আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

অনুভূতির বলি নয়, বেঁচে থাকতে মুখ্য হোক মানুষ পরিচয়

দেবজ্যোতি দেবু  

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। যখন কলেজে পড়তাম তখন হঠাৎ একদিন দেখলাম কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে একটি ছেলেকে কিছু লোক ‘ধর ধর’ বলে দৌড়াচ্ছে। ছেলেটা বেশি দূর যেতে পারেনি। রাস্তার লোকজন ছেলেটিকে ধরেই দেয় ধোলাই। পিছনে দৌড়ে আসা লোকগুলোও ততোক্ষণে চলে এসেছে ছেলেটির সামনে। এসে তারাও শুরু করলো ধোলাই। দু’তিন মিনিট ধোলাই দেয়ার পর যখন আরো কিছু লোক জটলা পাকালো সেখানে তখন কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো ছেলেটিকে ওরা কেন মারছে? আরেকজন দর্শক উত্তর দিলো, ছেলেটা চোর। তখনও কিন্তু কেউই জানে না ছেলেটা আসলে কে এবং কি করেছে।

কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশ আসলো। পুলিশ এসে প্রশ্ন করলো কি হয়েছে? আপনারা ওভাবে মারছেন কেন ছেলেটিকে? পুলিশ দেখে সকল বীর ততোক্ষণে সটকে পরেছে। একজন বেশ সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো ছেলেটা সন্ত্রাসী। পুলিশ বললো কি অপরাধ করেছে? লোকটি বললো, জানি না। কিছু লোক ‘খুনি খুনি’ বলে দৌড়াচ্ছিল দেখে আমরা ওকে ধরে ফেলি। এরপর থেকে ও এখানে। যে লোকগুলো প্রথমে দৌড়াচ্ছিল ছেলেটিকে, তারা ততোক্ষণে কলেজের ভিতরে ঢুকে একটা নিরাপদ জায়গায় বসে গেছে। পুলিশ এসে তাদের জিজ্ঞেস করতে তারা বললো, ছেলেটা পকেটমার। আমাদের গ্রুপের একটা ছেলের পকেট কেটে পালাচ্ছিল। আমরা ধরে ফেলেছি। পুলিশ প্রমাণ চাইলে কেউই কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। পরে পুলিশ ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর ছেলেটির অভিভাবকেরা গিয়ে অনেক চেষ্টা তদবির করে ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

কিছুদিন পর জানতে পেরেছিলাম ছেলেটি আমাদের কলেজেই পড়তো এবং যারা ওকে প্রথমে তাড়া করেছিল ওরা কলেজেরই রাজনৈতিক দলের লোকজন। পরে বিষয়টা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সবার কাছে। ছেলেটা আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিল।

এমন দৃশ্য আগে প্রায়ই দেখতাম। কেউ কাউকে মারতে চাইলে সহজেই রাস্তায় এভাবে তাড়া করতো আর পাবলিক ধরে গণধোলাই দিত। পাবলিকের মাঝখানে সহজেই হাত সাফ করে চলে আসা যেত এবং এর জন্য কোন আইনি ঝামেলায়ও পরতে হত না। যে লোকটা মার খেত, সেই শুধু জানতো তার আসলে দোষটা কি ছিল। বাকিরাতো কমেডি দেখে তালি বাজানো দর্শক মাত্র। দিন বদলেছে। মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। তাই এখন আর ঐ নাটকে তেমন একটা কাজ হয় না। এখন চাই নতুন নাটক।

২.
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে হঠাৎ করে  রামু, উখিয়া ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৌদ্ধ পল্লিতে, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালিয়ে ১১টি মন্দির এবং ২০ টি দোকান ও বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় স্থানীয় কিছু উগ্র লোক। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় আরও অর্ধশতাধিক বাড়ি ও দোকানে। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায় ফেইসবুকে উত্তম কুমার বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ ছেলে নাকি মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে একটি ছবি পোস্ট করে। এতে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে উত্তেজিত জনতা হামলে পরে বৌদ্ধদের উপর। বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পর জানা যায়, উত্তম বড়ুয়া মূলত নির্দোষ। তাকে অন্য কোন এক ফেইক আইডি থেকে ঐ ছবিতে ট্যাগ করেছিল বলে ছবিটা উত্তমের টাইমলাইনে শো করছিল। ঘটনার সত্যতা জানার পর জনতা শান্ত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ক্ষতি যা হয়েছিল তাতো আর কেউ পুষিয়ে দিতে পারেনি।

২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ফেইসবুকে মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ও কার্টুন প্রকাশের গুজব রটিয়ে এবং সেটা লিফলেট আকারে বিলি করে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু মন্দির এবং বসতিতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। যথারীতি গুজব প্রমাণের পরে সবাই আবারও চুপ হয়ে যায়। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য কেউ আর এগিয়ে আসেনি।

এরকম আরো বহু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা আছে যা গত কয়েক বছর ধরে চলছে বাংলাদেশে। গুজব রটিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এর বাইরেও কিছু ঘটনা ঘটছে যেগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবে ঘটানো হচ্ছে।

ক) সিলেটের বিশ্বনাথে সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে দুই ভাইয়ের নামে ধর্ম অবমাননার ভুয়া খবর প্রচার করে জনতার মনে ক্ষোভের সঞ্চার করা হয় এবং পরে তাদের ধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। কোন প্রকার প্রমাণ না থাকলেও তারা দীর্ঘদিন হাজত বাস করে পরে জামিনে বের হয়ে আসে। এই ঘটনায় হামলা চালানো হয় তাদের বাড়িতেও।

খ) বাগেরহাটে দুইজন শিক্ষককে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। পুলিশী হয়রানি করা হয়।

গ) চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কুমিল্লাতে একটি স্কুলের স্কুল শিক্ষিকার প্রতি অভিযোগ তোলা হয় তিনি ক্লাস চলাকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে মহানবীকে তুলনা করেছেন এবং আরো অনেক কটূক্তি করেছেন। কথিত এমন অভিযোগের কোন সত্যতা বা প্রমাণ না থাকলেও ঐ শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

ঘ) চলতি মাসে  নারায়ণগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কথিত কটূক্তির অভিযোগে তাঁর অফিস কক্ষের ভিতরে মারধোর করা হয় এবং স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠ-বস করানো হয়। দুইদিন পরে তাঁকে তাঁর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। অথচ কটূক্তির কোন প্রমাণ কেউই দেখাতে পারেনি। বরং যাদের সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়েছিল, তারাই বলছে স্যার তেমন কিছুই বলেন নি।

এরকম ‘কথিত’ কটূক্তির অভিযোগ এনে শাস্তি দেয়া, হেনস্তা করা, লাঞ্ছিত করা, পুলিশের হাতে তুলে দেয়া লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এমন অভিযোগের কোন সত্যতা কিংবা প্রমাণ পাওয়া যায়নি কিংবা কেউই প্রমাণ দিতে পারেনি। তবুও গুজব ছড়িয়ে এমন অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সম্পত্তির বিরোধ, ব্যক্তিগত বিরোধ, প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধ কিংবা রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরেই এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে করে নিজস্বার্থ চরিতার্থ হলেও কোন ধরনের আইনি জটিলতায় জড়াতে হয় না অভিযোগকারীদের। শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিই বুঝতে পারে আক্রমণের মূল কারণটা কি। কিন্তু তারা কিছুই বলতে পারে না। কারণ, বলার আগেই তাকে নেতিবাচক ভাবে সমাজের কাছে উপস্থাপন করা হয়ে যায়। আর ধর্ম নামক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে যখন জনতাকে উস্কে দেয়া হয় তখন উপস্থিত সময়ে কেউই আর সত্য মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করে না। সোজা হামলে পরে নির্দোষ ব্যক্তিটির উপর।

৩.
২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। আস্তিক-নাস্তিক ধোঁয়া তুলে মানুষ মারার ট্রেন্ড। যাকে খুশি তাকে হত্যা করে পরে তার নামে নাস্তিকতার ধোঁয়া তুলে হত্যাকে জায়েজ করার একটা ধান্দা। মানুষ এমন হত্যাযজ্ঞ এবং এরপরের গাল গল্প গিলছেও বেশ মজা নিয়ে। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নাস্তিক মরেছে তো কি হয়েছে? তার মরে যাওয়াই উচিৎ!

প্রকাশ্যে নাস্তিক কতলকে ওয়াজিব ঘোষণা করছে ধর্মীয় নেতারা। যাদেরকেই অপছন্দ করা হচ্ছে, তাদের নাম তালিকা ভুক্ত করে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হচ্ছে ‘নাস্তিক’ এবং ‘ধর্মবিদ্বেষী’ বলে। সরকারের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে সেই তালিকা। ওদের শাস্তি দিতে হবে রব তুলে হুংকার দেয়া হচ্ছে। সেই তালিকা ধরেই একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। প্রথমে টার্গেট ছিল লেখক-বুদ্ধিজীবীরা। আর এখন চলছে ধর্মীয় নেতা, বিধর্মী লোক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সমকামিতা সমর্থনকারী সহ নানা শ্রেণী পেশার লোক হত্যা। হত্যা পরবর্তী কাহিনী সবার ক্ষেত্রেই এক। হত্যার ধরনও এক। এমনকি হত্যা পরবর্তী সাধারণ মানুষের অধিকাংশেরই প্রতিক্রিয়া এক। কোন না কোন ভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয় সে ধর্ম অবমাননা করেছে। এ এক আজব কারবার!

খুনিদের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারও বলছে ‘কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কিছু বলা বা লিখা যাবে না। লিখলে বা বললে সেটার কারণে কোন ক্ষতি হলে সেই দায় সরকার নিবে না’।

ধর্ম অবমাননার গুজবের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক হামলা চালানোর জন্য আরেকটা বড় অস্ত্র হচ্ছে মসজিদের মাইক। আমরা দেখেছি মসজিদের মাইক ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুজব প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে কোন সম্প্রদায় কিংবা লোকের বিরুদ্ধে লেলিয়ে বা উস্কে দেয়া হচ্ছে। ভাল মন্দ বিচার না করেই বিভ্রান্ত জনতা একজোট হয়ে নেমে আসছে রাস্তায়।

শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক হামলাতেই নয়, বিভিন্ন সময় পুলিশের উপরও হামলা চালানো হয়েছে এই মাইক ব্যবহার করে। সম্প্রতি সিলেটে একটি এলাকায় আসামী ধরতে যাওয়া পুলিশের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজনকে ক্ষেপিয়ে তুলতে এবং আসামিকে বাঁচাতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় ‘এলাকায় ডাকাত পরেছে’ বলে। এতে লোকজন পুলিশের উপরেই হামলা চালায়। পরে পুলিশ নিজেদের মত করেই পরিস্থিতি শান্ত করে। এমন নজির গত কয়েক বছরে অনেক আছে।
এসব ঘটনায় আজ পর্যন্ত হয়নি কোন তদন্ত, ধরা পড়েনি কেউ। ফলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো অব্যাহত আছে।

৪.
উপরে এতকিছু বলার একটাই কারণ। আমরা আসলে কি চাচ্ছি এবং কোন দিকে যাচ্ছি? একটা সময় বাংলাদেশকে বলা হত ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সংবিধানও রচিত হয়েছিল এর উপরে ভিত্তি করেই। কিন্তু এখন! এখন কি সত্যিই আমাদের মাঝে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব কাজ করে?

যখন যাকে খুশি তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। যাকে খুশি তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ জানেই না খুনিদের পরবর্তী টার্গেট কে! শুধু এইটুকু জানে, যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের শত্রু! কিন্তু তাদের দোষটা কি সেটার কোন প্রমাণ নেই। চাপাতি সন্ত্রাস চলছে তো চলছেই!

যাদের চাপাতি দিয়ে কোপানোর ক্ষমতা বা সাহস নেই তারা ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে ধর্মানুভূতিতে আঘাত পাওয়ার কিংবা ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার প্রমাণহীন অভিযোগ তুলে জন আক্রোশ তৈরি করে হামলা চালাচ্ছে, নিজের হাতেই শাস্তি দিচ্ছে। নিজেরাই সেক্ষেত্রে বাদী এবং বিচারক। অভিযুক্তপক্ষ সমর্থন কিংবা অভিযোগ খণ্ডানোর কোন সুযোগ নেই। তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের কোন সুযোগ নেই। বাদী বলেছে মানে সব সত্যি!

অনেকদিন যাবত কিছু মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করার দাবি জানিয়ে আসছে। সরাসরি সেই আইন এখনো বাস্তবায়িত না হলেও সেই আইনের আলোকে কিছু নিয়মকানুন উল্লেখ করে নতুন আইন করার প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্বে ব্লাসফেমি আইন প্রচলিত আছে এমন দেশগুলোর দিকে একটু চোখ বুলালে দেখা যায় এই আইনের ভয়াবহতা কতোটুকু। জানা যায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতোটুকু শেকল বন্দী হয় ঐ আইনের কারণে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন কতোটা ভয়াবহ অবস্থায় দিন কাটায় সেসব দেশে। বাংলাদেশেও এমন আইন প্রচলনের দাবি জানানো হচ্ছে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠি বারবার।

কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, এই আইন হলে বাংলাদেশেও যে এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে তার গ্যারান্টি কি? উত্তর হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশের চিত্রই তাদের জন্য যথেষ্ট হবার কথা। ঐ আইন বাস্তবায়িত হবার আগেই যদি বাংলাদেশের এই অবস্থা হয়, তাহলে ভবিষ্যৎটা কি হতে পারে সেটা কি খুবই দুর্বোধ্য কোন বিষয়?

প্রশ্ন রাখলাম, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কথা বলার স্বাধীনতা কেন থাকবে না? কেন আইনের শাসন থাকবে না? কেন মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মত দুঃসাহস দেখাবে? কেন রাষ্ট্র এর প্রতিকার না করে উলটো মত প্রকাশের স্বাধীনতারই টুঁটি চেপে ধরছে? কেন ধর্মীয় সহিংসতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে?

আমার ধর্ম পালনের অধিকার যদি আমার থাকে, তাহলে ভাল-মন্দ বিচার করার অধিকারও আমার আছে। কথা বলার, লিখার, চিন্তা করার অধিকার এবং স্বাধীনতা দু’টোই আমার আছে। তাহলে কেন সেখানে বাধা দেয়া হচ্ছে? কেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে কথিত অনুভূতি এবং কটূক্তির অভিযোগ তুলে? আমার কথা বা লিখা কারো খারাপ লাগলে সে কথা বা লিখার মাধ্যমেই তার জবাব দিবে। সেটা না করে সহিংসতার জন্ম দেবে কেন? কেন হামলা করবে? জীবন দেয়ার অধিকার বা ক্ষমতা যদি তার না থাকে তাহলে জীবন কেড়ে নেয়ার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকেরই কথা বলার অধিকার আছে। বাক স্বাধীনতা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার হরণ করার সাধ্য কারো নাই। যে কোন অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে আদালত। যেখানে যুক্তি তর্কের ভিত্তিতে, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া-না দেয়া নির্ধারণ করা হয়। কাউকে শাস্তি দেয়ার কোন অধিকার সাধারণ নাগরিকদের নেই। সে যত বড় নেতা, আমলা, জনপ্রতিনিধিই হোক না কেন চূড়ান্ত শাস্তি নিশ্চিত করার অধিকার তার নাই। শাস্তি বিধান করবে আদালত এবং বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থা। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নাই। তাহলে এমন কথিত ‘শাস্তি’ নির্ধারণ করার ক্ষমতা সাধারণ জনতাকে কে দিয়েছে?

বাক স্বাধীনতা চাই, চাই মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা। চাই দেশের আইনি ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগ। সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং হামলার বিচার চাই। রাষ্ট্রকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক অবস্থানে দেখতে চাই। মানুষ হিসেবে, দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের নাগরিক এবং মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা চাই। দেশটা মানুষের। তাই মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ চাই।

দেবজ্যোতি দেবু, সংস্কৃতি কর্মি, অনলাইন এক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ