প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ১০ আগস্ট, ২০১৬
দেশের গণতন্ত্র সমুন্নত করতে প্রথম ও প্রধান শর্ত আইনের শাসন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মন্দির, মূর্তি ভাঙচুর কোন ঘটানর কোন দৃষ্টান্তমূলক বিচার নির্যাতিত গোষ্ঠী বাংলাদেশে পায়নি। কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বী ব্লগার খুনের এখনো কোন মামলারই কূল কিনারা হয়নি। প্রশাসন বারবার বলছে সব মামলার আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসন এর কর্তাব্যক্তিরা আইনের শাসন নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছেন বারবার। মাঝে মাহে কিছু আশার আলো ও ঝিলিক দেয়। তেমনি একটি ঘটনা ছিল সিলেটের তারাপুর চা বাগান দখলমুক্ত করে তা প্রকৃত মালিককে হস্তান্তর করা।
সিলেটের রাজনীতির জামায়াত প্রীতি বহু পুরাতন। চোখ বন্ধ করে অনেকে বলে দিতে পারেন সিলেটের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কার কতো অংশ মালিকানা। সেখানে আওয়ামী লীগ বিএন পি জামায়াত ভাই ভাই। হিন্দু সম্পত্তি দখলেও সেই একই চিত্র।
সম্প্রতি সিলেট তথা বাংলাদেশের কুখ্যাত ভূমি খেকো রাগীব আলীর পক্ষে একাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সিলেটের সর্বদলীয় নেতারা। একটু পিছন ফিরে দেখলে ৯০ এর দশকের সেই একই চিত্র আবার ফিরে এসেছে যেন।
কথিত আছে ১৯৭৯ সালে কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমান লন্ডনে আসলে রাগীব আলীর সাথে সখ্যতার কারণে তত্কালিন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রাগিব আলীর কাছে হিন্দু জমিদারের দানকৃত পাইলট স্কুলের জমি বিক্রি করে দেন।
কোর্ট পয়েন্টের সামনে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে আজকের মধুবন মার্কেট। সিলেটের সাধারণ মানুষ ও তরুণ রাজনৈতিক নেতারা শুরুতে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। যার সামনের সারিতে ছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জাসদ নেতা লোকমান হোসেন, জাকির আহমদ, তাপস ভট্টাচার্য, শাহাবুদ্দীন, মুক্তাদির সহ আরও অনেকে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে মদন মোহন কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল কে কে পাল ও আরেক তুখোড় নেতা মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন উদ্দিন সাহেবের বাসায় বসে রাতের আধারে রাগীব আলীর সাথে আপোষ করে ফেলেন বলে জানা যায়। সাধারণ আন্দোলনকারীরা এর কিছুই জানতে পারেন নি। তখনকার সিলেটের পুলিশের এসপি ও এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। নেতৃত্ব দানকারী নেতারাও সেদিন চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। একমাত্র জাকির আহমদ ও তাপস ভট্টাচার্য নীতিতে অটল ছিলেন বলে দুইজনই ভয়ানক পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সে সময় অনেক স্থানীয় পত্রিকা নাকি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে সংবাদ পর্যন্ত প্রকাশ করত না। আন্দোলন সংগ্রামের কারণে নির্মাণ কাজ অনেকদিন বন্ধ থাকে কিন্তু এরশাদ আরেক কাঠি এগিয়ে সম্পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। পুলিস আর বিডিআরের সহযোগিতায় নির্মিত হয় মধুবন মার্কেট।
যুগভেরী পত্রিকার সাংবাদিক বশির আহমদ একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজের খরচে রাগীব আলীর দুর্নীতির সংবাদ চটি বই আকারে নিজের খরচে প্রিন্ট করে হ্যান্ড বিলি করতেন। এক পর্যায়ে পাগলের মতো হয়ে জীবন থেকে হারিয়ে যান বশির উদ্দিন।
সিলেটে প্রচলিত আছে, সেই সময়ের তরুণ ছাত্র রাজনীতিবিদ যারা ছিলেন তাঁদের কাছে শোনা, রাতের আঁধারে রাগীব আলীর কাছে নানা রকম সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেকেই ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। আর রাগীব আলী গড়ে তুলেছিলেন তার সাম্রাজ্য।
শুধু মধুবন মার্কেটই নয়, রাগীব আলী একের পর এক তার জালিয়াতির সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেছেন পুরো সিলেট জুড়ে। বাদ যায়নি ঢাকার গুলশানের মতো জায়গাও। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে শুরু করে রাতারাতি দানবীরে পরিণত হয়ে যান রাগীব আলী। কোন সরকারই তাঁর টিকিটি ও ছুঁতে পারেনি।
৭১-এর মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সাথে তার সখ্যতার প্রমাণ এখনো অনলাইনে ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। তার মালিকানাধীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ও সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির জঙ্গি সম্পৃক্ততা এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহ সারা দেশের মানুষই জানেন।
রাগীব আলীর সর্ব বৃহৎ জালিয়াতি তারাপুর চা বাগান। প্রায় ৮০০ কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি জালিয়াতি করে সেখানে মেডিকেল কলেজ সহ নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন তিনি। তখনো সিলেটের অনেক নেতাকে তারাপুর এলাকায় বাসার জায়গা উপঢৌকন হিসাবে দিয়েছেন।
মামলার দীর্ঘসূত্রিতা পেরিয়ে আদালত যখন তাঁর বিজ্ঞ রায় প্রদান করেছে। রাগীব আলীর অবৈধ সাম্রাজ্য সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে, সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। অপরাধী যতোই শক্তিশালী হউক না কেন আইনের কাছে সবাই সমান। যা বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরী।
কিন্তু সিলেটে আমরা দেখলাম ভিন্ন চিত্র। খোদ সরকার দলীয় সিনিয়র নেতারা রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ রক্ষায় অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন মানবিক কারণে যেকোনো উপায়ে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ রক্ষার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। এসময় নেতৃবৃন্দ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ও প্রায় ১৫ শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ও সিলেটের মানুষের চিকিৎসাসেবার দিকটি চিন্তা করে মানবিক ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন মন্ত্রীর কাছে। এসময় মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং সিলেটবাসীর দাবি রক্ষায় তিনি পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।
মজার বিষয়টি সেখানেই। যদি ও আওয়ামী লীগ নেতারা মাননীয় মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন কিন্তু এই আন্দোলনের সাথে বিএনপি জামায়াত ও জড়িত। স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম দেখলেই সেটা পরিষ্কার বুঝা যায় ‘‘সিলেটে একই প্লাটফর্মে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, অর্থায়ন জামায়াতের!’’
আর সেটাই বাস্তবতা। আমাদের মানবতা এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে খুনি ধর্ষক, রাজাকারের জন্য ও আমাদের মানবতা উথলে উঠে, জঙ্গিরা যখন ২২ জন মানুষকে গলা কেটে হত্যা করে তাদের সহযোগী হাসনাত, তাহমিদের জন্য অনলাইনে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তাহমিদের মুক্তির জন্য ৬৮ হাজার মানুষ মানবতা দেখায়। সিলেটে রাগীব আলীর শুধু একটা রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল নয় কয়েকটা মেডিকেল কলেজ করার মতো আর্থিক অবস্থা ও জায়গা আছে। তারাপুর এর জালিয়াতি করে গড়ে তোলা অবৈধ সাম্রাজ্য মানবিক কারণ দেখিয়ে টিকিয়ে রাখা মানে আইনের শাসনের পথকে বাঁধাগ্রস্ত করা। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামির আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধের দাবী জানানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন সরকার যদি সেই পদক্ষেপ নেয় আওয়ামী লীগের নেতারা যে তখন ও হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষার মানবিক কারণ দেখিয়ে রক্ষার আন্দোলনে নামবেন না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে?
আর যারা ৯০ দশকের স্বপ্ন দেখেছেন সেই সময় যে সবাই লাভবান হয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। হাতে গোনা গুটি কয়েক নেতাই আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তারাপুর রক্ষায়ও একই কাহিনী ঘটবে।
আইনের শাসন নিশ্চিত করতে মৃত্যুদণ্ডের মতো অমানবিক শাস্তি আমরা মেনে নিয়েছি। মানবতার বুলি আউড়ে যদি রাঘব বোয়ালদের রক্ষায় রাজপথে নামেন তখন প্রশ্ন থেকে যায়।
যখন জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও জামায়াত পৃষ্ঠপোষকতার কারণে রাগীব আলীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের দাবী করে রাগিব আলীর বিচার দাবী করার কথা ছিল সেখানে সবাই একজোট হয়ে তার সহায় সম্পত্তি রক্ষায় এক জোট হয়েছেন।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শ্রী তাপস ভট্টাচার্য এবং জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির আহমেদ এখনো তাঁদের শরীরে সেই ক্ষত নিয়ে ফিরছেন। একরকমের পঙ্গুই বলা চলে সেদিন যারা রাগীব আলীর সম্পত্তি রক্ষায় রাজপথে নেমেছিলেন তাঁদের কি একবারও জাকির আহমেদ, তাপস ভট্টাচার্য কিংবা বশির উদ্দীনের মুখ মনে পড়েছিল?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য