প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ৩০ জুন, ২০১৭
গত ৬ মে ভাইয়ের ৩৪ তম জন্মদিনে আমি শুভেচ্ছা জানাতেই তিনি বলে বসলেন, আমি নাকি উনাকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছি। পরে যখন বললাম, জাপান বাংলাদেশের চেয়ে তিনঘণ্টা এগিয়ে তখন, তিনি বুঝতে পারলেন। আমি জানি না, সেদিন উনি খুশি হয়েছিলেন কি না।
আমার জন্মদিনে তিনি শুভেচ্ছা জানান নি। তবে সকাল থেকে উনি আমার বিবেককে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। উনার ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস আমার এই বিশেষ দিনে অনেক কাঁদিয়েছে। সত্যি বলছি, চোখের কোণে জল জমে গেছে। চারপাশে প্রচণ্ড ব্যস্ততা চলছে, এরপরও কয়েকটা বাক্য লেখার জন্য মনটা ছটফট করছে।
যেকোনো পেশাজীবীর প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার অধিকার রয়েছে আর তা হর হামেশায় হচ্ছে। অন্যান্য পেশায় কি হয় বলতে পারবো না, তবে আমাদের সাংবাদিকতায় এটি অহরহ ঘটে। সাংবাদিকদের ঘর বদল মানে, নতুন অভিজ্ঞতার পথ উন্মুক্ত হয়। সেই হিসেবে আমার অনেক পরিচিতজনই বছরে ২/৩ টা মিডিয়া হাউজ পরিবর্তন করে। আর এইসবে আমি শুধু ‘অভিনন্দন জানিয়ে’ কেটে পড়তাম।
ঠিক তেমনি, আজ হাসান ভাই উনার কর্মস্থল পরিবর্তনের একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। যে কষ্টের ইন্টেনসিটি পরিমাপের একক খুঁজে পাচ্ছি না। সকালে ল্যাবে যাওয়ার পর তার স্ট্যাটাসটি দেখার পর থেকে মনের ভিতর একটা প্রশ্ন জাগছে, সাংবাদিকতা তুমি কার জন্য? অর্থের কাছে তাহলে কি সাংবাদিকতা পরাজিত হয়ে যাচ্ছে?
ঠিক তাই। পনের বছরের সাংবাদিকতা করে, যখন একজন প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার সাংবাদিককে অর্থ কষ্টের অজুহাতে সাংবাদিকতাকে গুডবাই বলতে হয়, তখন সহসা মনে প্রশ্ন জাগে সাংবাদিকতার দিন ফুরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিভাগটি প্রতি বছর কয়েকশ সাংবাদিকতার স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেয়, তা কি অর্থের কাছে পরাজিত হওয়ার জন্য?
আচ্ছা, শরীফুল হাসান ভাইয়ের পরিবারের সদস্য কতজন? তার বেতন থেকে তিনি কয়জন পরিবারের সদস্যের মুখে অন্ন তুলে দেন? উনার কয়টা সন্তান স্কুল যায়? ঢাকায় উনার ফ্লাট কয়টা? উনার কয়টা প্রাইভেটকার রয়েছে? উনি কি প্রতিদিন ঢাকার নামকরা রেস্তোরায় খানাপিনা করেন?
দেড় দশকের সাংবাদিকতা করেছে, অথচ ব্যাংকে অর্থ জমেনি, ভাল বাড়ি হয়নি কিংবা প্রাইভেটকার নেই, এমন সাংবাদিকের সংখ্যা খুব কম কি?
আমার জানা মতে, উনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা আর একজন রিকশা চালকের পরিবারের সদস্যের সংখ্যার চেয়ে কম হবে বেশি হবে না। একজন রিকশা চালক, প্রতিদিন তার ফ্যামেলির জন্য অন্ন জোগাড় করতে পারলেও, শরীফুল হাসানরা পেরে উঠছে না। এই চড়া বাজারে হিমশিম খেয়ে গেছে।
যে মানুষটি কয়েক হাজার মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তনে কিছুটা হলেও অবদান রেখেছে, সেই মানুষটি আজ অর্থকষ্টে জর্জরিত। যে মানুষটি সৎ ভাবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে বলে, যৌবনের সিংহভাগ কেটে দিয়েছে, অথচ সেই কি না ‘সৎভাবে বেঁচে থাকা’-কে ভয় পাচ্ছে?
তাহলে, আমাদের মতো তরুণ সাংবাদিকরা কি বার্তা পাচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে, ডজন ডজন শিক্ষার্থী যে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে, তাদের কাছে কি বার্তা দিলো শরীফুল ভাই?
ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন পেয়েও যে সাংবাদিকের ঘরের কষ্ট দূর হয় না, আর্থিক সংকট দেখিয়ে রক্তে মিশে যাওয়া পেশাকে পরিবর্তন করতে হয়, সেখানে যেসব পত্রিকা ওয়েজবোর্ডই মানে না, বছরের পর বছর সাংবাদিকদের বেতন ঝুলিয়ে রাখে, সাংবাদিকদের বেতনের পরিবর্তে সম্মানি ভাতা প্রচলন আছে, সেখানে সাংবাদিকতা কি করে টিকে আছে কেউ কি বলবেন? ওয়েজবোর্ড পাওয়ার পরও একজন সাংবাদিক সৎভাবে দুবেলা খেতে পারছে না, সেখানে পত্রিকার সাইনবোর্ডওয়ালাদের সাংবাদিকরা কি করে? উনারা কি সৎভাবে বাঁচতে চান না? নাকি কার্ড হাতে ঝুলিয়ে দিয়ে দক্ষ চাঁদাবাজ তৈরি করে দিচ্ছেন?
তাহলে শরীফুল হাসানের পত্রিকার অন্যান্য সাংবাদিকরা কিভাবে দিনাতিপাত করে? নাকি আপনার মতো সবাই হতে পারে না দেখে আপনি ইস্তফা দিলেন?
যিনি একযুগ ধরে যে পত্রিকাটিতে সেবা দিয়ে গিলেন, অথচ বেতনের বনিবনা না হওয়ায় সাংবাদিকতায় ছেড়ে এনজিওতে চলে যাচ্ছে কেন? চণ্ডিদাসও যে সাধনা করে রজকিনীর মন জয় করতে পেরেছিল, সেখানে হাসান ভাই কি করলো?
আমার জানামতে, পত্রিকাটি প্রতি বছর যে বিভিন্ন জাঁকজমক তারকাবহুল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এই রকম একটি অনুষ্ঠান যদি কোন বছর আয়োজন না করে, তাহলেই তো শরীফুল হাসানের মতো অন্তত ৩/৪ টি সাংবাদিককে ৪/৫ বছর বেতন কষ্টে ভুগতে হবে না। পত্রিকাটিতে যে বিজ্ঞাপনের অর্থ নেয়া হয়, সেই রকম মাসে একটি বিজ্ঞাপন যদি হাসান ভাইয়ের রিপোর্ট পরিবর্তে ছাপে তাহলে তো হাসান ভাইয়ের বেতন কষ্ট দূর হতো।
আমি চাই না, উনি সাংবাদিকতা থেকে দূরে থাকুক। উনার এই পেশায় অনেক প্রয়োজন। অন্তত সমাজ বিনির্মাণে কিছু ভাল রিপোর্টের জন্য উনাকে সাংবাদিকতায় প্রয়োজন। তাই, আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, অন্তত একজন মানুষকে সৎভাবে এই পেশায় টিকে রাখতে এগিয়ে আসুন। আপনারা হয়তো অনেক তারকা তৈরি করার কৃতিত্বের জাহির করতে পারেন, কিন্তু শরীফুল হাসানের মতো সাংবাদিক তৈরি করা খুব কমই পেরেছেন। তাই চাইবো, হাসানভাইকে সাংবাদিকতায় ফিরে আনতে আপনারা এগিয়ে আসুন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য