আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

নাসিরনগর-গোবিন্দগঞ্জ: চাই সম্মিলিত উদ্যোগ

রণেশ মৈত্র  

বড় ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটে গেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের নানা হিন্দু পল্লীতে। অকস্মাৎ, একটি মিথ্যে অজুহাতেই এমনটি ঘটলো প্রকাশ্যে দিবালোকে। অজুহাতটি হলো একটি অশিক্ষিত জেলের ছেলে রসরাজ দাসের (পিতা জগন্নাথ দাস) ফেইসবুক পেইজে ইসলাম ধর্মের অবমাননাকর একটি ছবি পোষ্ট করার অভিযোগ এনে মুহূর্তে তার হাজার হাজার কপি ছাপিয়ে বিলি করে ধর্মের জিগির তুলে এলাকার মুসলিম তরুণদেরকে উত্তেজিত করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে দুটি উগ্র ধর্মভিত্তিক দল - “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” এবং “হেফাজতে ইসলাম”এর প্রায় একই সময়ে নাসিরনগরের দুটি এলাকায় “ধর্মপ্রাণ” সুসলমানদের সমাবেশ ডাকা হয়। সেই সব সমাবেশ থেকেই উত্তেজিত মানুষ শ’য়ে শ’য়ে লাঠি, ফালা সড়কি প্রভৃতি নিয়ে নাসিরনগর উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া, মহাকালপাড়া, কাশীপাড়া, নমসুদ্রপাড়া, শীলপাড়া প্রভৃতি অঞ্চলে নির্মম হামলা চালিয়ে ১৫-২০ মন্দির ও দেব-দেবীর বহুসংখ্যক মূর্তি ভাঙচুর করে ঐ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতঘর, রান্নাঘর সহ সমস্ত বাড়ী গুড়িয়ে দিয়ে ঘরে যা কিছু ছিল-সব লুটপাট করে নিয়ে যায়।

সমাবেশ দুটি যারা ডেকেছিল-তাদেরকে তো সবাই চিনি তারা উগ্র ধর্মান্ধ, সন্ত্রাসী। সাম্প্রদায়িকতা বিষে তাদের দেহ মন জর্জরিত। কিন্তু যাঁরা অনুমতি দিলেন - তাঁরা তো সরকারী কর্মকর্তা-ইউ.এন.ও. থানার ও.সি প্রমুখ কি করে, কার হুকুমে তাঁরা অনুমতিই শুধু দিলেন , তা নয়, তাঁরা সমাবেশে গিয়ে দিব্যি উত্তেজক বক্তব্য দিলেন। তাঁদের দু’জনকেই যখন পরিস্থিতির চাকা সরিয়ে দেওয়া হলো, দেখা গেল স্থানীয় তিনজন আওয়ামী লীগ নেতাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। এই তিনজনও ঐ সমাবেশে উপস্থিত থেকেছেন - হয়তো বা ভাষণও দিয়ে থাকবেন।

তাহলে সরকারী কর্মকর্তা এবং সরকারী দলের একাংশ দিব্যি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিলেন “আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত” ও “হেফাজতে ইসলাম” নামক দুটি ধর্মান্ধ উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে। তাদের কি জানা নেই যে ওরা কোন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার দল নয়।-জনজীবনের শান্তি বিনষ্ট করে অস্থিরতা-অরাজকতা সৃষ্টি করাই ওদের লক্ষ্য। জানা কি ছিল না ঐ কর্মকর্তাদের যে ঐ দুটি দলের পেছনেই জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় এবং তাবৎ সন্ত্রাসের মদদ দাতা ও সৃষ্টিকারী ভূমিকায় তারাই এবং তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত দোসর হলো “আহলে সুন্নত ওয়ালা জামাত” এবং “হেফাজতে ইসলাম”। তারা সবাই চায় এদেশে থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিতাড়ন করে দেশটাকে শুধুমাত্র মুসলমানের দেশে পরিণত করে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতায় দেশটাকে আচ্ছন্ন করতে। তারা চায় মুক্তিযুদ্ধের তাবৎ চেতনা ও আদর্শকে দেশ থেকে উধাও করে দিতে।

খোঁজ নিলেই হয়তো দেখা যাবে-ঐ ইউ.এন.ও এবং ও.সি ও গোপনে গোপনে তাদেরই লোক। আর আওয়ামী লীগের ঐ অংশ? তারা তো দেখছেই যে তাদের নেতারা “বিসমিল্লাহ” আনলেন নতুন করে, জামায়াত ও ধর্মান্ধতার রাজনীতিকে ও বৈধতা দিলেন এবং এরশাদের কাছ থেকে ছিনতাই করে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে” ও যেন নতুন ‘মর্যাদায়’ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করলেন। তাই ঐ তিনজন কেন - আরও বহু আওয়ামী লীগের আছেন যাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে না- সম্ভবত: করা হবেও না কোন দিন এবং দিব্যি তারা সংখ্যালঘু হিন্দু বিতাড়নে দেশব্যাপী উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে বসে আছেন। তাদের পেছনেও আইন দলটির অনেক বড় বড় নেতা।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদপন্ত্রী ছায়েদুল হক যে ঐ অংশেরই নেতা-তিনি যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজাকার পুত্রকে স্নেহে টেনে নিয়ে তার পক্ষে নির্বাচন চালালেন, ঘটনার তিন দিন পর এলাকায় এসে মাত্র ২/১ টাক মন্দির বাড়ী দেখে ডাকবাংলোতে রাজকীয়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করলেন এবং জানালেন স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশের আদৌ কান অবহেলা ছিল না অর্থাৎ যেন তিনি বলতে চাইছেন ওরা ঐ বর্বরতা ঠিকই নিরাপদে ঘটতে দিয়েছে বলে প্রশংসারই পাত্র তবে খবরটি পত্র-পত্রিকায় দিয়ে সাংবাদিকেরা বড্ড বাড়াবাড়ি করেছে-বাড়াবাড়ি করেছে হিন্দুরা-মালাউনেরাও।

এই কথা বলে তিনি সন্ত্রাসীদেরকেও অভয় দিলেন যে, তেমন কিছুই তো ঘটেনি-সবই তো শান্ত-স্বাভাবিক। ওদিকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তাঁদের চালচুলা - থাকার ঘর-গহনা-গাটি, টাকা-পয়সা, ঘর-দুয়ার সব কিছুই হারিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন-গৃহহীন চালচূলোহীন হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিন্দুমাত্র সহানুভূতি জাগানোর ব্যাপার নেই তাঁদের প্রতিপ্রাণিসম্পদমন্ত্রীর।

কিন্তু মন্ত্রী সাহেবের এবং আওয়ামী লীগদের কোনই বিপদ নেই। বহিষ্কার করলেও গ্রেফতার নেই-মামলা নেই তাদেও বিরুদ্ধে। আর ইউ.এন.-ও.সি কে “অপসারণ” তো লোক দেখানো ব্যাপার মাত্র। তাদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না কেন তাঁরা পদচ্যুত হবে না - কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হবে না বা হচ্ছে না? হিন্দুদের মনে আস্থা কি মুখের ফুলঝুরি ছুটিয়েই ফিরিয়ে আনা যাবে? মন্ত্রী সাহেব নিরাপদ কেন? কেন পদচ্যুত হচ্ছে না এখনো? গ্রেফতারও হওয়া উচিত তাঁরাও সমগ্র দেশবাসীর এটা আজ অত্যন্ত জোরালো দাবী।

বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে । যার সমাধানের এখনই সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির এগিয়ে আসা, ধারাবাহিকতার সাথে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলা, নানা পদ্ধতিতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা সমূহেও তার বার্তা পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। প্রতিবাদী ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মুসলিমদের দায়িত্ব এখন বিশাল।

সে কারণে সকল ধর্মনিরপেক্ষতার নিষ্ঠার সাথে বিশ্বাসী এবং এ প্রশ্নে যাঁরাই আপোষহীন তাঁদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ নিয়ে আন্দোলনের সূচনা এখনই করা অতীব প্রয়োজন। কালক্ষেপণে বা সরকারের উপর নির্ভর করে বসে থাকার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।

আমাদের দুটি বড় দলের পরস্পর-পরস্পরকে নিরস্তর গালিগালাজ সকল অপশক্তির বিকাশে, তাদের শক্তি অর্জনে যে সহায়তা করে চলেছে, নিজ নিজ দলের মধ্যেও যে অপশক্তিগুলি দিব্যি ঢুকে পড়েছে বা ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে তাও দিবালোকের মত সত্য। তাই এই দ্বন্দ্ব-প্রিয় , দ্বন্দ্ব লিপ্ত দল দুটির কাছে বাংলাদেশের এই মৌলিক আদর্শগুলি আজ নিছক কথার কথা, নিছক বুলিতে পরিণত হয়েছে। এগুলি আজ ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় দীর্ঘ মেয়াদে থাকার অস্ত্র বা বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কারণ “ক্ষমতা স্বর্গ, ক্ষমতা ধর্ম, ক্ষমতা হি পরমংতপ” এটাই তাঁদের জপ করা প্রতি মূহুর্তের মন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে ক্ষমতার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী একে অপরকে সকল অপরাধের জন্যই দায়ী করে বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। যার ফলে:

এক. প্রতিদিন অসংখ্যবার টেলিভিশনের চ্যানেলগুলিতে প্রচারিত ঐ ভাষণগুলিতে ঐ একই কথা সকল ক্ষমতা-দর্পীদেরও মুখে শুনতে শুনতে মানুষ তেতো বিরক্ত হয়ে ঐ বক্তৃতাগুলিকে আর বিশ্বাসে নিতে পারছেন না-চাইছেনও না। তাঁদের আচরণে ,তাঁদের উচ্চারণে “যত দোষ নন্দ ঘোষ”- এমনটাই শুনতে শুনতে সকলের কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।

দুই. এই পরিস্থিতির ফাঁক দিয়ে দিব্যি প্রকৃত অপরাধীরা নির্ভয়ে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এই অপরাধীদের মূল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারী দল-আইনের হাতও সেখানে যেতে ভয় পায় যেন।

তিন. এমন কথা বারংবার শুনছি কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁরা কোন নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা না করে আপন মনের মাধুরী মিলিয়ে বলেই চলেছেন। উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী। যদিও দাবীটি অত্যন্ত ন্যায্য এবং সময় ও পরিস্থিতির এটা অত্যন্ত প্রয়োজন ।

চার. মুক্তিযুদ্ধের এবং ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকাটি আজ যে ভূলুণ্ঠিত এবং প্রক্রিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টেই দৃশ্যমানভাবে সূচিত হয় এবং ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির যে তখন থেকেই রাষ্ট্রীয়ভাবেই উত্থান ঘটে এবং অত:পর শাসন ক্ষমতা পরম্পরায় যে তাকে সকল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলই পরম নিষ্ঠার সাথে লালন করতে থাকেন আজ সংকটটি সে কারণেই সমাজদেহের বেশ গভীরে স্থান করে নিতে পেরেছে।

পাঁচ. যতদিন আমরা রাষ্ট্র ও সমাজ দেহ থেকে সাম্প্রদায়িকতার প্রতিটি শিকড় কার্যকর ভাবে উপড়ে ফেলতে না পারব ততদিন এই বিষফোঁড়া দেশের কোথাও না কোথাও বিশালাকৃতি ধারণ করে মানুষকে তার দুর্বলতর অংশ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদেরকে আঘাতের পর আঘাত করেই থাকবে-লুণ্ঠিত হতে থাকবে তাঁদের সম্পত্তি, তাঁদের আরাধনার স্থান, তাঁদের সহায়-সম্পত্তি, বাড়-ঘর, সোনাদানা, টাকা পয়সা প্রভৃতি সকল কিছুই। একাত্তরের শিক্ষা অনুযায়ী সেগুলি সব “গণিমতে মাল” যেন।

ছয়. এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সংবিধানে “বিসমিল্লাহ” রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ” প্রভৃতি ধর্মনিরপেক্ষতার ধারক-বাহক বলে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দলটি যখন সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পরিত্যাগ করে এবং মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী ও বাঙালি জাতির দুশমন জামায়াতে ইসলামী সহ ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল পরিচালনা, গঠন প্রভৃতিকে বৈধতা দিল বাহাত্তরের মূল সংবিধানকে এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংবিধানের কুখ্যাত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তখন আরও তীব্রতা অর্জন করলো।

সাত. তদুপরি যখন হজ্ব পালনের অর্থনৈতিক দিক সম্পর্কে এক বিতর্কিত মন্তব্য আমেরিকায় এক সম্বর্ধনা করার ফলে পার্লামেন্ট, মন্ত্রীসভা ও দলীয় সদস্য পদ হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকীকে যখন কারারুদ্ধ পর্যন্ত হতে হলো তখন সরকারও যে চরমভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণু মনোভাবের ধারক তা সকল উগ্র ধর্মান্ধরা বুঝে নিলো। এ কারণে তারা দেশের সম্পদ মুক্তমনাদেরকে একের পর এক হত্যা এবং অপর অনেককে দেশত্যাগ করতেও বাধ্য করতে সক্ষম হলো। অবশ্য এমনটির বহি:প্রকাশ আগেও ঘটতে দেখেছি যখন কবি দাউদ হায়দার এবং নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকেও দেশত্যাগী হতে হয়েছিল। আজও তাঁদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নেই।

এসব কারণেই মৌলবাদীরা যেন রাষ্ট্রীয় বার্তাই পেয়ে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো। তদুপরি তারা আই.এস.ও অপরাপর জঙ্গি ইসলাম নামধারী সংগঠনের কাছ থেকে শিখছে যে দ্রুত এবং নিশ্চিত বেহেশত প্রাপ্তির পথই হলো বিধর্মী ও নাস্তিক নিধন। বিধর্মীরাও তাদের দৃষ্টিতে নাস্তিক। তাই তারা বেপরোয়ারা।

আরও একটি বড় কারণ আইনের শাসনের নিদারুণ অভাব। এযাবৎ হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত একটি ঘটনার ব্যাপারেও কোন মোকদ্দমা হলো না বা একটি অপরাধীরও বিচার বা বিন্দুমাত্র শাস্তি হলো না। অথচ একথা কে না জানে, সভ্য দেশ, গণতান্ত্রিক দেশ হতে হলে সেখানে কোন প্রকার অরাজকতা বা অপরাধকে আড়াল করলে তাকে একটি নৈরাজ্যের দেশ, অসভ্য দেশ হিসেবে সর্বত্র বিবেচনা করা হয়। এত রক্তের বাংলাদেশকেও কি জেনেশুনে আমরা সেই পথেই নিয়ে যাচ্ছি না?

শিরোনামে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গত ৬ নভেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে সেখানকার আদিবাসী পল্লী থেকে প্রায় দেড়শতাধিক আদিবাসী পরিবারকে পুলিশ এবং সরকারী দলের যৌথ উদ্যোগে উৎখাত করা হলো। আর তা হবেই বা না কেন? সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশী হওয়া স্বত্বেও যদি হিন্দুদের উপরই অকথ্য-নির্যাতন দফায় দফায় প্রকাশ্যেই চালানো সম্ভব হয় যদি তাদেরকে উৎখাত ও গৃহহীন করা, তাদের যুবতী মেয়েদেরকে ইচ্ছে হলেই সম্ভ্রম হানি ঘটানো বা ধর্মান্তরিত করে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানো সম্ভব হয় সেখানে আদিবাসীরা তো নস্যি মাত্র। তারা তো বস্তুত: ডবল সংখ্যালঘু-প্রথমত: আদিবাসী বা জাতিগতভাবে এবং দ্বিতীয়ত: ধর্মের প্রশ্নে।

তারপরেও যে আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ করা হলো পুলিশের সামনে এবং সরকারী দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তা বস্তুত:ই নজির বিহীন। আমাদেরর দেশের যথেষ্ট সংখ্যক সংসদ সদস্যকেও দেখি দোষীদেরকে দিব্যি আড়াল করতে যদি সেই অপরাধী সরকারী দলের লোক হয় তবে তো কথাই নেই। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। যেমন হয় নি নাসিরনগরের ক্ষেত্রেও। বা এমন কি, ২০০১ এর দেশব্যাপী নজির বিহীন সংখ্যালঘু নির্যাতনের পরও।

অথচ আমরা জানি হাইকোর্টের নির্দেশ আওয়ামী লীগ সরকার সাহাবুদ্দিন চুন্নুর নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করলে তিনি প্রায় একটি বছর ব্যাপী সর্বত্র ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে তাঁর প্রতিবেদন সরকারের কাছে দাখিল কওে বলেছিলেন হাজার হাজার ঘটনা ঘটলেও প্রায় ৩৫০০ মোকদ্দমা এখনও দায়ের করা যেতে পারে কারণ এগুলির সাক্ষ্যপ্রমাণ এমনও পাওয়া যায়। তিনি সরকারকে ঐ ৩৫০০ ঘটনার ব্যাপারে মোকদ্দমা দায়ের সুপারিশ করা এবং সরকার মোকদ্দমাগুলি দায়েরের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি তাঁরা রাখেন নি।

নাসিরনগরে গত ১৩ নভেম্বর পুনরায় অগ্নিসংযোগ ঘটলো সুন্দরগঞ্জে বাড়িঘর পোড়ানো হলো। এই ঘটনাগুলি দেশেবিদেশে তোলপাড় তুলেছে। যা অতীতে দেখা যায় নি এমন ভাবে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সক্রিয় সদস্যরা নাসিরনগর পরিদর্শন করে বলেছেন, সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আইন সহায়তা দেওয়া হবে তবে অপরাধীদের পক্ষে কোন আইনজীবী আদালতে দাঁড়াবেন না। এ ঘোষণার জন্য তাঁদেরকে অভিনন্দন।

কমিশন হাইকোর্টের অবসর প্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্তদের মন্দির, বাড়িঘর প্রভৃতি ক্ষতিপূরণ প্রদান,প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অপসারণ ও গ্রেফতার এবং সুন্দরগঞ্জের আদিবাসীদের পূর্বপুরুষের জমি তাদের নামে ফেরত দান, বাড়িঘর নির্মাণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব মেনে নেওয়া যাবে না।

আবারও বালি, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বিশাল মুসলিম সমাজের দায়িত্ব আজ সমধিক। তাঁদের দ্রুত সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশ ও মানুষ বাঁচানোর দায়িত্বে নেমে পড়া জরুরী ভিত্তিতেই প্রয়োজন।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ