আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

পাবনার গৌরবোজ্জ্বল বিজয় দিবস ২৯ মার্চ

রণেশ মৈত্র  

পাবনা তখন দুটি মহকুমা সমবায়ে গঠিত প্রাচীন একটি জেলা শহর। মহকুমা দুটির একটি হলো পাবনা সদর অপরটি সিরাজগঞ্জ। আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে সিরাজগঞ্জ মহকুমা ছিল পাবনা সদর মহকুমার চাইতে অনেক বড়। তবুও প্রশাসনিক সদর দফতর পাবনা শহরে অবস্থিত হওয়ায় পাবনা শহরই ছিল জেলার প্রধান শহর। সরকারী অফিস-আদালত ছাড়াও রাজনৈতিক দল ছাত্র সংগঠন সমূহেরও জেলা কার্যালয় ছিল পাবনা শহরেই। মোট কথা দুই মহকুমার নেতাদের মধ্যে জেলার নেতৃত্ব নিয়ে অপ্রকাশ্য দ্বন্দ্ব থাকলেও জেলার মূল নেতৃত্বও ছিল পাবনা শহরেই। আন্দোলনের ক্ষেত্রেও অবস্থাটা প্রায় তেমনই ছিল।

নিবন্ধটি লিখছি ১৯৭১ এর ২৯ মার্চ পাবনার বিজয় দিবস নিয়ে। যেহেতু সিরাজগঞ্জ তখনও পৃথকভাবে একটি জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নি তখন ঐ পাবনার বিজয় দিবসের অর্থ ছিল সিরাজগঞ্জের বিজয় দিবসও। কিন্তু সিরাজগঞ্জ কৃষক একটি জেলায় পরিণত হওয়াতে ২৯ শে মার্চকে আজও তাদেরও বিজয় দিবস বলে মনে করে কি না সঠিক ভাবে আমার জানা নেই। তবে পাবনা নেতৃত্ব দিলেও সে যুগে সিরাজগঞ্জ থেকেও জেলা কমিটিগুলির নেতৃত্বে বিভিন্ন দলের অন্তত: একজন উচ্চ এবং কয়েকজন সাধারণ স্তরের নেতাও থাকতেন। যেমন আওয়ামী লীগের এক সময়ের সভাপতি ছিলেন সিরাজগঞ্জের সৈয়দ আকবর আলী, মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অমূল্য লাহিড়ী ও সম্পাদক পদে সাইফুল ইসলাম ছিলেন কিছুকাল। এর অবশ্য বহু হেরফের বিভিন্ন সময়ে হয়েছে তবে তার ফলে যেহেতু পাবনাই ছিল হেডকোয়ার্টার এবং পাবনাতেই থাকতো জেলা কার্যালয়গুলি তাই গোটা জেলার সাংগঠনিক রাজনৈতিক সব কিছুই পাবনা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে তাই।

তদুপরি, ঐতিহ্যগতভাবে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পাবনা ছিল সমস্ত গণ আন্দোলনে মুখরিত একটি শহর। সেকালে আওয়ামী লীগ যতটা পাবনাতে শক্তিশালী ছিল - ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১৯৫৭ সালে তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ছিল অনুরূপ শক্তিশালী দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল। ছাত্রলীগ পাবনাতে তখন যতটা শক্তিশালী ছিল - ছাত্র ইউনিয়ন ছিল তার চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। তাই তাবৎ গণ আন্দোলন পাবনাতে বিপুল শক্তিতে পরিচালিত হতো।

বামপন্থী প্রধান শক্তি হিসেবে ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন যাঁরা নিখাদ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ও গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল নিরস্তর উচ্চ কণ্ঠ। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ছাত্র লীগ গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে এবং শুরু থেকেই নির্বাচন মুখী দল হিসাবে নির্বাচনের দাবীতেও আওয়ামী লীগ সর্বদা সরব ছিল।

১৯৪৮ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পাবনাতে ব্যাপক জনতার সমর্থন এবং মুসলিম লীগেরও একটি অংশ সহ এবং কংগ্রেসের অবশিষ্টাংশ, গোপন কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিকসহ ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রদের সক্রিয় অংশ গ্রহণে এক ব্যাপক গণ জোয়ার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। তার পরের কয়েকটি বছর ভাষা আন্দোলন অনেকাংশে স্তিমিত হয়ে পড়লেও পাবনাতে প্রতি বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হতো ব্যাজসহ মিছিল সমাবেশ প্রভৃতির মাধ্যমে। অত:পর বাহান্নর ভাষা আন্দোলন মূলত: ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও তার সাথে যুক্ত হয়েছিলো “শিখা সংঘ” নামক দু‘বছর আগে গঠিত এবং তৎকালীন পাবনা শহরে ব্যাপক পরিচিতি প্রাপ্ত বামপন্থী ভাবধারায় পরিচালিত সাংস্কৃতিক সংগঠন। তদুপরি সাধারণ মানুষ ও হোসিয়ারি ও বিডি শ্রমিকদের অংশ গ্রহণও ছিল ব্যাপক। ঐ শিখাসংঘই পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নে বিলীন হয়ে যায়।

অত:পর হঠাৎ দেখা গেল ১৯৫৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পাবনা স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছে পাবনা জেলা মুসলিম লীগ সম্মেলন যাতে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ যথা খান আবদুল কাইউম, সরদার আবদুর রব, নূরুল আমিন প্রমুখ আমন্ত্রিত অতিথিরা যোগ দেবেন বলে সম্মেলনের মাত্র তিনদিন আগে থেকে প্রচার সুরু করে। সম্মেলন যেমন তেমন মূল কথাটি ছিল বিশাল আকারের একটি জনসভার অনুষ্ঠান করা ১৯৫৪ সালে সম্ভাব্য নির্বাচনের প্রশ্নটিকে মাথায় রেখে যাতে পাবনার লুপ্ত প্রায় এবং সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় মুসলিম লীগকে পুনরায় চাঙা করা যায়। ঘটানো যায় একটি শো-ডাউন।

খবরটি বিদ্যুতের মত সারা শহরের ছড়িয়ে পড়লে পাবনার ছাত্র ইউনিয়ন - ছাত্রলীগ যৌথ বৈঠকে ঐ সম্মেলন পাবনায় হতে না দেওয়ার এবং খুনি নুরুল আমিনকে পাবনাতে প্রবেশ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেই মর্মে সকল মহলে গোপন প্রচারণা শুরু করে। বিস্তর জনসমর্থনও জুটে যায় অপ্রত্যাশিত ভাবে।

স্থির হয়, নদীপথে এসে যেখানে নুরুল আমিন অবতরণ করবেন পদ্মার চরের এক ঘাটে, সেখানে ছাত্র-শ্রমিকসহ গণ-মিছিল কালোপতাকা হাতে “খুনি নুরুল আমিন ফিরে যাও” সহ নানাবিধ শ্লোগান সহকারে তাঁর অবতরণ স্থলে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। তাতেও যদি না হয় তবে সকলে মিলে ঘাট থেকে শহরে আসার গোটা পথে অসংখ্য মানুষ শুয়ে পড়বে। ঐ অবস্থায়ই কালোপতাকা প্রদর্শন এবং শ্লোগানও চলতে থাকবে। জীবন - মরণ পণ করে নুরুল আমিনের পাবনা শহরে আগমন কর্মসূচি প্রতিহত করা হবে।

কিন্তু গোয়েন্দা সূত্র খবর পেয়ে ঐ নেতারা তাদের যাত্রাপথ বদলে অন্য-পথে সরাসরি পাবনা সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছান। এ খবরটিও মুহূর্তেই ছাড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সার্কিট হাউসে মিছিল করে গিয়ে পূর্ব নির্ধারিত শ্লোগান বিরতিহীন ভাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তখনই বিশাল এবং মিছিল কালো পতাকা নিয়ে সার্কিট হাউস অভিমুখে যাবার পথে মুসলিম লীগের গুণ্ডারা অতর্কিতে রাস্তার পার্শ্ববর্তী লাঠি-ফালা দিয়ে মিছিলের অগ্রভাগ আক্রমণ করে কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। আহতদেরকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে একই অঞ্চল থেকে লাঠি সোটা গাছের ডাল ভেঙে তৈরি করে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করে গুণ্ডাদেরকে না পেয়ে ঐ ভবেই মিছিলটি পুলিশের ব্যূহ ভেদ করে সার্কিট হাউসের সামনে গিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে।

বেলা তখন ১২ টার মত। সভা শুরু হবে চারটায়। তাই একে একে ফিরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে আরও অনেক বেলা ছাত্র যুব শ্রমিক জনতার বিশাল মিছিল নিয়ে শ্লোগান সহকারে স্টেডিয়াম মাঠের কাছে পৌঁছালে সহস্র কণ্ঠের গগন-বিদারী শ্লোগান শুনে সমবেত জনতা নেতাদের ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ব্যাপক পুলিশ প্রহরায় নেতারা কোন ক্রমে সভা-মধ্যে এসে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে চেয়ার-বেঞ্চ, শতরঞ্চি, মাইক্রোফোনের তার-সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে নেতারা কোন বস্তব্য না দিয়েই পুনরায় পুলিশ প্রহরায় কোনক্রমে সার্কিট হাউসে গিয়ে উঠলে হেলিকপ্টার এসে নেতাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা নিয়ে যায়।

এক অবিস্মরণীয় বিজয় ঘটে জনগণের । এভাবে একের পর এক সকল গণ-আন্দোলনের মুখে ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে-পাবনা জেলায় একটি মাত্র আসনের তারা কোনক্রমে জিতে যায়।

অত:পর যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হলো বটে নির্বাচনী বিজয়ের সফল পরিণতিতে কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এই ফল বা বাংলার জনগণের রায় না মানায় উৎসাহিত কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার মাত্র ৫৮ দিনের মাথায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করে দিয়ে পুনরায় গণতান্ত্রিক নেতা-কর্মীদের উপর কঠোর নির্যাতন জেল, জুলুম প্রভৃতিও শুরু করে।

পাবনাতেও ব্যাপক ধরপাকড় হয়। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল, এমন কি, ছাত্র সংগঠনগুলির কার্যক্রমও কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়।

পুনরায় আন্দোলন একের পর এক আন্দোলন। যার পরিণতিতে ১৯৭০ এর পাকিস্তান ব্যাপী প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে জেনারেল ইয়াহিয়া সরকার বাধ্য হলেও তাদের নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচনে সর্বাধিক আসনে বিজয়ী দলের হাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি নিজেরাই মানতে নানা টালবাহানা শুরু করে। ভুট্টো-ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রে জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডেকেও দফায় দফায় তা বাতিল করে দিয়ে এক দুঃসহ পরিস্থিতির তৈরি করে। ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ গর্জে ওঠে। এককভাবে বিজয়ীদল আওয়ামী লীগের নেতা বাংলার গণমানুষের নির্বাচিত জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা অবিলম্বে হস্তান্তর করে সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়। পাবনাতে চলতে সকাল-সন্ধ্যা মিছিল মিটিং ও বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন।

অকস্মাৎ সামরিক জান্তা বিষয়টি নানা জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া কথা বলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচিত নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বসম্মত ফর্মুলা বের করলে সে অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে ঘোষণা দেয়। বস্তুত: এটা ছিল বাঙালি বিরোধী সর্বশেষ গোপন ষড়যন্ত্র।একদিকে তারা বাঙালি তথা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না - অপরদিকে তারা কালক্ষেপণ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জাহাজে করে হাজার হাজার পাকিস্তানী সৈন্য, আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ পূর্ব বাংলার এনে নানা ক্যান্টনমেন্টে ছড়িয়ে দিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ঘটাবে যাতে ঐ নির্বাচনী রায় বাস্তবায়ন, বাঙালীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও ছয় দফা- ১১ দফা দাবী অস্বীকার করে তারা রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারে। পশ্চিম পাকিস্তানী সৈনিক গোষ্ঠী এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পূর্ণ সমর্থনে তৈরি হয় “অপারেশন সার্চলাইট” নামক এক ভয়াবহ সামরিক পরিকল্পনা ব্যাপক গণহত্যা সারা দেশে পরিচালনার জন্য।

যা হোক, জেনারেল ইয়াহিয়া আহুত আলাপ-আলোচনার বিরুদ্ধে ছিল পূর্ববাংলার জনমত। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্দেশ্যে নিজের লক্ষ্য ও আদর্শে অটুট থাকার আপোষহীন মনোভাব নিয়ে বঙ্গবন্ধু আলোচনায় বসলেন। সামরিক বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে কয়েকদিন ধরে এই আলোচনা চলে। বস্তুত: উভয় পক্ষই আপোষহীন কারণ ভুট্টো ক্ষমতার অংশীদার হতে চান-নতুবা গোটা পশ্চিম পাকিস্তান এই ফলাফল মানবে না যৌথ প্রধান মন্ত্রিত্ব ধরণের নানা অযৌক্তিক ও হাস্যকর ফর্মুলা উত্থাপন করতে থাকলে মারাত্মক এক অচলাবস্থায় সৃষ্টি হয়।

ওদিকে এই অবকাশে ব্যাপক সংখ্যায় পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ প্রভৃতি আমদানি করে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে নানা ক্যান্টনমেন্ট ও সেনা নিবাসে তা পৌঁছে দেওয়া হয়। স্থানে স্থানে আন্দোলনকারীদেরকে গুলি করে হত্যা করাও চলতে থাকে।

অত:পর ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে। আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা চলে যা। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র লিখে চট্টগ্রামে গোপনে পাঠিয়ে দেওয়ার পর পরই ঢাকাতে ব্যাপকভাবে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা শুরু করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার বিভিন্ন ছাত্রাবাস, ই.পি. আর এর পীলখানা সদয় দফতর ও রাজার বাগে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কারফিউ জারী করে ঢাকার পথে ঘাটেও হত্যালীলা চালানো হয়। ২৫ মার্চের রাতেই অন্তত: ১০,০০০ হাজার বাঙালী নরনারী এই হত্যালীলার নির্মম শিকারে পরিণত হন।

ঐ রাতেই ২০০ পাক সেনা ও কর্মকর্তা গোপনে চলে আসে পাবনাতে। পাবনা এসে তারা ওয়াপদা কলোনিতে তাদের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে। পাক-সেনারা ঘুমন্ত পাবনায় প্রবেশ করে পাবনার পুরাতন টেলিফোনে এক্সচেঞ্জ ভাবনাটিও দখল করে নিয়ে পাবনার অভ্যন্তরীণ ও বহিরাঞ্চলীয় টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সরকারী টেলিফোনগুলোকেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে পাবনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। মোবাইল ফোন তখনও চালু না হওয়ার সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

এ একটি জাতির বিরুদ্ধে অঘোষিত এক যুদ্ধ ঘোষণা যার লক্ষ্য-লক্ষলক্ষ-বাঙালিকে হত্যা ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ন্যুনতম সুযোগ ও সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেওয়া।

সারা বাংলা মত পাবনাতেও তরুণ-তরুণীরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ মিছিল আগে থেকেই। ২৬ মার্চ ভোরে পাবনা শহরে কারফিউ জারী করে পাক-সেনারা। তার শুনতে বা জানতেও পারে নি। তাই ভোরে যারা প্রাত:ভ্রমণে অভ্যস্ত থাকায় হাঁটতে বেরিয়েছেন-বা বাজার হাট করতে বা দোকান পাট খুলতে বেরিয়েছেন তাঁদেরকে দিব্যি আটক করে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে ওয়াপদা কলোনিতে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে সকলকে বন্দি করে রাখা হয়। এভাবে দফায় দফায় অনেককে সেখানে এনে আটক করা হয় যাঁদের মধ্যে উকিল, মোক্তার, ব্যবসায়ী, ছাত্র-যুবক সবাই ছিলেন।

ওদিকে বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ রাতেই আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হলেও খবরটি কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়। ফলে নানাবিধ গুজব ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন কি নেই তা নিয়ে সংশয় শঙ্কার তৈরি জনমনে।

অপরদিকে ২৬ মার্চ ভোর থেকে পাবনার ছাত্র যুবকেরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে গোপনে লাইসেন্স করা লাইসেন্স বিহীন সকল প্রকার অস্ত্র চেয়ে নেন মালিকদের কাছে থেকে। দিনভর চলে এই প্রক্রিয়া।

পাবনাতেও চলছিল বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন তাই সামরিক বাহিনীর নির্দেশ সত্ত্বেও কোন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বা বেসরকারি নানা চাকুরীতে লিপ্ত কেই, ব্যাংক, পোষ্ট অফিস, স্কুল-কলেজ সবই ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বন্ধ। পাবনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক নরুল কাদের (সি.এস.পি) তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থেকেই এ আন্দোলনে অপর সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীকেই গোড়া থেকেই (পহেলা মার্চ) অংশ গ্রহণ করছিলেন গোপনে প্রকাশ্যে যোগাযোগ রাখছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সাথে। পাকিস্তানী একজন সেনা-কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের বাংলায় গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা করার আবেদন জানালে তিনি সরাসরি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে দেন তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে আছেন।

অত:পর সপরিবারে তিনি বাংলা ছেড়ে চলে যান পদ্মার চরে। সেখানে এম.এন. এ আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন জেলা হাই কম্যান্ড যাতে আওয়ামী লীগ ন্যাপ-ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে কোন মূহুর্তে পাবনার পুলিশের অস্ত্রাগার আক্রান্ত হতে পারে। তাই ২৭ তারিখে ভোর থেকে তরুণ নেতৃবৃন্দ, পুলিশ-আনসার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশ লাইনের চারদিকের দালান রেজিস্ট্রি অফিসের, আইন জীবী সমিতির কার্যালয়ের , জজকোর্টের ছাদ ও জেলখানা এবং ডে পোষ্ট অফিসের ছাদে বন্দুক নীচের তাক করে ক্রলিং এর মত চুপচাপ শুয়ে পড়ে থাকেন। সন্ধ্যায় টিকই এক-ট্রাক সেনা অস্ত্রশস্ত্র সহকারে পুলিশ লাইনের দিকে আসতেই জজকোর্ট সহ নানা অফিসের ছাদ থেকে গুলিবর্ষণে হতবিহবল হয়ে পাক, সেনারাও নানা দিকে ফাঁকা গুলি চালাতে থাকে। উভয় উভয় পক্ষের বিরতিহীন গুলিবর্ষণে সন্ধ্যার পাবনা যেন কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন পাক-সেনারা নিহত হয়। তাদের লাশ নিয়ে আর্মি ট্রাক ভীতিগ্রস্ত হয়ে ওয়াপদা কলোনিতে ফিরে যায়। বিজয় সূচিত হয় পাবনা শহরে প্রথম দফা। জনমনে বিপুল উল্লাস। প্রতিরোধ-যোদ্ধারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত এই বিজয়ে।

সিদ্ধান্ত নেন হাই-কম্যান্ড টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন শত্রু মুক্ত করার। তাই ২৮ মার্চ ভোর রাত থেকেই একই পদ্ধতিতে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের চতুর্দিকের দালানগুলির ছাদে প্রতিরোধ যোদ্ধারা একই ভাবে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ ভবনে ২৮ জুন পাক-সেনা অবস্থান করছিলো অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সহ। নিমেষের মধ্যেই প্রতিরোধ যোদ্ধারা অতর্কিতে গুলিবর্ষণ শুরু করেন ঐ ভবনকে লক্ষ্য করে। সৈন্যরাও দিগ্বিদিক অনবরত গুলিবর্ষণ করতে থাকে। গুলি ও পাল্টাগুলি বর্ষণে পুনরায় শহর কম্পমান। দুই ঘণ্টা ব্যাপী তুমুল লড়াই এর পরে পাক সেনাদের গুলির ডাক্তার ফুরিয়ে গেলে একের পর এক তারা নিহত হতে থাকে - শেষ সৈন্যটিও নিহত হলে পুনরায় বিজয় উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে সরা শহরে।

ওদিকে চর থেকে অসংখ্য কৃষক মাথায় গামছা বেঁধে লুঙ্গি মালকোঁচা করে বেঁধে লাঠি, ফলা সড়কি যাই আছে তাই হাতে নিয়ে “জয় বাংলা” শ্লোগানে শহর প্রকম্পিত করতে থাকে। কাঁপন ধরে পাক-সেনাদের বুকেও। যা হোক টেলিভবনের সাফল্যের পর উদ্ধার হয় অজস্র আধুনিক অস্ত্র -রাইফেল প্রভৃতি।

দুপুরে নগরবাড়ি রোডে শহর থেকে দুই মাইল দূরে একটি অগভীর নলকূপে সেচ পানির মেশিনের ঘরে মাঠের মধ্যে ৪ জন সশস্ত্র অপেক্ষা করছিল। তারা পাহারা দিচ্ছিল পাবনা-নগরবাড়ি সড়ক।

বিজয়ী জনগণ এবারে তাদের প্রতি ধাওয়া করলে তারা গুলিবর্ষণ করতে করতে দৌড়ে পালিয়ে যায় সিংড়া এলাকায় একটি গ্রামে। পিপাসার্ত ও ভীতিগ্রস্ত হয়ে তারা এক গাছতলায় বসে অপেক্ষমাণ গ্রামবাসীর কাছে পানি খেতে চাইলে তাঁরা পানি এসে দেন। ওরা অস্ত্র রেখে পানি খেতে শুরু করলে ঐ অস্ত্র নিয়েই গ্রামবাসীরা ৪ জন পাক, সেনাকেই হত্যা করে। এবারে পাবনা শহরের সেনা অবস্থান গুলির প্রায় সবকটি মুক্ত হলো।

কিন্তু থেকে গেল ওয়াপদা হেড কোয়ার্টার যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক পাক-সেনা হয়ে পড়েছিল অবরুদ্ধ হাজার হাজার কৃষক দ্বারা যারা এসেছিলেন চর থেকে। আর তাদের কণ্ঠে শত্রু-শিবিরে কাঁপন ধরানো সহস্র কণ্ঠের শ্লোগান ‘জয় বাংলা’।

অকস্মাৎ ২৯ মার্চ সকালে পাবনার আকাশে বিমান বাহিনীর বিমান উড়তে দেখা গেল। বিমান থেকে অনবরত নীচের দিকে গোলা বর্ষণ করছিল। ঐ গোলাবর্ষণে ওয়াপদা ঘেরাওকারী কৃষকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। শহরের প্রতিরোধ যোদ্ধারা তরুণেরা বিমানকে লক্ষ্য অজস্র গুলি বর্ষণ করলেও উড়ন্ত বিমানে তা লাগে নি। অপরদিকে নাটোরের দিক থেকে পাবনা মানসিক হাসপাতালের নিকট দিয়ে ১০/১২ টি ট্রাক সাদা পতাকা উড়িয়ে সাদা পোশাকধারী জনা কয়েক মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে দিতে ওয়াপদা ভবনের সামনে দাঁড়ালে মুহূর্তের মধ্যে ঐ ভবনে থাকা সকল সৈন্য তাদের তাবৎ রশদ সহ ট্রাকগুলিতে উঠে একই পথে পালানো শুরু করে। ওয়াপদা ভবনে আটক নেতৃবৃন্দকে গুলি করে হত্যা করে যায় পাক-সেনারা। শাহীদ হন আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট আমিন উদ্দিন, ভাসানী ন্যাপ সভাপতি জনপ্রিয় দন্তচিকিৎসক ডা. অমলেন্দু দাক্ষী, ব্যবসায়ী আবু সাঈদ তালুকদার ও একজন শিক্ষককে। আরও অনেককে করে যায় গুরুতর ভাবে আহত।

ঐ ট্রাকবহর যাবার পথে হাজার হাজার জনতা তাদের অপকৌশল বুঝতে পেরে নানা স্থানে ব্যারিকেড রচনা করে সেনাদের যাত্রা বাধাগ্রস্ত করে জনতা গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এসে উভয় পক্ষ হতাহত হতে থাকে। পথে ট্রাকগুলি মাধপুর, দাশুরিয়া, টেবুনিয়া হয়ে নাটোরের গোপালপুর, চিনিকলের নিকটে যেতে যেতে অসংখ্য বাধা ও আক্রমণের শিকার হয় এবং পাবনাতে আসা ২০ সৈন্যের প্রতিটি সৈন্যই নিহত হন।

পাবনার ঐতিহাসিক বিজয় এভাবেই সূচিত হয় ২৯ মার্চে। তাই দিবসটি প্রকৃত অর্থেই পাবনা বাসায় কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল বিজয় দিবস। পাবনাই প্রথম লড়াই করে প্রতিটি পাক-সেনাকে হত্যা করে জেলা শহর হিসেবে প্রথম এমন বিজয় অর্জন করে।

অত:পর পাবনায় স্বাধীন প্রশাসনও গড়ে তোলা হয়।

তার পর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আমজাদ হোসেন ন্যাপ নেতা এডভোকেট রণেশ মৈত্রকে ভারত পাঠানো হয় যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক প্রশাসক আনার জন্য যাতে দ্বিতীয় দফা হামলা কার্যকর ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

লক্ষণীয় পাবনাতে ই.পি.আর ছিল না। শুধুমাত্র যুবক-ছাত্র, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর জীবন-মরণ লড়াইয়ে মাত্র তিন দিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে পাবনার বিজয় সূচিত হলো যা ছিল নজিরবিহীন। দিবসটি এবার থেকে পাবনা বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হওয়ার দাবী রাখে।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ