প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আজমিনা আফরিন তোড়া | ১৮ অক্টোবর, ২০১৬
সালটা তখন ২০১২। সবে মাত্র আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তার মাঝে কাটছে আমার প্রতিটি দিন। কোথায় ভর্তি হব, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেব কিছুই বুঝে পারছি না। অনিশ্চয়তা আমাকে কুঁড়ে-কুঁড়ে খাচ্ছে।
ভর্তিযুদ্ধের আশংকায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে বইয়ের উপর “উপুড় হয়ে বসে” যখন কাটছে আমার দিন রাত সেই সময় হঠাত একদিন গভীর রাতে পাশের ঘর থেকে কিছু কথা কানে ভেসে আসে। আমার মধ্যবিত্ত বাবা মা খুব নিভৃতে আলোচনা করছেন যে তারা কিভাবে আমার ভর্তি পরীক্ষার ফরম আর নতুন শহরে যাওয়া আসার খরচ যোগাবেন!
যেখানে প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসের প্রতিটা টাকা থাকে হিসাবের, সেখানে কোত্থেকে আসবে হাজার হাজার টাকা? শুধু পরীক্ষা বাবদ ফি হলে একটা কথা ছিল। কিন্তু নতুন শহরে যাওয়া- আসা, থাকা খাওয়া –কে যোগাবে সেই খরচ? সেদিন আমার মধ্যবিত্ত মা খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আজ বলতে কোন লজ্জা নেই মা সেদিন ব্যাংক লোন করেছিলেন আমার খরচ বহনের জন্য।
খুব ছোট মন নিয়ে, মাথা নিচু করে আমি পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিয়েছিলাম। আমার জন্য আমার পরিবারকে ব্যাংক থেকে লোন করতে হল, ব্যাপারটা মেনে নিতে পারিনি কোনভাবেই।
কিন্তু আজ চিন্তা করি, আমার মা না হয় ব্যাংক লোন করে হোক আর যেভাবেই হোক আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পা রাখার! কিন্তু দেশে তো আমার চেয়ে আরো শত সহস্র গুণে মেধাবী ছাত্র আছে। তারা সবাই কি ধনীর সন্তান? যদি তা না হয়ে থাকে, তবে তাদেরও নিশ্চয়ই আমার মত একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে! হাজার হাজার দরিদ্র আর নিম্নবিত্ত সন্তানও নিশ্চয় একই কারণে সুযোগ হারাচ্ছে! সুযোগ পেলে তাদের মধ্য থেকেও ঠিক বের হয়ে আসত ফজলে হাসান আবেদ অথবা রুবাবাদ্দৌলা!
মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে- শিক্ষা কি আসলে আমার সুযোগ, নাকি অধিকার! যদি অধিকারই হয়ে থাকবে তবে আমি কেন যাব নিজেকে মূল্যায়ন করতে? বিশ্ববিদ্যালয় আমার দ্বারে আসবে আমাকে মূল্যায়ন করতে!
আমাদের জাতীয় শিক্ষক জাফর ইকবাল স্যার সেই কবে থেকে গলা হাঁকাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট কমানোর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি মাত্র ভর্তি মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য। ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট করে রাত জেগে জার্নি করে সারা দেশ ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দেয়ার বদলে নিজ জেলায় বসে একটা মাত্র পরীক্ষা দেয়া। অতঃপর মেধা তালিকার ভিত্তিতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশী। তারা যদি এই নিয়মে দিব্যি ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন নিতে পারবে না?
সবটাই কি তাহলে আন্তরিকতার অভাব? বিজ্ঞজনেরা ভেবে দেখবেন।
এই লেখা মূলত আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) প্রশাসনকে উদ্দেশ করে। যারা একটি মেধাকে যাচাই করার জন্য ১০০০-১২০০ টাকা চার্জ নিচ্ছেন। সারা দেশে কেবল শাবিতেই এত বেশী দাম রাখা হচ্ছে ভর্তি ফরমের। শাবি ছাত্ররা আন্দোলনে উত্তাল। আজ তিন দিন পার হয়ে গেল। আমাদের প্রাণের শিক্ষকদের তবু হৃদয় গলল না। আসলে টাকার গন্ধ বোধ হয় এমনই। জাতির মেরুদণ্ড আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ ভুলেই গেছেন তাদের সাধারণ ছাত্রদের কথা!
শাবির সাধারণ ছাত্রদের কাতারে দাঁড়িয়ে আমি সমস্বরে বলতে চাই, “স্যার, শিক্ষা আমার অধিকার। এটা নিয়ে অন্তত রাজনীতি করবেন না! আমার অধিকার আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে ভর্তি ফরমের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করুন। আমার সুন্দর শিক্ষা নিশিত করুন”।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য