আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

শান্তির দূত উইলি ব্রান্ডট ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

মোনাজ হক  

মার্চ স্বাধীনতার মাস। এই মাসটিকে কেন্দ্র করে আমার কিছু স্মৃতিচারণ।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে ১৯৭৪-এ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ চলে আসি। সেসময় বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগ এতোটা প্রকট ছিল না, যতোটা না এখন অনুধাবন করছি। এর প্রধান কারণ (আমার মতে) মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদানকারী নেতা বঙ্গবন্ধু তখনও জীবিত ছিলেন। তিনি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছেন, আর আমরা ছাত্ররা যারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম তাঁর ডাকে; তারা নিজ নিজ কাজে ফিরে গেছি। ছাত্ররা আবারও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠিক ওই সময়ই আমার জার্মানিতে চলে আসা।

(ছবি: পোল্যান্ড এর রাজধানী ওয়ারশো তে উইলি ব্রান্ডট-এর হাঁটুগেঁড়ে সম্মান প্রদর্শন)

ইউরোপে অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৬-এ যে মহীয়সী ব্যক্তিত্বের সাথে আমার পশ্চিম জার্মানির অস্থায়ী রাজধানী বন শহরের জার্মান পার্লামেন্ট (বুন্ডেসটাগ) প্রথম সশরীরে দেখা হলো, তাঁর সম্পর্কে আমার বহু আগে থেকেই এক আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বার্লিনে জার্মান ভাষা শেখার ক্লাস থেকে আমরা ১৬ জন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী জার্মান পার্লামেন্ট ১৯৭৬-এর মার্চ মাসে পরিদর্শনে যাই। দর্শক গ্যালারি থেকে প্রায় এক ঘণ্টা পার্লামেন্টের কর্মব্যস্ত দিনটি উপলব্ধি করলাম। আর সেই মানুষটির ভাষণ শুনলাম। কী সাবলীল তাঁর ভাষা, অপূর্ব তাঁর দেহভঙ্গি।

আমার কলেজ পড়ার সময় থেকে সেই ১৯৬৯ সালেই তাঁর নাম শুনেছি, তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথা জেনেছি; তিনি হলেন পশ্চিম জার্মানির চতুর্থ চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডট।

ইউরোপের সামাজিক গণতন্ত্রের পুরোধা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির কর্ণধার এই মানুষটি একসময় পশ্চিম বার্লিনের লর্ড মেয়র ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ এ জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে নির্বাচিত হন। পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা ‘স্ট্যাজি’-এর গুপ্তচর গুন্টার গিলিওন (ব্রান্ডট-এর প্রধান সেক্রেটারি) গোয়েন্দাগিরির অপরাধে চ্যান্সেলর ব্রান্ডট ১৯৭৩ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

তখনই দেখেছি জার্মানির রাষ্ট্রক্ষমতায় রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে তাঁর দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার। সেক্রেটারির অপরাধে চ্যান্সেলরের পদত্যাগ! কী মহান এই রাজনীতিবিদ!

আরও একটি যুগান্তকারী ঘটনায় চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডট বিশ্বনন্দিত হলেন, চ্যান্সেলর হিসেবে উইলি ব্রান্ডট ডিসেম্বর ১৯৭০-এ পোল্যান্ড সফরে গেলে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ হলোকস্ট স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের সময় সমগ্র জার্মান জাতির পক্ষ থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে পোল্যান্ডের ধ্বংসলীলায় দু’হাত জোর করে ক্ষমা চাওয়ার দৃশ্য, তাঁর হাটুগেঁড়ে বসে ক্ষমা চাওয়ার দৃশ্য তখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই ঘটনার সূত্র ধরেই নোবেল প্রাইজ কমিটি চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডটকে ১৯৭১ সালের নোবেল শান্তি পদকে ভূষিত করে।

আর ব্রান্ডট যখন ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর অসলোতে নোবেল শান্তি পদক হাতে নেন, তখন তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে স্মরণ করে বলেছিলেন-

“আপনারা যে মুহূর্তে আমাকে শান্তির নোবেল পদকে ভূষিত করছেন ঠিক তখন দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি দেশ, ভারত ও পাকিস্তান বাঁচা-মরার যুদ্ধে লিপ্ত এবং খুব সম্ভবত অতি শীঘ্রই একটি নতুন দেশের জন্ম হবে; সেটি হলো বাংলাদেশ”।

আমরা তখন মুক্তিযুদ্ধের শেষপ্রহরে প্রচণ্ড লড়াইয়ে লিপ্ত। শত্রুর গতিবিধি জানতে প্রতিদিন বিবিসি ও ভয়েস অফ আমেরিকার খবর শুনতাম। আমরা যখন রেডিওতে শুনলাম চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডট এর ঘোষণা, তারপর এই মানুষটিকে দেখবার জন্য আমাকে আরো পাঁচটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

মোনাজ হক, সম্পাদক, আজকের বাংলা, জার্মানি।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ