আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ধর্ম-ধর্মবিশ্বাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

রণেশ মৈত্র  

এই নিবন্ধের শিরোনামটি দেখলে মনে হবে লেখক (এক্ষেত্রে আমি) ধর্ম ও ধর্ম-বিশ্বাস-প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান গরিমার দাবিদার। তাই অত্যন্ত বিনীতভাবে শুরুতেই বলে রাখি, না আমি ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ে আদৌ কোন পণ্ডিত ব্যক্তি নই-ধর্ম গ্রন্থাদি পড়ারও কোন সময় সুযোগ আমি পেয়ে উঠিনি। কারণ দিবারাত্র আমাদের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দেশ এবং তার বিষময় ক্লেশ থেকে মানুষকে মুক্ত করার সংগ্রাম আর সেই সংগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় যে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাকেই জীবনের সর্ব প্রথম ও প্রধান করণীয় ভেবে সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি; পুরো যৌবনকালটা পাকিস্তানী জেলখানায় কাটিয়েছি। ফলে বাস করার জন্য নিজস্ব একটি বাড়িও নির্মাণ করার সুযোগ-সামর্থ্য আমার জীবনে ঘটে ওঠে নি। আর এই কাজের চাইতে বড় বা মহৎ কোন কাজ আছে বলেও কদাপি মনে হয় নি।

এভাবেই চলছে আমার শৈশবের ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮) থেকে আজতক যাবতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য গণ-আন্দোলন-সে পর্যন্ত (সেই ৪৮ সাল থেকে) আক্ষরিক অর্থেই বিন্দুমাত্র অবসর পাই নি। কোরলাম মুক্তিযুদ্ধ-যেটি ছিল বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন অর্থাৎ একটি অসাধারণ জাতীয় বিজয় সূচিত হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ বাঙালী জাতির জীবনে। আর তারপরে এক ধরণের মোহাচ্ছন্ন ও তন্দ্রাচ্ছন্ন যেন হয়েছিলাম এই ভেবে যে বাঙালিত্ব গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শোষণ মুক্ত দেশ গঠন আর ঠেকায় কে?

১৯৭২ এর ৪ নভেম্বর তারিখে আমাদের প্রথম আইনসভায় চার মূলনীতি সম্পন্ন সংবিধান পাশের পর ঐ ধারণাটি আরও যে মনে বদ্ধমূল হয়েছিল। ভেবেছিলাম এখন বাঙালি জাতির শনৈ শনৈ অগ্রগতি ঘটবে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা দিনে দিনে দৃঢ়মূল ও সম্প্রসারিত হবে। এমন একটা আত্মতৃপ্তিতে ডুবেছিলাম অকুণ্ঠচিত্তে আজ তা স্বীকার করে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত বোধ করছি না।

কিন্তু আজ প্রায় ৮৪ বছর বয়সে পৌঁছে হাল জমানার বাংলাদেশের দিকে তাকালে স্পষ্টই দেখতে পাই, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি ঐ আত্মতুষ্টি জনিত নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয় ও নির্লিপ্ত থাকার কারণে নানা অপশক্তি (যারা অতীত থেকো আজতক আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাহাত্তরের সংবিধানে বিধৃত মূলনীতি ও আদর্শের বিরোধী) নানা নামে অভিভূত হয়ে ফুলে ফলে বিকশিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল জাতীয় অর্জনগুলিকে ছিনতাই করে নিয়েছে নানাভাবে বাঙালি জাতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে বিভ্রান্তির কবলে নিপতিত করে।

বিভ্রান্তি সৃষ্টির সর্বাপেক্ষা বড় অস্ত্রটি হলো ধর্ম। ধর্মের নামে তারা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াচ্ছে কাফের, মুশফিক, মুরতাদ ও মুনাফিক বিধর্মীদেরকে হত্যা করলেই বেহেস্তে যাওয়া যাবে সরাসরি। এটাই জান্নাতবাসী হওয়ার সবচেয়ে শর্টকাট পথ। অস্ত্রটি কাজেও লাগছে বেশ। এই অমোঘ অন্ত্র হাতে নিয়ে তারা দিব্যি হত্যালীলা চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি বছর যাবত বাংলাদেশসহ পৃথিবীর আরও বহু দেশে। গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠছে না, গণ-উদ্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে না তাদের বা ঐ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণে।

বাংলাদেশে তা সীমিত থাকছে মানববন্ধনের মধ্যেই প্রধানত:। স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে কোথাও বিশাল বিশাল প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ, গণমিছিল প্রভৃতি আয়োজনের কথা কি আমাদের দেশের পোড়-খাওয়া রাজনৈতিক দলসমূহ ও তার নেতা-নেত্রীরা ভুলেই গেলেন? অথবা ধর্মের নাম ব্যবহার করে যেহেতু ঐ হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, আহত করা, মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করা, অপহরণ করা, জমিজিরাত জবরদখল করা-প্রভৃতি ঐ অপশক্তিগুলি চালিয়ে যাচ্ছে-সেই হেতু তার বিরুদ্ধে জোরদার ভূমিকা নিলে ধার্মিকেরা দলগুলির কাছ থেকে দূরে চলে যাবেন তাঁরা অবশেষে “ধর্ম বিদ্রোহী” বিবেচিত হবেন-ফলে আর কিছু যদি নাও হয় , অন্তত: পক্ষে নির্বাচনে ভোট কমে যাবে এমন একটা আশঙ্কায় তাঁরা কি শঙ্কিত বোধ করছেন? বুঝেও কি তাঁরা অবুঝ সেজে থাকছেন? এ এক অদ্ভুত , অনাকাঙ্ক্ষিত ও চরমভাবে অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে।

তা হলে ধর্ম কি সত্যই মানুষ হত্যার শিক্ষা দেয়? হত্যার মাধ্যমেই কি সত্যি সত্যি বেহেশতে বা স্বর্গে যাওয়া যায়? যে মানুষগুলিকে তারা এ যাবত হত্যা করেছে এখনও করে চলেছে বা আগামীতেও করবে বলে হুমকি দিয়ে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদেরকে ধার্মিক বলা বা ভাবা কি আদৌ সঠিক?

ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি কি শান্ত, নিরাপদ একটা পরিবেশই না তখন ছিল। হিন্দু বাড়িতে মন্দিরে শঙ্খ বাজছে, ধূপ-দীপ জ্বলছে, উলুধ্বনি চলছে, মসজিদে চলছে আজান, নামায ও নানাবিধ ইসলামী বয়ান, গির্জায় প্রার্থনা কিন্তু কেউ কাউকে বিধর্মী, নাস্তিক, মুরতাদ প্রভৃতি আখ্যায় আখ্যায়িত করছে না। সকলের বিশ্বাস একটা স্বার্থ আছে, বেহেশত আছে, নরক বা দোজখও আছে। সেখানে কে যাবেন কে যেতে পারবেন না সে সম্পর্কে তখন স্পষ্ট করেই শুনতাম-যার যার কর্মফল অনুযায়ী তার গন্তব্যস্থল সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করবেন। কেমন কর্মফল?

তখন শুনতাম, মানুষের স্বার্থে মানুষের কল্যাণে কাজ কর, সৎ পথে থাক, সুশিক্ষা গ্রহণ করো, শিক্ষার আলো চতুর্দিকে ছড়িয়ে দাও, অনাহার-ক্লিষ্ট মানুষের আহারের ব্যবস্থা কর যার যার ব্যক্তিগত বিশ্বাস অনুযায়ী নিজ নিজ ধর্ম পালন করো, পরের ধর্মকে শ্রদ্ধা কর, কাউকে ছোট বা বড় বলে মনে না করে সকলকে সমান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত কর, নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। কারণ তারা মাতৃজাতি ইত্যাদি। তবে অর্জিত হবে আকাঙ্ক্ষিত পুণ্য।

এর বাস্তব সামাজিক প্রতিফলন দেখতাম, দূর্গোৎসবের সময় এলে তাতে শুধু হিন্দুরাই নন, মুসলিম-খৃষ্টানরাও তাতে চাঁদা দিতেন গভীর আগ্রহ সহকারে-তাঁরা প্রতিমাদর্শনে আসতেন নারী-পুরুষ-লিঙ্গ নির্বিশেষে বিজয়া প্রীতি সম্মিলনীতে হিন্দু ঘরের শিল্পীরাই শুধু নন-মুসলিম-খৃষ্টান ঘরের মেয়ে-পুরুষ শিল্পরাও নাচে গানে দিব্যি অংশ নিতেন সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন দর্শকের সারিতেও। তখন তো কারও মুখে শুনিনি অমুকে মাইনরিটি বা মালাওন; কাউকে নাস্তিক বলতেও শুনিনি। হিন্দু ছেলেমেয়েরা দিব্যি উভয় ঈদে মুসলিম বন্ধুদের বাড়ীতে বাড়িতে গিয়ে খেতো- ঈদ প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজনে তাদের ঘরের ছেলেমেয়ে শিল্পীরাও নাচগান পরিবেশন করতো-দর্শক হিসেবেও দলে দলে সকল বয়সের সকল ধর্মের মানুষেরাই দিব্যি অংশ নিতেন। উৎসবগুলি আক্ষরিক অর্থেই জাতীয় উৎসব হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় সকলে গভীর শ্রদ্ধায় একে অপরের আয়োজনে শরীক হতো অম্লান চিত্তে। তখন তো কোন ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে র‌্যাব, পুলিশ বা বি.জি.বি’র প্রহরার করতে হয় নি। যার যার ধর্ম পালন, উৎসব-আয়োজন সবই ছিল স্বতঃ:স্ফূর্ত ও নিরাপদ এবং পুরো দস্তুর শঙ্কা মুক্ত।

আবার তখন এত বেশী মক্তব-মাদ্রাসা বা সরকারী বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল না। নীতি শিক্ষার মূল জায়গা স্কুল-কলেজ এবং বহাল ছিল পাঠ্য বইগুলি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত এইসব দিকপাল কবি-সাহিত্যিকের লেখনীতে যে মানবিক নীতিমালা লিপিবদ্ধ ছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সেগুলিকেই আদর্শ হিসেবে সবাই ধরে নিত। জীবনে চলার পথে সেগুলিই ছিল সকলের অমূল্য পাথেয়। আজ এত পথ পেরিয়ে এস আমরা কি ভুলেই গেলাম নজরুলের সেই বাণী:

“মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোন”

অথবা

“কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক
কে বলে তা বহুদূর,
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক
মানুষেতেই সুরাসুর।”

আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানে লেখা হয়, “মানুষই সকল ক্ষমতার উৎস” অনেকের বিবেচনায় “স্বল্প-শিক্ষিত” কবি নজরুল তাঁর কবিতার পঙক্তিতে সেই-কত বছর আগেই তো মানুষের, মানবতার ও গণতন্ত্রের গুণ-কীর্তন করে গেছেন-বাংলাদেশের সংবিধানের মূল দিক-দর্শনও দিয়ে গেছেন-আজ তা ভেবে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। নজরুল তাঁর বিখ্যাত-“বিদ্রোহী” কবিতায় লিখেছিলেন,

“আমি বিদ্রোহী ভৃত্য
ভগবান বুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন”

এই কবিতাংশ পড়ে তৎকালীন হিন্দু নেতৃত্বাধীন বাঙালি সমাজ কিন্তু ক্ষুব্ধ হন নি-তার ফলে “ভগবানের” বুকে লাথি মারা হল- “মার নজরুলকে” অসীম এবং অবিশ্বাস্য উদারচিত্তের অধিকারী তৎকালীন বাঙালি সমাজ বরং আরও বেশী আপন করে নিয়েছেন নজরুলকে। তিনি কোন ধর্মের মানুষ কেন অমন কথা লিখলেন এমন প্রশ্নও কেউ তুলেন নি।

কিন্তু একটি প্রশ্ন তো এখানে তোলাই যায়, যদি ঐ কবিতায় হিন্দুদের god-কে উল্লেখ না করে মুসলিমদের god-কে নজরুল উল্লেখ করতেন- তাহলে তার প্রতিক্রিয়া কি হতো মুসলিম সমাজের কাঠমোল্লাদের মধ্যে? তাঁরা কি নজরুলের ঐ কবিতাকে তখন “কাব্যিক প্রকাশ” বলে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারতেন-না কি “ইসলামের অবমাননা ধূয়া তুলে কোন মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে দলে দলে সমবেত হয়ে বাঙালির জাতীয় কবিকে প্রকাশ্যে হত্যায় provoke করতেন? বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার দাবি রাখে।

“ভগবান বুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন” এই শব্দ নিশ্চয় উল্লেখ করে "বিদ্রোহী" কবিতা লেখায় তিনি নিন্দিত হন নি-পরিত্যক্ত হন নি সমালোচিতও হন নি। হিন্দুধর্ম ও তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বরং উদারতায় চরম প্রকাশে তা মহিমান্বিতই হয়েছে।

বাংলা কাব্য সাহিত্যের এই প্রকাশের সাথে আমরা যদি কবি দাউদ হায়দার এবং পরবর্তীতে লেখক তসলিমা নাসরিনের জীবনের দুর্যোগের কথা ভাবি তখন কি নিজেদেরকে “অপরাধী” বলে মনে হয় আদৌ? বা কি তাঁদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপকে “যথার্থ” বলে মেনে নিয়ে তার প্রশংসায় মেতে উঠবো?

সহনশীলতা মানবজীবনের সর্বত্র প্রয়োজন। উদারনৈতিক চিন্তাধারা ব্যতীত আমরা যে এগুতে পারবো না-কেউই পারে না-তা বুঝতে বিলম্ব হলে জাতির সমূহ ক্ষতিই ডেকে আনা হবে মাত্র “কল্যাণ রাষ্ট্রের” বা “উন্নত রাষ্ট্রের ব্যাপারটি কল্পনাতেই পর্যবসিত হবে।

একটি কথা বলা এখানে কতটা প্রাসঙ্গিক হবে জানি না-তবে সকলে জানবার বা ভাববার জন্যে বিষয়টা উপস্থাপন করছি। আজ আমরা যে কেউ নিজেকে হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ খৃষ্টান, কেউ বৌদ্ধ বলে মনে করি-তার ভিত্তিটা কি? কেউ কি ধর্ম শিক্ষা নিয়ে ধর্মে দীক্ষিত হই? বা কি আমরা জন্মসূত্রে বা পৈত্রিক সূত্রে কোন কিছুই শিক্ষা না নিয়ে, না জেনে না বুঝে automatic হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ খৃষ্টান বলে পরিচিত হই? কেউ তো আমাদের জিজ্ঞাসাও করেন নি আমরা কে কোন ধর্মে দীক্ষিত হতে চাই, কোন ধর্মকে গ্রহণ করতে চাই এবং তার মূল কথা শুলি, মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কি-এগুলি কেউ তো আমাদের কাউকে জিজ্ঞাসাও করেন নি। যার যার বাবা-বা জীবিত অভিভাবক যে ধর্ম বিশ্বাসী বলে আমাদেরকে তালিকাভুক্ত করেছেন-কোন কিছু না জেনেই দিব্যি সেই ধর্ম বিশ্বাসী বলে চিহ্নিত হয়েছি।

কিন্তু একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে বা ডাক্তার বা কৃষিবিদ বা গ্রাজুয়েট বা পোষ্ট গ্রাজুয়েট বা এমন কি ম্যাট্টিকুলেট হতেও যে কোন ছেলে বা মেয়েকে রীতিমত গাদা গাদা বই পড়তে হয়-নিয়মিত বছরের পর বছর ধরে স্কুলে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাসে শিক্ষকদের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অবশেষে ন্যুনতম দশ দশটি বছর শিক্ষা গ্রহণের পর বোর্ডেও অধীনে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। উত্তীর্ণ হলে তবে ম্যাট্টিকুলেট হওয়া গেল-নতুবা তা হওয়া গেল না। আবার এক বছর ধরে পড়াশুনা করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলে তবেই ম্যাট্টিকুলেট হওয়া যাবে নতুবা নয়।

দুনিয়ার কোন কিছুই হওয়া যায় না সে বিজয়ে লেখা-পড়া না করলে বা যোগ্যতার প্রমাণ না দিতে পারলে শুধুমাত্র ধর্ম ছাড়া। অথচ প্রধান উপাদান। তা হলে বক্তব্য কি এই অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত বা মূর্খ হওয়াতে কিছু আসে যায় না। ধর্ম বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বাস করলে আছে না করলে নেই। যুক্তি? না, যুক্তির স্থান নেই ধর্মের ক্ষেত্রে। আর এই যুক্তিহীনতার, শিক্ষাহীনতার ও জ্ঞানহীনতার কবলেই ধর্ম। তাই ধর্ম খুঁজে বেড়ায় কে হিন্দু কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ কে খৃষ্টান। ধর্ম কি তবে মানুষ খোঁজে না?
ধর্ম তবে কার জন্যে? আবারও বিদ্রোহী কবি নজরুলের শরণাপন্ন হওয়া যাক। তিনি বলেছেন,

“হিন্দু না ওরা মুসলিম
এই জিজ্ঞাসে কোন জন
বল ডুবিছে মানুষ
মাতৃমুক্তিপণ।”

মানি কি আসলেই আমরা বাঙালির সম্পদ বিদ্রোহী কবি নজরুলকে? তাঁর কবিতার মর্মবাণীকে?

আজ অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, জ্ঞানহীন, মূর্খ, মনুষ্যত্বহীনদের কবলে পড়েছে ধর্ম। তাই ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে বলা হচ্ছে কাফের, মুশফিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিধর্মী, নাস্তিকদের হত্যা করা হচ্ছে। আর হত্যা করা মাত্র বেহেশত। যেন বেহেশতটা খুনিদের জন্য।

ফেসবুকে দেখলাম একটি নারী সামরিক বাহিনীর অস্ত্র হাতে ছবি। ঐ নারীরা সিরিয়ায় আই এস জঙ্গিদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়েছিলেন জিহাদে। তাই তারা আই. এস এ যোগ দিয়েছিলেন বেহেশতে যাওয়ার লোভে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তারা সমানে ধর্ষিত হতে থাকলেন আই. এস জেহাদিদের দ্বারা। তারা বলতো যৌনলিপ্সা পূরণ করেই তোমাদের জন্য বেহেশতের দরজা খোলার ব্যবস্থা করছি। অবশেষে মহিলাদের চোখ খুলল। তারা গোপনে পালিয়ে এসে একটি সামরিক বাহিনী তৈরি করে ঐ ধর্ষক আই এস জঙ্গিদের খতম করার শপথ নিয়েছেন।

আসলে অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মূর্খরা (যতই ডিগ্রী থাকুক না কেন) ধর্মকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। যেখানেই ধ্বংসলীলা, যেখানেই হত্যাযজ্ঞ সেখানেই ধর্ষণ-সেখানেই দেখা যায় আই.এস ইসলামের নামে। মানুষ কখনই এই মিথ্যার বেসাতি বেশীদিন সহ্য করতে পারবেন না করবেনও না।

প্রতিরোধ এবং কার্যকর প্রতিরোধ মানুষই গড়ে তুলবেন কারণ মানুষই সর্বশক্তিমান সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ