আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বিক্ষিপ্ত ভাবনা

মুহম্মদ জাফর ইকবাল  

গুলশান ক্যাফে এবং শোলাকিয়া ঈদগাহের ঘটনার পর সারাদেশের সব মানুষেরই নতুন এক ধরনের উপলব্ধি হয়েছে। হঠাৎ করে সবাই বুঝতে পেরেছে ধর্মান্ধ এবং জঙ্গি বলতেই এতদিন চোখের সামনে যে মানুষগুলোর চেহারা ভেসে উঠতো সেটা সার্বিক নয়।

এই দেশের সবচেয়ে নৃশংস জঙ্গিদের বড় একটা অংশ হচ্ছে কম বয়সী আধুনিক তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে আলাপ করেছে তাদের নির্দেশ দিয়েছে কোনো ছাত্র যদি অনুপস্থিত থাকে সেটা কর্তৃপক্ষকে জানাতে।

একটি ছাত্র হঠাৎ করে ক্লাসে আসা বন্ধ করে দিলে সেটা সবার আগে বুঝতে পারে তাদের শিক্ষকেরা। সত্যি কথা বলতে কী আমি দীর্ঘদিন থেকে কোন ছাত্র ক্লাসে আসে আর কোন ছাত্র ক্লাসে আসে না সেটা খুঁজে বেড়াই, তবে জঙ্গির খোঁজে নয় সম্পূর্ণ অন্য কারণে। একদল ছাত্র বা ছাত্রী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন তাদেরকে আর বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করি না, আমরা তখন তাদেরকে একদল দায়িত্বশীল বড় মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি।

কাজেই একজন বড় মানুষ ইচ্ছে হলে ক্লাসে আসবে, ক্লাসে না এসেই যদি সে তার সব লেখাপড়া করে ফেলতে পারে তাহলে ক্লাসে আসবে না- কাজেই মনে হতে পারে আমরা বুঝি তার স্বাধীন কাজকর্মে নাক গলাতে পারব না।

কিন্তু আমি খুবই পুরানা মডেলের মানুষ, প্রতি ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের ডাকি, একজন ছাত্র টানা কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকলেই আমি তাকে খুঁজে বেড়াই। ক্লাসে অনুপস্থিত ছাত্রদের খবর পাঠিয়ে ক্লাসে ডাকিয়ে আনি এবং তাকে ক্লাসে হাজির থাকতে বাধ্য করি। শুধু তাই নয় ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে তাদেরকে আমার বিশাল একটা লেকচার শুনতে হয় এবং আমার ধারণা বড় হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরা তাদের স্বাধীনতায় এরকম বাগড়া দেওয়ায় আমার ওপর যারপরনাই বিরক্ত হয়, কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। মাথা নিচু করে সেই লেকচার হজম করতে হয়।

আমার লেকচারের ভাষা খুব কঠিন এবং তার সার-সংক্ষেপ অনেকটা এরকম; ‘তুমি একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছাত্রের পিছনে সরকারের কতো টাকা খরচ হয় তুমি জান? যদি না জেনে থাকো তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকে প্রতি বছর পাশ করে বের হয়ে যাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করো তাহলেই সেটা পেয়ে যাবে- দেখবে দেশের সবচেয়ে হাই ফাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা পড়ালেখার জন্যে যত টাকা খরচ করে তোমাদের পিছনে সরকার তার থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ করে। কাজেই তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি নিজের টাকায় কিংবা তোমার বাবা-মার বা গার্ডিয়ানের টাকায় লেখাপড়া করছো, জেনে রাখো সেটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। তুমি এখানে পড়ছো সরকারের টাকায়।’

এরপর আমি গলার স্বর আরো ভারী করে আরো কঠিন ভাষায় বলি, ‘তোমাকে লেখাপড়া করানোর জন্যে সরকার সেই টাকা কোথা থেকে পায়? সরকার সেই টাকা পায় এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে, শ্রমিক চাষি মজুরদের কাছ থেকে। কাজেই তুমি মোটেই নিজের টাকায় লেখাপড়া করছো না- তোমার লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছে এই দেশের কোনো একজন গরীব মানুষ, কোনো একজন চাষি, রিকশাওয়ালা কিংবা গার্মেন্টসের কোনো একজন মেয়ে। যে গরীব মানুষের টাকায় তুমি বাংলাদেশের বড় একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছো, সেই গরীব মানুষটি হয়তো নিজের ছেলে বা মেয়েকে লেখাপড়াই করাতে পারেনি- কিন্তু তোমার লেখাপড়ার খরচ দিয়ে যাচ্ছে।’

তারপর, আমি লেকচার শেষ করার জন্যে বলি, ‘কাজেই তোমার ইচ্ছে হল না তাই তুমি ক্লাসে আসবে না সেটি হতে পারে না। তোমার সেই অধিকার নাই। তোমাকে ক্লাসে আসতে হবে এবং লেখাপড়া করতে হবে।’

সাধারণত এরকম কঠিন লেকচারের পর কাজ হয়, ছেলেমেয়েরা প্রায় নিয়মিতভাবে ক্লাসে হাজির থাকে। আমি এতদিন তাদেরকে শুধুমাত্র নিজের দেশের জন্যে দায়বদ্ধতার কথা শুনিয়েছি, বোঝাই যাচ্ছে এখন থেকে ক্লাসে হঠাৎ করে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী অনুপস্থিত থাকতে শুরু করলে আমাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে, দেখতে হবে সে হঠাৎ করে জঙ্গিদের খাতায় নাম লাগিয়েছে কী না!

১লা জুলাইয়ের এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবার পর দেশের সব মানুষের মতো আমিও আধুনিক শিক্ষিত তরুণদের এই অকল্পনীয় নৃশংসতার কারণটি বোঝার চেষ্টা করছি। বুঝতে পারিনি। আমাদের যে সব সহকর্মীরা এই বিষয়গুলো নিয়ে একাডেমিক গবেষণা করে থাকেন তারা আমাকে ব্রেন ওয়াশের প্রক্রিয়াটি বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি তারপরও আমি মানুষ কেমন করে অমানুষ হয়ে যায় সেটা এখনো বুঝতে পারিনি।

শুধু অনুমান করতে পারি যারা এই তরুণদের ব্যবহার করে তাদের এই দেশের জন্য কোনো মায়া নেই। দেশের জন্য মায়া থাকলে একজন তরুণ নিশ্চয়ই জঙ্গি হতে পারে না।

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে এই আধুনিক তরুণেরা কোনো একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে গিয়েছে কিনা। কোনো বিজয় দিবসে আমার সোনার বাংলা গেয়েছে কিনা। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা থাকলে টেলিভিশনের সামনে বসে সাকিব, মাশরাফি, মুস্তাফিজদের খেলা দেখে আনন্দে চিৎকার করেছে কিনা। আমরা কি আমাদের  দেশের তরুণদের ভেতরে দেশের জন্য ভালোবাসা জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছি?

এই বিষয়টা নিয়ে আমি যখন চিন্তা করি তখন সব সময়েই আমি সাধারণত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।

আমি আগেই বলেছি নৃশংসতা, জঙ্গিদের মানসিকতা, আমি কখনোই বুঝতে পারব না, কিন্তু আমাদের একেবারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চিন্তা ভাবনা এবং মানসিকতাটুকু তো আমাদের বোঝা উচিৎ। আমরা কি তাদের বুকের ভেতর দেশের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা জন্ম দিতে পেরেছি?

কেনো এই দেশের সবচেয়ে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হয় পাশ করেই দেশের বাইরে চলে যাওয়া এবং কখনোই ফিরে না আসা? অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ব্যাচ আছে যাদের একটি ছাত্রও দেশে নেই।

আমাদের গরিব দুঃখী চাষি শ্রমিক মজুরের টাকায় লেখাপড়া করে ছেলে মেয়েরা কেনো বাইরে লেখাপড়া শেষ করে নিজের দেশে ফিরে আসতে চায় না? কেনো একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারের কথা মনে করে তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে না। পহেলা বৈশাখে কেনো তারা বটমূলে গান শুনতে যায় না? কেনো বইমেলায় নতুন বইয়ের  ঘ্রাণ নেবার জন্য মন উচাটন হয় না? আকাশ কালো করে আসা মেঘ, ঝমঝম বৃষ্টি দেখার জন্য কেনো তাদের মন উতলা হয় না? এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু একটা করার জন্য কেনো তাদের বুক টনটন করে না? আমি সেটাই বুঝতে পারি না। আমি কেমন করে একজন  জঙ্গির চিন্তা ভাবনা বুঝতে পারব?

২.
জঙ্গিদের নৃশংসতার ঘটনাগুলো ঘটে যাবার পর আজকাল ব্যাপারটা নিয়ে সবাই আলোচনা করছে, কারো সাথে দেখা হলেই এই বিষয়ে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলছে। আমি যতগুলো  ঘটনার কথা শুনেছি তার মাঝে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি জঙ্গিদের নিয়ে না, ছোট শিশুদের নিয়ে। বাচ্চাদের একটা স্কুলের শিক্ষকেরা  আবিষ্কার করলেন হঠাৎ করে একটা শিশু কেমন যেন মারমুখী হয়ে গেছে এবং স্কুলে এসে যখন তখন অন্য বাচ্চাদের মারতে শুরু করেছে।

কিছুদিন পর আবিষ্কার হলো সবাইকে মারছে না ঘুরে ফিরে  সে নির্দিষ্ট কিছু শিশুকে মারছে এবং যাদেরকে মারছে তারা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। স্বাভাবিক কারণেই মারকুটে শিশুর সাথে শিক্ষকেরা কথা বললেন এবং জানতে পারলেন বাসা থেকে তাকে বলা হয়েছে হিন্দুরা হচ্ছে কাফের এবং  কাফেরদের মারতে হবে। তাদেরকে মারলে সওয়াব হবে। যে দুধের শিশুটি এরকম একটা ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছে বড় হওয়ার পর তাকে নৃশংস একজন জঙ্গি বানানো নিশ্চয়ই পানির মত সহজ। গুলশান ক্যাফের ঘটনা ঘটে যাবার পর হঠাৎ করে সবার টনক নড়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু আমার ধারণা ব্যাপারটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের নয়।

এর শেকড়  অনেক গভীরে, একেবারে দুধের শিশুরা যেন ঠিকভাবে বড় হয় সেটাও দেখতে হবে। খুব ছোট একটা শিশুকে ভয়ঙ্কর কিছু ধারণা দিয়ে বড় হতে দিলে কিছুদিন পরে আমাদের মাথা চাপড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। সে রকম তাদেরকে সুন্দর কিছু বিশ্বাস দিয়ে বড় করলে ভবিষ্যতে তারাই আমাদের সম্পদ হয়ে যাবে। কাজেই আমি মনে করি, একেবারে ছোট শিশুদের কারিকুলাম, বই পত্রগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তাদের জন্য এমনভাবে বইগুলো লেখা হোক তারা যেন সেখান থেকেই মানুষ হবার শিক্ষাগুলো পেয়ে যায়। তারা যেন একটি বিশ্লেষণী  মন নিয়ে বড় হয়,  ধর্মান্ধ মানসিকতা নিয়ে বড় না হয়।

৩.
গত কিছুদিনে সবাই নিশ্চয়ই আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে কিন্তু কেউই সেভাবে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার সাহস পাচ্ছে না। সেটি হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গি সমস্যা সমাধান করার জন্য ‘ছাত্রলীগ’ সমাধান। খবরের কাগজে দেখলাম ছাত্রলীগ ঘোষণা দিয়েছে তারা সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটি করে দেবে। খবরটি পড়ে আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না।

আমি প্রায় দুই যুগ থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। কাজেই ছাত্রদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খুব কাছে থেকে দেখে আসছি এবং তাদের কাজকর্ম খুব  ভালো করে জানি। বিএনপি জামায়াতের আমলে ছাত্রলীগ খুঁজে পাওয়া যেত না, এখন তাদের সংখ্যা অনেক। বেশ কিছুদিন আগে আমাদের কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হবে এবং যারা সেগুলো দেবে হঠাৎ করে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে জানাল যে ছাত্রলীগের কিছু নেতা তাদের কাছে এতো বড় অংকের টাকা চাইছে যেটা তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার খুব মেজাজ খারাপ হল এবং আমি নেতাদের ডেকে পাঠালাম (এর মাঝে একজন আমার সাথে দেখা হলেই পা ছুঁয়ে সালাম করে ফেলে)। আমি যখন তাদের ঘটনা জানালাম তখন একজন নেতা গলা কাঁপিয়ে ঘোষণা দিল, বলল, ‘স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আমার ছেলেদের বলে দিয়েছি তারা চাঁদা চাইবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার কোনো প্রজেক্টের কোথাও কখনো চাঁদা নেয়া হবে না’। আমি বললাম, ‘না,  শুধু আমার বেলায় তোমরা ছাড় দিবে এটা হতে পারবে না। তোমাদের বলতে হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো চাঁদাবাজি হবে না’। ছাত্রলীগের নেতারা মোটামুটি সরল মুখে বলল। ‘না সেটা সম্ভব না!’ তারপর আবার আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে বের হয়ে গেল।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা আমি দেখেছি তার মাঝে এগুলো হলো তুচ্ছ ঘটনা। বড় ঘটনাগুলোর কথা দেশের সবাই জানে যখন  ভাইস চ্যান্সেলর ছাত্রলীগের ছেলেদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলিয়েছেন। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন আগাছা উপড়ে ফেলতে হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হল, সে আগাছা আসলে উপড়ে ফেলা হয়নি, জমিতে সার দিয়ে আগাছাগুলোকে আবার নতুন করে লাগানো হয়েছে।

বহিষ্কার করা একটা লোক দেখানো ব্যাপার, সবাই নিজের জায়গায় আছে। ছাত্রলীগের যে কমিটি করা হয়েছে সেখানে এই আগাছাগুলোকে বড় বড় পদে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জল-হাওয়া দিয়ে এই আগাছাগুলো বড় করেছেন, তারা ধীরে ধীরে মহীরুহ হয়ে উঠেছে। আমি ব্যাপারগুলো টের পাই, কারণ যখনই কোনো কিছু কেনাকাটা করতে হয় কোনো সাপ্লায়ার ছাত্রলীগের ভয়ে এখনও কোনো কিছু সাপ্লাই দিতে রাজী হয় না। শুধু তাই নয়, নিজেদের ভিতরে মারামারি করে এখানে লাশ পর্যন্ত ফেলেছে।

যে সংগঠনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষা করে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকে এবং যাদের কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন ছোটোখাটো কেনাকাটাও করতে পারি না, সেই সংগঠন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের কমিটি করে জঙ্গি সমস্যা মিটিয়ে দেবে সেটা এই দেশে আর যেই বিশ্বাস করুক আমি বিশ্বাস করি না!

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সংগঠন থাকলেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গি তৈরি হবে না এর থেকে হাস্যকর যুক্তি আর কিছু হতে পারে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ খুব ভালো ভাবেই আছে, স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর তাদের দেখভাল করেন, যাদেরকে অপরাধের জন্য বহিষ্কার করা হয় তাদেরকে আবার বড় পদ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়। এখান থেকে একটা ছাত্রকে জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে, শুনতে পাচ্ছি তারা অনেকেই আছে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে বিকশিত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতির একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হয়।

ক্লাসরুমের বাইরে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে শিক্ষকদের সময় দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটুকু যেন তাদের আনন্দময় একটা স্মৃতি হয়ে থাকে তার জন্য চেষ্টা করতে হয়। আমি প্রায় দুই যুগ থেকে এখানে এই কাজগুলো করে এসেছিলাম। গত বছর যখন আবিষ্কার করেছি যে এখানে একজন ভাইস চ্যান্সেলর ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পারেন এবং সবকিছু জেনে শুনেও সরকার না দেখার ভান করে তাকে বহাল তবিয়তে রেখে দিতে পারে তখন আমি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি।

আমার মনে হয় সারাদেশে আমার মতো অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে নিজেদের ভেতরে গুটিয়ে নিয়েছে, সরকার তার একটা জরিপ নিয়ে দেখতে পারে। না দেখার ভান করলেই সমস্যা চলে যায় না, সমস্যা সমাধান করতে হলে তার মুখোমুখি হতে হয়।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ