প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সাইফুর মিশু | ০১ আগস্ট, ২০১৭
বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো শুনলে সবচেয়ে বেশী কানে লাগে একটি কথা, “সহকর্মী ভাইয়েরা”। বঙ্গবন্ধু নিজেকে কখনোই সুপিরিয়র ভাবতেন না। তিনি তার একাধিক ভাষণে বলেছেন, "আমি তো আপনাদেরই একজন।" একারণেই তিনি বঙ্গবন্ধু হতে পেরেছিলেন।
তিনি ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় দলীয় কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে বলেন, “সহকর্মী ভাইয়েরা, আপনাদের সামনে যথেষ্ট কাজ রয়েছে। স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর, স্বাধীনতা রক্ষা করাও কষ্টকর। আমাদের নীতি পরিষ্কার। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় চারটা স্তম্ভ রয়েছে। এটার মধ্যে কোন কিন্তু-ফিন্তু নাই। এটা পরিষ্কার শাসনতন্ত্র দেয়া হয়েছে। আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগও পার্টি তাই বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করেছে। এবং আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোর যে অংশ এবং যে নীতি ছিল তাই আজকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে। এটা রক্ষা করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ কর্মীদের সবচেয়ে বেশী। যে বিশ্বাস করবে না রাস্তা খালি আছে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, পছন্দ হয় না চলে যাবার পারো। কিন্তু থাকলে নীতি বিশ্বাস করে থাকতে হবে। মরে না কোনদিন। নীতি আদর্শ কোনদিন মরে না। মানুষ মরতে পারে।” [শুনতে এলিংকে ক্লিক করুন]
তিনি বলেন, "এই দেশকে শাসন করতে হলে, এই দেশকে গঠন করতে হলে নিঃস্বার্থ কর্মী প্রয়োজন। হাওয়া কথায় চলে না।"
তিনি আরও বলেছেন, "ছাত্রনেতারা যখন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল তাদেরকে আমি বলেছিলাম। ছেলেরা মনে রেখো, প্রথমে আত্মসমালোচনা করো। আত্মসমালোচনা না করতে পারলে নিজেকে চিনতে পারবে না। আত্মসংযম করো, আর আত্মশুদ্ধি করো। তা হলেই দেশের মঙ্গল করতে পারবা।"
আওয়ামী লীগের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ কর্মী ভাইরা, কোনদিন তোমরা আমার কথা ফেল নাই। জীবনে কোনদিন আমি কন্টেস্ট করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বা প্রেসিডেন্ট হই নাই। তোমরা আমাকে সর্ব সম্মতিক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছো। তোমরা আমার কথায় রক্ত দিয়েছো। আজ শেষ দিন যখন আমি সভাপতি ছেড়ে যাচ্ছি তোমরা আমার কথা মনে রেখো, আমার কথা ভুলো না। কোনদিন স্বার্থে অন্ধ হয়ে তোমাদের ডাক দেই নাই। কোনদিন কোন লোভের বশবর্তী হয়ে মাথা নত শয়তানের কাছে করি নাই। কোনদিন ফাঁসির কাস্টে বসেও বাংলার মানুষের সাথে বেঈমানি করি নাই। আমি বিশ্বাস করি তোমরা আমার কথা শুনবা। তোমরা আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম করো। তোমরা আত্মশুদ্ধি করো। দুই চাইরটা, পাঁচটা লোক অন্যায় করে। যার জন্য এত বড় প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, যে প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা এনেছে, যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ কর্মী জীবন দিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানের ২৫ বছর পর্যন্ত ঐতিহাসিক সংগ্রাম; তার বদনাম হতে দেয়া চলে না।"
তিনি বলেন, "কিন্তু কয়েকজন লোক যখন গন্ধ পায়, যখন মধুমক্ষিকার গন্ধ পায় তারা এসে আওয়ামী লীগের নামে লুটতরাজ করার চেষ্টা করে, পারমিট নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করে। আওয়ামী কর্মীরা, আওয়ামী লীগ থেকে তাদের উৎখাত করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগে থাকার অধিকার তাদের নাই। আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে আছে, আত্ম সংযমের প্রয়োজন আছে আজ, আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন আছে আজ।
তোমরা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল বসেছো আজ। তোমরা মনে মনে চিন্তা করো, বুকে হাত দিয়া খোদার উপর নির্ভর করে বলো, আমরা মানুষকে ভালবাসি, আমরা বাংলার মানুষকে ভালবাসি, আমরা ২৫ বছর সংগ্রাম করেছি, আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি, আমরা ইতিহাস রাখবো, আমরা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবো। দেশকে মুক্ত করবো। তাহলে আওয়ামী লীগের ইতিহাস থাকবে। তাহলে মরেও আমি শান্তি পাবো।"
দলের সভাপতি হিসেবে বিদায়ী ভাষণে তিনি বার বার নীতি, আদর্শ, আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন। অথচ, বর্তমানের নেতা-কর্মীদের অবস্থা দেখলে বার বার আশাহত কই আমরা। যারা বঙ্গবন্ধুকে জানার চেষ্টা করেছি, যারা জাতির জনকের আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করি তারা তাঁরই ছায়া খুঁজে বেড়াই বর্তমানের নেতৃত্বের কাছে। কোথাও যেন সুর কেটে গেছে। কোথায় যেন লাইন হারিয়েছে ইতিহাস সৃষ্টি করা এই দলটি।
তবুও আশা রাখি, একদিন আবার ফিরে আসবে আপন আদর্শে, আপন নীতিতে। এই দেশটির জন্ম যে দলের নেতৃত্বে সেই দল গণ মানুষের দল, গণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং দেখানো পথেই চলবে এই দল এবং এই দেশ।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য