আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জামায়াত-শিবিরের কাছে ক্ষমা চাইতে চাই!

জুয়েল রাজ  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ কি আওয়ামী লীগ মানছে না, নাকি কোথাও কোন কারণে আটকে আছেন তিনি? শেখ হাসিনা বারবার বলছেন আওয়ামী লীগের এমন দুঃসময় আসেনি জামায়াতে ইসলামি বা বিএনপি থেকে মানুষ এনে দল বড় করতে হবে। ‘যারা বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে ঢোকেন, তারা বিশেষ একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসে নানা অপকর্ম করেন। আর দোষ পড়ে দলের ওপরে।’ তিনি বলেন, ‘কোথায় কারা ঢুকেছেন, কাদের মাধ্যমে ঢুকেছেন, কী অপকর্ম করছেন, এসব তথ্য আমার কাছে আছে। আরও তথ্য আসছে।’ কারা, কোথায় অনুপ্রবেশ করেছেন, কার মাধ্যমে দলে ঢুকেছেন, দলীয় পদ পেয়েছেন, তাদের একটি তালিকা করে জমা দেওয়ার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ২১ জুলাইয়ের ঘটনা এইটা।

আবার কখনো বলেছেন জামায়াত ইসলামির নেতাদের সন্তান সন্ততি বা আত্মীয় স্বজন যেন কোন অবস্থায় দলীয় পদ পদবিতে না আসে, দলীয় পদ দেয়ার সময় যেন তাদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দল ভারী করে বদনাম কেনার দরকার নেই। এমন এলাকা আছে, শুধু দলেই নেওয়া হয়নি, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও দিয়ে দেওয়া হয়েছে এই অনুপ্রবেশকারীদের। এই বক্তব্যের সপ্তাহ পেরিয়েছে মাত্র। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে চলছে তোলপাড়।

রোববার (৩০ জুলাই) ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রামের রিজিয়া নদভী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রিজিয়া তার স্বামী ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর সঙ্গে থাকে, স্বামীর সংসার করে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার কাজে সে সম্পৃক্ত। গত চার বছর ধরে সে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণায় কাজ করছে। সে বলেছে, তার সঙ্গে তার বাবার কোনও সম্পর্ক নাই।’ রিজিয়া নদভীকে পদ দেওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিয়ের পরে সে জামায়াতের কোথাও জড়িত ছিল কি না, সেটা দেখা হয়েছে।” জামায়াত নেতাদের সন্তানরা আওয়ামী লীগ করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

দলের সেক্রেটারির চেয়ে বড় আওয়ামী লীগপ্রেমী হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়, সভাপতি শেখ হাসিনার পরে, দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি তিনি। বঙ্গবন্ধুর দল, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই দলের সাধারণ সম্পাদক যখন কোন বক্তব্য দিবেন যেনে বুঝেই দিবেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের এক ট্রাম্প কার্ডের জন্য আওয়ামী লীগকে ২০০১ সালে দায় মেটাতে হয়েছিল। সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সামনেই ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্য দিয়েছেন, কোন সদস্য এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি, তার মানে আমরা ধরে নিতে পারি, আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য। আগামী নির্বাচনে যেন এই দায় দলকে মেটাতে না হয়।

জনাব ওবায়দুল কাদের যেদিন সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন, সেদিনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ একটি আদর্শের নাম “আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, এটা অনুভূতি। এই হাজারো বন্ধুর রক্ত, চার নেতার রক্ত, ভাষা আন্দোলনের রক্ত, সেই অনুভূতি। এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে- নাম আওয়ামী লীগ।” যাদেরকে আওয়ামী লীগ করার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন তাদের সেই অনুভূতির সার্টিফিকেট আপনি কোথায় পেলেন?

বিষয়টা নৈতিকতার। পদ পদবির নয়, আজ পর্যন্ত কোন যুদ্ধাপরাধী বা জামায়াতে ইসলামির নেতার সন্তান কি ৭১-এর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোন নজির আছে বাংলাদেশে। আপনার স্বাক্ষরিত কমিটির নেত্রী রিজিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিতার পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয়নি। বর্তমান প্রজন্মের যারা জামায়াতে ইসলামি বা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের জন্ম বাংলাদেশের জন্মের বহু পরে। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, এবং জামায়াত বিতর্কে এই প্রশ্নটা আসেও বারবার। এদের তো কোন অপরাধ নাই। এরা তো মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মগ্রহণকারী যুদ্ধাপরাধীর দায় এদের কাঁধে কেন বর্তাবে? এর উত্তর কি? নৈতিকতা ও আদর্শের প্রশ্নটা সেখানেই চলে আসে। রিজিয়ার ক্ষেত্রে আপনি মাত্র চার বছরের ইতিহাস চেয়েছেন, কাদের মোল্লা, গোলাম আযম, মুজাহিদ, সাঈদী তো স্বাধীনতার ৪২ বছর বাংলাদেশের প্রতি অনুগত ছিল, ৭১-এর পরে তো আর কোন অপরাধ করেনি, তবে কি তাদের সাজা দেয়া ভুল হয়েছে?

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই নিজের টাকায় হাজার হাজার মানুষের কাছে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করেছে। যেখানে মূল বক্তব্য ছিল জামায়াত-শিবিরকে বাংলাদেশে প্রতিহত করা এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিশ্চিত করা। জীবনের তোয়াক্কা না করে যারা দীর্ঘদিন জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে, তাদের রাজনীতির বিরুদ্ধে নীতি আদর্শের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে, এরা আওয়ামী লীগের কোন পদ পদবিতে নেই, ছিলনা কখনো, আগামীতে ও পদ পদবি প্রত্যাশা করবে না। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে, বাংলাদেশকে ভালোবেসে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে দিনের পর দিন শেষ ভরসা হিসাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা নিশ্চয় ভুল করেছে। জামায়াত-শিবিরের নেতাদের সন্তান সন্ততি যদি আওয়ামী লীগ করতে পারে, তাহলে অতীতের বিরোধিতার জন্য জামায়াতে ইসলামির কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইবার ব্যবস্থা করে দিন।

আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনে, সৈয়দ আশরাফকে সাধারণ সম্পাদক না করায় একপক্ষ সেদিন দুঃখ পেয়েছিলেন, অন্যপক্ষ বলেছিলেন ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হলে সমস্যা কোথায়, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের রাজনীতি করা মানুষ তিনি। শেখ হাসিনা যা করেন বুঝে শুনেই করেন। শেখ হাসিনার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার সাজার চেষ্টা করা উচিত না। সৈয়দ আশরাফের এই শূন্যতা বারবার স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিশ্বস্ত ও অনুগত এক বিষয় নয়, খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর অনুগত ছিল, বিশ্বস্ত ছিল না কখনো। মাহবুবুল হক শাকিল আপনাকে খুব দরকার ছিল, বড় অসময়েই চলে গেলেন বা চলে যেতে হয়েছে আপনাকে! শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছার দরজাটা আমাদের জন্য বন্ধ। সাধারণ মানুষের দল আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও বহুবার বলেছেন, প্রান্তিক সমর্থকরাই আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র মানুষের কাছে নয়,উচ্চ আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামিকে ঘোষণা দেয়ার পর জামায়াতে ইসলামির নেতাদের সন্তান সন্ততিকে আওয়ামী লীগে বৈধতা দেয়া, পদ পদবি দিবেন শুধুমাত্র এমপির স্ত্রী হওয়ার কারণে?

ভোটের রাজনীতিতে বহু আপোষ রফা করতে হয়, এমপি হওয়া আর আওয়ামী লীগ হওয়া নিশ্চয় এককথা নয়।

ছোট একটা ঘটনা, সম্প্রতি ডেসপাসিতো’ (Despacito ) শিরোনামে স্প্যানিশ একটি গান বদলে দিয়েছে দেশের অর্থনীতি। মে মাসে ৫৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঋণের কারণে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছিল পুয়ের্তো রিকো দেশটিকে। সেই অবস্থা কাটাতে টনিকের মতো কাজ করেছে এপ্রিলে প্রকাশিত গানটি। গানটি দেখার পর পুয়ের্তো রিকোতে ট্যুরিজম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। ইতিমধ্যে ইউটিউবে ২৫০ কোটি মানুষ গানটি দেখেছে। লুইস ফনসি এবং ড্যাডি ইয়ানকির এই গানটিতে দেশটি চিত্র তুলে ধরেন। এরপর থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক সমুদ্র পাড়ের দেশটিতে ভিড় জমিয়েছেন। যেমন যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সময় বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য খন্দকার মোশতাকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তাজউদ্দীনের জাতির জনক তত্ব বদলে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের গতিপথ। তেমনি আপনার ছোট এই বক্তব্যটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভীতকে নাড়িয়ে দিবে।

জনাব ওবায়দুল কাদের হয় আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করবেন না।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে-আহমদ ছফা, বলেছিলেন আওয়ামী লীগ জিতে তখন শুধু আওয়ামী লীগ একাই জিতে, কিন্তু যখন আওয়ামী লীগ হারে তখন গোটা জাতিই একসাথে হেরে যায়।

জুয়েল রাজ, সম্পাদক, ব্রিকলেন; যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ