আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বাবুল আখতার ও আমরা

সাইফুর মিশু  

বাবুল আখতার একজন অকুতোভয় পুলিশ কর্মকর্তা। পত্রিকা মারফত যতটুকু জেনেছি তিনি জঙ্গিদের জন্য ছিলেন আতংক। চট্টগ্রামের হবার কারণে তার বীরগাঁথা মনে হয় একটু বেশীই শুনেছি। জনাব বাবুল আখতারের পরিবারের এই ক্ষতি কখনোই পূরণ হবার নয়, কেউ পারবেওনা তা পূরণ করতে।

তবে মাত্র মাসখানেকের কম সময়ে আমার পরিবার কাছাকাছি একটি ঘটনার শিকার হবার কারণে জনাব বাবুল আখতারের স্ত্রীর হত্যার ঘটনা জানার সাথে সাথে মনটা বিষাদে ভরে গেল। নিজ পরিবারের ঘটনার কোন সুরাহা করতে পারিনি প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এবং এদিকে আমরা নিতান্তই সাধারণ পরিবার হবার কারণে। তবে বাবুল আখতার শুধুমাত্র একজন সাধারণ নাগরিক নন, অন্য সাধারণ নাগরিকরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন তার জন্য জীবন বাজি রাখা একজন ঊর্ধ্বতন এবং স্বনামধন্য পুলিশ কর্মকর্তা।

বাবুল আখতার সাহেবের স্ত্রীর ছবি পত্রিকা মারফত যতবার দেখেছি ততবার নিজের ছোট বোনের হাসপাতালের বিছানায় শোয়া ছবিটি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। মাহমুদা আক্তার মিতু আমার বোনের নাম নয়, তবে বাবুল আখতারের মতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। ভয়টা এখানেই, যেখানে বাবুল আখতারের মতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে এভাবে রাস্তায় প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে পারে খুনিরা সেখানে আমার মত একজন সাধারণ নাগরিক কি করে নিজেকে নিরাপদ ভাববে এই দেশে।

যতবার সন্তানদের কোলে নেয়া বাবুল আখতারের ছবি চোখের সামনে এসেছে ততবার নিজের বোনের স্বামী এবং তার দুই সন্তানের ছবিই যেন ভেসে উঠেছে চোখের সামনে। বার বার মনে হয়েছে, আমরা বিচার পাইনি। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে আমার বোন। বাঁচেনি মিতু, ন্যায় বিচার কি পাবেন বাবুল আখতার? তিনিতো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য শপথ নিয়েই ঐ পোশাক গায়ে দিয়েছেন। আমার চেয়ে নিশ্চয়ই তিনি আইনের প্রতি অধিকতর শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের মারপ্যাঁচে এবং ক্ষমতাধরদের কোন প্রভাব নিশ্চয়ই তাকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

জনাব বাবুল আখতারের কান্নার ছবি প্রকাশিত হয়েছে প্রায় সবক'টি দেশি এবং প্রথমসারির আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। সুইডেনের একাধিক স্থানীয় পত্রিকায়ও এসেছে ছবিগুলো। একজন বাবুল আখতারকে এই স্বাধীন দেশে কাঁদতে দেখার চেয়ে দুর্ভাগ্য আমাদের বড় কিছু হতে পারে না। একজন বাবুল আখতার ভেঙে পড়া মানে আমাদের মতন সাধারণ মানুষকে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবটুকু সাহস হারিয়ে ফেলা, একজন বাবুল আখতারের হেরে যাওয়া মানে বাংলাদেশের হেরে যাওয়া।

বাবুল আখতার কি পারবেন স্ত্রী হারানোর এই শোক সয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে? দূর থেকে হয়তো আমরা অনেকেই অনেক কথা বলতে পারি, তবে যার যায় শুধুমাত্র সেই টের পায়। জনাব বাবুল আখতারের স্ত্রীর মতন সেদিন আমার বোনকে হয়তো হারাতে হয়নি, তবে ন্যায় বিচার না পাবার বেদনা, নিজের অক্ষমতা এবং প্রভাবশালীদের অন্যায়ের কাছে হেরে যাবার কষ্ট আমাকে যেমন প্রতিমূহুর্ত দংশন করে, আমি চাই জনাব বাবুল আখতারকেও ঠিক একইভাবে দংশন করুক স্ত্রী হারানোর বেদনা। তবেই তিনি প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন, ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, আবারো নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এই দুর্বৃত্তদের শেকড়ে আঘাত হানতে পারবেন।

আমরা অনেকেই হয়তো অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার চেষ্টা করবো এই ঘটনাকে। তবে এই সময়টা এত এত বিবেচনা, বিশ্লেষণ করে নষ্ট করার নয়। এই সময়টা সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হবার। এই সময়টা আমাদের পুরো জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে সকল দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সন্ত্রাসীদের মদদদাতা এবং জঙ্গিবাদের সহযোগিতাকারী সবার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুদ্ধে নামার।

এই সময়টা বাবুল আখতারের পাশে দাঁড়িয়ে বলার, অন্যায়ের প্রতিবাদে আমরাও আপনার পাশেই আছি।

শত্রুর বুলেটটা আপনার বুকে বিঁধার আগে আমাদের বুকেই যেন বিঁধে। তবেই এই ক্রান্তিকাল থেকে মুক্তি পাবে এই জাতি।

সাইফুর মিশু, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ