আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের কথিত সংবাদ কেন গণমাধ্যমে?

এস এম নাদিম মাহমুদ  

বনানীর ধর্ষণ ঘটনার পর অভিযুক্ত ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে কয়েকদিনের জন্য ‘জিজ্ঞাসাবাদে’ নিয়েছে পুলিশ। আর জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিন থেকে বেশ কিছু গণমাধ্যমে খবর এসেছে শাফাতের উদ্ধৃতি দিয়ে। রিমান্ডে থাকা শাফাত জিজ্ঞাসাবাদে নিজের জড়িত থাকার খবর, ওমুক-তমুক মডেলের সাথে ফষ্টি নষ্টির খবর, তার বাবার কুকীর্তির খবর ইত্যাদি ইত্যাদি নাকি ফাঁস করে দিয়েছেন আর তা আমাদের সাংবাদিকরা ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদে তুলেছেন। পাঠকও খাচ্ছে, সেই সাথে আমাদের সাংবাদিকতাও খাচ্ছে।

ঘটনাটি আজকেই নতুন নয়। পুলিশের হেফাজতে থাকা অভিযুক্তদের উদ্ধৃতি দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সংবাদ হয়ে আসছে। পুলিশের কাছে সঞ্চিত তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমের এইসব খবরে আমি স্তম্ভিত ও ব্যথিত। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় কেবলমাত্র ঘটনার স্বীকারোক্তি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশায়, যা থেকে মামলার তদন্ত অব্যহত থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে না যাওয়া পর্যন্ত কিংবা আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এমন তথ্য প্রকাশ ‘বিচার ব্যবস্থার’ বিঘ্নতার জন্য দায়ি হতে পারে।

প্রথমত, এই ধরণের সংবাদকে সরাসরি আমি ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ মধ্যে রাখি, যা থেকে সাংবাদিক ও পুলিশ ‘নিজ স্বার্থ’ রক্ষায় তৎপর থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, আদালতে বিচারাধীন কোন ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে, যা সংবাদগুলোতে কখনো চোখে পড়ে না। তৃতীয়ত, এই সংবাদগুলো আসার ফলে ‘আসল অভিযুক্তদের’ আইনজীবী একধরণের বার্তা পেয়ে যায়, যা থেকে নিজেদের ‘সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ করতে সুবিধা হয়। ফলে অধিকাংশ সময় আসল অপরাধীরা শাস্তির দুয়ারে যেতে পারে না। চতুর্থত, জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ‘অপরাধী’ করে তোলে। এইসব সংবাদ আসার ফলে অনেক সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজেদের পরিকল্পিত কাহিনীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোকেও তো ব্যবহার করতে পারেন, নাকি? ফলে এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ একধরণের সাংবাদিকতার‘ ভয়ানক খারাপ দিক বলেই সম্মতি দিতে চাই।

আচ্ছা, আপনাদের ১/১১ কথা মনে আছে? কথিত জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে সংবাদ মাধ্যমে যে খবরগুলো আসতো, যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এরপরও আমরা হাউজগুলো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠির চাপে সংবাদ ছেপেছি, সাংবাদিকতার ঘরে কলঙ্ক লেপন করেছি। কিন্তু এখন কি ধরণের চাপ আছে, যে কারণে জিজ্ঞাসাবাদের খবর তুলতে হবে?

আমরা যে কথিত জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে পাঠকদের খাওয়াচ্ছি কিংবা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছি, তার কৈফিয়ত কে দেবে? আপনি সাংবাদিক, আপনার অনেক ক্ষমতা, কিন্তু আপনি ভুলে গেলেন আপনার প্রধান কাজ বস্তুনিষ্ঠতা। আপনার কাজ হলো, জনগণের কাছে আসল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা। আপনার কাজ কাউকে বিশ্বাস করে তোলা নয়, বরং আপনার কাজ দিয়ে অন্যরা বিশ্বাসী হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য আপনি যদি প্রকাশ করেন, তাহলে আদালত কেন আছে? ওরা কি বিচার করবে? তার আগেই তো আপনি বিচার করে দিলেন। আর এই কারণে অনেক সময় আদালতকেও সমস্যায় পড়তে হয়।

হ্যাঁ, যে কাজ আপনি পুলিশের উদ্ধৃতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য প্রকাশ করলেন, সেই কাজটি করা উচিত ছিল আপনার। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তো আমরাই করতে পারি নাকি? এইসব ‘ ভালগার’ সংবাদ দিয়ে আমরা আমাদের সাংবাদিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছি। মিডিয়া ট্রায়ালের ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছি।

আপনি বলতে পারেন, চলমান ইস্যুগুলোতে পাঠকদের আগ্রহ থাকে বেশি। তাই বলে আপনি যা ইচ্ছে তা খাওয়াতে পারেন না। এটা অন্যায়, এটা অপসাংবাদিকতা।

আমি জানি, আমার চেয়ে শতগুণের অধিকারীরা এইসব সংবাদ করেন কিংবা দেখভাল করেন। আমার মত ছোট মানুষের কথা হয়তো তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাবে না। কিন্তু সাংবাদিকতা বাঁচিয়ে রাখতে হলে ‘পুলিশ রিমাণ্ডের’ কথিত সংবাদগুলো নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। আরো বেশি বেশি পেশাদারিত্বের পরিচয় আমাদের দেয়া উচিত। তা না হলে আমাদের মতো তরুণ সংবাদকর্মীরা একটু দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। আশা করি, আমাদের গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিরা এই ধরণের সংবাদগুলোতে ভবিষ্যতে দক্ষতার পরিচয় দেবেন। একই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য আদালতে না ওঠা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তথ্য প্রদানে সচেতন হবেন। কিংবা আদালতও বিচারাধীন বিষয়ের ‘গণমাধ্যমে তথ্য’ প্রবাহে দিক নিদের্শনা দিতে পারেন।

এস এম নাদিম মাহমুদ, গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ