আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

নেতা নয়, হাইব্রিড নেতা উৎপাদন বন্ধ করুন

নাজমুল হাসান  

যে সব আওয়ামী লীগ নেতারা জামায়াতের রোকনদের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তাদেরকে কী দলের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে? নাকি যে লেনদেন জামায়াতের সঙ্গে হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে হয়ে যাচ্ছে সেটাকেই তাদের পুরস্কার বলে গণ্য করা হবে?

একজন জামায়াতিকে আওয়ামী লীগ বানানো সহজ ব্যাপার না, খুবই কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজটি যারা করেছেন পুরস্কার তো তারা পেতেই পারেন! শুধু তাই না, এই মিশনকেও অব্যাহত রাখা দরকার। সেটা যদি রাখা যায় তবে দেশে আর কোন জামায়াতি থাকবে না, সেটা হবে দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমরা তো সেদিনের স্বপ্নই দেখি। জামায়াতমুক্ত বাংলাদেশ, এর চেয়ে বড় প্রশান্তি আর কী হতে পারে!

বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় পর্যায়ের বহু নিবেদিত-প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জামায়াতিদের আওয়ামীলীগিকরণ এবং অ-আওয়ামী লীগারদের ঢালাওভাবে আওয়ামীলীগিকরণে বাধা দিতে গিয়ে বড় বড় নেতাদের চক্ষুশূল হয়েছেন। নির্বাচনের সময়ে নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের­ পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনেককে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলে সেখানে গিয়েও হামলা চালানো হয়েছে। থানায় মামলা নিতে গেলে মামলা নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। মামলা নিলেও উল্টো তাদেরকেই হেনস্তা করা হচ্ছে। এটা অপ্রকাশিত কোন বিষয় নয়। সে সময়ের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিষয়।

সেই ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের উপরে যে নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছিল, কোথাও কোথাও ঠিক সেই রকমভাবে মারধোরের তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তাদের অনেকে আজও নিজের ভিটে-বাড়ীতে ফিরতে পারছেন না। অনেকে নেতার কাছে মুচলেকা দিয়ে, মুখ না খোলার আড়াল করে এলাকায় বসবাস করছে। সারাক্ষণ তটস্থ থাকছে এবং নেতার অ-আওয়ামী লীগ বা বিরোধী আওয়ামী লীগারদের খাজনা দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। কিছু করার নাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জামায়াতের, তাদের পক্ষে ও পকেটে আছেন কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা,­ কী করে একজন আওয়ামী সমর্থক তার ভিটে-বাড়ীতে ফিরবেন এবং ভালোভাবে বসবাস করবেন!

এসব আওয়ামী লীগ কর্মীরা জামায়াত-বিএনপির সময়ে মার খেয়েছে এবং এখনও মার খেয়ে যাচ্ছে। ওদের দুর্ভাগ্য যে ওরা আওয়ামী লীগ করে। বিভিন্ন প্রকার ঠিকাদারি কাজ-কর্ম পাওয়ার ক্ষেত্রেও বঞ্চিত হচ্ছে আওয়ামী সমর্থকেরা। ওদের কাছ থেকে লেনদেন হয় না বলে নেতারা ওদেরকে কাজও দেয় না। ওদের আত্মীয়-স্বজন চাকরী পায় না, পায় জামায়াত-বিএনপিরা, কারণ তারা লেনদেনে যায়! নেতারা ওদের কাছে যুধিষ্ঠিরের মতো সততা দেখিয়ে বিভীষণের মতো বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং জামায়াত-বিএনপির পক্ষে কাজ করে। কাকের মাংস কাকে খাওয়া এসব খবর পত্রিকায়ও আসে না।

নিবেদিত ও বঞ্চিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ফুঁসছে। দেশের আপামর জনগণ আওয়ামী লীগের নেতাদের এ অন্যায় কাজগুলি প্রত্যক্ষ করছে, তারা পত্রিকা ও অনলাইন থেকে এ সকল খবর জানতে পারছে। চেপে রাখার যুগ এটা নয়। কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় গেলে যখন এসব অপকর্মের জবাব তৃণমূল থেকে চাওয়া শুরু হবে তার পরিণাম ভাল হবে না, ভয়ঙ্করও হতে পারে। ভেতর থেকে পচন ক্যান্সারের মতন, যখন প্রকাশ পাবে তার আগে ক্ষতি যা হবার তা হয়েই যাবে। এ কথা নেতারা যে বোঝেন না তা তো নয়, নগদ নারায়ণ পেয়ে তারা না বোঝার ভান করে বসে থাকেন। নেতা মানেই সুবিধাবাদী।

দলের ভিতে বালির পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে। ভিত দুর্বল হয়ে পড়ছে। আওয়ামী ক্ষেতের মধ্য আগাছাকে নির্মূল করে চলেছে। দলের বড় নেতারা এ সবকিছুর জন্য হাইব্রিডদের দিকে অঙুলি তুলছেন। যেটা নেতাদের আরেক আইওয়াশ ও স্ট্যান্ডবাজি। এটা সমস্যার মূলে না গিয়ে ফল নিয়ে নাড়াচাড়া করা। এসব ফাঁকা হুমকি খাদকদের আরেকটা খাই-খাই বাণিজ্য করার সুবিধা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। এই কাগুজে হুমকির বিষয়টা হাইব্রিডদের কাছে ব্যাখ্যা করে নেতাকে সামলানোর জন্য তাদের কাছ থেকে বাড়তি কিছু কামানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।

হাইব্রিড হওয়া দোষের না বরং বড় একটা যোগ্যতা যা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার নির্দেশক। যারা হাইব্রিড উৎপাদনের খামার বসিয়েছে এবং টাকাকড়ি কামাই করে হাইব্রিডের চাষ করে হাইব্রিড উৎপাদন ও প্রতিস্থাপন করে দেশ ভরে ফেলছে, দোষ তাদের। কাজের কাজ করতে হলে হাইব্রিড উৎপাদনের এই খামার বন্ধ করুন। এ খামার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, খুঁজে বের করতে হবে না, চোখ বন্ধ করেও দেখা যায়। শুধু ইচ্ছেটা দরকার। কে দেখবে?

আশঙ্কা, হাইব্রিডের খামারীরা কিন্তু দলের মধ্যে পরম আদরেই আছে।

নাজমুল হাসান, লেখক, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ