প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সাইফুর মিশু | ২৮ মার্চ, ২০১৭
মাত্র কিছুদিন পূর্বেই ফেসবুক সয়লাব ছিল গাজার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা ফেসবুক প্রোফাইল ছবি এবং ব্যানারে। গুলশান হামলা, সিলেট হামলাসহ দেশে যে কয়টি জঙ্গি হামলা হয়েছে গাজার তুলনায় কয়জন মানুষ সহানুভূতি প্রকাশ করেছে হতাহত এবং আক্রান্তদের প্রতি?
গাজার হামলায় যাদের মন কাঁদে, মন কাঁদে না তাদের নিজ দেশের হামলায়। এর অর্থ দাঁড়ায়, এই বিশাল গোষ্ঠী মনে করে এই জঙ্গিরা সঠিক পথেই আছে। এই দেশে যে অমানুষের বাম্পার ফলন হয়েছে, এরপর তাতে সন্দেহ থাকার কোন কারণ নেই।
বিশ্ব মিডিয়াতে যখন প্রথম প্রথম আইএস-এর খবর আসে, তখন আমাদের দেশের জামায়াত সমর্থকরা রোমাঞ্চিত হতো। তারা স্বপ্ন দেখতো সারা দুনিয়া এক সময় তারা দখল করে নেবে। এরপর যখন ধীরে ধীরে প্রথম দিকে তাদের নৃশংসতার খবর আসছিল, তখন জামায়াতিরা সেসব বিশ্বাস করেনি। বলেছে এসব ভুয়া, ইসলামের সৈনিকদের নামে মিথ্যা বানোয়াট প্রোপাগান্ডা। যখন সত্যিই মার খেয়ে চুল দাঁড়ি কেটে পালানো শুরু করলো সেসময় বাজারে এল নতুন তত্ত্ব। ইহুদির সৃষ্টি এই দলটি। অথচ তার মাত্র কিছুদিন পূর্বেই তারা শিহরণ অনুভব করতো এই গোষ্ঠির নাম শুনলেই।
ইদানীং জামায়াতি এবং কতিপয় চাটুকার লীগারদের মাঝে বেশ মিল। এই দুই শ্রেণীই বিশ্বাস করে সব ইহুদিদের ষড়যন্ত্র। মানে কেউ ষড়যন্ত্র করে, আর আমাদের দেশের নিরীহরা ললিপপ মুখে দিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রে পা দেয়। অবাক হয়ে দেখি, সবকিছুকে ষড়যন্ত্র বলে বাস্তবতা এড়িয়ে যাবার কি নির্লজ্জ অধ্যবসায়। সবদেশ আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, আর আমরা বসে বসে আঙুল চুষি। পাশের বাড়ির লোক এসে বলে, জিহাদ করতে হবে আর আমরা নাচতে নাচতে জিহাদে চলে যাই। ধরা পড়লে দোষ সব পাশের বাড়ির ঐ লোকের। কি চমৎকার হাস্যকর সব তত্ত্ব আসে বাজারে।
মাত্র চারজন জঙ্গি একটি বাড়ীতে টানা চারদিন আমাদের চৌকস সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। বুঝা গেছে ব্যাপারটা? পুলিশ, র্যাব, বিশেষায়িত বাহিনী ছাড়াও টানা চারদিন আমাদের দেশে, আমাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা মাত্র চারজন যুদ্ধ ক্ষেত্র বাঁধিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এত বিস্ফোরক কিভাবে তারা জড়ো করতে সক্ষম হলো, সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলার সময়ে?
জানা যায় সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানা হতে যে পরিমাণ গোলা বারুদ উদ্ধার হয়েছিল তার পরিমাণও ছিল আতংকিত হবার মতই। কিভাবে সম্ভব হলো? কারা নিজেদের সুবিধার জন্য কিংবা অবৈধভাবে কিছু অর্জনের জন্য এইসবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্পর্কে প্রশাসন কি আদৌ ওয়াকিবহাল আছে কীনা!
দেশের যে কোন জঙ্গি হামলার ঘটনাকে "সাজানো নাটক" বলা চেহারাগুলোকে কি স্থানীয় লোকজন চেনে না? অবশ্যই দলের তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এসব ব্যক্তিকে ভাল করেই চেনে। তবে কি কোনভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে?
স্থানীয় সাধারণ মানুষকে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মত গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে কী না? এলাকায় এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছেই যদি দলের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্য না হয়ে থাকে, তবে জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রম সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। কোন এলাকার একজন জঙ্গিমনষ্ক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদী না হলে অন্য আরেকজন উৎসাহী হবে ঐ পথে যেতে।
জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হলে অন্তত শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে উষ্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। সময়ে অসময়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের মুখ দিয়ে কোন শক্তিশালী দেশ সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে বসলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা দুরূহ হয়ে পড়বে।
জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি দেশ পুরোপুরি জঙ্গিবাদ মুক্ত তা বলা বর্তমান সময়ে বিরাট রকমের মূর্খতা। অথচ, মাত্র কয়েকদিন আগেই আমরা একজন দায়িত্বশীলের মুখেই শুনেছি দেশ জঙ্গিমুক্ত হয়ে গেছে। এরপরেও সিলেটের মত ঘটনা আমাদেরকে আতংকিত করে। কারণ দায়িত্বশীলরা যদি বলে দেশে জঙ্গি নেই, এরপর যখন এমন ঘটনা ঘটে তখন দায়িত্বশীলদের প্রতি আস্থা বিনষ্ট হয়। সন্দেহ হয় দায়িত্বশীলরা যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছেন কী না সে ব্যাপারে।
এক সময় সকলে মনে করেছে, শাহবাগ আন্দোলন বন্ধ হয়ে গেলেই বুঝি সব থেমে যাবে। শাহবাগ আন্দোলন এখন ইতিহাস। থামেনি জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড। এরপর প্রশাসন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কঠোর বক্তব্যের পরিবর্তে ব্লগার/এক্টিভিস্টদের বললেন সংযত হয়ে লেখালেখি করতে।
একে একে জঙ্গিদের হাতে নিহত হলেন একাধিক ব্লগার। তাতেও বন্ধ হলো না জঙ্গিদের কার্যক্রম। সিলেটের ঘটনার শুরুতে অবাক হয়ে দেখলাম, আমাদের সোয়াট টিম ঢাকা থেকে সিলেট যেতে হয়েছে সড়ক পথে। অথচ, আমরা দেখেছি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া প্রথম সারির নেতারা হেলিকপ্টারে ভ্রমণের সুযোগ পায়।
আমাদের সাবমেরিন আছে, নেই সোয়াটের জন্য হেলিকপ্টার। থাকলেও তা ব্যবহার করা না হলে, থেকে কী লাভ তা?
আমাদের সেনাবাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ, তারা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় অপারেশন টোয়াইলাইট পরিচালনা করেছেন। দেশের প্রয়োজনে তারা ক্যাজুয়ালিটি মিনিমাম রেখে চার জঙ্গিকে টিকেট কেটে দিয়েছেন তাদের স্বপ্নের গন্তব্যে। দেশে এবং দেশের বাইরে সুনাম কুড়ানো আমাদের এই সেনাবাহিনীকেই এখনো তাই শেষ ভরসার প্রতীক হিসেবেই দেখতে হয় আমাদের।
সবশেষে কথা একটাই, এখনো যদি আমাদের মাননীয়রা মনে করেন নানা রকম সুবিধা দিয়ে এদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন তবে তারা দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত হবার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য