প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ০১ আগস্ট, ২০১৬
আমাদের পণ্ডিত মহাশয়দের একটি বদ-অভ্যাস ছিলো এবং আছে; সেটা হচ্ছে বহুভাষাবিদ হওয়া। আমার মতে এটা একেবারেই ঠিক নয়। মানুষ শুধু একটিই ভাষা জানবে। নইলে তা নিজ ভাষাগোত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। গভীর বেদনার সঙ্গে বলতে হয় ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর জীবনী পাঠ্যপুস্তকে রাখা একেবারেই ঠিক হয়নি। এরফলে অনেকে বহুভাষাবিদ হয়ে অমার্জনীয় অপরাধ করেছে।
আমাদের আইকনেরা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আইরিশ সুরের ফিউশনের সঙ্গে বাংলা গীতিকবিতা মিশিয়ে তারুণ্যকে বেপথু করলেন। কাজী নজরুল ইসলাম রাজ্যের সব ভিনদেশী শব্দ ঢুকিয়ে দিলেন বাংলায়। সৈয়দ মুজতবা আলী আরেক অদ্ভুত মানুষ; বহুভাষাবিদ রসিক মানুষ; তিনিও তারুণ্যকে বেপথু করলেন নানা ভাষার শব্দ রসদের রসগোল্লা খাইয়ে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ উপন্যাস লিখলেন বাংলায়; অথচ উপন্যাসের আঙ্গিক-কাঠামো-বাক্য বিন্যাসে ফরাসী সুর। এগুলো অনুচিত হয়েছে।
সত্যজিত রায়ের ফেলুদা ঝরঝরে বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি বলতে পারায় ফেলুদার অনুসারী হিসেবে অনেক তরুণ বহুভাষাবিদ হয়েছে। এটা কী করলেন সত্যজিত রায়! তাঁর কী বাংলা ভাষার প্রতি কোন মায়াদয়া নেই!
শচীন দেব বর্মণ, রাহুল দেব বর্মণ; এইসব কুমিল্লার ছেলেরা তাদের গানগুলো বোম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হিন্দি করে দিয়েছেন। কিশোর , হেমন্ত বাংলা ভাষার গায়ক হয়েও বোম্বে তোলপাড় করে দিলেন। এমন কী লাহিড়ী মোহনপুরের স্বর্ণালংকার প্রিয় শিল্পী বাপ্পী লাহিড়ী "যে জন প্রেমের ভাব জানে না" গানের ফিউশন হিন্দি ভাষায় ঢুকিয়ে দিলেন। ভারতের অ-বাংলাভাষীরা অবশ্য এইসব বাংলা গানের তারার মোহে "আপনি কেমন আছেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি" এতটুকু বলতে শিখেছে। কিন্তু কেন জানিনা এরা চরম দেশপ্রেমিক একভাষী বাংলাদেশী কারো কারো সঙ্গে দেখা হলেই হিন্দি বলে! অথচ হিন্দিভাষীরা মনে করে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কণ্ঠে সুর আছে; যা তাদের নেই। তাইতো বাংলাদেশের জেমস বলিউড তোলপাড় করে আসেন। আর শ্রেয়া ঘোষাল ছাড়া বলিউড ভাবতে পারেনা স্নিগ্ধ কণ্ঠের সেরা গানগুলোর কথা। বাংলাদেশের রুনা লায়লা ভারতের সংগীত জগতে বিশেষ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত। আজকাল বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তার কারণে বলিউডে বাংলা গানের কলি ফিউশন আকারে ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও এইগুলা ঠিক হয় নাই।
বাংলা ভাষার শক্ত গাঁথুনির ওপর ইংরেজির জোড়ো বাংলো ঘর তোলার রবি ঠাকুরীয় উপদেশ শুনে অজ্ঞাতেই বিরাট ভ্রান্তির কবলে পড়েছে অনেকে। রবীন্দ্রনাথ ভদ্রলোককে অন্ধভাবে বিশ্বাস করাতেই যত বিভ্রাট। আমাদের উচিত ছিলো শুধু আমাদের নিজ দেশের নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষা শেখা। এবং নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল এরকম নানা আঞ্চলিক ভাষার মানুষদের যোগাযোগের সুবিধার জন্য দ্বো-ভাষী নিয়োগ করা। কথিত প্রমিত বাংলার আধিপত্যবাদের কোন দরকার ছিলোনা। এখনো সময় আছে; আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদেশী ভাষা বিভাগ বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের নানা আঞ্চলিক ভাষার বিভাগ গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনে যেমন আত্মত্যাগের রক্ত রয়েছে; তেমন আত্মত্যাগের রক্তের ইতিহাস ভারতের বাংলাভাষী এলাকাগুলোতেও রয়েছে। তবুও সেখানকার তরুণ-তরুণীরা বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি এমনকি ফরাসী/জর্মন ভাষা শেখে। কারণ তাদের আবেগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ঐসব ভুল দৃষ্টান্তের দিকে তাকানোর কোন দরকার নাই। ভারতের তরুণেরা কেন পেশাগত ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে এতো সুনাম কুড়িয়েছে; তার উত্তর ঐ যোগাযোগ দক্ষতা; বহুভাষাবিদ হবার আগ্রহ।
কিন্তু ঐসব আবেগহীন বেগ দেখার কোন দরকার নাই। জীবনে আবেগ না থাকলে আর কী থাকে! চিৎকার করে হাসি-কান্না-ঝগড়া-ঘৃণা-পরচর্চা-ঈর্ষা-ছিদ্রান্বেষণ এই সমস্ত শিল্প চর্চা করতে হবে আঞ্চলিক ভাষায়। প্রমিত বাংলা বলা মহাপাপ। বিশ্বের অন্যসব ভাষা না শিখে জাতীয় পর্যায়ে মূকাভিনয় কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানির জন্য আমরা জনশক্তিও তৈরি করতে পারি।
বহুভাষাবিদদের শুভবোধের উদয় হোক!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য