ডেস্ক রিপোর্ট

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১৯:৪৬

আস্থা রাখতে বললেন মমতা

এর আগে যার বিরোধিতার কারণে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি হয়নি সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তাঁর এবং ‘হাসিনাদি’(শেখ হাসিনা) ওপর আস্থা রাখতে বললেন। তিনি আরও জানান- এখন থেকে তিনি নিজে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কারণে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে তিনি সেতু হিসাবে কাজ করবেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কারণে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে তিনি সেতু হিসাবে কাজ করবেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগের দিন ঢাকায় আসা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের এই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘বৈঠকী বাংলা’।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতায় ছিটমহল বিনিময় ও তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতার দিকে ইংগিত করে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, দুই দেশের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসানে মমতার এই সফর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

নাট্যবক্তিত্ব আলী জাকেরও একই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, “আপনার মধ্য দিয়ে বাংলা খুঁজে পাই, বাঙালি খুঁজে পাই। আপনি রাজনৈতিক মতপার্থক্য ঘোচানোর চেষ্টা করবেন, আপনি সেতু হিসাবে কাজ করবেন।”সবার বক্তব্যের পর জবাব দিতে দাঁড়িয়ে পরে মমতা বলেন, “নিশ্চই রাখব। আমি সেতু হিসাবে ভূমিকা রাখব। “আমি অতি ক্ষুদ্র লোক, মাটির মানুষ। আমার দিক থেকে এলবিএ’র (স্থল সীমান্ত চুক্তি) প্রবলেম সলভ করে দিয়েছি।... তিস্তায়ও আস্থা রাখুন।

“আমাদের প্রবলেম আছে, আপনাদেরও প্রবলেম আছে। আমি হাসিনাদির সাথে আলোচনা করব। আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।” বৈঠক প্রসঙ্গে মমতা বলেন, এ বৈঠকে খুব ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। টিভি চ্যানেল নিয়ে একটি দাবি আছে। আমাদের দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের (ভারত) এখানে চাইলে বাংলাদেশে চ্যানেলগুলো ব্যবসায়িকভাবে আসতে পারে।

মমতা আরও বলেন, কলকতার রাজারহাটে তিনি জমি দেবেন। তিনি চান সেখানে বাংলাদেশ সরকার সেখানে একটি ভবন করুক। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকবে। তিনি বলেন, দুই দেশের সিনেমা শিল্প নিয়ে অনেক জট রয়েছে। আমি সেগুলো খোলার চেষ্টা করছি।’ এই জট খুলেতে তিনি বাংলাদেশ থেকে তিনজন ও ভারত থেকে তিনজন নিয়ে একটি কমিটি করার প্রস্তাব দেন। কমিটির চেয়ারম্যান বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে করার প্রস্তাব দেন। তিনি (নূর) বাংলাদেশের তিনজন প্রতিনিধি ঠিক করবেন। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনি প্রতিনিধি হলেন চলচিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায় ও শ্রীকান্ত মোহতা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর কর্ণধার শ্রী শ্রীকান্ত মোহতা।

তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেত্রী বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশ চলচিত্র উৎসব করুক। বাংলাদেশে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব করুক। তিনি তাঁর লেখা ৫৩টি বইসহ বাংলাদেশ বইমেলা কর্তৃপক্ষকে মোট ৫০০টি বই উপহার দেবেন বলেও জানান। এ ছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে বিমানবন্দরের নামকরণ ও একটি ফেলোশিপ চালু করবেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি চেয়ার করারও ঘোষণা দেন তিনি। আর এটি উদ্বোধন করতে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাবেন।

মমতা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কাঠবিড়াল হয়ে সেতুবন্ধনের কাজ করে যাব। অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক কিছু ঘটানো হয়। অনেক কিছু ঘটে। আমরা লাইন বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। সরকার বিল আনছে। বড় কাজ হয়ে যাবে। আমরা সংস্কৃতি বিনিময় করছি। ব্যবসা সম্প্রসারণে যা যা করা দরকার তা করব আমরা।’

ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সফরে আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নেন মমতা। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ‘স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে’ এই চুক্তিকে তিনি সমর্থন করতে পারেন না। মনমোহনের সেই সফরে স্থল সীমান্ত একটি চুক্তির প্রটোকল সই হয়, যার মধ্য দিয়ে ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের পথ খোলে।

কিন্তু এই প্রটোকল কার্যসকর করতে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে থাকে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণেই। ভারতের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি বিষয় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করলে জট খোলার আশা তৈরি হয়। তার উদ্যোগে সম্প্রতি স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরে মমতার সরকারের সায় পাওয়া যায়। বিষয়টি এখন ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

গতবছর শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে তিস্তা চুক্তি সইয়ের বিষয়েও জোর চেষ্টা চালানোর আশা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

“ব্যাগ গুছানোর আগে চিন্তা ছিল, আবার যেন কোনো বাধা না আসে। কিন্তু সব বাধা ভেঙে যেহেতু এসেছি, তখন সব বাধা ঘুচে যাবে। দিস ইজ এ নিউ বিগিনিং।” সবার সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।

“আমাদের সম্পর্ক খুব সুন্দর, একেবারে সাজানো সম্পর্ক। কোনো বাধা আমাদের থাকবে না। মনের বাঁধন কখনো আটকে রাখা যায় না। মনের দরজাটা খুলে দিতে হবে।” সবাইকে নমস্কার, সালাম ও প্রণাম জানিয়ে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি ‘জয় বাংলা’ বলে দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষকে খোলামেলা মতবিনিময়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ছাড়াও মমতার সফরসঙ্গী হিসাবে ঢাকায় আসা চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, চলচ্চিত্র তারকা প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, তৃণমূলের এমপি অভিনেতা দীপক অধিকারী দেব এবং কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা অনুষ্ঠান মঞ্চে মমতার পাশে ছিলেন।

আর তৃণমূলের এমপি অভিনেত্রী মুনমুন সেন, অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি অরিন্দম কাজীর স্ত্রী কল্যাণ কাজী, কবি সুবোধ সরকার, পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী চলচ্চিত্র পরিচালক ব্রাত্য বসু ছিলেন সামনে অতিথিদের সারিতে। বাংলাদেশের ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ররীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর।

হোটেল সোনারগাঁয়ে এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ। দুই দেশের শিল্পীদের কণ্ঠে দুই দেশের জাতীয় সংগীতে শেষ হয় মমতার বৈঠকী বাংলা।

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত