আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

রোহান, নিবরাসদের অনেক সত্য জানা হলো না!

আজমিনা আফরিন তোড়া  

নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ; খুব পরিচিত আর আলোচিত নাম আজকের। কিন্তু কে এই নিবরাস? রোহানই বা কে? কোথায় জন্ম আর কোথায় যবনিকাপাত? সমস্ত পরিচয় ছাপিয়ে তারা আমার দেশের যুব সমাজ। যেই মানুষগুলো দেশের কাজে সব চাইতে বেশী অবদান রাখতে পারত, সেই যুব সুমাজ।

কেন আর কিভাবে তারা অধঃপতনে গেল, সেই গল্প আজ আমি বলতে আসিনি। যুব সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের দায় স্বীকার করতে এসেছি। এসেছি কিছু অপ্রাপ্তির হিসেব মেলাতে।

এই আজ সন্ধ্যার কথা। একই ঘরে আমি, মা আর আমার আর এক বোন বসে আছি। দীর্ঘক্ষণ পর আমার হঠ্যাৎ খেয়াল হল, আমরা অনেক্ষণ যাবৎ কেউ কারো সাথে কোন কথা বলছি না। আমি আর আমার বোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত, আর মা কি যেন হাতের কাজ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো আমাদের এত বেশী অসামাজিক বানিয়ে ফেলেছে যে আমাদের পাশে বসা মানুষটা আদৌ কেমন আছে, তা জানা হয় না! শুধু কি পরিবারই আমাদের দিকে মনোযোগী হবে? আমাদেরও উচিৎ নিজের জগৎ থেকে বেরিয়ে একটু হলেও বাবা আর জন্য সময় রাখা।

যৌথ পরিবার ভাঙার হাজারটা সুবিধার পাশাপাশি একটা বিরাট সমস্যা হল যৌথ পরিবারগুলো ভাঙার সাথে সাথে আমরা ভীষণ রকম একা হয়ে পড়ছি। আর এই একা মানুষগুলো যখন হীনমণ্যতায় ভোগে তখন তাকে মানসিক প্রশান্তি যেই ই দিক না কেন, মানুষ তার প্রতি বিশ্বস্ত হবেই। তা সে হোক কোন যন্ত্র বা জঙ্গি/ আইএসের কোন সদস্য।

নিজেদের দিয়ে বুঝি, তরুণ সমাজ মানসিক প্রশান্তি পেলে বাপ মা ভুলতেও রাজি। প্রত্যেক প্রজন্মই আগের প্রজন্ম থেকে আধুনিকতর হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই মা বাবা সন্তানের সাথে সাথে আধুনিক না হয়ে উঠলে সন্তান অন্যত্র প্রশান্তি খুঁজবে, সেটাই যথাযুক্ত। সহজ সম্পর্ক আর সন্তানের ন্যায় সঙ্গত দাবী মেনে নিলে আজ হয়ত সারা দেশে নিখোঁজ এর সংখ্যা ২০০ না হয়ে ২০ হতো!

বাড়িতে বাবা মা যদি জন্মের পর থেকে টানা ২০-২২ বছর একজন সন্তানকে শেখান প্রতিটি ধর্মের মাহাত্ম্য, সকল ধর্মের মানুষকে সমান মর্যাদা দেয়া আর মানবিকতাবোধ তবে কি করে সেই সন্তানের মাত্র ৬ মাসে ব্রেনওয়াশড সম্ভব? কোন আইএস বা জঙ্গি ব্রেনওয়াশ করার আগেই যদি বাবা মা আমাদের শিখিয়ে দিতেন, সকল ধর্মের মানুষের প্রার্থনা একই সৃষ্টিকর্তার কাছে যেয়ে পৌঁছায়, সকল ধর্মের সৃষ্টি কেবল মানুষের আত্মার শান্তির জন্য, তবে কি আজ আমাদের এ দিন দেখতে হতো?

আমরা সবাই জানি, শৈশবে একবার যা মাথায় ঢোকে তা নাকি সহজে মাথা থেকে বের হয় না? তবে তবে কি সেই মস্তিষ্ক ওয়াশ করা সম্ভব? ডান হাতে খেতে হয় আর বাম হাতে শৌচ কাজ, সে কথার মত এটাও সারা জীবন মাথায় থাকা সম্ভব।

বাচ্চাদের একটা কোচিং-এ আমি পড়াই। সেই সূত্রে খুবই মিষ্টি একটা বাচ্চার সাথে একদিন আলাপ। কথায় কথায় আলাপে ভাব জমতেই তার ক্লাসের এক সহপাঠির কথা উঠল। এত মায়া কাড়া একটা বাচ্চা চোখ মুখ বাঁকা করে বলল, “সৌরভ তো হিন্দু, ও আমাদের দলের না”। আমাকে ইঙ্গিত করে বলল, “আপনি মুসলমান, আপনি আমাদের দলের”। সে আরো বলল, “ওদের সাথে কথা বলা হারাম। ওদের সাথে কথা বললে আল্লাহ মারবে”।

আরও পড়ুন- কিছু বিদ্বেষ…

বাচ্চার কথা শুনে আমি যার পর নাই অবাক হলাম। যে বাচ্চার মুখে ঠিক ভাবে কথা ফোটে নি, সে ধর্মেরই বা কি বুঝল আর আল্লাহর মারা বলতেই বা কি বোঝালো। আর এই বাচ্চা এসব কথা শিখলই বা কোথায়! খোঁজ নিয়ে জানলাম বাচ্চার বাবা মা দুজনই উচ্চ শিক্ষিত। বাবা মা ঘরে এধরণের কথা না বললে ঐ বাচ্চা পেল কোথায় এ কথা? হয়ত কাজের লোক শিখিয়েছে। কিন্তু বাবা মা সেই ভুল ভাঙিয়ে দিচ্ছেন না। শিশুমনের গহীনে সারা জীবন এ কথা বদ্ধমূল হয়ে রইবে।

আমার দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়ে আসছে বহুকাল ধরেই। উপমহাদেশ তো আর শুধু শুধুই ভাগ হয়নি! সেই ১৯৪৭ এর আগ থেকেই ছিল হিন্দু মুসলিম দ্বন্দ। এর পর ৫২, ৬৫, ৭১, ৯২, ০১, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ কোনকালেই থেমে নেই। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হল ধর্মের ভিত্তিতে। কিন্তু খুব কি বেশী লাভ হল তাতে? ৭১-এ হিন্দুদের প্রতিই রোষটা বেশী ছিল। সেই পাকিস্তানও ভাঙল। আমার দেশের মাটি রক্তে লাল করে ভিজিয়ে জন্ম নিল নতুন দেশ বাংলাদেশ। সব কিছুর পেছনেই সূক্ষভাবে হলেও ধর্ম ছিল।

৯২-এ হিন্দু বাড়ি পুড়ল, হিন্দু মেয়ে ধর্ষিতা হল। কেউ বিচার পেল না। ওরা তো হিন্দু, ওরা বিচার পাবে কেন? এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ব্লগার আর বৌদ্ধ হত্যা। যে দেশটি জন্ম নিল একটি স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাঁচার জন্য, সেই স্বপ্নদ্রষ্টা রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যুর পর কি অবলিলায় সংবিধানে জুড়ে দেয়া হল “রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম”। ইসলামকে কোন অংশে ছোট করে দেখা নয়, বরং আমাদের মত রক্ত মাংশে গড়া অন্য ধর্মের মানুষগুলোকে তাদের মত করে বাঁচতে দেয়া।

সেই “রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম” পুনরায় উঠিয়ে দেয়ায় সাধারণ মুসলিম পরিবারে কতটা বিদ্বেষ, তা দেখেছি নিজের পরিবার দিয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি। আমি বাদে আমার রুমমেট রা তখন সবাই হিন্দু। আমার টাইফয়েড, ১০৪ জ্বর, কোনভাবেই নামছে না। কথা বলার শক্তি পর্যন্ত নেই। সেই অসহায় সময়ে কি মমত্ত্ব নিয়ে যে এই মানুষগুলো আমার সেবা করেছে তা তারা জানে না! সকল পরিচয় ভুলে সেদিন তারা আমার আপন হয়েছে। মুখে তুলে খাইয়েছে। তার বিনিময়ে আমার আল্লাহ আমাকে মারেননি। সুস্থ্য করে তুলেছেন।

আফসোস... রোহান, নিবরাসদের সে সত্য জানা হল না!


আজমিনা আফরিন তোড়া, সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ