আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

যথার্থ ক্রিয়া

গোঁসাই পাহ্‌লভী  

চলচ্চিত্রের ভাষা, কিংবা চিত্রকলার ভাষা, এই ভাষার কেমনতর ব্যবহারে অর্থ উৎপাদনে যথার্থতা প্রতিপাদন হয়? কিংবা অর্থ উৎপন্ন হতেই বা হবে কেন, এই প্রশ্ন কি এনার্কিক হবে? অর্থ উৎপাদনই কেবল নয়, যথার্থ অর্থ উৎপাদন হতে হয়! যথার্থ উৎপাদন বলতে কি বুঝায়?

ধরেন, নতুন অর্থ উৎপাদন।নতুন অর্থ উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত মানুষ অসহায় বোধ করে। যেমন বর্তমান বাঙলাদেশ, টেলিভিশন খুলুন, পত্রিকার পাতায় চোখ বুলান, সবাই পরিবর্তনের কথা বলছে। কিন্তু পরিবর্তন কি হচ্ছে? হত্যা কি বন্ধ হয়েছে, হয়নিতো। ফলে, যে ভাষা ব্যবহার করছে সেই ভাষা নতুন কোনো অর্থ উৎপাদন করতে পারছে না, তাহলে কি নতুন অর্থ উৎপাদনের জন্যে এই ভাষা যথার্থ নয়,

এখন খেয়াল করেন, ভাষা মানে কি? ভাষা মানে তো যার মূলে রয়েছে শব্দ। আপনি সেই শব্দ পেলেন কোথায়? আপনি যে শব্দ করছেন, সেই শব্দের কি বস্তুরূপ আছে? যদি বস্তুরূপ থাকে তাহলে বস্তু ততক্ষণ হাজির হবে না যতক্ষণ আপনি যথার্থ শব্দটি উচ্চারণ না করছেন।তাহলে পরিবর্তনের জন্যে যথার্থ শব্দ কি? এর উচ্চারণ বা কি?একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটা পাঠ এখান থেকে নেওয়া যায়।

তো, ভাষা মানে হচ্ছে শব্দ। শব্দ কোথা থেকে উচ্চারিত হচ্ছে, যেমন শীৎকার, এটা তো একটা ক্রিয়ার থেকে সৃষ্ট, যেমন বজ্রপাত, কিংবা গ্লাস ভাঙার দৃশ্য। তাহলে প্রতিটি শব্দের মূলে রয়েছে ক্রিয়া। ক্রিয়া ব্যতীত শব্দ ধ্বনিত হয় না। এখন, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনার মনে পড়বে লোগোসেন্ট্রিক শব্দের কথা, নামপদের কথা, বিশেষ্যের কথা। বিশেষ্যের মূলেও রয়েছে একটি প্রত্যক্ষ ক্রিয়া, কিংবা নাম নিজেও ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন। অন্যদিকে নির্বাণের যে সাইলেন্স, সেই সাইলেন্স এখানে আর থাকছেনা, সর্বত্রই ক্রিয়ার ছড়াছড়ি।

আপনারা যদি গৌতম বুদ্ধের ধ্যানে বসে থাকা ছবিটি দেখিয়ে বলেন যে এটা তো ক্রিয়াহীন, ধ্যানের মধ্যে যে ক্রিয়া ঘটে, সেই ক্রিয়া এতটা ফাংশনাল এবং বিপরীত রতাতুরামে ক্রিয়াশীল, এটা সাধারণের ভাবনার ও অতীত। ধ্যানের চ্যালেঞ্জটা এই যে আপনার ডাইমেনশনের ঠিক বিপরীত। মানুষ এইখানে জন্মগতভাবেই বিপরীতমুখি, তার মেরুদণ্ড মাটির সমান্তরালে নয়, ফলে তাকে দাঁড়াতে হলে ফিজিক্যালি মাটির ঠিক বিপরীত দিকে দাঁড়াতে হয়, এবং এরপরে অবশ্যই মানসিকভাবে দাঁড়াবার বিষয় রয়েছে।

ধ্যান করার যে ইচ্ছা সেই ইচ্ছাকে ভয়াবহ ক্রিয়াশীল না করলে ধ্যানে ধ্যানস্থ হওয়া যায় না, এইযে মনকে উল্টো দিকে ধাবমান করানো, এই ধাবমানতার পেছনে ভয়াবহ মানসিক শক্তির প্রক্ষেপণ দিতে হয়। ফলে, ধ্যানস্থ ঋষিকে দেখে ভাবার কোনও অবকাশ নাই যে, তিনি ক্রিয়াহীন আছেন, তিনি মূলত ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ক্রিয়াহীনতার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, এই অগ্রসর হওয়ার পেছনে যতগুলো ধাপ রয়েছে, প্রত্যেকটি ধাপের একেকটি রং রয়েছে, একেকটি রূপ রয়েছে, রয়েছে দৃশ্য এবং অদৃশ্য কিছুও।

আমাদের এখানে অধিবিদ্যার অধিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। অধি মানে হচ্ছে ইংরেজিতে যাকে বলে বিয়ন্ড, যদি কেহ বলেন, জমিটির উপরে আমার অধিকার আছে, এর অর্থ হচ্ছে জমিটিতে আমার রাইট আছে এমন নয়, কর্তা নিজেই দাবী করেছেন যে জমি নয়, জমির অধি। বিয়ন্ড দ্য ল্যান্ড। এভাবে শব্দের পেছনে অধি রয়েছে, এই অধি কি একটি ফেনোমেনা? না প্রকৃত অর্থে ইসাবস্ট্যান্স। ফলে, যে দৃশ্য আপনি ভাবছেন, সেই ভাবের ধ্বনিত রূপ রয়েছে, সেই রূপটি ধরা দেওয়া থেকেই ক্রিয়ার ধরা রূপ যাকে আমরা ক্রিয়া পদ বলছি। তাহলে, আমরা দেখলাম যথার্থ অর্থের পেছনে যথার্থ শব্দ থাকতে হবে, এবং অবশ্যই যথার্থ শব্দ সৃষ্টি হবে যথার্থ ক্রিয়ায়। এই ক্ষেত্রে জগত ক্রিয়াময়।

সেই ক্রিয়ার বিপরীতে যাওয়াও একটা ক্রিয়া, সেই ক্রিয়া কতক ক্ষেত্রে এমনভাবে হাজির হয় যেন সে শব্দের পোলার অপজিট। ভালোমন্দ দিয়ে আপনি ভালো ও মন্দের বিচারে যাবেন, এখানে এই দু’য়ের মধ্যবর্তী কোনও অবস্থা খুঁজতে হলে আপনি ভাষার মধ্যেই তো প্রথমে খুঁজতে যাচ্ছেন, আরো ভালো ভাবে বললে আপনি খুঁজে চলছেন যথার্থ শব্দটি, এবং আমরা আগেই জেনেছি যে, প্রকৃত শব্দ সৃষ্টির কারণ হচ্ছে প্রকৃত ক্রিয়া। কোনটি কৃত কোনটি প্রকৃত সেটা এখানে আলোচ্য নয়।

গোঁসাই পাহ্‌লভী, ভাস্কর, লেখক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ