আজ বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

২০১৬ : হতাশ করেছে রাষ্ট্র

সহুল আহমদ  

২০১৬ শুরু হয়েছিল ভূমিকম্প দিয়ে; সূর্যোদয় নাকি আভাস দিয়ে যায় দিনের বাকি বেলা কেমন যাবে! সে হিসেবে এটা ছিল যথার্থ সূচনা।

ব্যক্তিগত জীবনে, বিশেষ করে গোটা ছাত্রজীবনের সবচেয়ে হতাশার বছরটার শেষ সীমান্তে এসে পৌঁছে দেখি পিছনে শুধুই অপ্রাপ্তি আর শূন্যতা। একটা পরীক্ষাও ভালো দিই নি। সুখ শুধু এটুকুই যে, ভালো-মন্দ মিলিয়ে এ বছরে কিছু জিনিসপত্র লিখেছি। তবে সবচেয়ে বড় অন্ধকারটার উপস্থিতি ছিল জাতীয় জীবনে।

ওই বছরে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গিয়েছিল তনু, তারপর গভীর বেদনা এবং আশংকা নিয়ে দেখেছি মৃত মেয়েটিকে নিয়ে রাষ্ট্রের টানা হেঁচড়া। ছাত্র সমাজ উত্তাল হয়েছিল, কিন্তু ধর্ষণ থেমে থাকেনি। 'আসক' জানাচ্ছে যে, জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত ৬৭১ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ৩২ জনকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে এবং ৭ জন আত্মহত্যা করেছেন।

ধর্ষণ নিয়ে 'টাইমস'-এর এক প্রতিবেদনে এক সার্জন বলেছিলেন, ধর্ষক জানে সে কোনো কারাগারে যাবে না, তার জন্য কোনো মৃত্যুদণ্ড অপেক্ষা করছে না এবং সে নির্দ্বিধায় বেঁচে থাকবে। এজন্যই চলছে একের পর এক ধর্ষণ। আমাদের রাষ্ট্রের বিচারহীনতার ধারাবাহিকতারই ফলাফল হচ্ছে ‘ধর্ষণ সংখ্যা’র এমন বৃদ্ধি।

২০১৩ সাল থেকে জঙ্গি শুরু হওয়া জঙ্গি হামলাগুলোকে মোকাবেলা না করে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে সরকারের পক্ষ থেকে এড়িয়ে যাওয়ার কারণেই ২০১৬ সাল এদিক দিয়ে রক্তাক্ত এক বছর। জুলাইয়ের হলি আর্টিজানে হামলা ও বিদেশী নাগরিকদের মৃত্যু এবং শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠে হামলা আমাদের জন্য দুঃসহ স্মৃতি। যদিও রাষ্ট্র সামরিক দিক থেকে জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে বেশ সফল তবু আমরা কিছু জঙ্গিকে চোখের সামনে দিয়ে বের হয়ে যেতে দেখি। মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ক্রসফায়ার কিংবা সামরিক মোকাবেলার মাধ্যমে জঙ্গি দমন করা যাবে না, সামাজিক ও আদর্শিক দিক থেকেও তাদের মোকাবেলা করতে হবে।

ওই বছর সংখ্যালঘু ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর রাষ্ট্র এবং সরকার পক্ষের সাম্প্রদায়িক লোকদের ন্যক্কারজনক আক্রমণ এবং সে আক্রমণর তীব্রতা - “সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম নেয়াটা পাপ”- এই আপ্তবাক্যের সত্যতা প্রমাণ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো হয়েছে – যার সাথে সরকার পক্ষের লোকেরাই জড়িত। পুলিশ নিজ হাতে আগুন দিয়েছে সাঁওতাল পল্লীতে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৯৮ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। নিখোঁজ রয়েছেন ২২জন। প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে ২০৯টি। ৩৬৬টি মন্দিরে পূজা বন্ধ করা ও ৩৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ওই বছর ১৫ হাজার ৫৪টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বলে দাবি করা সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এই যদি হয় পরিস্থিতি – তাহলে এ দুঃখ কোথায় রাখি!

যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশি হামলা এবং বিভিন্ন ভাবে বাধা প্রদানের ঘটনা এ বছর আমাদের রাষ্ট্রের ভয়ংকর এক ফ্যাসিবাদী রূপ উন্মোচিত করেছে। সুন্দরবন নিয়ে সবধরনের আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারের গুন্ডাবাহিনী আক্রমণ করেছে। এমনকি সরকারের বুদ্ধিজীবী বাহিনী এ বিষয়ে নাটক পর্যন্ত করতে দেয় নি। ময়মনসিংহে কলেজ নিয়ে এক আন্দোলনে পুলিশি হামলায় একজন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। সেই সাথে ব্লগ বন্ধ এবং লেখার কারণে গ্রেফতার করার মাধ্যমে বাক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ তো ছিলই!

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন – একটা গণতান্ত্রিক দেশের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। আমাদের দেশেও নির্বাচন হয় – কখনো জনগণ কোন না কোন কারণে অংশগ্রহণ করতে পারে না, আবার কখনো হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। নির্বাচনগুলো কখনো হয়ে ওঠে ‘মৃত্যুকূপ’। সুজন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে ১৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। মৃত্যুর দিক থেকে যা কিনা এক রেকর্ড!

এসবের কারণেই আমি বলছি এই বছরটা আমাদের জন্যে ভয়ংকর হতাশার বছর, যদিও ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ উন্নয়নের রঙ্গিন চশমা চোখে দিলে অনেক কিছুই এড়ানো সম্ভব!

সাহিত্যের জন্যে এই বছরটা ছিল অনেক কিছু হারানোর, অনেককে হারানোর। সাহিত্যাকাশের অনেক তারকাকে আমরা হারিয়েছি। আমরা হারিয়েছি রফিক আজাদকে; তাই এখন আর কেউ বলবেনা ‘‘ভাত দে হারামজাদা/ তা না হলে মানচিত্র খাবো’ । আমরা হারিয়েছি শহীদ কাদরীকে; তাই এখন আর কেউ বলবেনা, ‘রাষ্ট্র মানে লেফট রাইট’। আমরা হারিয়েছি একজন সৈয়দ শামসুল হক কে। এই শূন্যতা ভয়ংকর এক শূন্যতা।

এসবই হতাশার কথা। আজ পহেলা জানুয়ারি শুরু হয়েছে এক নতুন দিন, এক নতুন বছর – ২০১৭। মানুষ নাকি ততোটাই বড় যতটা তাঁর স্বপ্ন। তাই আমিও স্বপ্ন দেখি – উপরের কোন হতাশার ছবি পুনরায় দেখতে হবে না ২০১৭-তে।

সহুল আহমদ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ