প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ২৮ জুলাই, ২০১৬
গুলশান ট্রাজেডির পর খুব বেশি যে বাক্যটি আলোচিত হচ্ছে তা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ বা রাতের টক-শো ওয়ালা বুদ্ধিজীবীরা খুব জোরেশোরে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে জামায়াতের রাজনীতির অধিকার নিয়ে যারা রাতের পর রাত টক-শো করেছেন, পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন , তাঁরাই এখন বলছেন দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে আপাত জামায়াতে ইসলামিকে জোটের বাইরে রেখে বিএনপি যেন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে।
হঠাৎ করে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন? কিসের ভিত্তিতে এই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানানো হচ্ছে সেই বিষটা ও পরিষ্কার না। জাতীয় ঐক্য কি শুধুমাত্র জঙ্গিবাদ বিরোধী অবস্থানের জন্য নাকি জাতীয় সার্বিক বিষয়ে। বিএনপির উচিৎ আগে এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করা।
গত ১৯ শে জুলাই ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সে বাংলাদেশ বিষয়ক এক আলোচনায় বাংলাদেশের সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা বাংলাদেশ বিষয়ক একটি সেমিনারে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মাধ্যমেই শেষ হয়েছিল সেই সেমিনার। সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন বিএনপি যদি জামায়াতে ইসলামিকে ত্যাগ করে অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চায় তবেই ঐক্যের ব্যাপারে চিন্তা করা যাবে। এর জবাবে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমির খসরু সাংবাদিকদের বলেছেন সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেই তো হয়ে যায়। পরেরদিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একই কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। লন্ডনে বিএনপির প্রতিবাদ
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায় প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থ পাচারের ধারাতেই এই মামলা পড়ে না। উদ্দেশ্য যেহেতু তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানো, তাই এমন আরও অসংখ্য মামলা তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'শুধু তারেক রহমান নয়, বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হাজার হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার নামে ২৯টি মামলা, যার সব কটিতেই চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে না। তারা আবার দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু সপ্তাহ না যেতেই দলটির অবস্থান বদলে গেছে। দলের নেতারা ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন নেতাদের বাড়ীতে ঐক্যের ডাক নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। যখন দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। বেগম খালেদা জিয়ারও সাজা হতে পারে যে কোন সময়।
জাতীয় ঐক্য অবশ্যই দরকার, গণতন্ত্রের স্বার্থে শক্তিশালী বিরোধী দল ও প্রয়োজনীয় উপাদান কিন্তু জাতীয় ঐক্যের আগে যে বিষয় গুলোর ঐক্য আগে হওয়া দরকার বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা প্রশ্নে ঐক্যমত্য জামায়াতে ইসলামিকে কোন দলই আর রাজনীতি করতে দেবেনা সেই ঐক্যমত্য। মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বাস্তবায়নের ঐক্যমত্য। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রশ্নে ঐক্যমত্য। অন্তত পক্ষে এই মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যদি তাঁরা তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করেন তবেই মনে হয় জাতীয় ঐক্য সম্ভব।
শুধু জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিএনপির সাথে জাতীয় ঐক্য খুব বেশী জরুরী নয়। ইতোমধ্যে দেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে প্রতিবাদী ঐক্য গড়ে উঠেছে। নিজেদের অবস্থান থেকে সবাই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সারা দেশের মানুষ যখন বলছে ধর্মের নামে এই রক্তপাত মেনে নেয়া যায় না। এর প্রতিকার দরকার । জঙ্গি সন্তানের লাশ নিতে যখন মা বাবা অস্বীকার করেন তখন মেনে নিতে হয় আসলে জাতীয় একটা ঐক্যমত্যে দেশের সাধারণ মানুষ উপনীত হয়েছেন। এখন ঐক্যমত্যের বাইরে কারা থাকলেন? খুব সাদাসিধে ভাবে বললে জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টরাই এই ঐক্যের বাইরে রয়ে গেছেন।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যখন জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, বিএনপি নেতা হান্নান শাহ ৯ জঙ্গির নিহত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অন্যদিকে, একাত্তরে ‘কে কী করেছে’ তা ভুলে গিয়ে সবাইকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে বললেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
সোমবার এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, “আমরা বাঙালি, যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। একাত্তরে কে কী করেছে তা ভুলে সবাইকে এক হয়ে মাঠে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপির এই নেতার ভাষায়, আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেই ‘সব সমস্যার সমাধান’ হয়ে যাবে।
“সমস্যা একটা, সমাধানও একটাই। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অবৈধ সরকারকে বিদায় করতে হবে। এ সরকারকে বিদায় করতে পারলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
এইসব বক্তব্য পর্যালোচনা করলে খুব পরিষ্কার বুঝা যায়, বিএনপির উদ্দেশ্য আসলে জাতীয় ঐক্য নয়। যে কোন মূল্যে একটি সাধারণ নির্বাচনই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। সর্বশেষ বাংলাদেশের পুলিশ ২৬২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। আসলেই কি ২৬২ জন না তার ও বেশী মানুষ জেহাদে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আসলেই কারো কাছে নেই। স্ত্রী সন্তান নিয়ে আইএস এ যোগ দেয়ার খবর ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ২০ জন বিদেশী হত্যাকাণ্ড ও শোলাকিয়া ঈদের জামাতে হামলা চেষ্টার পরই মনে হল সরকার ও প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছেন। রাতারাতি গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে, অনেক স্বেচ্ছা গুমের ঘটনা ও বের হয়ে আসছে। এই পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী বেশীরভাগ জিহাদিরা কোন না কোনভাবে জামায়াতে ইসলামির সাথে, তাদের বা তাদের পরিবারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে কি তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে জেল থেকে রক্ষা করা নাকি জঙ্গি নিধন রোধ করতেই ঐক্যমত্যের ডাক দিচ্ছে বিএনপি। নীতি নির্ধারণী নেতারা হয়তো ভাবছেন নির্বাচনী ঢামাঢোলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আর তখন জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রমও চাপা পড়ে যাবে ।
শুধু বিএনপি নয় আওয়ামী লীগের ভিতরে ও দিনদিন একই ভূত ভর করছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গিবাদে। শুধু মাত্র সন্তানের লাশ নিবেন না কিংবা জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে, আবেগি অভিমান দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। জঙ্গিদের মা বাবাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ। জামায়াত ও শিবিরের নেতারা একে একে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের নীতি নির্ধারণীর জায়গায় চলে আসছে। সরকারের মন্ত্রীদের সাথে তাদের দহরম মহরম সেলফি দেখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। তাই জাতীয় ঐক্যের পূর্বে মৌলিক ঐক্যমত্যের প্রয়োজন । শুধুমাত্র বিএনপি নয় আওয়ামী লীগকেও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য