আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

পাতা উলটানো দিনের নাগরিক আমরা

লীনা পারভীন  

প্রতিনিয়ত খবরের সাথেই আছি আমরা। প্রতিদিন পাচ্ছি কোথাও না কোথাও ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের খবর। কিছুদিন চলি সেইসব খবরের সাথে আবার নতুন ঘটনার অবতারণার সাথে সাথেই মিলিয়ে যায় পুরনো ঘটনার আঘাত।

এই মুহূর্তে আমরা কোন ঘটনার সাথে আছি? কেউ কী আমরা বলতে পারি? সর্বশেষ ছিলাম গাইবান্ধার সাঁওতালদের উপর আক্রমণ আর নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ নিয়ে, তার আগে? উত্তর দিতে গেলে একটু ভাবতে হবে বৈকি। কোনটা আগে আর কোনটা পরে সেটা মনে করার জন্য সময় লাগবে। তবে মোটা দাগে বলতে পারি, আমিরা ছিলাম, পূজার সাথে, তার আগে ছিলাম খাদিজা বেগম নার্গিসের ঘটনায়। তার আগে? না, তার আগেরগুলো আর সিরিয়াল করে বলাটা মুস্কিলই বটে। এমনি করেই প্রতিনিয়ত নতুন ঘটনায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো ঘটনা।

এত কথা বলার উদ্দেশ্য আসলে কী? আসলে আমরা সবাই হচ্ছি ভুলোমনের মানুষ। একটি ঘটনা সামনে আসে আর আবেগে ফেটে যাই, প্রতিবাদে ফেটে পড়ি; কিন্তু লেগে থাকতে পারি কী ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান পর্যন্ত?

আমি যদি পহেলা বৈশাখের ঘটনাকে একটি মাইলফলক হিসাবে বিবেচনা করি তাহলে দেখবো সে সময় প্রতিবাদ কিছু কম হয়নি। কিন্তু তার ফলাফল কী? নাকি ফলাফল আশা করাটা একজন বোকা লোকের লক্ষণ? জানিনা আমি। বৈশাখের কোন অনুষ্ঠানে এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে আমার স্মৃতিতে নেই বা শুনেছি বলেও মনে করতে পারছিনা। এরপর ঘটে যাওয়া ঘটনার কেবলই তালিকা লম্বা হবে।

বাংলাদেশে আজকাল অপরাধের প্যাকেজ ধারাবাহিকের মতো অবস্থা। যেকোনো একটা ইস্যুতে কয়েক পর্ব চলে তারপর আরেকটা সিরিয়াল এলেই আগেরটার স্থান দখল করে নেয়। আর ঠিক ধারাবাহিক নাটকের মতোই আমরাও কয়েক দিন সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলি, পত্রিকায় লেখালেখি, ফেইসবুকে বিপ্লব, তারপর আবার নতুন সিরিয়ালে শিফট করি।

চলিতেছে সার্কাসের মতো, চলিতেছে আন্দোলন। দেশে আজ রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম নাই বললেই চলে। যেকোনো ঘটনারই বড় প্রতিবাদটি আজকাল হয়ে গেছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। দুই একটা রাজনৈতিক দল তাদের মত করে রাস্তায় নেমে মিছিল মিটিং করে, প্রতিবাদ জানায় তারপর আবার নতুন আন্দোলনের ইস্যুতে নিযুক্ত হয়ে পড়ে।

এভাবেই কী চলবে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই কোন ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব আজকাল আর ক্যাম্পাসে টের পাওয়া যায় না। নেই কোন ছাত্র সংসদ বা সমন্বিত আন্দোলনের ডাক। তাহলে কী ছাত্রদের কোন ইস্যু নাই?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে কেন্দ্র করেই চলছে যে কোন ঘটনার প্রতিবাদ। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অংশগ্রহণ কী আছে আদৌ? এই যে রাজনৈতিক শূন্যস্থান, তা কী দিয়ে পূরণ হচ্ছে? সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও আর আগের মতো দেখা যায়না। তাহলে ছাত্ররা পড়াশুনার বাইরে সময় কাটাচ্ছে কীভাবে? কেউ কী আমরা ভেবেছি?

বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুযায়ী কোন কিছুই খালি থাকেনা। কিছু না কিছু এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করে নেয়। তাহলে কী সেই উপাদান যা আমাদের ছাত্রদের মনোজগতে স্থান করে নিচ্ছে?

সমাজে যখন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কমে যায় তখন সেখানে বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়। আর আমরা জানি বদ্ধ জায়গায় শ্যাওলার জন্ম। এক সময় সে জায়গাটি পচে গিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। আজকের যে তারুণ্য নিয়ে আমরা চিন্তিত সে তারুণ্যকে আমরা কী দিতে পেরেছি সুন্দর একটি দিকনির্দেশনা? আমাদের সামনে সেই অনুকরণীয় চরিত্র কোথায়? একসময় ছাত্র রাজনীতিতে এক একজন আইকনিক নেতা থাকতেন। সবার ভিতরে মোটামুটি তার মত হবার এক ধরণের ইচ্ছা জাগ্রত হতো। আর আজ? আজ আমাদের সামনে তারুণ্য পাচ্ছে, সালমান খান, শাকিব খান, বড়জোর নেইমার, মেসিদের মত তারকাদের। তাদেরকে ফলো করে কী শিক্ষা পাচ্ছে? পাচ্ছে ক্যামন করে চুলের রঙ পরিবর্তন করা যায়। মূলত ফ্যাশন আইকন হিসবেই তাদেরকে ফলো করে। কেউ কিন্তু এখনো বলেনি যে আমি নেইমার বা মেসির মতো খেলোয়াড় হতে চাই। তাই যদি হতো তবে ফুটবলে আজকে আমরা তারকা-শূন্যতা কাটাতে পারতাম।

আমাদের মধ্যে ধারাবাহিকতার খুব অভাব। আমরা আজকে কোন একটিতে স্থির থাকতে পারছিনা। স্যাটেলাইটের এই যুগে আমরা হয়ে পড়ছি রিমোট নির্ভর জাতি। যা আমাদের দেখাচ্ছে আমরাও তাই দেখেই মজা পাচ্ছি। এর মধ্যে কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা জড়িয়ে আছে, আমার ব্যক্তিগত জীবনে কোনটার কী প্রভাব তা নিয়ে অত চিন্তা করার মত সময় আমরা কেউ বের করছিনা।

ব্যক্তিগত জীবনের এই অস্থিরতাই আমাদেরকে পাতা উলটানো জাতিতে পরিণত করে দিচ্ছে। হয়তো অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত করতে পারেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা ক্রমশ নির্জীব প্রাণীতে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছি। একদিন হয়তো এমন হবে যে কোন ঘটনাতেই আমরা আর প্রতিবাদ করার মত তেজ খুঁজে পাবো না। হয়তো খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস কিছুই আর অস্বাভাবিক লাগবে না আমাদের কাছে।

তবে বিষয় হচ্ছে, আমরা কী সেই দিন দেখতে চাই? প্রশ্নের উত্তরটা আমাদেরকেই খুঁজে বের করে ঠিক করতে হবে।

লীনা পারভীন, কলাম লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ