আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

গোপনে পাচার, পাপাচার

গোঁসাই পাহ্‌লভী  

গোপনে কেন করতে হয়? আপনার ‘সত্য’ কেন গোপন? এই ‘সত্য’ কি ‘মিথ্যার’ পোলার অপজিট? এই প্রশ্নের উত্তর একটাই। আপনি সত্য গ্রহণে সক্ষম নন, আপনার সামনে থেকে যদি পর্দাটা সরিয়ে ফেলতে হয়, তাহলে আপনি অজ্ঞান হবেন, নতুবা আপনি ‘সত্য’কে হত্যা করতে গিয়ে মানুষটিকেই হত্যা করবেন, হত্যা এখানে খুব কম অর্থই বহন করে, বলা ভালো লোকটার মৃত্যু ঘটাবেন আপনি।

মনে পড়ে মনসুর আল হাল্লাজের কথা। ‘আনা আল হক’ মানে সত্য প্রকাশ্য করার জন্যে আপনারা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করলেন! খেয়াল করে দেখুন, আপনারা হত্যা করতে চেয়েছিলেন ‘সত্য’কে। কিন্তু আপনারা মনসুরকে হত্যা করলেন! কিন্তু এই কথা আজকে সিগনিফিকেন্ট যে, বাক এবং বাক্য হয়ে মনসুর আল হাল্লাজ উচ্চারিত হচ্ছে, যেভাবে, যে উপস্থিতি ‘হক’, সত্য, সেই সত্যকে আপনারা ইবলিস, এবং শয়তানের মতো কোনও এক পোলার অপজিটে নিয়ে চিন্তা করছেন! মনসুর আল হাল্লাজ আপনাদের কাছে কেবল এক বিশেষ্য, এবং বিশেষণ বিশেষ!

গোপন রাখাটা কেন জরুরী এটা নিশ্চয়ই আপনারা ইতিমধ্যে অনুধাবন করতে পেরেছেন!

সত্য শব্দকে, বিশ্বাস শব্দকে বিপরীতধর্মী মনে করার কিছু ফলাফল আছে, সেই ফলাফল ভোগ করার কাল এখন। আপনি যখন ‘সত্য’ শব্দ উচ্চারণ করছেন, তখন অটোমেটিক্যালি সেখানে মিথ্যার অস্তিত্ব আছে বলে ধরে নেওয়া হয়! কিন্তু আদৌ সত্য কি মিথ্যার বিপরীত শব্দ কিনা এই প্রশ্ন করেন নাই। ফলে গোঁড়ায় গলদ থেকে গেছে। সত্য গ্রহণ বা মিথ্যা গ্রহণ তো দূরের কথা আপনি সত্যমিথ্যা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্যই বহন করছেন না, কিন্তু লাখে লাখে শহীদ হচ্ছেন, শহীদ করছেন। দেয়ালের বা পর্দার প্রয়োজনীয়তা এখানেও খেয়াল করুন। আসলে পর্দার অন্তরালে কি ঘটে সেটা আপনি জানলেও, দেখতে আগ্রহী নন। যে ক্রিয়া আপনি করছেন, সেটার মূল মাজেজাটাই আপনার কাছে পরিষ্কার হয় নাই। ফলে, আপনার মধ্যে সে ভয় থাকবে।

সত্য শব্দ সৎ,
সৎ চিৎ এবং আনন্দ। ফকির লালন সাঁই কিংবা অনেক মহত এই সচ্চিদানন্দতত্ত্ব প্রচার করে গেলেন। কি এই সচ্চিদানন্দ, এর গাওয়াগাওয়ীর বিরাম নাই, কিন্তু এর দর্শনের পাঠটা কি? প্রশ্ন হিসাবে এসেছে কি?

আশ্চর্যের বিষয় এই, প্রতিদিন সত্য মিথ্যা শব্দের ব্যবহার সব থেকে বেশি কিন্তু সত্য শব্দের বা মিথ্যার শব্দের মানেটা যে কি এটা তো জানাই হলো না,

আমরা কি জানি?
জানি না, তবে জানার চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? আপনার ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, যতক্ষণ আপনি বিষয়বস্তুর সার্বিকতা জানছেন, ততক্ষণ আপনি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না!

প্রশ্ন হলো, কিভাবে আপনারা মনসুর আল হাল্লাজের মৃত্যু, হত্যা এবং দণ্ড বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

সিদ্ধান্তকারীরা কি আনা আল হকে’র বিষয়ে আদ্যোপান্ত জানতে পেরেছিলো? না জানতে পেরেছিলো মনসুর আল হাল্লাজকে?

খেয়াল করুন, ‘সত্য’ এবং ‘মিথ্যা’র এই বানানো পোলার অপজিট খুব গুছিয়ে নিজের বিষয়ে ব্যবহারিক মিথ তৈরি করেছে,
কীরকম!
‘সত্য’ যেন আলো অন্ধকারের আরেক বানানো পোলার অপজিটের মতো নিত্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ব্যবহার করার পেছনে আরো কিছু ঘটনা রয়েছে, যেমন: সত্য কিংবা মিথ্যা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, আপনি শব্দ দুটির অর্থ হিসাবে হাজির করলেন এমন কিছু শব্দকে অর্থ হিসাবে টেনে আনবেন যা কোনও ক্রমেই একই নিরুক্তিজাত নয়!
যেমন, ‘সত্য’ শব্দের বা ‘মিথ্যা’ শব্দকে আপনি সব মিলিয়ে ঐ পোলার অপজিট দিয়েই অর্থ তৈরি করে দেখাচ্ছেন, কিন্তু এই দুই পদ্ধতি বাদ দিলে কিন্তু সত্য বিষয়ে বলতে হলে এভাবে বলছেন যে, ‘যা দেখা যায়’, বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়! এখানে ‘দেখা’ যে শব্দ পাওয়া গেল আদৌ তা ‘সত্য’ শব্দের গঠন প্রক্রিয়ার মতো নয়, আপনি এমন একটা অর্থের কথা বলতে পারেন না, যা প্রকৃত প্রস্তাবে স্বতন্ত্র নিরুক্তির অধিকারী। অন্য দিকে মিথ্যার বিষয়েও একই পদ্ধতি। যেমন ধরুন, ‘মিথ্যা’ শব্দের অর্থ যদি বলা হয় ‘যার অস্তিত্ব নাই’, তাহলে এর অর্থ কি এই যে, মিথ্যার অর্থ হিসাবে অস্তিত্ব অনিবার্য? কিংবা ‘মিথ্যা’ শব্দের সাথে আদৌ ‘সত্য’ শব্দের অর্থগত মিল রয়েছে!

মিথ্যার ভেতর মিথ রয়েছে, এইখানে ‘মিথ’ মানে একটা ভাষা, যার ব্যবহার রয়েছে, এই মিথ আছে যা হ্যাঁ’য়ের সাথে সম্পর্কিত নয়,

সত্য এবং মিথ্যার বিষয়ে গড়ে ওঠা মিথ প্রচলিত বিধায়, সত্যমিথ্যা তার নিজের অর্থ নিয়ে হাজির হতে পারেনি। ফলে, ভাষায়ও মিথের অর্থে মিথ সৃষ্টি হয়েছে, রূপক ভেঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে রূপক।

গোপনীয়তা কেন জরুরী এইখানে আবার ফিরে আসলাম আমরা।

যদিও আপনি বলবেন গোপন তো তা-ই যা প্রকাশ্য নয়

কিন্তু আপনি ভুলেও গরুর কথা টানবেন না, এবং পণ হিসাবে গরুকে আপনি গোপনেই যে পাচার করেছেন, পাচারই আচার হয়ে আজ পাপাচার নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু ভুলেও আপনি কদাচিৎ ‘গোপন’ প্রকাশ্য করলেও, ‘দৃশ্য’ হিসাবে সে সব আপনার কাছে ভীতিকর!

গোঁসাই পাহ্‌লভী, ভাস্কর, লেখক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ