আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মানবিকতা দুষ্প্রাপ্য এক অনুভূতির নাম

সঙ্গীতা ইমাম  

মানবিকতা দুষ্প্রাপ্য এক অনুভূতির নাম। মানুষ শব্দের সাথে সাথে  যে গুণগুলো মানসপটে উদ্ভাসিত হয় সেগুলো ভালোবাসা,স্নেহ,প্রেম,মানবতা,মননশীলতা, সৌন্দর্যবোধ, যুক্তিবাদিতা ইত্যাদি। কিন্তু আজকাল মানুষ বলে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ শব্দ শোনা যায় না। বরং প্রথম আসে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান! আবার এই বিবেচনাও এখন আসে শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানী না ওহাবি! সিলেটি, চাটগাইয়া, ঢাকাইয়া, নোয়াখাইল্যা!

এভাবেই আমরা নিজেদের খন্ডিত করছি প্রতিনিয়ত। খন্ডিত আমরা করছি আমাদের শক্তিকেও। প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে যুথবদ্ধতা যখন এগিয়ে যাবার পূর্বশর্ত তখন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুতে বিভক্ত হচ্ছি আমরা।

শুধু বিভক্তই হচ্ছি না, একে অপরের প্রতি পোষণ করছি নৃশংস বিদ্বেষ। যেখানে মুসলমান শক্তিশালী সেখানে অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর তারা চালাচ্ছে নির্যাতন। আবার যেখানে হিন্দু বা খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে তারা অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর চালাচ্ছে আগ্রাসী অত্যাচার । বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও চলছে সবলের উপর দুর্বলের অত্যাচার। বাংলাদেশে যেমন পাহাড়িদের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস বহুদিনের। আজও যা চলমান। আদিবাসী, পাহাড়ি , সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের ভোগ করা যেন ধর্ম স্বীকৃত।এমন ধারণা পোষণ করে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীরা। পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে যবন নারী যেমন ছিল গণিমতের মাল। আজও মসজিদের ইমাম যে ধর্মের কথা বলে আল্লাহ্ র বাণী প্রচার করে সে প্রতিবেশী হিন্দু যুবক ও তার নব পরিণিতাকে বন্দী করে, ছেলেটির হাত কেটে দেয়। আর তার স্ত্রীকে একটানা ১৫ দিন এক  ঘরে বন্ধ করে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে চলে। অপরাধ ছেলেটি তার বাবার মৃত্যুর পর দাহ করে ভস্ম ঘরে এনে রাখে পরবর্তী শান্তি সত্যায়ণের জন্য। একজনকে নিজের ধর্মচর্চা তো করতেই দেয়া হচ্ছে উপরন্তু তার ওপরে ধর্ম পালনের দোষে আরেক ধর্মের শুঁচিতা রক্ষার নামে মারধর এমনকি বলাৎকার ও করা হচ্ছে। বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাটের এ ঘটনা গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এই নরপিশাচদের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। মানুষের মনস্তাত্বিক পরিবর্তন, সামাজিক সচেতনতা আশু প্রয়োজন। দাড়ি টুপি আমাদের সততা, সামাজিকতা, মানবিকতার পাহাড়াদার হতে পারছে না তা বুঝতে পারছে না কি জনতা? নারী নিজ পরিবার,কর্মস্থল, পথ ঘাট কোথাও নিরাপদ বা স্বচ্ছন্দ নয়। এমনকি একজন নারী আরেকজন নারীকেও নির্যাতন করছেন সরাসরি, অথবা ইন্ধনদাতা হয়ে। প্ররোচিত করছেন আত্মহননেও। তবে কোথায় নিরাপদ সে?

সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন বাবা মা। সেখানেও তারা শিকার হচ্ছে শিক্ষকের লালসার। মাদ্রাসায় ছেলে শিক্ষার্থীরাও লঞ্ছিত হচ্ছে শিক্ষকের বিকৃত কামনার তাড়নায়।

নারী অনিরাপত্তার জন্য নারীর পোশাক চাল চলনকে দায়ী করা হয় বহু যুগ থেকে। একথা বলে বলে নারীকে প্যকেট বন্দী,পকেট বন্দী আর গৃহ বন্দী করে রেখে মানুষ হিসাবে নারীর বিকাশের পথ করা হচ্ছে রুদ্ধ।

বাবার নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বামী, স্বামী থেকে পুত্রের নিয়ন্ত্রণ এভাবে হাত বদল হয়ে চলেছে নারীর জীবন। স্বাধীনতা নামের শব্দটি নারী জীবন থেকে নির্বাসিত।

ধর্মের ভেদাভেদে মহামূল্যবান জীবন বলি  হচ্ছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ধর্মপুত্ররা শক্তি প্রদর্শন করছে। রক্তমাখা সঙ্গিন উঁচিয়ে সদর্পে ফিরে যাচ্ছে বিনা বাধায়। শুধু ধর্মের ভরদ নয় চিন্তার প্রভেদ থাকার কারনেও হত্যাকান্ডের শিকার হতে দেখছি  মুক্ত চিন্তকদের রাস্তায়, বাড়ির সামনে, অফিসে, মেলায় হাজারও জনতার সামনে।

মানুষ তার বিচার বিবেচনা হারাতে হারাতে, আত্মকেন্দ্রিক হতে হতে রোবোটে পরিণত হচ্ছে এবং করছে পরবর্তী প্রজন্মকে। এই রোবোট সন্তানরা বাবা মায়ের অনবধানেই আরো ভয়ঙ্কর যন্ত্রদানব দ্বারা মস্তিষ্ক প্রক্ষালন করিয়ে নৃশংসতম রোবোটে পরিণত হচ্ছে। যাদের দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষের প্রাণ সংহার করে, ধর্মের লেবাসধারী একদল নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সিদ্ধি লাভ করেই যাচ্ছে। মাঝখানে বলি হচ্ছে সেই রোবোট সন্তানরা । কিন্তু আড়ালে থেকে যাচ্ছে সেইসব মাথাগুলো।

এভাবেই ধর্মের টুপি পরিয়ে সাধারণ মানুষকে পুতুল বানিয়ে খেলে চলেছে স্বার্থান্বেষীরা। ফলস্বরূপ চলে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। বিশ্বে আমাদের পরিচয় হচ্ছে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে।  নারীর জীবন হচ্ছে দুর্বিষহ। কতকালের প্রতিবেশী শুধু ধর্মের দোহাইয়ে আজ যবন হয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি হচ্ছে ধ্বংস রাজনৈতিক অস্থিরতার নামে। ভালোটা হচ্ছে কার।এ কথা যদি আমরা এখনো না বুঝি তবে বড় দেরি হয়ে যাবে। ধন ধান্য পুষ্প ভরা এ সোনার বাংলা শ্মশান হয়ে যাবে অচিরেই। মানব জীবনে মানবিকতা,অসাম্প্রদায়িকতা,শ্রদ্ধা,ভালোবাসা,প্রেম, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ফিরিয়ে আনা অতীব জরুরি।

মানবিকতার চর্চা করি। চর্চা করি মনুষ্যত্বের। ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নয় -
আমরা মানুষের জয় গান গাই।
আমরা আমরা জীবনের জয় গান গাই।

সঙ্গীতা ইমাম, শিক্ষক, সংগঠক ও সংস্কৃতি কর্মী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ