আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

একটি মানবিক রাষ্ট্রের প্রতীক্ষা

লীনা পারভীন  

কিছুদিন আগে আমি ফেইসবুকে একটি মানবিক রাষ্ট্রের কথা লিখেছিলাম। তার প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করেছেন। কেউ লিখেছেন রাষ্ট্র আবার মানবিক হয় নাকি। কেউ লিখেছেন, সে আশায় গুড়েবালি।কেউ লিখেছেন, কার কাছে চাইছো? আবার কেউবা অট্টহাসির ইমো দিয়েছেন।

আসলে গত কিছুদিন ধরে আমাদের দেশে চলে আসা অনেকগুলো ঘটনা আমাদেরকে কখনো প্রতিবাদী কখনো আশাবাদী, কখনো বা হতাশায় ডুবিয়েছে। দিনশেষে আশা ভরসার জায়গা হচ্ছে রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হয় তাহলে আর কার কাছেই বা যাওয়ার থাকে?

প্রতিনিয়ত হত্যা, খুন, জখম, নারী ও শিশুদের ধর্ষণ, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তাহীনতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের উপর আক্রমণ ইত্যাদি খবর দেখতে দেখতে আমরা দিকশূন্য হয়ে পড়ছি।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমরা গর্ব করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, আমাদের ভাষা নিয়ে। সেই মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষার লড়াইয়ে অংশগ্রহণের জন্য কোন হিসাব ছিলোনা। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ ছিলোনা। একটাই পরিচয় নিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সেইদিন। আমরা সবাই বাঙালি এবং বাংলাদেশ হবে আমাদের দেশ। সেইদিন বাঙালিদের পাশাপাশি ছিলো পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ। সেই বাঙালিদের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান পরিচয় বা পাহাড়ী কেউ আলাদা করেনি।

তবে আজ কেন স্বাধীন দেশের নাগরিকদের মধ্যে এই হানাহানি। কে মুসলিম, কে হিন্দু আর কে বৌদ্ধ বা খৃষ্টান এই পরিচয় নিয়ে টানাটানি? কে চাকমা, কে সাঁওতাল এই হিসাব কেন করা হচ্ছে?

নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বা গাইবান্ধার সাঁওতালদের উপর হামলা এসব কী কেবলই সাম্প্রদায়িক? এসব ঘটনার পিছনে কতটা ধর্ম আর কতটা অধর্ম আছে এর হিসাব কে করবে? মুসলমান ধর্মের অনুসারী হলে আমরা বলছি তাদেরকে সংখ্যাগুরু আর অন্য ধর্ম বা গোত্রের ওরা সংখ্যালঘু।

কোন সম্প্রদায় সংখ্যালঘু হলেই কী তাদের উপর আক্রমণ করা ফরজ হয়ে যায়? এই যে আমরা বলছি সংখ্যালঘু তার নির্ধারকই বা কে? কীসের হিসাবে আমরা তাদেরকে সংখ্যালঘু বলছি? সংখ্যার বিচারে? তাহলে সহজ হিসাব, এই দেশের সংখ্যাগুরু যখন নিজ দেশের সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশের সীমানায় প্রবেশ করি তখন পরিচয় কী হয়? তখন কী তারা সংখ্যাগুরু থাকেন? আমি যে ধর্মের অনুসারী হইনা কেন, অন্য দেশে গেলে আমিই হয়ে যাবো সংখ্যালঘু। তাহলে আমাকে মেরে ফেলা বা আমাকে উচ্ছেদ করা সেই দেশের সংখ্যাগুরুদের জন্য জায়েজ হয়ে যাবে?

রাষ্ট্রের কোন জাত বা ধর্ম থাকতে পারেনা। রাষ্ট্র বলতে আমরা বুঝি একটি কাঠামো যেখানে বসবাসকারী প্রতিটা নাগরিক সমান সুযোগ নিয়ে বসবাস করবে। আর তার নিশ্চয়তা দেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এই বেসিক দায়িত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় আছে কী?

আমরা জানি রাষ্ট্র মানেই কোনো না কোনোভাবে নিপীড়কের ভূমিকায় থাকে। তার মানে কী এই যে রাষ্ট্রে কেবল নিপীড়নই করে যাবে আর আমরা সেটা সহ্য করেই যাবো? তাহলে সে রাষ্ট্র থাকার চেয়ে না থাকাটাই কাম্য। আমরা জানি বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে একটি চিহ্নিত নাম আর এর কারণও আমরা জানি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অর্জন করেছে মিলিনিয়াম ডেভেলপম্যান্ট গোল যা সংক্ষেপে MDG নামেই পরিচিত। বর্তমানে আমরা সাসটেইনেবল ডেভেলপম্যান্ট এর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই অবস্থায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে কোন প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত কাজ কী প্রত্যাশিত? আশা করছি এই জায়গাটি আমরা ভেবে দেখবো।

ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে আমরা এগিয়ে যাবো বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের দিকে আর সেজন্যই সবচেয়ে আগে দরকার রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণ করা। রাষ্ট্র যদি মানবিক না হয়ে নিপীড়ক হয় তবে সে দেশের নাগরিক হিসাবে আমি নিজেকে সংখ্যালঘুর দলে মনে করতে বাধ্য কারণ আমি চাই আমার রাষ্ট্র হবে মানবিক ও সংবেদনশীল।

লীনা পারভীন, কলাম লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ