প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রাজেশ পাল | ০৫ জুন, ২০১৬
চট্টগ্রামের ব্যস্ততম অভিজাত এলাকা জিইসি মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হলো স্বনামখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা এসপি বাবু্ল আক্তারের স্ত্রী মুক্তা আক্তারকে। নিজের শিশু সন্তানকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে এসে ঘাতকদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন তিনি।
মৃত্যু নিশ্চিত করতে ৮ বার ছুরিকাঘাত করা হয় তাঁকে।নির্মমভাবে রক্তে রঞ্জিত হন সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের জন্য দেশখ্যাত এক সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তার সহধর্মিণী।এ যেন কোন নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডির করুণ এপিটাফ।
শুরু হয়েছিল ব্লগার খুনের মাধ্যমে। এরপর একে একে প্রকাশক , বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, পুরোহিত, পাদ্রী, ইসলামী চিন্তাবিদ, মসজিদের খাদেম, লালনভক্ত চিকিৎসক, সমকামী অধিকার এক্টিভিস্ট, দর্জি দোকানদার, ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা সবাই যুক্ত হলেন মৃত্যুর মিছিলে।
আজ (৫ জুন, রোববার) যুক্ত হলেন একজন নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। নিজের শিশু সন্তান অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলো রাজপথে পড়ে থাকা স্নেহময়ী মাতার রক্তাক্ত মৃতদেহের পানে।
প্রতিবার ঘটে হত্যাকাণ্ডগুলো, আর শুরু হয় অনলাইন, অফলাইনে প্রতিবাদের ভূমিকম্প। কিন্তু কদিন যেতেই নিত্যনতুন ইস্যু এসে ধামাচাপা দিয়ে চলে সাম্প্রতিক অতীতকে। গোল্ডফিশের স্মৃতি সম্বল করে এ যেন "লক্ষ্য শূন্য লক্ষ বাসনা" নিয়ে নিরন্তর ছুটে চলার অন্তহীন মহাকাব্য।
আর এই সুযোগে পার পেয়ে যায় ঘাতকেরা। খুঁজতে থাকে নিত্যনতুন শিকার। অপরদিকে রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার অভিযানে। শুরু হয় ঘাতকের পরিবর্তে ভিকটিমের ছিদ্রান্বেষণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। চোখের পলকে সিরিয়াল মার্ডার হয়ে যায় "বিচ্ছিন্ন" ঘটনা। ফলে আরো বেশী উৎসাহী হয়ে ওঠে ঘাতকবাহিনী।
হত্যার বিচার না হলে হত্যাকাণ্ড বাড়বেই। অপরাধ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান সূত্র এটি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যে মহামারী আকারে আজ ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, তাতে তার রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাবেনা কেউই।
এক অন্ধকার ব্ল্যাকহোলের অশান্ত ঘূর্ণির পথে চলছে আমাদের পেছন পথে যাত্রা।
তারপরও যারা নিজেদের নিরাপদ ভেবে মরুভূমির উটের মতো বালিতে মুখ বুজে আছেন, তারা নিতান্তই বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কেননা, নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায়না কখনো।
নির্বিরোধ থাকার ঋণ একদিন রক্তের দামেই শোধ করতে হবে সকলকেই। এই সত্যটুকু যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটবে, ততই মঙ্গল। অন্যথায় এই অমাবস্যার অন্ধকারের কবল থেকে নিস্তার নেই কারো।
কবি রুদ্রের ভাষায়,
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মাটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলও,
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার।
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ-যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা-একি তবে নষ্ট জন্ম?
এ-কি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?
এই গ্রহণের কালের হউক চিরঅবসান …
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য