আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

এই যুদ্ধের শেষ কোথায়

জুয়েল রাজ  

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে  অভিযুক্তদের নেতৃস্থানীয়  অনেকের বিচার শেষ হয়ে দণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে । নিঃসন্দেহে বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের গর্ব ও অহংকারের বিষয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই বিচার সম্পন্ন করার বিষয়টি মূল্যায়িত হবে।
রাজাকার আল বদর আল শামস নেতা ও সদস্যদের যাদের মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচার হচ্ছে এর শেষ কোথায়? এই বিষয়টা  দীর্ঘদিন ধরেই ভাবাচ্ছে। শুধুমাত্র কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়েই কি এর সমাধান হয়ে যাবে?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে চলমান বিতর্কের স্থায়ী সমাধানের সময় এসেছে। সেই সমাধান অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকারকেই করতে হবে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধু নয় পুরো ইতিহাসকেই মুছে দিতে চেয়েছে পরাজিত শক্তির দোসররা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধ্বের বিরোধীরা পলাতক জীবন থেকে বেরিয়ে এসে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়  নিজেদের ইসলামী নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।  ধর্মের নাম করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার করে একটা প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের পক্ষে টেনে নিয়েছে।
এখন শুধু হাতেগুনা কয়েকজনকে মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি দিয়ে কিংবা শিবিরের একটা অংশকে জেলে পুরে কি এদের চক্র ভাঙা সম্ভব? ১৯৭৫ সালের পর তাদের উত্তরসূরীরা যেভাবে জেল থেকে বের হয়ে এসে স্বরুপে আবির্ভাব হয়েছিল। এদের পরবর্তী প্রজন্ম যে সেই একই কাজ করবেনা তার নিশ্চিয়তা কি?

এতো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটা দেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেদেশে  এখনো  হাজার হাজার মুক্তিযুদ্ধা এখনো জীবিত। আমি কোনভাবেই এর হিসাব মেলাতে পারি না।

মনবোঝ দেয়ার মতো একটা যুক্তি দাঁড় করি,  ১৯৭১ সালের পর বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত বিজয়ী মুক্তিযুদ্ধারা ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন তাঁদের দায়িত্ব শেষ। নিজেদের জীবন যুদ্ধ্বে জড়িয়ে গেছেন সবাই। ১৯৭৫ সালের পর সেই শক্তিটা ও অনেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন হয়তো। কিন্তু পরাজিত শক্তিরা এক মূহুর্তের জন্যও বসে থাকেনি। অতীতের ইতিহাস আমাদের সুখকর নয়। বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদগণ  সবাই জামায়াত এর টাকার সাথে আপোষ করেছেন। সেটা হোক ইসলামী ব্যাংক কিংবা নয়া দিগন্ত, কিংবা দিগন্ত টিভি। ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে চুপ থেকেছেন।
 
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪১ বছরে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে যারা বিতর্কিত করার চেষ্ঠা করেছে এবং একটা অংশকে সেই মিথ্যা ইতিহাসের প্রতি অনুগত করতে পেরেছে। যুদ্ধপরাধী  রাজাকারদের শহীদ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে এখনি। আগামী ৪০ বছর পরে ও তারা একই অবস্থার জন্ম দিবে। ইতিহাসের পাতায় এরা শহীদ হয়ে যাবে। এদের কবর ঘিরে হয়তো লালসালু উপন্যাসের মতো মাজার ঘরে তুলবে এদের উত্তরসূরিরা।
 
যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এই দুইটি বিষয়ে আইনমন্ত্রী তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন, পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের কিছু দাবী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছে তার মধ্যে, রাজাকারের কবরে রাজাকার লিখতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা কবরস্থান নির্ধারণ করে  দেয়া হোক। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক, জামায়াত ইসলামের রাজনীতি নিষিদ্ধ্ব করা হোক। এই দাবীগুলো যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে ও কি সমাধান হয়ে যাবে ? আমার মনে হয় না।  সেটা হলে  স্বাধীনতার বিপক্ষে এতো শক্তিশালী অবস্থান বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল না। এই যুদ্ধ্বের একটা স্থায়ী সমাধান জরুরী।

জঙ্গিদের লাশ নিতে যখন তাদের পিতামাতা আত্মীয় স্বজন ও অস্বীকার করে তখন  কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান, সাকা থেকে  কাসেম আলী পর্যন্ত যাদের মৃত্যদন্ড দেয়া হয়েছে তাদের জানাজায় কিংবা দেশের বাইরে গায়বানা জানাজায় যারা শরীক হয় , যারা বিশ্বাস করে এরা অপরাধী না, শুধুমাত্র শেখ হাসিনা রাজনৈতিকি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে তাদের মতাদর্শ থেকে কি সরিয়ে আনা সম্ভব।

শুধু মাত্র মুষ্টিমেয় কিছু রাজাকারের  বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হলেই যুদ্ধটা  শেষ নয়। এদের আর্থিক উৎস, সামাজিক যোগাযোগ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা সীমিত করতে হবে। দেশের বাইরে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে লবিং করেছে, বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধ্বে প্রকাশ্যে সভা সমিতিতে বক্তৃতা করেছে  তাদের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব বাতিল করা প্রয়োজন। এদের খুঁজে বের করা খুব কঠিন জিনিস না।

রাজাকারদের ফাঁসি কার্যকরের পর বিভিন্ন দেশে যে সভা সমাবেশ হয়েছে সেখানে তাদের নাম পদবী ছবি এবং বক্তব্য পাওয়া যাবে। ব্রিটেন সহ ইউরোপ ও আমেরিকায় যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে  কার্যক্রম চালাচ্ছে তাঁদের নাগরিকত্ব  বাতিল করা হোক।

যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা কোন ধরণের  রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনে কোন ভাবেই অংশ নিতে পারবেনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারী চাকরীতে কোনভাবেই যেন সুযোগ না পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহীনিতে  ছয় ছয়টা প্রমোশন পেয়েছিল। জামায়াত বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে সেনাপ্রধান হওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত ছিলনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রকাশিত এখনকার বক্তব্য দেখলে বুঝা যায় সেনা প্রধান হলে কি অবস্থা হতো। প্রশাসনের এমন কোন বিভাগ নেই যেখানে জামায়াত তাদের মতাদর্শীদের প্রতিষ্ঠিত করেনি। জঙ্গি আস্থানায় পুলিশের গোপন নথি তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

রাজনৈতিক ভিন্ন মত কিংবা ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের  মৌলিক বিষয়ে, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ্ব, শহীদ সংখ্যা নিয়ে  ভিন্নমত বা বিতর্ক  রাজনৈতিক গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় পরে না।

একাত্তরে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাঁরা যেমন কোন ব্যাক্তি সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশা করেন নি। তাঁদের উত্তরসূরি, যারা শহীদ জননী জাহানারা ঈমামের দেখানো পথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে  তাঁদের যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন ধরনের ব্যাক্তিস্বার্থ নয় মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে ভালবেসেই তাঁদের যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে।

তরুণ প্রজন্ম, এক বিংশ শতাব্দীর উন্নত বিশ্বের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা দুর্নীতি ও  সীমাবদ্ধ্বতার পাশ কাটিয়ে  শেখ হাসিনার সরকার সেটা ইতমধ্যে প্রমাণ করেছে। দশ টাকা কেজি ধরে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে চাল বিতরণ, পৃথিবীর কোথাও এইদামে চাল পাওয়া স্বপ্নের মতো ঘটনা। বড় বড় যেসব প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করছে সেইদিন আর খুব বেশী দূরে নয় মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরকে পিছনে ফেলে ইউরোপের কাছাকাছি চলে আসবে বাংলাদেশ।

পুর্ব প্রজন্ম দিয়ে গেছেন স্বাধীন বাংলাদেশ। বর্তমান প্রজন্ম দিয়ে যাবে রাজাকার বিহীন বাংলাদেশ। আগামী  প্রজন্ম লাল সবুজের পতাকা নিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিবে বাংলাদেশকে। অনুর্ধ ১৬ ফুটবলের বালিকারা তার প্রমাণ দিয়েছে।

জুয়েল রাজ, সম্পাদক, ব্রিকলেন; যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ