আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

রসরাজ-উত্তম-রাজীবকে ফিরিয়ে দাও

রণেশ মৈত্র  

ঘটনার পর ঘটনা ঘটে চলেছে। মন্দিরের পর মন্দির আক্রমণ - মূর্তির পর মূর্তি ভাংচুর, ফেইসবুকে দেবী মূর্তিকে ঘিরে একরে পর এক কুৎসিত, নোংরা মন্তব্যের পোষ্ট দিয়েই চলেছে, সাঁওতালরা হিন্দুরা নিত্যদিন জমি হারাচ্ছেন, বাড়ী হারাচ্ছেন, সহায়-সম্পদ হারাচ্ছেন গৃহহীন, কপর্দকহীন, নিঃশর্তে পরিণত হচ্ছেন প্রতিদিন অবিরাম বিরতিহীনভাবে। এক এক দৈনন্দিন চিত্র যা অবশ্য দেখার নির্মম দৃশ্যে পরিণত হলো যেন। সংবাদপত্রে. অনলাইন পত্রিকায় টিভি চ্যানেলগুলিতে।

এই এরাই তো গোটা পাকিস্তান আমলব্যাপী কত ভাবেই না অপমানিত হয়েছেন-নিগৃহীত হয়েছেন সংখ্যালঘু হওয়ার অপরাধে অধিকারহারা এক অসহায় জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছেন। একথা আজও ভুলতে পারা যায় নি। পাশাপাশি এটাও ঠিক পাকিস্তান আমলে দু’তিনটি দফা বাদে সংখ্যালঘুদের দৈনন্দিন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকারে পরিণত হতে হয় নি। এমন একটা নির্বিকার এবং অবমাননাকর “মালাউন” জাতীয় জঘন্য নোংরা শব্দ বা মন্তব্য কাউকে শুনতে হয় নি-মন্ত্রী, এম.পি. বা আমলাদের কাছে থেকে। এমনকি অশিক্ষিত সাধারণ মানুষদের কাছ থেকেও নয়।

পাকিস্তান আমলে যা কিছু সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে তাকে সরকার প্রকাশ করতে বাধা দিয়েছে তৎকালীন মিডিয়াকে কিন্তু জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে-রুখে দাঁড়িয়েছেন মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ-তাঁরা সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ মিছিল বের করেছেন, দাঙ্গাকে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে প্রতিকার করেছেন, কখনও বা দাঙ্গাকারীদের অস্ত্রের আঘাতে নিজেরা আহত হয়েছেন কিন্তু দমেন নি। প্রচার পত্র ছাপিয়েছেন “পূর্ব বাংলা রুখে দাঁড়াও” জাতীয় শিরোনামে। কর্মীদের নিয়ে নিজেরাই ঐ প্রচারপত্রগুলি মিছিল থেকে হাতে হাতে জনগণের মধ্যে বিলি করেছেন। তাতে কাজও হয়েছে। দাঙ্গা বন্ধ হয়েছে- ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরে এসেছে। কিন্তু তারা কি তবে মুসলমান ছিলেন না? ঐ নেতারা?

ঐ মিছিলগুলি হতো ঐক্যবদ্ধভাবে। তাতে যোগ দিতেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিরা, নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির বাইরে থাকা নেতৃবৃন্দ, ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীবৃন্দ, দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি সহ সমাজের নানা স্তরের নানা পেশায় অসংখ্য মানুষ। নারীদের বাইরে আসার তখনও প্রচলন ঘটে নি তেমন- তাই ছাত্র আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ও সক্রিয় স্বল্পসংখ্যক মেয়েও মিছিলগুলিতে অংশ নিতেন।

ষাটের দশকের এমনই একজন, যিনি দাঙ্গা-বিরোধী মিছিলের অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন, দাঙ্গাকারীরা তাঁকে হত্যাও করেছিল। তাঁর নাম আমীর হোসেন। হিন্দুরা আক্রান্ত হয়েছে-মরতে চলেছে-আর তা ঠেকাতে অকাতরে জীবন দিলেন একজন মুসলিম সন্তান। মিছিলগুলির আয়োজক. অংশগ্রহণকারী, সংগঠকদের শতকরা ৯৫ ভাগই তো ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়-ভিত্তিক। এঁরাও কি তবে আজকের বিবেচনায় খাঁটি মুসলমান ছিলেন না? কালক্রমে নানাবিধ আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণতিতে ১৯৭১সালে যে বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতী অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ অসীম সাহসিকতার সাথে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পেশাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করে, তাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলেন তাঁরাও তো কম পক্ষে ৮০ ভাগই মুসলিম ঘরের সন্তান। ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনেও তাই। কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা?

আজকের নাসিরনগর গোবিন্দগঞ্জ, সেদিনকার রাম, হাটহাজারী, পাবনা, লালমনিরহাট ও অন্যান্য অসংখ্য জায়গায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, হিন্দুদের মন্দির, দেব-দেবীর মূর্তি, বাড়িঘর প্রভৃতি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, নারী অপহরণ, নির্যাতন, জোর করে জমি-বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল এবং ২০০১ সাল থেকে আজ তক বিরামহীন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর পত্র-পত্রিকায় দেখে কেবলই মনে হয়, আজ কি এর প্রতিবাদে সেদিনের মত মিছিল করার কেউ নেই বাংলাদেশে? না কি আজ দেশটা “খাঁটি মুসলমানে” ভরে গিয়েছে?

মধ্যপন্থী-বামপন্থী-উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দলগুলি আজও হাতে হাত মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ কেন আজও যেতে পারছেন না বোধগম্য হয় না। বুঝে উঠতে পারি না কেন সেদিনের মত-বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা -যাঁদেরকে নিয়ে বাংলাদেশ এখনও গর্ব করতে পারে তাঁদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কারণে তাঁরাই বা নিশ্চুপ কেন? খবর হতে, প্রতিবাদ জানাতে, নিন্দা-ধ্বনি উচ্চারণ করতে, সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনাবলী এবং ভেদাভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সমূহকে সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাতেই বা পিছুটানটা কোথায়-তা বড়ই দুর্বোধ্য।

আমি যেমন সাম্প্রতিক, সাম্প্রতিক কালের ও নিকট অতীতে সংঘটিত হাজার হাজার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথা বলছি, চাইছি তার প্রতিরোধ, প্রতিবাদ ও প্রতিকার-সাথে সাথে চাইছি এই সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সমূহে বিষ দাঁত চিরতরে উপরে ফেলতে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশেকে একটি উন্নত, অসাম্প্রদায়িক। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, বৈষম্য ও শোষণমুক্ত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি অগ্রসর-মাত্র দেশ ও অগ্রসরমান জাতি গঠনের প্রচেষ্টায় সকল সম্ভাব্য শক্তির ব্যাপকতম ঐক্যের।

যে উগ্র সাম্প্রদায়িক আবহ আজ বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তা একদিনে হয় নি। একটি মাত্র দলও তা করে নি। আমাদের পরিচিত এবং দফায় দফায় রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনাকারী সকল দলই এই আবহ সৃষ্টিতে বিস্তর ভূমিকা পালন করেছে এবং আজও সেই প্রচেষ্টা তারা দিব্যি অব্যাহত রেখেছে। আজ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বলে দাবীদার, অসাম্প্রদায়িক বলে দাবীদার, ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে দাবীদার ক্ষমতাসীন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলে চিহ্নিত ক্ষমতা বহির্ভূত সকল দল ও শক্তি অন্তত: এই একটি প্রশ্নে দু:খজনকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যেন। যেমনটি আমরা দেখেছি পাকিস্তান নামক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে সেদিনের পাকিস্তান এবং আজকের এই বাংলাদেশের খোলনলচে বদলানো রাষ্ট্রীয়, মূলনীতিতে ন্যূনতম পার্থক্যও বজায় থাকল না। পরিস্থিতির এই ভয়াবহতাকে আজ আর উপেক্ষা করার বা তাকে পাশ কাটিয়ে যাবার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বা খেলতে দেওয়া বা তার প্রতি এক
মুহূর্তের জন্যেও চোখ বুজে থাকার এখন আর অবকাশ নেই। বাংলাদেশের পাকিস্তান যাত্রাকে এখনই halt করতে হবে - না হলে মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ হবে।

যে বিষধর সাপকে দুধকলা দিয়ে পরম আদর ও যত্ন দিয়ে দশকের পর দশক ধরে পুষে রাখা ও লালন করা হয়েছে-আজ সেই সাপ তার ফণাকে উদ্যত করেছে ঐতিহ্যবাহী সমাজ-মানসকে। আক্রমণে উদ্যত হয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির গৌরবোজ্জ্বল ধারাকে।

আটচল্লিশ, ও বাহান্নর ভাষা আন্দোলন এবং পাকিস্তান আমলে ধারাবাহিক ভাবে দুটি দশক ধরে পরিচালিত-গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সর্বশেষ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ যে সাংস্কৃতিক রচনায় বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিল তার মৌলিক ভিত্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা- ধর্মে ধর্মে, বর্ণে-বর্ণে, নারীতে-পুরুষে বিরাজিত তাবৎ বৈষম্যের অবসান ঘটানোর এক উন্নত সংস্কৃতি-বোধ। আজ তার মর্মমূলে কুঠারাঘাত করে বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক সামাজিক রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছে-সকল অপশক্তি মিলিত ভাবে আবার কখনও বা পৃথক পৃথক অবস্থানে থেকে ঐ কাজে লিপ্ত হয়েছে। তাই মুক্তিকামী বাঙালির সকল অর্জন, সকল বিজয়, সকল গৌরব, সকল আত্মদান আজ মনে অর্থহীন হতে বসেছে। এমতাবস্থায় আবারও তো বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে হয় “যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে”। না, বাংলাদেশ আজ আবার কোন সশস্ত্র লড়াই নয়, কোন নৈরাজ্য সৃষ্টিও নয়। সকল শুভ শক্তির ঐক্যবদ্ধ আপোষহীন এক সংগ্রামই মুক্তির একমাত্র পথ। তাতে বিজয়ও অবধারিত। মানুষই সকল ক্ষমতার উৎস।

নিবন্ধটি শিরোনামে রসরাজ, উত্তম বড়ুয়া ও রাজীবের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ রাখছি। রসরাজ নাসিরনগরের জেলের সন্তান-দরিদ্র এবং অশিক্ষিত। অথচ প্রচার করা হলো যে রসরাজ ফেইসবুকের পেইজে ইসলাম ধর্মের অবমাননা মূলক পোষ্ট দিয়েছে। নিমেষে তার হাজার হাজার কপি ছেপে ধর্মোন্মাদ উগ্রপন্থীদের মধ্যে বিলি করা হলো। অত:পর সরকারী আমলারা “আহলে সুন্নত” ও “হেফাজতে ইসলাম” নামক দুই ইসলামী উগ্রপন্থী সংগঠনকে নাসিরনগরের দুটি মাঠে “প্রতিবাদ সমাবেশ” সমাবেশে তাঁরা ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা উত্তেজক বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এত কিছু সেই রসরাজকে তো ধরে পিটিয়ে পুলিশকে দিয়ে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে ৩০ অক্টোবরের আগেই। আজ ২১ নভেম্বর কিন্তু রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা তা অনেক আগেই। কিন্তু তকে নিয়ে আর কোন খবরই জানা যাচ্ছে না। প্রশ্ন করি তাই, রসরাজ কোথায়? রসরাজ যে ও কাজ করে নি পুলিশ তো তার প্রমাণ পেয়েছে।

তেমনি ১০১২ সালে রামুতে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হলো উত্তম বড়ুয়া নামক একটি বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী যুবক রসরাজের মতই ফেইসবুক “ইসলাম অবমাননাকর” একটি পোষ্ট দেওয়ার অজুহাতে (উত্তম তা অস্বীকার করেছে) একাধিক বৌদ্ধ মন্দির, তাঁদের বাড়িঘরের ধ্বংস সাধন করা হয়। উত্তমকেও আটক করা হয়। তারও রিমান্ডে খবর তখন জানা গিয়েছিল কিন্তু তারপর চার বছরের বেশী অতিক্রান্ত হলেও উত্তম বড়ুয়ার আর কোন খবরই জানা যাচ্ছে না। তাই উদ্বেগের সাথেই প্রশ্ন করি “উত্তম বড়–য়া কোথায়?” তাকেও মুক্ত করা ও তাদের নিরাপত্তা বিধান করা হোক।

অনুরূপভাবে রামুতে ঘটনার এক বছর পড়ে ২০১৩ সালে কালীপূজার দিন পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলায় বনগ্রামের এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী বাবলু সাহার ছেলে রাজীব সাহা ঐ জাতীয় একই অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ এনে একই কায়দায় কথিত “ইসলামের অবমাননাকর” ছবি ডাউনলোড করে হাজার হাজার কপি নিমেষেই ছেপে বনগ্রামের বিশাল হাটে বিলি করে মানুষকে উত্তেজিত করা হয়। অত:পর বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ লাঠি, ফালা প্রভৃতি নিয়ে সাহা পাড়া, ঘোষ পাড়া সহ বেশ কিছু মন্দির এবং অনেকগুলি হিন্দু বাড়ী (কালী ও অন্যান্য প্রতিমাসহ) বেধড়ক ভাংচুর করা হয়।

বাবলু সাহার বাড়ীতে গিয়ে তাঁর ছেলেকে (রাজীব সাহা) তারা খুঁজে না পেয়ে ঐ বাড়ীতেও ব্যাপক ভাংচুর করে। আগের দু’জনের মত রাজীবের বিরুদ্ধেও মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। পুলিশ তাকে পলাতক ঘোষণা করে কিন্তু আজও সেই খোকনের (রাজীব সাহা) কোন খবর নেই- খোকনের বাবা-মা আজও উৎকণ্ঠিত। মোকদ্দমা চলছেই। কিন্তু জানা গেছে - কোন ফেইসবুকের খবরই রাজীব জানতই না। সমগ্র ব্যাপারটি রটনা মাত্র। আর এই সব ভাংচুর লুটপাটের সাথে সরকারী দলের একাংশ জড়িত। ফলে ভাংচুর লুটপাটের জন্য মোকদ্দমা দায়ের হলেও আসল আসামীরা দিব্যি নির্দ্বিধায় নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এই তিনটি ঘটনাই পূর্ব পরিকল্পিত এ কথাও আজ দিবালোকে মত স্পষ্ট। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরগুলি নতুন ভাবে নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত হাজার হাজার হিন্দু মন্দির ও বিগ্রহ ভাংচুর করা স্বত্বেও তার একটিও সরকার নির্মাণ করে দিয়েছেন এমন কোন নজির নেই। নজির নেই ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের বাড়ী-ঘর নির্মাণ করে দেওয়াও। কিন্তু বক্তৃতার ভাষা আজও “বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ” ফলে উৎসাহিত হচ্ছে যারা কোন আইন মানে না-যারা তাবৎ অপকর্মের হোতা, তাতে উৎসাহ দাতা ও অংশগ্রহণকারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত যাঁরা হচ্ছেন তাঁরা হতাশা ও অনাস্থা এবং নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।

প্রশ্ন জাগে অনেকগুলি-

এক. হিন্দুদের/ধর্মীয়/ জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দির, বিগ্রহ ও বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট কারী। অগ্নি সংযোগকারীরা কেউ শান্ত পাচ্ছে না কেন? এগুলি কি অপরাধ নয়?

দুই. তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের যদি হয়তও -প্রকৃত অপরাধী কমই ধরা পড়ে নির্দোষ এবং যারা আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসেন তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয় কেন? আসল অপরাধীরা তো দিব্যি ঘুরে বেড়ায়।

তিন. অপরাধী দু’চারজন ধরা পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে হালকা অভিযোগ আনার ফল সহসাই জামিনে বেরিয়ে আশার সুযোগ দেওয়া হয় কেন? ক্ষমতাসীন নেতারা তদবির করে অনেককে মুক্ত করে দেন-রহস্যটা কি?

চার. মন্দির, বিগ্রহ ও হিন্দু-বৌদ্ধ খৃষ্টানদের বাড়িঘর ভাংচুর তাতে অগ্নিসংযোগও কি বৈধ?

পাঁচ. রসরাজ, উত্তম ও রাজীব কোথায়? তাদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক। দাবী করি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক এবং তাবৎ ঘটনার উপর অবিলম্বে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ