আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

পিতা, তুমি বরং মরে গিয়ে বেঁচে গেছো!

আজমিনা আফরিন তোড়া  

চলে গেল ১৫ আগস্ট, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। স্বাভাবিক মৃত্যু জোটেনি তাঁর কপালে। হত্যা করা হয়েছে এই মহান নায়ককে। ১৫ আগস্ট সেই হত্যা দিবস। একটি স্বপ্নের হত্যা দিবস।

১৫ আগস্ট শুধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়নি।হত্যা করা হয়েছে একটি স্বপ্নের,একটি জাতির পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হবার স্বপ্নের!

কি প্রবল মমতা নিয়েই না তিনি বাঙালি জাতির জন্য জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত উৎসর্গ করলেন! প্রবল আবেগ কাজ না করলে কি কোন দেশের বা জাতির সরকার প্রধানের নিজ বাস ভবনের দরজা সকল স্তরের মানুষের জন্য খোলা থাকতে পারে? কি অগাধ বিশ্বাসই না ছিল তার নিজের দেশের মানুষের গুলোর প্রতি! আমরা তার যথার্থ মর্যাদাই দিয়েছি? হত্যা করেছি তাঁকে সহ তার দেখা প্রতিটা স্বপ্নের।

তাঁর অবর্তমানে যেখানে তার স্বপ্নগুলো বুকে ধারণ করার কথা ছিল প্রতিটি বাঙালির, সেখানে আমরা কেবল দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছি। আমরা ছাত্রলীগ করি, আওয়ামী লীগ করি। বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন স্থাপনার এই মহান নেতার নামে নামকরণ করি। অথচ শতকরা ৫০ জন নেতা গোছের মানুষ বলতে পারবে না কে ছিল সেইদিনের হত্যা ষড়যন্ত্রকারী। হলফ করে বলতে পারি শতকরা ৮০ জন ছাত্রলীগ (মতান্তরে সমগ্র আওয়ামী লীগ) কর্মীর কখনো সময় সুযোগ হয়নি তার "অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি" পড়ে দেখার।
 
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একটা উপলব্ধি প্রায়ই হয়। আমাদের দেশটা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার সময় স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলার। যেই স্বপ্নের হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে আজকের বাংলাদেশ। যেখানে ধর্ম নয়, ভাষাই হবে প্রধান। কি অসম্ভব বিচক্ষণতা আর দূরদৃষ্টি দিয়েই না তিনি আজকের পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছিলেন! আজ ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্ম বিশ্বাস নির্বিশেষে যদি দেশ এগিয়ে যেত, এ দিন অন্তত দেখতে হত না।

১৫ আগস্টে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। বর্তমান সরকারের নির্দেশে সারা দেশে সরকারী অফিসগুলোতে মাইক বাজিয়ে চলছিল যুদ্ধ পূর্ববর্তী শেখ মুজিবের সেই সব বর্ণিল দিনের জ্বালাময়ী ভাষণের টেপ রেকর্ড। কয়েকটা লাইন কানে পড়তেই অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম।  "আজ বড় দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আজ বাংলার মাটিতে ঝরেছে সাধারণ মানুষের রক্ত......" হায় শেখ মুজিব, তুমি মারা গেলে আজ চার দশকের উপরে হয়ে গেল। আজও বাংলার মাটিতে সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরে। রক্ত ঝরে মেধাবী বুদ্ধিজীবীর। বিচার কার্য প্রলম্বিত হয় যুগের পর যুগ।

সময় পেরিয়েছে।সময়ের সাথে সাথে মাটি চাপা পড়েছে তোমার স্বপ্নের! আজ তোমার নিজের তৈরি স্বপ্নের ছাত্রলীগ শত ভাগে বিভক্ত। নিজেদের রক্ত পিপাসু অক্লান্ত সেই বাহিনী করে শিক্ষককে লাঞ্ছিত। কে জানে, হয়ত তনু হত্যার মত জঘন্য কোনো কাজেও আছে ক্ষমতাধর ছাত্রলীগের কোন রাঘব-বোয়াল। কে জানে, হয়ত এই লেখার জন্য কাল সকালে আমাকে হিসেব গুণতে হবে!

আজও আমাদের শিক্ষা দেয়া হয় হিন্দু বাড়ির খাবার না খেতে। চাইলেই আমরা মুসলমানরা ভেঙে দিতে পারি মন্দির অথবা গির্জা। আর টিভি চ্যানেলে দেখি তোমার স্বপ্নের ভাষার প্রচণ্ড অপমান।

আমরা শেকড় ভুলে উৎকৃষ্ট  জারজ সন্তানের  মতই  আয়ত্ত করছি পাশ্চাত্য ভাষা সংস্কৃতির আভিজাত্যকে।

আজ তোমাকে বড্ড প্রয়োজন ছিল। তোমার জাতি,তোমার স্বপ্ন আর গর্বের দেশ আর দেশের মানুষ গুলোর বড়ই প্রয়োজন ছিল তোমাকে।

হে পিতা, কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। তুমি কি এই স্বপ্নই দেখেছিলে? বরং ভালোই হয়েছে; তুমি মরেই বেঁচে গেছ!

আজমিনা আফরিন তোড়া, সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ