প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৬
বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ১০০ চিন্তাবিদের এক তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফরেন পলিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকার জন্য এই তালিকায় ‘ডিসিশন মেকার্স’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১৩ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে একটি দৈনিক পত্রিকা।
শেখ হাসিনা এখন শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বিশ্ব নেতৃত্বে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। একটি সূত্রমতে বিশ্বের যে সব নেতানেত্রীর জীবন ঝুঁকিতে আছে সেই শীর্ষ সাতজনের একজন নাকি শেখ হাসিনা। সত্য মিথ্যা কতটুকু সেটা জানিনা। তবে সেই তথ্য একেবারেই উড়িয়ে দেয়ার মতো ও নয়।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তখন থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে বিভিন্ন ভাবে ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ছিল। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মী নূর হোসেন মারা যান। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে মিছিলে হামলা হয়। শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সেদিন প্রায় ৪০ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্ট। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে থাকা অবস্থায় ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারী’রা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর; জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় ধানমন্ডির গ্রীনরোডে শেখ হাসিনা ভোটকেন্দ্রে পরিদর্শন করতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অল্পের জন্য তখন তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চ করার সময় ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সেই গুলিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় সেই ট্রেনমার্চ কর্মসূচীতে অনেকর প্রাণ বেঁচে যায়। ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসের কথা। আওয়ামী লীগ আয়োজিত পথে পথে এক জনসভায় বোমা হামলা চালানো হয়। তখন দলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে এক অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় কার্জন হল থেকে অস্ত্রধারীরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ২০০০ সালের ২০ জুলাই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। আর এই বোমা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে। বোমাটি বিস্ফোরিত হলে শেখ হাসিনাসহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত জনসভাস্থল ও তার আশে পাশের অবস্থান। ২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার; ঘাতকচক্ররা সেখানে বোমা পুঁতে রাখে। গোয়েন্দা পুলিশ তা উদ্ধার করে। ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়াতে শেখ হাসিনার গাড়ী বহরে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে । অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তিনি। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ী বহরে গুলিবর্ষণ ঘাতক চক্র। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সমাবেশস্থলে একের পর এক ছোড়া হয় আর্জেস গ্রেনেড। রচিত হয় ইতিহাসের বর্বরোচিত আরেক কালো অধ্যায়। শেখ হাসিনা যে ট্রাকে উঠে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেই ট্রাকে বৃষ্টির মত নিক্ষেপ করেছে আর্জেস গ্রেনেড। শুধু গ্রেনেড হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে একের পর এক বুলেট চালিয়েছিল যা বুলেটপ্রুফ গাড়ী এবং দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে সেদিন সময় শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত ও পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করতে হয়েছে প্রায় ৩’শ নেতাকর্মীকে। এর কোন ঘটনারই বিচার হয়নি।
পানি সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে যান্ত্রিক ক্রুটির কারণেই বিমান জরুরি অবতরণ করেছিলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি একটি যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল। আর কিছু না। যাই হোক, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। সহি-সালামতে ফিরে এসেছি। সবার দোয়া চাই।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জবাব দিতে গিয়ে শরণ নেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বন্দী বীর’ কবিতার। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’।
আমরা ধরে নিলাম এর মধ্যে কোন ষড়যন্ত্র নেই , তবু প্রশ্ন থেকে যায় এই পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের কয়টা ফ্লাইট জরুরী অবতরণ করা হয়েছে। রানওয়ে ধাতব বস্তুর জন্য কয়টি ফ্লাইট নামতে দেরী হয়েছে। এই পরিসংখ্যান আমারা সাধারণ নাগরিক বিমানের কাছে জানতে চাইতেই পারি। যদি নিয়মিত এইটা ঘটে থাকে তাহলে ধরে নিব সেটা স্বাভাবিক যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল। আর যদি অনিয়মিত ভাবে ঘটে, তাহলে কোন ভাবেই ষড়যন্ত্রের বাইরে ভাবার অবকাশ নেই।
মুখে যতোই আমরা সব মানুষ সমান বলি বাস্তবে তা নয়। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বহন কারী বিমান আর যাত্রী বহনকারী বিমানের নিরাপত্তা ধরণ নিশ্চয়ই এক নয়?
আমাদের দেশের ঐতিহ্যগত নিয়ম হল কোন দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্ঞানী ব্যক্তিগণ মাসের পর মাস কোন ক্ষেত্রে বছরের পর বছর তদন্ত করেন , কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আর কিছুই জানতে পারেন না।
এখানেও ব্যতিক্রম ঘটল, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের জরুরী অবতরণের দায়ে ৫ জন কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যান্ত্রিক দুর্যোগে কর্মকর্তাদের হাত কোথায়?
স্বাভাবিক যান্ত্রিক দুর্যোগ হলে প্রধানমন্ত্রী দেশে আসার আগেই তাড়াহুড়ো করে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা কেন? তার মানে কোথাও গলদ আছে।
বিমানমন্ত্রী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির জন্য আলাদা বিমানের ব্যবস্থা করবেন।
কিন্তু সেই বিমান চালাবে কে? প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি কি নিজেই বিমান চালনা করবেন? যদি ও প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেটা নাকচ করে দিয়েছেন। গরীবের ঘোড়া রোগ বলে তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য সেটা বিলাসিতার পর্যায়েই পড়ে।
আমাদের ভয়ের কারণটা অন্য জায়গায়, আমাদের জাতির কপালে একটা ১৫ আগস্টের দগদগে ক্ষত রয়ে গেছে। সেই ভয় আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। বঙ্গবন্ধুকে বারবার বলা হয়েছিল ৩২ নম্বরের বাড়ি ছেড়ে গণভবনে থাকতে, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ও ভালবাসার কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট হেরে গেছে। বঙ্গবন্ধুর এই চরিত্র শেখ হাসিনার মাঝে ও বিরাজমান। তিনি বারবার বলেন, আমি বোনাস লাইফে আছি, রাখে আল্লাহ মারে কে।
কিন্তু শেখ হাসিনা কি জানেন, তাঁর নিজের জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্য তাঁকে কতোটা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নামের পাশে অন্য কোন নামই শোভা পায়না। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে ও যেন ছাড়িয়ে যেতে চাইছেন শেখ হাসিনা। তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে সফলতার মধ্য দিয়ে। ১৯৮১ সাল থেকে খুনি চক্রের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন, তাই হয়তো এবার সর্বশেষ চেষ্টা হিসাবে হয়তো বিমান কে বেছে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পাশে সেদিন যেমন খন্দকার মোশতাক গং ছিল, আপনার পাশেও এদের প্রেতাত্মা বিচরণ করছে। তাই নিরাপত্তার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই, আবেগ নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে ৬৩২ বার চেষ্টা করেও মারতে পারেনি সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী ফিদেল কাস্ত্রোকে। অতএব প্রথমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
হাঙ্গেরি যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা গণভবনে নারায়ণগঞ্জের এম পি শামীম ওসমানকে তাঁর কপালের কাটা দাগ দেখিয়ে বলেছিলেন, যার জন্য আমার কপালে কাটা দাগ তাঁকে ও আমি আমার মন্ত্রী সভায় জায়গা দিয়েছি, দেশের স্বার্থে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সেই ললাটের দাগ আপনার থাক, বাঙালির ললাট লিখন যেন না হয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সমস্যা, সাঁওতাল সমস্যা, পাহাড়ে সমস্যা, কলেজে বিশ্ব বিদ্যালয়ে সমস্যা, রাজপথে সমস্যা, সব সমস্যার পর ও কিছু মানুষ বুকে বিশ্বাস নিয়ে বসে আছে, কোন সমস্যাই বাংলাদেশে থাকবে না। আলাদীনের চেরাগ হাতে শেখ হাসিনা আছেন, শেখের বেটি আছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা আছেন এই শক্তিটুকু নিয়ে।
মৃত্যু পায়ের ভৃত্য হোক, জীবন নয়। বাংলাদেশের জন্য আপনাকে খুব বেশী প্রয়োজন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য