আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কেন তুরস্ক এবং জাতিসংঘ কোন ম্যাটার করে না

আরিফ রহমান  

নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। নিজামী এমন একটা নাম যাকে রাজাকার কিংবা আলবদর শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা ব্যবহার করি। আমাদের দেশের স্কুল কলেজে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায় কেউ রাজাকার সাজতে চাইলে তারা সবসময় নিজামীর ছবিটা দেখে নেয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের এক আইকনিক ফিগার মতিউর রহমান নিজামী।

পৃথিবীর যে কোন আদালতের যে কোন আইন দিয়ে যদি নিজামীর বিচার করা হতো তাহলে সেই আইনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতো। কেউ ঠেকাতে পারতো না। নিজামীর বিরুদ্ধে ছিলো গণহত্যা পরিচালনাকারী আল-বদরের নেতৃত্বের দায় অর্থাৎ ‘সুপিরিয়র রেসপন্সিবলিটি’র দায়। ১৯৭১ সালের জামায়াতে ইসলামের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় নিজামীর অসংখ্য কলাম, অসংখ্য বক্তব্য, অসংখ্য ছবি রয়েছে যেখানে নিজামী সরাসরি মানুষ হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছে। সেই সব তথ্যাদি সংকলিত আছে বিভিন্ন বই-পত্রে আর্কাইভে। কেউ আগ্রহী থাকলে পড়ে দেখতে পারেন আলী আকবর টাবী রচিত ‘দৈনিক সংগ্রাম: মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকা’। যেমন উদাহরণ হিসেবে তার কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করি-

‘যারা পাকিস্তান চায় না, তারা আমাদের শক্র। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রুখতে হবে ও শক্রদের প্রতিহত করতে হবে।’
(১৪ই নভেম্বর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)

‘ ...খোদাবী বিধান বাস্তবায়নের সেই পবিত্র ভূমি পাকিস্তান আল্লাহর ঘর। আল্লাহর এই পূত-পবিত্র ঘরে আঘাত হেনেছে খোদাদ্রোহী কাপুরুষের দল। এবারের শব-ই-কদরে ইসলাম ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত উল্লেখিত যাবতীয় হামলা প্রতিহত করে, সত্যিকারের শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার এই তীব্র অনুভূতি আমাদের মনে সত্যিই জাগবে কি?’
(১৬ই নভেম্বর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)

‘জাতির এই সংকটজনক মুহূর্তে প্রত্যেক রাজাকারের উচিত ইমানদারির সাথে তাদের উপর অর্পিত এ জাতীয় কর্তব্য পালন করা এবং ঐ সকল ব্যক্তিকে খতম করতে হবে যারা সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে’
(১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)

পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের গণহত্যা নিয়ে কাজ করা কোন আইনজ্ঞকে যদি এই উদ্ধৃতিগুলো দেখানো হয় এবং এই বক্তব্যের ফলাফল হিসেবে আলবদর বাহিনীর হত্যাকাণ্ডগুলো সামনে নিয়ে আশা হয় তাহলে আর কোন সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।

ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে দেয়া নিজামীর রায়ের পরিসর ২০৪ পৃষ্ঠা। আর আপীল বিভাগের দেয়া রায় ১৫৩ পৃষ্ঠা। এই দুটো রায় পড়লে যে কেউই শুধু ব্যক্তি নিজামীকে জানবেন না তার সাথে জানবেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আদালতে নেতৃত্বের দায়কে কিভাবে ডিফাইন করা হয়েছে। কিভাবে শুধু একজন ব্যক্তি নির্দেশে গণহত্যা, ধর্ষণ আর লুটতরাজের বন্যা বইতে পারে সেটার উৎকৃষ্ট নিদর্শন হয়ে থাকবে নিজামী, আর সেই অপরাধকে চিহ্নিত করে বিচার করার এ প্রশংসা থাকবে আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের।

 এই বিচারের রিভিউর সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন কে বলেন-

"আপনারা রিভিউর আবেদনে যে লিখিত জবাব দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে নিজামী সাহেব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিলেন। এট্রোসিটির সঙ্গে ছিলেন। তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।"

এরপর তিনি বলেন-

"আলবদর ও তাদের সহযোগীরা সহযোগিতা না করলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা এ দেশে দুই মাসও অবস্থান করতে পারত না।"

বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করলাম এবারে একটু জেনে নেই নিজামীর মৃত্যুদণ্ড আসলে কি কি অপরাধের জন্য দেয়া হয়েছে। জেনে নেই কেবল কি পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্যই এই দণ্ড? নাকি অন্য কোন গুরুতর অপরাধকে লঘু করছে পাকিস্তান, তুরস্ক কিংবা জাতিসংঘ:

আপীল বিভাগের দেয়া রায় পড়লে দেখা যায় প্রচুর চাক্ষুষ সাক্ষী এবং দলীলপত্রের নিরিখে সন্দেহের উপরে প্রমাণিত তিনটি অভিযোগে নিজামীর ফাঁসি বহাল রাখে আপীল বিভাগ, অভিযোগ গুলো হচ্ছে-

১) সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ)।

২) ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ)।

৩) বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (১৬ নম্বর অভিযোগ)।


বাংলাপিডিয়া অনুসার সাধারণ হিসেবে নিহত বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ১,১০০-এর উপরে। তাহলে দেখা যাচ্ছে মোট খুনের সংখ্যা ১,৫৫০-এর উপরে। আর আলবদরের নেতৃত্বে থেকে মতিউর রহমান নিজামীর বক্তব্য আর উসকানিতে হত্যা করা হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষকে। হ্যাঁ কয়েক লক্ষ মানুষ।

লক্ষ মানুষের হত্যার পেছনের কারিগরকে পৃথিবীর কোন দেশের আদালত ফাঁসি না দিয়ে বেকসুর খালাস দেয় তাহলে সেই আদালতে আর যাই হোক ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে না।


বহু কাঙ্ক্ষিত নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর হবার পর বরাবরের মত উদ্বিগ্ন হয়েছে পাকিস্তান, উদ্বিগ্ন হয়েছে তুরস্ক, উদ্বিগ্ন হয়েছে জাতিসংঘ, উদ্বিগ্ন হয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়াও। উদ্বিগ্ন তারা হতেই পারেন এটা বিশ্ব মানবতার প্রশ্ন। আশি বছর বয়স্ক শ্মশ্রুমণ্ডিত একজন ভদ্রলোককে রাতের অন্ধকারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে দেখলে উদ্বেগ আসাটাই স্বাভাবিক।

তবে সেই উদ্বেগ আসার পর প্রথম কাজটি হওয়া উচিত ছিল বিচার প্রক্রিয়াটা জানা, ট্রাইব্যুনাল এবং আপীল বিভাগের রায় গুলো পড়া। সেখানে উল্লেখিত ভিকটিম সাক্ষীদের সাথে কথা বলা। তাহলে হয়তো তারা বুঝতে পারতেন এসবের পেছনের ঘটনাবলী।

প্রত্যেক ঘটনার দুটো দিক থাকে। নিজামীর ফাঁসির পর তুরস্কের মন্তব্য সামনে নিয়ে আসছে তুরস্কের গণহত্যার কথা। যেই গণহত্যা ছাড়িয়ে যায় ১৯৭১ সালে পাক আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যাকেও।

১৯১৫ সালে তুরস্ক আর্মেনিয়ানদের ওপর যে গণহত্যা পরিচালনা করা হয়েছিলো তার ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে গত বছর। আর্মেনিয়ানরা এখনো স্বীকৃতি পায়নি ঘাতক তুর্কিদের কাছ থেকে, আমরাও স্বীকৃতি পাইনি পাকিস্তানের কাছে। এখনো আর্মেনিয়ানরা লড়ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য। তুরস্কই সম্ভবত পৃথিবীর গণহত্যার ইতিহাসে এক মাত্র জাতি যারা লাগাতার ১০০ বছর একটা জাতির আর্মেনিয়ার ওপর চালানো নির্মম গণহত্যাকে অস্বীকার করে আসছে। আর্মেনিয়ানর মানুষও লাগাতার বিগত ১০০ বছর ধরে ১৯১৫ সালে তাদের ওপর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি চেয়ে আসছে তুরস্কের কাছে। সে হিসেবে পাকিস্তান তো নবীন গণহত্যাকারী রাষ্ট্র। পাকিস্তান মাত্র ৪৫ বছর ধরে অস্বীকার করছে নিজেদের অপরাধ।

তুরস্ক আর পাকিস্তান একই কোম্পানির একই প্রোডাক্ট, খালি মোড়কটা আলাদা- এই যা। নিপীড়ক তুরস্কের কাছ থেকে কিছু শেখার না থাকলেও আমাদের নিপীড়িত বন্ধু আর্মেনিয়ার কাছে শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। অন্তত দুইটা জিনিস আর্জেন্ট শেখা দরকার আমাদের:

১) আর্মেনিয়া আমাদের মত স্বজাতির গণহত্যা লুকায় না।
২) আর্মেনিয়ায় জেনোসাইড ডিনায়াল’ল আছে।

পৃথিবীর যে কোন মানুষ যদি গণহত্যা নিয়ে একাডেমিক পড়ালেখা করতে চায়, যদি তারা গণহত্যা পরিচালনাকারী প্রথম পাঁচটা দেশের নাম খোঁজ করে পড়ালেখা করে তাহলে তাদের পাকিস্তান ও তুরস্কের নাম পড়তে হবে, তবে পাকিস্তানের আগে তুরস্কের নাম পড়তে হয়। দুটো দেশই গণহত্যার ভয়াবহতায় লিস্টের প্রথম দিকে স্থান করে নিয়েছে।

আর্মেনিয়া জর্জিয়া ও আজারবাইজানের সাথে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের স্থলযোজকের উপর অবস্থিত। ইয়েরেভান আর্মেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। জাতিগত আর্মেনীয়রা নিজেদের “হায়” বলে থাকে। আর্মেনিয়ার ৯০% লোক এই “ হায়: জাতির লোক। দেশটি ১৯২২ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রটি স্বাধীনতা লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কিরা আর্মেনিয়াদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।

একটি রাষ্ট্রে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ধরে নিলে তাদের ওপর গণহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হয়। ১৯১৫ সালের আর্মেনিয় গণহত্যা তারই উজ্জ্বল প্রমাণ। ষাটের দশকে আমারাও ছিলাম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর চোখে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। সামরিক রাষ্ট্র অটোমানদের সঙ্গে পাকিস্তানের অনেক অনেক মিল। তিন বছরে ধরে চলমান এই গণহত্যায় সেই দেশে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়। সে সময় সেই গণহত্যায় আর্মেনিয়ার প্রায় ৪৩% থেকে ৫৮% জনগোষ্ঠী নিঃশেষে হয়ে যায় মাত্র তিন বছরে।

একটু লক্ষ্য করলে আমরা দেখি একটা দিক দিয়ে কিন্তু আর্মেনিয়ানরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। সেটা হচ্ছে তারা অন্তত তাদের নিজের দেশের ওপর চলা গণহত্যাকে অস্বীকার করে না, আমরা করি। তারা পনেরো লাখ শহীদ কে দেড় লাখ বলে না যেমন আমরা অনেকে ১৯৭১ সালের শহীদের সংখ্যা তিরিশ লাখ থেকে তিন লাখে নামিয়ে আনতে কুণ্ঠা বোধ করি না। মূলত আর্মেনিয়ার গণহত্যার নিয়ে তিনটা বয়ান শোনা যায়- ৮ লাখ, ১৫ লাখ, ২০ লাখ। তবে সবাই মিলে সংখ্যাটা ১৫ লক্ষ বলে মেনে নিয়েছে। এটা সেখানে একটা আইকনিক ফিগার। এই ১৫ লাখ শহীদদের নিয়ে অসংখ্য সাহিত্য রচনা করা হয়েছে। কেউ এটা নিয়ে বিতর্ক করে না।

গণহত্যা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের জন্য আর্মেনিয়ার গণহত্যা থেকে একটা শিক্ষাও নেয়ার আছে। এই গণহত্যায় তাদের জনসংখ্যার ৪৩%-৫৮%কে হত্যা করেছিলো। ১৯১৫ সালের এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে শুরু হয়ে চলতে থাকে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ অর্থাৎ প্রথম বিশ্ব-যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই গণহত্যা চলতে থাকে। অর্থাৎ এই গণহত্যা চলেছে ৪০ মাস ১৮ দিন ধরে।

আসুন হিসেব করে দেখা যাক যদি ৪০ মাসে যদি আর্মেনিয়ার মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩%-৫৮% কে মেরে ফেলতে পারে তুর্কিরা, তাহলে একই অনুপাতে তারা ৯ মাসে কত বাঙালীকে হত্যা করতে পারতো? হিসাব করে দেখা যায় সংখ্যাটা ১৩% এর উপরে। পাকিস্তানীরা নয় মাসে হত্যা করেছিলো আমাদের জনগোষ্ঠীর ৪%। অর্থাৎ আর্মেনিয়ার গণহত্যা আমাদের তুলনায় ৩ গুণের বেশি ভয়াবহ ছিলো। অথচ এই ৪%- অর্থাৎ তিরিশ লক্ষ শহীদকে মেনে নিতেই আমাদের এত সমস্যা এত প্রশ্ন!!!

এই হিসাবে চিন্তা করলে ১৯৭১ সালে যদি তুরস্ক বাংলাদেশে আক্রমণ করতো তাহলে শহীদের সংখ্যা হত ৯৭ লক্ষ ৫০ হাজার কিংবা তার চেয়েও বেশি। দেখা যাচ্ছে তুরস্কের নিজামীর ফাঁসি নিয়ে বাড়াবাড়ি আমাদের একটা উপকার করেছে- মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতাকে নিয়ে যারা সন্দেহ করে তাদের ধরে ধরে দেখানো যাচ্ছে বিশ্বময় গণহত্যার খতিয়ান।

আর জাতিসংঘ?

১৯৭১ সালে জাতি সংঘের ভূমিকা নিয়ে যদি কথা বলতে চাই তাহলে উঠে আসবে লজ্জার ইতিহাস। একটি বর্বর সেনাবাহিনী আর তাদের দোসরেরা  যখন একটি দেশের ৩০ লাখ মানুষকে খুন করছে, ১ কোটি মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তখন তারা চাইলেই প্রতিহত করতে পারতো নিজামী, সাইদীদের কিন্তু তারা সেটা করেনি। আজ যখন বিচারের কাঠগড়ায় নিজামী তখন জাতিসংঘের মায়াকান্না আসলেই দেখার মত বিষয়।

১৯৭১ সালে আসাদ চৌধুরী “রিপোর্ট ১৯৭১” কবিতায় লেখেন-

“জনাব উথান্ট,
জাতিসংঘ ভবনের মেরামত অনিবার্য আজ।
আমাকে দেবেন, গুরু, দয়া ক’রে তার ঠিকাদারী?
বিশ্বাস করুন রক্তমাখা ইটের যোগান
পৃথিবীর সর্বনিম্ন হারে একমাত্র আমি দিতে পারি
যদি চান শিশুর গলিত খুলি, দেওয়ালে দেওয়ালে শিশুদের রক্তের আল্পনা
প্লিজ, আমাকে কন্ট্রাক্ট দিন।
দশ লক্ষ মৃতদেহ থেকে
দুর্গন্ধের দুর্বোধ্য জবান শিখে রিপোর্ট লিখেছি- পড়, পাঠ কর।
কুড়ি লক্ষ আহতের আর্তনাদ থেকে
    ঘৃণাকে জেনেছি- পড়, পাঠ কর।
চল্লিশ হাজার ধর্ষিতা নারীর কাছে
    জুলুমের সবক নিয়েছি- পড়, পাঠ কর।
দুঃখের স্মৃতিতে ডোবা আশি লক্ষ শরণার্থী
শিখিয়েছে দীর্ঘশ্বাসে কতোটুকু ক্রোধ লেখা থাকে...”
(রিপোর্ট ১৯৭১/আসাদ চৌধুরী)

জাতিসংঘ- আসাদ চৌধুরীর রিপোর্ট ১৯৭১ পড়। জানো বোঝ। গণহত্যাকে ঢেকে রাখা যায় না জাতিসংঘ। আজ তো কেবল নিজামীদের ফাঁসি হচ্ছে পরশু পাকিস্তানী সমরনায়কদেরও ফাঁসি হবে। তোমাদের যে সমস্ত কর্তা ব্যক্তিরা বাঙালির রক্তে পা ডুবিয়ে বসে বসে আঙুল চুষেছে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে।  

আরিফ রহমান, লেখক, অনলাইন এক্টিভিষ্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ