই জেতা; নাকি হেরে যাওয়াই জিতে যাওয়া এই প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়।

যে কোন পরিস্থিতিতে নৈতিকতা বিচ্যুত না হবার সোন্নত সাহসই হয়তো বা অমরতার আয়োজন। আজ যে সৈয়দ আশরাফ পরাজিত মেঘদলের আকাশে স্বপ্নঘুড়ি ওড়াচ্ছেন; সেটাই মানুষ আশরাফের বিজয় নিশান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ঠিকই এই উজ্জ্বল প্রতীকটিকে খুঁজে নেবে; কারণ ইতিহাস বেছে বেছে এমন নির্মোহ অজর মানুষদের সযত্নে লালন করে আগামীর অনুপ্রেরণা হিসেবে; সেই যে আগামী; যে আগামীর স্বপ্ন বাংলাদেশ মুক্তির কালে দেখেছিলো।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ