আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

বৃত্তায়িত অনল, রূপান্তরিত অঙ্গার

নাজমুল হাসান  

হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রানী শীল ছিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন তরুণ কিশোরী। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের বিজয়ের পর তারা হায়েনার মতো প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে। প্রতিপক্ষের ভোটার বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের উপরে চরম হিংস্র আক্রমণ চালায়।

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা যারা তাদের কথা না মেনে নৌকায় ভোট দিতে গিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বাড়ি কোন কিছুই তাদের রোষানল থেকে বাদ যায়নি। যাকে সামনে পেয়েছে তাকে আহত/নিহত করেছে। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে ঘর-বাড়ি, ফসলের মাঠ। বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে মাছের খামারে। লুট করা হয়েছে অর্থ সম্পদ, গবাদি পশু-পাখি। গর্ভবতী মাকে ধর্ষণ, কোলের শিশুকে ছিনে নিয়ে আগুনে নিক্ষেপ সবই তারা করেছে।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিশোরী, যুবতী, কিংবা মায়ের বয়সী নারীদের উপর নির্মম পৈশাচিক নির্যাতন করেছে। ধরে ধরে মায়ের সামনে, পিতার সামনে, স্বামীর সামনে করেছে এ ধর্ষণযজ্ঞ। এ দেশ আরও একবার দেখতে পেয়েছে ১৯৭১।

এমনি এক কালরাতে হায়েনার দল উপস্থিত হয় সদ্য কৈশোরে পা পড়া পূর্ণিমা রানী শীলের বাড়ি। যার বাবা, মা নৌকায় ভোট দিয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। ১০/১২ জনের জামাত-বিএনপি'র পাষণ্ডদল পূর্ণিমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পূর্ণিমার অসহায় বাবা-মাকে সে পশুশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হতে হয়।

পূর্ণিমার মা হায়েনার দলের এমন পাশবিকতা দেখে ছোট মেয়েটার জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি পাষণ্ডগুলিকে 'বাবা' বলে সম্বোধন করেন এবং বিনীত অনুরোধ করে বলেন- বাবা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো; নইলে মরে যাবে!

পূর্ণিমা মরেনি। একজন ওয়াহিদুল হক পূর্ণিমাকে নিজের মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নিজের বাসায় ঠিকানা করে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তবে মরে গেলেই হয়ত ভাল হতো, স্বদেশভূমে তাকে একই ধরনের নৃশংসতা আর দেখতে হতো না।

সুদীর্ঘ ১১ বছর পর সেই পৈশাচিক ধর্ষণ মামলার বিচারের রায় হয় এবং গণ-ধর্ষণের দায়ে ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

সময় বদলেছে, প্রেক্ষাপট বদলেছে, পাশবিকতার ধরন বদলেছে কিন্তু পূর্ণিমাদের মনের কান্না-শঙ্কা, চোখের জল আজও প্রবাহিত-অমলিন। আজও পুরো সম্প্রদায় সমেত কাঁদে গারো তরুণী, আজও সে সময়ের গৌড়নদীর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকার মতো করে গোবিন্দগঞ্জের খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকে সাঁওতাল সম্প্রদায়। আজও সৃষ্টি হয় নাসির নগর, সিরিয়াল আগুনে পোড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘর, খুন হয় তারা। সেভাবেই গড়াগড়ি খায় পূজার মূর্তি, জ্বলে মন্দির, গির্জা।

সংখ্যালঘু নামক আপত্তিকর শব্দটিও আজও সে সময়ের মতোই উচ্চারিত। আজও রাজনীতিবিদরা সে সময়ের মতোই মিথ্যে বিবৃতি দেয়, আজও আমলারা সেই নপুংসকের মতোই বিভাগীয় তদন্তে রাজনৈতিক বিবৃতির প্রতিফলন ঘটায়।

আজও মুক্তিযোদ্ধারা মার খায়, অযোগ্য পাচাটাদের দৌরাত্ম্য দেখতে হয় অহর্নিশ। আজও ফুলের মালা গলায় পরে অপরাধী রাজনীতিবিদ নিষ্পাপের ভেল নিয়ে বসে থাকে জনগণের কাঁধে। আজও সেদিনের মতো সরকারী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের দলের কারও কোন দোষ খুঁজে পায় না।

অনেককিছুতে আজও অবিকল সেই রূপ। সেই বৃত্তায়িত অনল আর রূপান্তরিত অঙ্গার- আর কতো?

নাজমুল হাসান, লেখক, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ