প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ০২ জুন, ২০১৬
টিভিতে কোন ধর্ষণ-নির্যাতন-নিগ্রহ-অসম্মানের স্বীকার মানুষের মুখ ব্লার বা ঝাপসা করে দেয়া প্রচলিত সাংবাদিকতা নৈতিকতা। কিন্তু "সফল যারা কেমন তারা" বা জিপিএ ফাইভ পাওয়া "বিজয়ী"-দের চেহারা ঝাপসা করতে হবে কেন!
কেউ কোন কিছু না জেনেও সফল হয়েছে; এমন মুখ ঝাপসা করে দিতে হলে তো টকশো'র অনেক আলোচকের চেহারা বা অসংলগ্ন পরস্পরবিরোধী কথা বলা নীতি নির্ধারক ও রাজনীতিকদের চেহারাও ঝাপসা করে দেয়া উচিত। কত মুখ ঝাপসা করবে টেলিভিশন!
পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ওদের গড়পড়তা নাগরিকদের সাধারণ জ্ঞানের অভাব তুলে ধরতে ভক্স পপ বা জন সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়। ইউরোপে এরকম মিডিয়া প্রকল্প চালু রয়েছে; যেখানে একটি সুনির্দিষ্ট শিশুদলকে বিভিন্ন বয়সে ধারাবাহিক সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার মান ও অঙ্গীকারের ঋজুতা পরীক্ষা করা হয়। এক একটা সাক্ষাতকার প্রকল্প ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত চলে।
মিডিয়ায় প্রচলিত ভক্সপপ অপ্রস্তুত ও তাৎক্ষণিক সাক্ষাতকার; যা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। অনেক স্ট্রিট শো চালু রয়েছে যেখানে কুইজের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রশ্ন করা হয়; উত্তর দিতে পারলে গিফট; না দিতে পারলে একটা হাস্যরসাত্মক এনিমেশান ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যেহেতু সেটি পাতকূয়া সমাজ নয় সেখানে এসব নিয়ে "গেলো গেলো" রব ওঠেনা।
এসব অনুষ্ঠান, সাক্ষাতকার-ভিত্তিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমাজ তার বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যের কথা জানতে পারে। তবে ওদের সমাজের সুবিধা চট করে কেউ হেয় করে না বা কেউ হেয় বোধ করে না। কারণ বাস্তবতাকে আড়াল করে রাখলে জাতিগতভাবে ভবিষ্যতে হেয় হবার আশংকা থাকে। আর বিজয়ী জিপিএ ফাইভদের হেয় করবে কারা;কোন মুখে! তাদেরও তো জ্ঞানের বহর একই; কিংবা তাদের আত্মকেন্দ্রিকতা ও অমনোযোগেই তো আমাদের সম্ভাবনাময় শিশুদের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ সম্ভব হয়নি।
আলোচ্য শিশুদের আবার কলঙ্ক কী! যেমন প্রজ্ঞার বীজ বোনা হবে তাদের মস্তিষ্কে; তেমনই জ্ঞানের ফসল ফলবে। এখানে যাবতীয় কলঙ্ক ও দায় শিক্ষা খাতকে অবহেলা করেছে যারা সেই নীতি নির্ধারকদের। ব্লার না করেই বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষামন্ত্রীর চেহারা যুগে যুগে টিভিতে দেখানো হয়েছে। তাতেও তাদের সম্বিত ফেরেনি। আর এরকম দৈবচয়নে ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার চল দেশে দেশে টিভিতে রয়েছে।
বাস্তবতাকে ঢেকে না রেখে তুলে ধরলে তাতেই বরং শিশুদের উপকার হবে বলে মনে হয়।
সবসময় ধামাচাপা দিয়ে সত্য লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করার গ্রামীণ সামাজিক চাপটি জাতির সামষ্টিক আগামীর জন্য এক অশনি প্রভাবক।
একটি ব্যক্তিগত কেসস্টাডি
আমার নিজের জীবনের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় খুবই দুর্বল বক্তব্য এবং ফাম্বলের কারণে কোনমতে থার্ড হই। সেই বিতর্ক বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ড করে প্রচার করা হয়। পরিচিত অনেকেই শুনে বলেন, এতো সহজ বিষয়ে এতো খারাপ পারফরমেন্স তোমার আর বক্তব্য এরকম বেধে বেধে গেলো কেনো! এরপর আর কোন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুর্বল বক্তব্য রাখিনি; ফাম্বল করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
আমি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ বেতারের প্রতি; তারা আমাকে তিক্ত শ্রোতা-প্রতিক্রিয়া বোঝার সুযোগ করে দিয়েছিলো।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য