আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

মুক্তরাষ্ট্র, কারাগাররাষ্ট্র

মাসকাওয়াথ আহসান  

পৃথিবীতে দু'রকমের রাষ্ট্র চোখে পড়ে। সত্যিকার সফল রাষ্ট্র যারা; অর্থাৎ জার্মানি-ক্যানাডার মতো রাষ্ট্র; এরা কল্যাণরাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রগুলো জনগণের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করে; অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষার ব্যবস্থা করে; পাশাপাশি জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। অর্থাৎ জার্মানি-ক্যানাডা রাষ্ট্র ও সরকার জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে।

সেখানকার সরকারগুলো কার্যকরভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করে। জনগণ সরকারের যে কোন কাজের সমালোচনা করার অধিকার ভোগ করে; সরকারের যে কোন দপ্তরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে; সরকারগুলোও সে প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য থাকে। এই রাষ্ট্রগুলোকে মুক্ত রাষ্ট্র বলা যায়। কারণ জনগণের জীবনে স্বাধীনতা শব্দটি অর্থবহ হয়।

অন্যদিকে পুলিশি রাষ্ট্র যারা; যেমন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্র; এরা অকল্যাণরাষ্ট্র। এরা জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও সেবা তো করেই না; তার-ওপরে গোয়েন্দা সংস্থা, এলিট ফোর্স, পুলিশ এসব নিরাপত্তা রক্ষী সংস্থা ব্যবহার করে জনগণকে ভীতির মধ্যে রাখে। অর্থাৎ "ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিল দেবার গোসাই" টাইপের আচরণ এসব রাষ্ট্রের শাসক গোষ্ঠীর।

এরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পেশীশক্তি ব্যবহার করে মুক্ত মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে। কর্তৃত্বপরায়ণ এই রাষ্ট্রগুলো আজো সেই মান্ধাতার আমলের শাসকের মতো আচরণ করে। এই রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্রীয় পেশীশক্তি বাহিনীগুলো জবাবদিহিতার বাইরে থাকে। এরকম রাষ্ট্রের জনগণ ক্ষমতা কাঠামোর হাতে জিম্মি জীবন কাটায়। এই রাষ্ট্রগুলোকে কারাগার রাষ্ট্র বলা যায়।

এই কল্যাণকর ও অকল্যাণকর; দুই রকম রাষ্ট্রের মধ্যে কল্যাণকর রাষ্ট্রগুলোতেই রাষ্ট্রের ও সরকার ব্যবস্থার সুফল জনগণ পায়। পুরো বিশ্ব এই রাষ্ট্রগুলোকে সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে শ্রদ্ধা করে।

উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো জার্মানি-ক্যানাডার মত রাষ্ট্রকেই আদর্শ রাষ্ট্রের মডেল হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যারা অকল্যাণকর পুলিশি রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে অনুসরণ করে; তারা ব্যর্থ হয়; অসভ্য রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী গণধিকৃত হয়। অসংখ্য উন্নয়নের পরিসংখ্যান দেখিয়েও এদের পক্ষে নিজেদের সফল প্রমাণ করা সম্ভব হয়না। কারণ রাষ্ট্রের নাগরিকের শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থে পালিত সরকার ও পেশী শক্তি বাহিনীরা যদি নাগরিকদেরকেই জিম্মি করে রাখে; সেরকম পরিস্থিতিতে জনগণের কাছে রাষ্ট্র-রাজনীতি-সরকার-গণতন্ত্র-স্বাধীনতা এসব শব্দগুলো অর্থহীন কতগুলো লিপ-সার্ভিস হিসেবে পরিগণিত হয়।

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাই জনগণের ইচ্ছার স্বাধীনতা বা ফ্রিডম অফ চয়েসকে সুষম উন্নয়ন বা গ্রোথ উইদ ইকুইটির গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কারণ জনগণের ইচ্ছার স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে কেবল ক্ষমতা-কাঠামো ও তার প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রকাশকারী একটি সুবিধাবাদী শ্রেণী উন্নয়নের যাবতীয় সুফল ভোগ করে। ধনী আরো ধনী হয়; দরিদ্র হয় আরো দরিদ্র।

জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অপব্যবহার দমন নিপীড়নের মাধ্যমে যে কোন অন্যমত ও ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দিয়ে ক্ষমতা-বাণিজ্যের দুষ্টচক্র সচল রাখতে চেষ্টা করে এর শাসনদণ্ড।

যুক্তরাষ্ট্র যেমন জনগণকে চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের পরিসংখ্যান দেখায়; কিন্তু এর সমুদয় সম্পদ কুক্ষিগত গুটিকতকের হাতে। অন্যান্যরা সে উন্নয়নের গল্প শোনে কিন্তু নিজের জীবনে এর প্রতিফলন দেখতে পায় না; বরং নিজেকে খুঁজে পায় এক ঘোষিত-অঘোষিত কারাগারে।

তাই বিকাশমান উন্নয়ন প্রত্যাশী রাষ্ট্রগুলোর যুক্তরাষ্ট্র না হয়ে মুক্তরাষ্ট্র হবার চেষ্টা করাই যৌক্তিক।

ইতিহাস ও ঘটমান বর্তমান সাক্ষ্য দেয়, জনগণের জন্য কারাগার রচনাকারী যে কোন শাসন ও কথিত উন্নয়ন মডেল ব্যর্থ হতে বাধ্য।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ