প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ০৮ জুলাই, ২০১৭
জাপানিরা সময়ানুবর্তী জাতি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। আমার গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি তাহলো, এদের প্রতিটি কাজ পূর্ব-পরিকল্পিত। তাই নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ হয়। এরা যদি কোথাও বলে ওমুক দিন তমুক সময় তাহলে মানতে হবে ওই সময়ের এক সেকেন্ড নড়চড় হবে না।
গত মে মাসে হঠাৎ করে এই দেশের গণমাধ্যমে একটি খবর বের হয়, তাহলো জাপানের সম্রাট আকিহিতোর জ্যেষ্ঠ নাতনী মাকোর রাজ পরিবারের বাইরের এক সাধারণ পরিবারের ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়েছেন। রাজ পরিবারকে জাপানিরা প্রভু হিসেবে মেনে আসে তাই রাজপ্রসাদের খবরটিও বেশ চাউর হয়।
৫ বছর বয়সী রাজকুমারী মাকো টোকিও খ্রিষ্টান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা অবস্থায় ২০১২ সালেই কিই কুমুরো নামে এক ছেলের প্রেমে পড়েন যে কিনা তার সহপাঠী। এই খবর শোনার পর সম্রাট আকিহিতোকে তাদের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে সাধারণ পরিবারের সন্তান হওয়ায় রাজকন্যা মাকো তাকে বিয়ে করলে রাজকীয় উত্তরাধিকার হারাবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
যাই হোক অনেক দেন দরবারের পর গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ পরিবার থেকে জানানো হয় যে তাদের বড় কন্যা মাকোর বাগদানের জন্য ৮ জুলাই (শনিবার) দিন ধার্য হয়।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বুধবার থেকে জাপানের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কিয়ূশু দ্বীপে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে দ্বীপটির বেশ কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় শনিবার পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ২০ জন। ভেসে গেছে কয়েকশ কাঠের বাড়ি।
আর এই খবর শোনার পর রাজকুমারী মাকোর বাগদানই স্থগিত ঘোষণা করেছে স্বয়ং রাজকুমারী।
এই পঁচিশ বছর বয়সী যুবতি তার সম্রাট দাদুর সম্মান বাঁচাতে বলেছেন, যেহেতু রাজপ্রসাদের অনুষ্ঠান দেশবাসীর অনুষ্ঠান, সেখানে দেশের একটি অংশকে বিপদগ্রস্ত রেখে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান আয়োজন যথাযথ নয় বিবেচনায় রাজকুমারী বাগদান অনুষ্ঠানটি স্থগিত করার জন্য সম্রাটকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, বন্যায় আটকা পড়া মানুষদের জন্য সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রজার দুঃখে যারা দুঃখ ভাগ করতে জানে, আনন্দ ভাগ করতে জানে, তার কোন জাতের মানুষ বলতে পারেন? যারা নাগরিকদের কষ্টে নিজে কষ্ট পায়, শাবল হাতে উদ্ধার করতে যায়, এমন শাসকদের প্রভু মানবে তো কি মানবে?
সাধারণ একটি বাগদানের অনুষ্ঠান যে দেশে নাগরিকদের সম্মানে স্থগিত করা হয়, সেই দেশে কি ‘দেশপ্রেম-দেশপ্রেম’ ফোবিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন আছে?
হলি আর্টিজানের কথা মনে আছে? ২ জুলাই ঢাকার ঘটনা জানার পর জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আগে থেকে নির্ধারিত হিরোশিমায় একটি সভা স্থগিত করে নিজেই টেলিফোন করে সব খবরাখবর নিচ্ছিলেন। দেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিনি নিজে গিয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীদের পোশাক পরে উদ্ধার তৎপরতা করছেন।
আমার দেশে সরকার প্রধানরা দেশের দুর্যোগে তাদের সন্তানদের বিয়েশাদি কিংবা পার্টির মতো মামুলি বিষয় বন্ধ করেছে এমন কোন নজির দেখাতে পারবেন কেউ? আমি তো জানি দেশের আমাদের দুঃসময়গুলোতে শাসক কিংবা বিরোধীদের আনন্দের বন্যা বয়ে চলে। ওদের চোখে মুখে তখন হাসির ঝিলিক থাকে। দেড় হাজার মানুষ মারা গেলেও ওদের চোখে জল আসে না। কেবলই থাকে অভিনয়ের ছাপ।
এই সিলেটে হাওর ডুবে গেল আর কর্মকর্তারা বিদেশে ফুর্তি মারতে গিয়েছিল। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে আমার দেশে ভূমিধসে যে দেড়শো মানুষ মারা গেল, আর আমার শাসকরা বিদেশ ঘুরে আসে। মাটিচাপায় স্বপ্ন চাপাদের আর কেউ দেখতে যায় না। পত্রিকার ছবি দেখে নিজেদের দুঃখ ঢালে। জাতীয় শোক দিবসে ইচ্ছেমত কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করে।
আচ্ছা, আমাদের রাষ্ট্র চালকরা নাগরিকমুখী কবে হবে? কবে বুঝবে দেশপ্রেম মানে ত্যাগ, দেশপ্রেম মানে নাগরিকদের সুখ, দেশপ্রেম মানে মানুষদের কষ্ট ভাগাভাগি করা। কবে আমাদের শাসকগোষ্ঠি বলবে, নাগরিকদের এই কষ্টের সময়ে বিদেশ যাত্রা প্রয়োজন নেই?
কবে মনে করবে প্রজাদের ঘরের আনন্দ মানে আমার ঘরের আনন্দ?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য